ঢাকায় অবস্থিত খ্রিস্টান মিশনারি কলেজ।বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় কলেজ এই প্রতিষ্ঠানটি কেবল একটি প্রতিষ্ঠানই নয় নটর ডেম কলেজ, এটা হলো বর্তমান ও সাবেক সকল শিক্ষার্থীর ভালোবাসা,অনুভূতি,আবেগ এর স্থান।

এটি কলেজটি সম্পূর্ন ছেলেদের জন্য। ঢাকার ব্যাস্তময় শহরের বুকে সবুজে ঘেরা এ কলেজটি মতিঝিলে জায়গা করে নিয়েছে।

বাংলাদেশের জন্য নটর ডেম কলেজ একটি বিশেষ আশীর্বাদ। এই দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সবচেয়ে উজ্জ্বল উদাহরণ হতে পারে নটর ডেম কলেজ।

ইতিহাস

১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর স্বাধীন পূর্ব পাকিস্তানে তৎকালীন ক্যাথলিক গির্জা প্রধানকে কয়েকটি কলেজ চালু করার অনুরোধ জানান। সরকারের আমন্ত্রণ পেয়ে তৎকালীন আর্চবিশপ লরেন্স গ্রেনার পবিত্র ক্রুশ সন্ন্যাস সংঘের যাজক-যাজিকাদেরকে ছেলে ও মেয়েদের জন্য আলাদাভাবে কলেজ স্থাপনের নির্দেশ দেন।

১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দের নভেম্বর মাসে ঢাকার ৮২ মিউনিসিপ্যাল অফিস স্ট্রিট, লক্ষ্মীবাজারে হলি ক্রসের সিদ্ধান্ত অনুসারে রোমান ক্যাথলিক পাদ্রি সম্প্রদায় কর্তৃক সেন্ট গ্রেগরিজ কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়, যা ছিল সেন্ট গ্রেগরি স্কুলের পরিবর্ধন। ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বরে ৬১/১ সুভাষ বোস এভিনিউ, লক্ষ্মীবাজারে প্রতিষ্ঠানটি স্থানান্তরিত হয়।

১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে এটি আরামবাগে স্থানান্তর করা হয়। তখন এটির নামকরণ করা হয় নটর ডেম কলেজ। ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে কার্ডিনাল ভ্যালেরিয়ান গ্রোসিয়াস নটর ডেম কলেজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।

১৯৫২ থেকে ১৯৫৯ সালের মধ্যে পরপর সাতবার নটর ডেম কলেজ উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট পরীক্ষার সম্মিলিত মেধা তালিকায় প্রথম স্থান অধিকার করে।

কলেজটি প্রথমে কলা এবং বাণিজ্য বিষয়ের ক্লাস চালু করেছিল। ১৯৫৫ সালে এ কলেজে ব্যাচেলর অব আর্টস এবং ১৯৬০ সালে ব্যাচেলর অব সায়েন্স কোর্স চালু হয়।

১৯৫৫ সালে নটর ডেম কলেজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হয় এবং ১৯৫৯ সালে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষাসমূহে প্রসংশনীয় সাফল্যের জন্য এটি  পূর্ব পাকিস্তানএর সেরা কলেজ হিসেবে স্বীকৃতি অর্জন করে।

শুরু থেকেই এ কলেজে দক্ষ ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকগণ কর্তৃক পাঠদান কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে।

কিন্তু ১৯৬০ সালে এখানে শিক্ষক ঘাটতি দেখা দিলে ব্রিটিশ স্বেচ্ছাসেবী সার্ভিস (ব্রিটিশ ভলানটিয়ার্স সার্ভিস ওভারসিজ) নামের একটি ব্রিটিশ সংস্থার কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন এবং তাঁরা ১৯৬৩ থেকে ১৯৭০ সাল অবধি শিক্ষকতা করেন।

এসময়ই বিখ্যাত শিক্ষাবিদ ও গবেষক ফাদার টিম সরাসরি এ কলেজের সঙ্গে সংযুক্ত হন। ফাদার হেরিংটন ছিলেন কলেজের প্রথম অধ্যক্ষ।

দেশের অন্যান্য কলেজের মতোই ১৯৬৮-৬৯ সময়কালে নটর ডেম কলেজও রাজনৈতিক আন্দোলনের ক্রমবর্ধমান চাপের মুখে পড়ে এবং বিশেষভাবে দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের মাসগুলিতে কলেজ প্রশাসন এক নাজুক ও পীড়াদায়ক পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়।

নটর ডেম কলেজ সে সময় ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকান্ডে ব্যাপকভাবে জড়িয়ে পড়ে এবং এসময় কলেজের ছাত্র-শিক্ষকবৃন্দের সম্মিলিতভাবে কাজ করার ও পরস্পরের মধ্যে আদর্শ-মূল্যবোধ সঞ্চারের এক সুবর্ণ সুযোগ সৃষ্টি হয়।

১৯৭২-১৯৯৭ সময়কালে কলেজে শিক্ষার মাধ্যম ছিল বাংলা এবং পরবর্তীকালে বাংলা বাধ্যতামূলক বিষয় হিসেবে অন্তর্ভুক্ত থাকলেও এটি ইংরেজি মাধ্যমে শিক্ষাদান পুনঃপ্রবর্তন করে।

এক নজরে নটরডেম।।

পূর্বনাম :- সেন্ট গ্রেগরী কলেজ

নীতিবাক্য:জ্ঞানের আলোকে ভালোবাসো

ধরন :- উচ্চমাধ্যমিক

প্রতিষ্ঠাতা:-১৯৪৯

ধর্মীয় অধিভুক্ত:- খ্রিষ্টান ক্যাথলিক গির্জা

অধ্যক্ষ:- হেমন্ত পিউস রোজারিও সিএসসি

শির্ক্ষাথী:-৬০০০+

অবস্থান:- ঢাকা,মতিঝিল,বাংলাদেশ

সংক্ষিপ্ত নাম:- এনডিসি

নামকরন

নটর ডেম কলেজের নটর ডেম শব্দ দুটো ফরাসী শব্দ নেয়া হয়েছে। যার অনুবাদ হলো Our Lady।

রোমান ক্যাথলিকগণ আওয়ার লেডি বলতে যিশুখ্রিষ্টের মাতা মেরিকে বুঝিয়ে থাকেন।

ক্যাথলিকদের দ্বারা পরিচালিত এই কলেজটির নাম মাতা মেরিকে উৎসর্গ করে রাখা হয়।

মূলনীতিটি

Diligite Lumen Sapientiae-জ্ঞানের আলোকে ভালোবাসো।

ক্যাথলিক ধর্মমতে, যিশুখ্রিস্টের মা মেরি হলেন জ্ঞানের প্রতীক। “জ্ঞান” শব্দটি কলেজের মুখ্য উদ্দেশ্য একাধারে জ্ঞানার্জন ও জ্ঞানের উৎস স্রষ্টাকে লাভ করার প্রতি ইঙ্গিত করে।

আলো শব্দটি দ্বারা অন্ধকারকে দূরীভূত করা ও সত্য-মিথ্যার পার্থক্য করতে পারার প্রতি ইঙ্গিত করে।

ভালোবাসো শব্দটি দ্বারা ভালোবাসার সাথে জ্ঞান আহরণের প্রতি ইঙ্গিত করে।

প্রতীক

নটর ডেম কলেজের প্রতীকের সবচেয়ে উপরে রয়েছে একটি খোলা বই, যার বাম পাতায় বড় ছাদের গ্রিক অক্ষর আলফা এবং ডান পাতায় বড় ছাদের ওমেগা রয়েছে। আলফা-ওমেগা হলো গ্রিক বর্ণমালার, যথাক্রমে প্রথম ও শেষ অক্ষর। এর দ্বারা একই সাথে সমগ্র জ্ঞান এবং বাইবেলের ১টি অধ্যায়ের যিশুর একটি উক্তির প্রতি ইঙ্গিত করে।

এই প্রতীকটির নিচের অংশে তিনটি ক্ষেত্র রয়েছে। বাম দিকের ক্ষেত্রে দেখা যায় ৭টি পদ্নফুল প্রতীকে ৭টি পদ্ম দ্বারা মেরিপ জীবনের সাতটি শোক প্রকাশ করা হয়েছে। এই প্রতীকগুলো একত্রে কষ্টসাধ্য জ্ঞানার্জনকে ইঙ্গিত করে।

ডানদিকের ক্ষেত্রটির জলময় নদী, চলমান নৌকা, সোনালি ধানক্ষেত আর সীমাহীন নীলাকাশ-শোভিত দৃশ্যটি সবুজ-শ্যামল বাংলাদেশের বুকে কলেজটির অবস্থান প্রতিকায়িত করে।

নিচের ক্ষেত্রটিতে আড়াআড়িভাবে স্থাপিত দুটি নোঙর আশার প্রতীক। ক্রুশ থেকে চারদিকে যে আলো ছড়িয়ে পড়েছে, তা যিশুখ্রিস্টের আলো ও মহানুভবতাকে প্রতীকায়িত করে।

নিয়মনীতি পরিচালনা

যুক্তরাষ্ট্রের নটরডেম বিশ্ববিদ্যালয় অভিজ্ঞ কর্মীরাই ঢাকার নটর ডেম কলেজের প্রতিষ্ঠাতা। তাঁরাই দীর্ঘ সময় ধরে নটর ডেম বিশ্ববিদ্যালয়ের আদর্শ ও দৃষ্টিভঙ্গি অনুসরণ করে নটর ডেম কলেজ গড়ে তুলেছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের অভিজ্ঞতা থেকে নটর ডেম কলেজের নিয়মিত কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ” “ডিরেক্টর অব গাইডেন্স” বা “ছাত্র পরিচালক” তাঁর দপ্তর থেকে নিয়মিত পাঠ কার্যক্রম ও শৃঙ্খলা সম্পর্কিত বিষয় তত্ত্বাবধান করে থাকেন।

শিক্ষা কার্যক্রম

কলেজে উপস্থিতি আশি শতাংশের কম হলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। প্রতি সপ্তাহে দুটি বাধ্যতামূলক কুইজপরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের অংশ নিতে হয় এবং এর ফলাফল শিক্ষার্থীর সার্বিক ফলাফলে যুক্ত হয়। বছরে ২ টা সেন্টআপ পরিক্ষা হয়।

নটর ডেম কলেজের বিজ্ঞান গবেষণাগারগুলো সমস্থানীয় অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর গবেষণাগারগুলোর তুলনায় সমৃদ্ধ বলে বিবেচনা করা হয়।

বিজ্ঞানের ছাত্রদের জন্য সপ্তাহে চার ঘন্টা চারটি বিষয়ের ব্যবহারিক কার্যক্রম বাধ্যতামূলকভাবে সম্পাদন করতে হয়। ব্যবহারিক পাঠে সামান্যতম ত্রুটি কিংবা অবহেলা দৃষ্টিগোচর হলে পরবর্তী শিক্ষাবর্ষের অনুমোদন স্থগিত করে দেয়া হয়। পরবর্তীতে আবার করতে হয়।প্রতি মাসে একবার নৈতিক শিক্ষার ক্লাস হয় ১ ঘন্টার।

খেলাধুলা

কলেজ প্রাঙ্গণে ফুটবল ,ক্রিকেট ইত্যাদি বহিরাঙ্গন খেলার সুবিধা দিতে বিশাল মাঠ রয়েছে। কলেজটিতে ফুটবল খেলাটি প্রচুর পরিমানে হয়ে থাকে।

তারপরের স্থানে রয়েছে বাস্কেটবল। আলাদা বাস্কটেবল মাঠ ও আছে। ব্যাডমিন্টন খেলাও হয়ে থাকে। খেলাধুলার জন্য উন্মুক্ত ধার খোলা রয়েছে ।

কলেজের ছাত্রদেরকে খেলাধুলার সুবিধা দিতে রয়েছে একটি খেলার সরঞ্জাম ধার দেয়ার অফিস। সেখানে ছাত্ররা নিজেদের কলেজ আইডি কার্ড প্রদর্শনপূর্বক বিভিন্ন প্রকার খেলাধুলার সামগ্রী বিনামূল্যে সংগ্রহ করতে পারেন।

ধর্মচর্চা

ক্যাথলিক ধর্মযাজকদের দ্বারা পরিচালিত হওয়ায় কলেজের খ্রিষ্টান ছাত্রদেরকে প্রতি রবিবার বিশেষ প্রার্থনায় অংশগ্রহণ করতে হয়।

সকল ধর্মাবলম্বী ছাত্রদেরই নিজ নিজ ধর্ম পালনের পূর্ণ স্বাধীনতা কলেজে রয়েছে। কলেজ প্রাঙ্গণে বাস্কেটবল মাঠের পাশেই বাগানের মধ্যে একটি একতলা পাঞ্জেগানা মসজিদ এবং ওজুখানা রয়েছে।

কলেজের গাঙ্গুলি ভবন-এর নিচতলায় একটি ধর্মবিষয়ক পাঠাগার রয়েছে। সেখানে সকল ধর্মের পুস্তকাদি সংরক্ষিত রয়েছে।

গ্রন্থাগার

কলেজের প্রতিষ্ঠার সময় ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে কলেজের অভ্যন্তরে “সেন্ট গ্রেগরিজ কলেজ লাইব্রেরি” নামে একটি গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠা করা হয়। পরবর্তীতে ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে কলেজের নাম পরিবর্তন করে নটর ডেম কলেজ রাখা হলে গ্রন্থাগারের নামও পরিবর্তন করে রাখা হয় “নটর ডেম কলেজ লাইব্রেরি”।

কলেজের নতুন ভবনের (গাঙ্গুলী ভবন) নির্মাণ কাজ শুরু হলে ১৯৯৫ খ্রিস্টাব্দের ২১ আগস্ট গ্রন্থাগারটি কলেজের যুক্তিবিদ্যার প্রাক্তন অধ্যাপক ফাদার রিচার্ড নোভাককে উৎসর্গ করে “ফাদার রিচার্ড নোভাক মেমোরিয়াল লাইব্রেরি” নাম রাখা হয়

আর্চবিশপ গাঙ্গুলি ভবনের চতুর্থ তলায় অবস্থিত লাইব্রেরিটির প্রায় ১৩০ আসনবিশিষ্ট দুটি পাঠকক্ষ রয়েছে। কলেজে ভর্তির সাথে সাথে ছাত্ররা গ্রন্থাগারের সদস্য হয়ে যায় এবং লাইব্রেরি কার্ড পেয়ে যায়।

গ্রন্থাগারে নিয়মিত ৬টি দৈনিক পত্রিকা, ৪টি সাপ্তাহিক ও ৪টি মাসিক ম্যাগাজিন রাখা হয়। এছাড়া অনেক গুরুত্বপূর্ণ সাময়িকী ও প্রবন্ধপ্রন্থ অনিয়মিতভাবে রাখা হয়। বইসমূহ লাইব্রেরি কার্ডের প্রেক্ষিতে ধার নেয়া যায়।।

গ্রুপ বিভাজন

নটর ডেম কলেজে বর্তমানে মোট ২৫টি গ্রুপ রয়েছে। এর মধ্যে ১৬টি বিজ্ঞান শাখার, ৬টি ব্যবসায় শিক্ষা, ৩টি মানবিক বিভাগের গ্রুপ রয়েছে। এর মধ্যে শুধু বিজ্ঞান বিভাগে বাংলা ও ইংরেজি মাধ্যম চালু আছে।

কলেজের সময়সূচি

প্রতি সপ্তাহে রবিবার থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা হতে ১২:৪০ পর্যন্ত প্রথম বর্ষ এবং দুপুর ১টা হতে বিকেল ৫:৪৫ পর্যন্ত দ্বিতীয় বর্ষের শ্রেণি কার্যক্রম শুরু হয়। প্রতি শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি থাকে।

কলেজের ক্লাব কর্মসূচির বেশিরভাগই শুক্রবার ও শনিবার হওয়ায় কলেজ খোলা থাকে।

শিক্ষা ভবন

নটর ডেম কলেজে মোট ৪টি শিক্ষা ভবন। নামগুলো হলো:-

  • ১.ফাদার টিম বিল্ডিং
  • ২.ফাদার আর্চবিশপ গাঙ্গুলি বিল্ডিং
  • ৩.ফাদার জর্জ হেরিংটন বিল্ডিং
  • ৪.ফাদার মার্টিনস হল
  • ৫. ফাদার পিশোতো ভবন

একটি ছাত্রাবাস, একটি মসজিদ,একটি ক্যান্টিন ,একটি ক্যান্টিন ও একটি যাজকাবাস রয়েছে।।

পোশাক

নটর ডেম কলেজে সকল ছাত্রদের জন্য নির্ধারিত পোশাক পরা আবশ্যক। ছাত্রদের ক্রিমসন রঙের শার্ট এবং কালো রঙের প্যান্ট এবং এবং কালো রঙের শ্যু পরা বাধ্যতামূলক।

ডিগ্রি অধ্যায়নরত ছাত্রদের জন্য আকাশি রঙের শার্ট প্রযোজ্য।

ছাত্র রাজনীতি

শুরু থেকেই নটর ডেম কলেজে ছাত্র রাজনীতি সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ ছিল। পরিবর্তে সহশিক্ষা সংগঠনগুলোকে শক্তিশালী করার জন্য সবরকম প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তা প্রদান করা হয়।

কাজের বিনিময়ে অধ্যয়ন কর্মসূচি

নটর ডেম কলেজে অস্বচ্ছল শিক্ষার্থীদের সহায়তা করার জন্য “কাজের বিনিময়ে অধ্যয়ন” বা “নটর ডেম কলেজ ওয়র্ক প্রোগ্রাম” নামে ভিন্নধর্মী ব্যবস্থা রয়েছে। অন্যান্য সামাজিক কর্মসূচির মতো এটিও ১৯৭২ সালের দিকে শুরু হয়।।

ফলাফল

নটরডেম কলেজের ফলাফল বরাবরই ঈর্ষনীয়। শুধু এইচএসসি নয় বরং প্রতিযোগিতা মূলক ভর্তি পরিক্ষায় সেরা সাফল্য রাখে। যার ধারে কাছেও নেই অন্য যেকেনো শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান। শীর্ষ স্থানীয় বেশিরভাগ ছাত্র এই কলেজের।

ঢাবি, বুয়েট,ঢামেক যেনো এই প্রতিষ্ঠানের ২য় শাখা। এছাড়াও স্নাতক লেভেলে বিশ্বসেরা বিশ্ববিদযালয় গুলোতে এই কলেজের শিক্ষার্থীরা অংশ করে নিয়েছে।

সহশিক্ষা কার্যক্রম

কথায় বলে বাংলাদেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি বাদে) যে পরিমান সহশিক্ষাকার্য পরিচালনা করে থাকে ,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একাই তার চেয়ে বেশি এসব কার্যক্রম করে থাকে।

ঠিক তেমনটাই নটরডেম কলেজের ক্ষেত্রে। এই কলেজের অধীনে রয়েছে শীর্ষ স্থানীয় ও সক্রিয় ২৩ টি ক্লাব। সবচেয়ে ঐতিহ্যবাহী ক্লাব হলো বিজ্ঞান ক্লাব ও ডিবেটিং ক্লাব।

ক্লাবগুলোর নাম হলো:-

* Debating Club
* Science Club
* Adventure Club
* Rover Group
* Business Club
* Chess Club
* Human Society
* Nature study club
* Degree club
* Youth Red crescent
* Rotaract club
* Nattodol
* Abriti Dol
* Eco and space club
* Photography club
* It club
* Ethics Club
* Math club
* English club
* Art Club
* Writer club
* •Cultural club
* •International understanding and relations club

*

প্রকাশনা

প্রকাশনাগুলো ক্লাবভিত্তিক হয়ে থাকে।

•অ্যালমনাই প্রকাশনা
আদ্রি
হরাইজন
সপ্তডিঙ্গা
যোগাযোগ
দুরবিন
নিসর্গ
অ্যাডবেনচার
দ্বৈরথ
মানববার্তা
ঢাকঢোল
প্রমা

ভ্রমন

কলেজ থেকে শিক্ষাসফর হয় না। তবে প্রতি ক্লাবভিত্তিত কলেজে ও ক্লাব ভিত্তিত তত্তাবধানে প্রতি বছর অসংখ্য শিক্ষাসফর হয়।

চরিত্র গঠন

নটরডেম কলেজ এমনটি একটা স্থান যেখানে চারিত্রিক গুনটা মিরাক্যাল ভাবে চলে আসে। কলেজের মাটিতে পা দেয়ার মানে নিজেকে অন্য একটি কিছুতে আবৃত করে নেওয়া।

পরিবেশটাই যেনো এমনভাবে সাজানো যে কেউ চাইলে খারাপ হতে পারবে না। প্রতিটি শিক্ষার্থী নতুন এক মানুষ হয়ে বের হয়ে। যতধরনের ভালো গুনাবলী শিক্ষার্থীদের মাঝে গঠন হয়ে যায়। হয়তো প্রশ্ন করবেন এ আবার কেমন কথা?

তবে বলবো কলেজটিতে যান ও ভর্তি হয়ে পড়াশোনা করুন অথবা কয়েকজন শিক্ষার্থী সাথে কথা বলুন। একজন ভালো মানুষ তৈরীর কারিগর এ কলেজের প্রতিটি উপাদান।

একই বেঞ্চে প্রধান বিচারপতির ছেলে কিংবা ভবিষ্যত প্রধান বিচারপতি আর রিক্সাচালকের ছেলে কিংবা রিক্সা চালিয়ে জীবন নির্বাহ করা ছাত্র পাশাপাশি বসে ক্লাস করছে, পাশাপাশি বসে বন্ধুত্ব বিনিময় করছে বাঙালি আর ‘আদিবাসী’।

কেউ কাউকে ছোটো করে দেখবে, এমন টা তাদের ভাবনায়ই আসে না।

বিশ্ব কমিনিউটি

এই কলেজের যোগাযোগের বিস্তার সারা বিশ্বজুড়ে। শিক্ষার্থী ছড়িয়ে রয়েছে সারা বিশ্ব জুড়ে ভালো ও খারাপ সবরকম অবস্থানে।

অ্যালমনাই এসোসিয়েশন

এই প্রতিষ্ঠানটির অ্যালমনাই অনেক সমৃদধশালী। কেননা এর উওরসূরি ও বর্তমান শিক্ষার্থীগন বাংলাদেশ ছাড়িয়ে বিশ্বের অনেক দশের অনেক গুরুত্বপূর্ন অবস্থানে জায়গা করে নিয়েছে।

নটর ডেম কলেজ নিয়ে কিছু বললে হয়তো ভুল হবে অথবা কম হয়ে যাবে। এটি হৃদয়ের অন্তরের অন্তরস্থলের একটি স্থান। তিনজন নটরডেমিয়ানের অনুভব শেয়ার করছি:-

#১

২রা জুন , জীবনের এক অনবদ্য গল্পের সূচনা । মহাকাব্যের সূচনা বললেও ভুল হবেনা । নটরডেমিয়ান হয়ে ওঠার গল্প । নিজেকে আবিস্কার করার গল্প । দেড় বছরের সময়টা কম মনে হতে পারে , কিন্তু এর সাথে জুড়ে আছে হাজারো গল্প ।

সপ্তাহের পাঁচদিন প্রচণ্ড চাপে থাকার গল্প । প্রত্যেক কুইজের পরে হতাশ হওয়ার গল্প । ক্লান্ত বিকেলে ল্যাব করার গল্প । বৃষ্টির দিনে ক্লাস করার গল্প ।

কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ছিল নিত্যদিনের যাতায়াতের জায়গা । রাতে বাসায় ফেরার সময় এখানেই বসে অপেক্ষা কোন ট্রেন আগে ছাড়বে । মাঝে মাঝে রাত ১২ টাতেও বাসায় ফেরা টা ছিল খুব স্বাভাবিক ব্যাপার ।

এরকম হাজারটা গল্প আছে যা বলে শেষ করা যাবে না ।

যতই কষ্ট হক, কখনো সেভাবে খারাপ লাগেনি । কলেজের প্রকৃতি ছিল অপূর্ব । সময় পেলেই এর মাঝে ল্যাব লেখা হত । বন্ধুরা এক এক জন লেজেন্ড । ওদের থেকে অনেক কিছু শেখা । বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেয়ার সময় গুলো ছিল সবচেয়ে ভাল ।

সারাজীবনে এই সময়ের কথা কখনই ভোলা যাবে না। মনে পড়লেই অপূর্ব ভাল লাগা কাজ করে । Notre Dame College,তোমার সাথে আমার সম্পর্কের শেষ কখনই হবে না ।
-Ihsan Mirani Rumi
-11901113

#২

২ জুন ২০১৭ নটরডেম কলেজে ভর্তির মাধ্যমে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয় আমার জীবনে।খুবই স্বল্প সময়কাল ছিলো সেই জীবনের মাত্র দেড় বছর। কিন্তু এই স্বল্প সময়েই মিশে আছে অনেক আবেগ অনেক অনুভূতি।

শিক্ষক,শিক্ষিকা,ক্লাসরুম,চক,ডাস্টার,ব্ল্যাকবোর্ড,
মাঠ,ক্যান্টিন এবং কলেজের প্রত্যেকটা যায়গাতেই যেন স্মৃতি লুকিয়ে আছে।

কলেজের নবীন বরনের দিন আমি অবাক হয়ে যাই কলেজে ঠিক সময়ে অর্থাৎ ৮ টা বাজার সাথে সাথেই প্রধান অতিথী উপস্থিত না হওয়া সত্ত্বেও অনুষ্ঠান শুরু হয়েছিল।

স্যার,ম্যাডাম সকলের আমাদের বরণ করে নেয়ার দিনটা এখনো মনে হলে গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠে,কত আনন্দ কত উদ্দীপনা ছিলো।

আর বিদায়ের দিনটাতে মনে হয়েছে যে এক বহুদিনের আত্নীয়দের ছেড়ে চলে যাচ্ছি।

আমাদের ক্লাসরুমটা হ্যারিংটন ভবন(১৯৫৪ তে যেখানে ক্লাস শুরু হয়েছিল) এ হওয়াতে অনেকটাই হতাশ হয়েছিলাম যে পুরাতন বিল্ডিং টাতে ক্লাস করতে হবে,কিন্তু পরবর্তীতে আমার সেই মনোভাব কেটে যায় এবং মনে মনে বলি যে এই রুমটাতে ক্লাস না করলে সত্যিই অনেক কিছু মিস হতো।

যেমনঃক্লাসরুমের সামনেই ছিল বাগান,বাস্কেটবল গ্রাউন্ড, আর বাস্কেটবল গ্রাউন্ডের পাশে সারি করে কাঠগোলাপের গাছ লাগানো।যখন বৃষ্টি হতো তখন ফুলের ঘ্রাণ ক্লাস থেকে পাওয়া যেত,কনক্রিটের বাস্কেটবল গ্রাউন্ডে সাদা এবং গোলাপী ফুলগুলো যখন পড়ে থাকতো তখন খুবই অসাধারণ লাগতো।

বৃষ্টির দিন মানেই ক্লাসের প্রায় সবাই আমরা বারান্দায় দাড়িয়ে থাকতাম।সেকেন্ড ইয়ারে থাকতে মনে আছে আমরা সবাই একদিন বৃষ্টির মধ্যেই বাস্কেটবল গ্রাউন্ডে টেনিস বল দিয়ে ফুটবল খেলেছিলাম।আর বসন্তে কলেজের প্রকৃতির কথা তো বলা লাগে না।

কত সুন্দর ফুল ফুটে থাকতো হাটার রাস্তার পাশে,মাঠের পাশে।আমরা একই বেঞ্চে ৬ মাস মুসলিম,হিন্দু,খ্রিস্টান একসাথে বসে ক্লাস করেছি।

কোনোদিনই কোনোরকম ঝগড়া বিবাদ হয়নি,বরং এখানে আমরা বেশ আনন্দেই ছিলাম।এখনো মনে হয় সেই দিনগুলোতে ফিরে যাই,ফিরে যাই সেই সুন্দর প্রানের ক্যাম্পাসে।

-সিয়ামুন ইসলাম
রোলঃ১১৯০৯১০১

#৩

যখন গেট দিয়ে ক্রিম কালারের শার্ট, কাধে ট্রান্সপারেন্ট ব্যাগ ঝুলিয়ে সকাল বেলা কলেজ গেট দিয়ে প্রথম প্রথম ঢুকতাম, অদ্ভুত সুন্দর এক ফুলের সুবাস নাকে লাগতো। তারপরেও আমি বহুবার কলেজে গিয়েছি, বিশ্বাস করেন সেই ফুলের সুবাস আর পাইনি। সেই ফুলের তালাশ করেছিলাম অবশ্য কিন্ত ফলাফল হিসেবে নিরাশই হতে হয়েছে শুধু।

সে যাই হোক, খুব সকালে সত্যিই খুব সকালে বিমানবন্দর রেল স্টেশনে হাজির হতাম কলেজে যাবার জন্য।

গিয়ে আবিস্কার করতাম আমার মতো ক্রিম শার্ট আর ট্রান্সপারেন্ট ব্যাগ ঝুলানো কয়েক তরুণকে; চোখে ওদের হাজারো স্বপ্ন, অজেয়কে জয় করার তীব্র আকাঙ্ক্ষা প্রতিফলিত হতো ওদের মনির মাঝে, লুকায়িত গর্বের ছাপ ওদের মনোগ্রামে।

হয়তো এই স্বপ্ন কে পুঁজি করেই মুসা ইব্রাহিম ছুঁয়ে দেখেছিল এভারেস্টের চূড়া বা ড. কামাল হোসেন সাহস পেয়েছিল শেখ মুজিবের তত্ত্বাবধায়নে নতুন এক দেশের রুপকল্প সংবিধান লিখার।

ট্রেনে আমরা তাইড়ে নাইড়ে করতে করতে কলেজ যেতাম। বিদ্যুৎ স্যারের সিলসিলা, মারলিন ম্যামের লাভ ইঞ্জেকশন, গুহ স্যারের ‘ এই দুষ্ট ‘ আমাদের সুযোগ দিত ল্যাব আর কুইজের মানসিক যন্ত্রনার মাঝে ‘OOOOOWEEEEE’ নামক অক্সিজেন বুক ভরে টেনে নিতে।

সময় গড়াতে থাকে, সময় গড়ায়। মাঝের সময়ের প্রতিটা দিনই একেকটি গল্প। সে গল্প না হয় আরেকদিন শুনাবো। অনেক ভরা ডুবির মাঝেই কোনো এক বিকেলে বুঝলাম আমাদের আইডি কার্ডের মেয়াদ ফুড়িয়ে এসেছে।

ততদিনে অবশ্য কালো কেডস এর জায়গা দখল করেছে চটি স্যান্ডেল, ক্রিম শার্টটাও আগের মতো চকচকা অবস্থায় নেই, ট্রান্সপারেন্ট ব্যাগে দুই তিনটা সেলাই পড়ে গেছে। ৬৯ তম এইচএসসি ব্যাচ হিসেবে বিদায় নিলাম।

জানেন এখনো যখন ক্রিম সেই শার্ট পড়া কোনো ছেলেকে দেখি, খুব হিংসে হয় ওকে দেখে। ওকে ডেকে গাম্ভীর্যের সুরে বলি নটর ডেম ইজ এ ব্রান্ড, প্লাটফর্ম টাকে কাজে লাগাও।

আল্লাহ চাইলে জীবনে হয়তো অনেক কিছুই পাবো, কিন্তু আমি যে খুব বেশি কিছু চাই না, শুধু বকুল তলায় বসে সিংগারা খেতে খেতে আবার আমার ভাইগুলার সাথে গল্প করতে চাই।

মাঝে মাঝেই ওরিয়েন্টেশনে বিসিএস এ ফার্স্ট হওয়া ওয়ারিসুল ইসলাম ভাই এর কথা গুলা মনে পড়ে, ” নটর ডেম কি সেটা হয়তো তোমরা এখন বুঝবা না, বুঝতে পারবা যখন বের হয়ে যাবা এখান থেকে”

আসলেই আমি, আমরা এখন বুঝতে পারি ।

#Ishraq Masud Mahim
#জয়তু_নটরডেম
#11908099

আমিও ভালোবাসি নটর ডেম কলেজ তোমাকে।তোমাকে শ্রদ্ধা জানাই অন্তর থেকে ।যতক্ষন সময় লিখেছি তোমাকে ততক্ষন নিজেকে ধরে রাখতে পারিনি। কোথায় যেনো হারিয়ে গেছি।আমি গর্বিত যে আমি একজন নটরডেমিয়ান।
Once a Notredamian is a always Notredamian.

লেখকঃ মোঃ ইসমাইল হোসেন

সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়