বেশ কিছুদিন হোম পেইজে একটা ট্রল বেশ ঘোরাঘুরি করছে।

‘আসছি ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে তাহলে সোশ্যাল সায়েন্স, ডেভেলপমেন্ট স্ট্যাডিজ বা একাউন্টিং কেন পড়তে হয়?’

আমার প্রশ্ন আপনি ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে শুধু ‘কর্মী’ নাকি ম্যানেজমেন্ট লেভেলেও যেতে চান?

গত ২ সপ্তাহ আগের অভিজ্ঞতা বলি- আমার সোশ্যাল মিডিয়াতে কয়েকটা বায়িং হাউজ আর ম্যানুফেকচারিং কোম্পানীর হিউম্যান রিসোর্স ডিপার্টমেন্টের কয়েকজন নক দিয়ে বললো, ভাইয়া, কিছু গ্র্যাজুয়েট (ইঞ্জিনিয়ার- টেক্সটাইল/ আইপিই) লাগবে আমাদের।

রেজাল্ট যাই হোক, ‘বিজনেস করোসপনডেন্স’, ভালো কমিউনিকেশন স্কিল আর প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট ও একাউন্টিং বুঝতে হবে।

আমার পরিচিতদের মধ্যে অনেক শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জানালাম। বেশ ভালো সাড়া পায় সেই কোম্পানীগুলা।

তবে, কিছুদিন পরে আমি জানতে পারি যারা আবেদন করেছে তাদের অনেকের সিভি’র অব্জেক্টিভ লেখা, কাভার লেটার ফরম্যাট বেশ ত্রুটিপূর্ন।

এই দুইটা কিন্তু আপনার ‘ফার্স্ট ইমপ্রেশন’। সেখানে আপনার প্রতি ইম্প্রেশন কি হলো? ‘ ইঞ্জিনিয়ারিং এর প্রথম এক বা দুই সেমিস্টারে এই রাইটিং গুলা শেখানো হয় তখন তাদের সিভি বা কাভার লেটারে লেখার মত তেমন কিছু থাকে না।

তাই তারা আগ্রহবোধ করে না লেখার। যে ফরম্যাটে শেখানো হয় সেগুলা কেইজ বেইজড বা কোন রিয়েল লাইফ জব সার্কুলার থেকে নেওয়া হয় না।

তাই তাদের আগ্রহের জায়গা বা কানেক্ট করার মত দক্ষতা থাকে না। অর্থাৎ, কোর্সের সময় আর বাস্তবে ইন্ডাস্ট্রি’র চাহিদার মেলবন্ধন ওদেরকে দেখানো বেশ অসম্ভব হয়ে যায়।

কাউকে দোষারোপ না করে ‘Approach’ কে ঠিক করাটাই বড় চ্যালেঞ্জ। শিক্ষার্থীদের দায় কোথায়? আপনার ইঞ্জিয়ারিং বা অন্যান্য ডিগ্রি শেষ করে প্রফেশনে এন্ট্রান্সের যে মুল চাবিকাঠি সেটা আপনার ইন্ডাস্ট্রি’র ডিমান্ডের উপর নির্ভর করবে।

অর্থাৎ, আপনার টেকনিক্যাল নলেজের দক্ষতা আর বিচক্ষণতা যাচাই হবে আপনার ল্যাংগুয়েজ স্কিলের পরে। ডজন খানেক কোম্পানী আছে যারা রিক্রুটমেন্টের সময় ‘Aptis Test’ এর মাধ্যমে ল্যাংগুয়েজ ও কমিউনিকেশন স্কিল যাচাই করে।

এর জন্য বিভিন্ন রিক্রুটিং এজেন্সি যেমন ‘Enroute’ এদেরকে লিজ দিয়ে দেয়।
সোশ্যাল স্টাডিজ নিয়ে বেশ বাজে মন্তব্য শুনি।

একটা কোর্স যখন বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে দেওয়া হয় তার মানে শিক্ষা নীতি নির্ধারকরা বেশ গবেষণা করেই নির্ধারন করেছেন।

সোশ্যাল স্ট্যাডিজ বা ডেভেলপমেন্ট স্ট্যাডিজ ‘Case Based’/ Case Studies’ পড়তে হয়। হার্ভার্ড বা এম আই টি’র সবথেকে ইন্টারেস্টিং ক্লাসগুলা এইসব কোর্সের হয়ে থাকে।

ইউটিউবে সার্চ করলেই পাওয়া যাবে। একটা ক্লাসের শুরুতে শিক্ষক কোন একটা ইন্ডাস্ট্রির কোন একটা আর্থ-সামাজিক বা সামাজিকীকরনের’ একটা সমস্যা শিক্ষার্থীদের সামনে তুলে ধরবেন।

সেই সমস্যা সমাধানের জন্য শিক্ষার্থীদের মাঝে থেকে সমাধানের পথ জিজ্ঞাসা করে প্রতিটি পয়েন্টস বোর্ডে লিখবেন।

একটা ক্লাসে ৫০ জন শিক্ষার্থী থাকলে অন্তত ৩০ টা সমাধান আসবে। সেই ৩০ টা পয়েন্টেসের মধ্য থেকে কিছু সমাধান ‘বিন্যাস সমাবেশ’ করতে হবে। পরবর্তীতে, সেই শিক্ষকের ব্যক্তিগত ইন্ডাস্ট্রিয়াল অভিজ্ঞতা বা রিসার্চের আলোকে শিক্ষার্থীদের দেওয়া ৩০ টা পয়েন্টেসের আলোকে সমাধান করবেন।

একটু খেয়াল করবেন- এখানে শিক্ষার্থীদের মতামতকে মুল্যায়ন করা হলো, তার মানে প্রতিটি শিক্ষার্থী ক্লাসের সবথেকে গুরুত্বপুর্ন অংশ সেই সম্মান তাদেরকে দিতে হবে একই সাথে তাদের মতামত গ্রহণের মাধ্যমে ক্লাসে তাদের ‘Active Participation’ বা সক্রিয় অংশগ্রহণও নিশ্চিতকরণ সম্ভব হয়।

আলোচিত ‘Case Study’ এর সাথে ঐদিনের যে তত্ব বা তত্বীয় অংশটুকু শিক্ষক আলোচনা করবেন ক্লাসের শেষ অংশে।

এই মাধ্যমে ২০১৭-১৮ সালে কোন একটা বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি ‘Governance and Policy Making’ ও ‘International Relations’ দুইটা কোর্স পড়াই। শিক্ষার্থীদের মাঝে বেশ ইতিবাচক সাড়া পেয়েছিলাম। কখনো বিরক্ত হয়নি।

কোন কোর্সই বাহুল্য না। প্রতিটি কোর্স একটা বিশেষ ভ্যালু যুক্ত করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসসূচিতে নিয়ে আসা হয়।

আপনি বা আমি সেই কোর্সের এসেন্স কে মুল্যায়ন করতে না পারার জন্য আমাদের ‘সিস্টেম বা এপ্রোচ’ দায়ী হতে পারে।

I repeat. Communication and Language Skills, Social/ Development Studies’ Project Management and Managerial Accounting’

এই কোর্সগুলা আপনি Industrial and Social Case based না পড়লে সারাজীবন কর্মী’ হয়ে থাকবেন।

কখনোই ম্যানেজমেন্টের অংশ হতে পারবেন না।

ধন্যবাদ।

লেখাঃ তাকিত মল্লিক