বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা একটা বাণিজ্যে রূপ নিয়েছে। এর মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় এবং শিক্ষকদের মাঝে বিপুল পরিমান টাকা পয়সার ছন্দাই নন্দাই হয়। সকল শিক্ষক সমান আয় করে না।

কে কত বড় দায়িত্ব পাবে বা কত বেশি আয় করবে তা ভর্তি পরীক্ষা আয়োজক ডিনের উপর নির্ভর করবে। আবার ডিন যেহেতু নির্বাচনের মাধ্যমে নিযুক্ত হন তাই এটা অনেকটা রাজনীতির উপরও নির্ভর করে।

প্রতি বছর প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা বিরাট অংশের শিক্ষক বেশ বড় একটা সময় ধরে এই কাজ করে থাকেন যা কাম্য নয়।

এর আগে এই ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে আমার একটা অবস্থান ছিল। করোনা আসার পর এই বিষয়টা নিয়ে আমি অনেক ভেবেছি। সম্ভবত ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে আমাদের আরো গভীরভাবে ভাবতে হবে।

উন্নত দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্ডার গ্রাজুয়েট লেভেলে ভর্তির জন্য SAT এবং টোয়েফল পরীক্ষাকে ভর্তির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্যারামিটার হিসাবে ধরা হয়। সেটা বছরে বেশ কয়েকবার নেওয়া হয় এবং একই ছাত্র একাধিকবার এই পরীক্ষা দিতে পারে। এর ফলাফলের ভিত্তিতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীরা দরখাস্ত করে।

আমরাও এইরকম একটি স্বাধীন ইনস্টিটিউটের অধীনে একটি সেন্ট্রাল পরীক্ষা সিস্টেম চালু করতে পারি কিনা সেটা ভেবে দেখা যেতে পারে। এই পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে দেশের প্রাইভেট ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ছাত্র ভর্তি করতে পারবে।

এতে একদিকে ছাত্রছাত্রীদের ভোগান্তি যেমন কমবে একই সাথে শিক্ষকদের ভোগান্তিও কমবে। বর্তমানে আমাদের ডিনদের বছরের ছয় মাস এই ভর্তি পরীক্ষার পেছনে সময় ব্যয় করতে হয়। ফলে তারা নিজ ফ্যাকাল্টির শিক্ষা ও গবেষণার মান বৃদ্ধিতে মনোযোগ কম দিতে পারেন।

আমাদের দেশে এখন প্রচুর ইংরেজি মাধ্যমের ছাত্রছাত্রী আছে। তাদের কাররিকুলাম আমাদের বাংলা মিডিয়ামের কাররিকুলাম থেকে ভিন্ন। এই ছাত্রছাত্রীদের একটি যারা মেধাবী তাদের একটা বড় অংশ SAT এবং টোয়েফল দিয়ে দেশের বাহিরে চলে যায়।

এই ছাত্রছাত্রীরা যদি দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তো তাহলে আমি নিঃসন্দেহে বলতে পারি আমাদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান বাড়তো। একই সাথে দেশেরও লাভ হতো। এই ছাত্রছাত্রীরা ইংরেজি মাধ্যমে পড়ায় এরা বাংলা ভাষায় একটু দুর্বল হয়। এছাড়া দেশি সংস্কৃতি সম্মন্ধে একটু কম জানে।

আমাদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়লে এরা সেটা কিছুটা পুষিয়ে নিতে পারতো। এছাড়া পাব্লিক বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা ব্যাকগ্রউন্ডের ছাত্রছাত্রী থাকলে একটা কম্পেটিটিভ এনভায়রনমেন্ট তৈরী হয় যার মাধ্যমে উভয় মাধ্যমের ছাত্রছাত্রীরা উপকৃত হতো।

ইংরেজি মাধ্যমের ছাত্রছাত্রীদের ভর্তির ক্ষেত্রে SAT পরীক্ষার ফলাফলকে আমরা বিবেচনায় নিতে পারি। এই পরীক্ষা দিয়ে এরা যদি বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারে কেন তারা নিজ দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারবে না? ইচ্ছা থাকলে নিয়ম করা যায়।

শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় যেমন নিয়ম করেছে গণিত আন্তর্জাতিক অলিম্পিয়াডে কেউ অংশ নিলে তাকে বিনা ভর্তি পরীক্ষায় ভর্তি করবে। ব্র্যাক ইভেন এক পা বাড়িয়ে তাদের আবেদ স্কলারশিপ দিয়ে ভর্তি করাচ্ছে।

প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় SAT পরীক্ষাকেও বিবেচনায় নেয়। ভর্তির ব্যাপারে আমাদের আরো ফ্লেক্সিবল হওয়ার সুযোগ আছে বলে আমি মনে করি। যুগ যুগ ধরে একই ধাঁচে সব কিছু করা উন্নতির লক্ষণ না। আমাদের প্রতিনিয়ত নতুন নতুন আইডিয়া যোগ করতে হবে কেবল তাহলেই প্রশ্নপত্র ফাঁসসহ নানা দুর্নীতি রোধ করতে পারি।

লেখকঃ কামরুল হাসান মামুন

অধ্যাপক

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়