বহুল কাঙ্ক্ষিত এই সেতুর সর্বশেষ স্টিলের কাঠামো (স্প্যান) বসল আজ বৃহস্পতিবার। ফলে, যুক্ত হয়ে গেল পদ্মার দুই পাড়। এক ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী হলো বাংলাদেশ, পুরো বিশ্ব। সরকার আগামী বছরের ডিসেম্বরে সেতুটি চালু করার ঘোষণা দিয়েছে।
পদ্মা সেতুর জন্য অপেক্ষা প্রায় দুই যুগের। ১৯৯৮ সালে প্রাক্-সম্ভাব্যতা যাচাই দিয়ে এই অপেক্ষার শুরু। এর মাঝখানে অর্থায়ন নিয়ে বিশ্বব্যাংকসহ দাতাদের সঙ্গে জটিলতা স্বপ্নের সেতুর ভবিষ্যৎই শঙ্কায় পড়ে যায়। এর মধ্যে সরকার বিশ্বব্যাংকের ঋণ না নিয়ে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর মতো বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেয়।
“পদ্মা সেতু বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশির জন্য একটি স্বপ্নের সেতু। এটা বহুদিন থেকেই পরিকল্পনা করা হচ্ছিল। বিশেষ করে যখন যমুনার ওপর বঙ্গবন্ধু সেতুর উদ্বোধন হয়। ১৯৯৮ সালের ২৩ জুন। তখন দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বাংলাদেশের যে জেলাগুলো আছে সেগুলো যোগাযোগের ক্ষেত্রে অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় কঠিন ছিল। বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে যদিও যাওয়া যায়, পাকশী ব্রিজ, কুষ্টিয়া হয়ে অনেক ঘোরা পথ।
সে জন্য পদ্মা সেতু পরিকল্পনার সময় দুটি জায়গায় প্রাথমিক সমীক্ষা চালানো হয়েছিল—পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া, আরেকটা হলো মাওয়া-জাজিরা।
১৯৯৮ সাল থেকেই প্রাথমিক সমীক্ষা শুরু হয়। পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে বলা হয়েছিল—আমাদের মূল উদ্দেশ্য হলো নদীটা ক্রস করা। যাতে যানবাহন নদীর ওপর অথবা নিচ দিয়ে যেতে পারে। পরামর্শক প্রতিষ্ঠান প্রথমে স্টাডি করল সেতু ও টানেল নিয়ে। দেখা গেল যে বিনিয়োগের দিক থেকে টানেলে অনেক বেশি খরচ।
পদ্মা নদীর সমস্যা কয়েকটা। যেমন—নদীর তলদেশ ক্ষয় হয়ে অনেক গভীরে যেতে পারে। টানেল নদীর তলদেশের মাটির নিচ দিয়ে নেওয়া যায়। আবার ওপর দিয়ে নেওয়ার প্রযুক্তিও আছে। এ ক্ষেত্রে প্রটেকশন অনেক বেশি দরকার। খরচ অনেক বেশি। তাই টানেলটা বাদ গেল। থাকল সেতু।
এরপর ২০০১ সালে নতুন সরকার এসে জাপানিদের দায়িত্ব দিল। আগেরটা ছিল প্রি-ফিজিবিলিটি। ২০০১ সাল থেকে শুরু হলো জাইকার অর্থায়নে ফিজিবিলিটিজ স্টাডি। ওরা আবার শুরু করল নতুন করে সাইট সিলেকশন। গোয়ালন্দ থেকে শুরু করে চাঁদপুর পর্যন্ত স্টাডি করে দেখা গেল মাওয়া-জাজিরা সাইটই সবচেয়ে ভালো।
ফিজিবিলিটিজ স্টাডিতে অনেকগুলো বিষয় বিবেচনা করতে হয়, একটা হলো—কোন দিক দিয়ে গেলে বেশি যানবাহন আকৃষ্ট হবে। দ্বিতীয়টা হলো, নদীর গতিপথ কোথায় তুলনামূলকভাবে আরো বেশি কম পরিবর্তনশীল। পদ্মা কোনো কোনো বছর দু-এক কিলোমিটার সরে যেতে পারে। এ জন্য সাইট নির্বাচন করতে হলে দেখতে হয় কোনটা বহুদিন ধরে স্ট্যাবল রয়েছে। নড়াচড়া কম করে। এ ক্ষেত্রেও দেখা গেল মাওয়া-জাজিরাই উপযুক্ত স্থান।
এরপর ২০১৪ সালে মূল সেতুর কাজ শুরু হয়। অবশ্য জমি অধিগ্রহণ, সংযোগ সড়ক নির্মাণ, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের পুনর্বাসন ও অবকাঠামো নির্মাণের কাজ এর আগেই শুরু হয়েছিল। মূল সেতু ও নদীশাসনের কাজ শুরুর পর অবশ্য নানা চ্যালেঞ্জ এসেছে। কখনো পদ্মার ভাঙন, আবার কখনো কারিগরি জটিলতায় কাজ আটকে গেছে। পরিবর্তন করতে হয়েছে নকশায়। কিন্তু কাজ থেমে থাকেনি।
[ব্রিজের ডিজাইন আমেরিকান কোম্পানি aecom এর করা। ওরা আরো দুইটা ডিজাইন করেছিলো। শেষ পর্যন্ত এই ডাবল লেয়ারের স্ট্রাকচারটা ফাইনালাইজড করা হয়৷
এর উপরে চার লেনের হাই ওয়ে, নীচে এক লাইনে ট্রেন। আর অন্যান্য ইউটিলিটি লাইন, ফাইবার অপটিক, গ্যাস ইত্যাদি।
ডিজাইন করার সময়, ভূমিকম্প, বর্ষা কালীন ভাঙন, তলদেশ থেকে বালি সরে যাওয়া, আমাদের ট্রাকগুলোর ওভার লোডের আগ্রহ, ইন্ডিয়ান ট্রেন আসার সম্ভাবনা সমস্ত কিছু নিখুঁত ভাবে হিসেব করা হয়েছে।]
এরপর আরো ডিটেইল ডিজাইন হলো। মাঝে আমরা সমস্যার মধ্যে পড়লাম অর্থায়ন নিয়ে।
২০১৩ সালের জানুয়ারিতে সরকার সিদ্ধান্ত নিল পুরো প্রকল্পটি নিজস্ব অর্থায়নে করার। অন্যান্য ছোটখাটো প্রকল্পেও আমরা বিদেশিদের টাকা ব্যবহার করি, পরামর্শক ব্যবহার করি।
কিন্তু সরকার বিশেষ করে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী একটা বলিষ্ঠ সিদ্ধান্ত নিলেন যে—না, পদ্মা সেতু আমাদের টাকায় হবে এবং বাংলাদেশি প্রকৌশলীরা এটার তদারকির দায়িত্বে থাকবে। যেখানে আমাদের জ্ঞানের অভাব আছে, অভিজ্ঞতার অভাব আছে সেখানে আমরা বিদেশিদের আনব।
এই প্রকল্পে পাঁচটা আলাদা কন্ট্রাক্ট আছে। তার মধ্যে তিনটা কারিগরি দিক থেকে তুলনামূলক সহজ। আর আর্থিক দিকটা মানে কন্ট্রাক্ট ভ্যালু, সেটাও অন্য দুটির চেয়ে তুলনামূলক কম।
এই তিনটা হলো—জাজিরা থেকে জাতীয় সড়কের সঙ্গে সংযোগ। একইভাবে মাওয়ার কাছাকাছি যে রাস্তা ছিল সেটাকে আন্তর্জাতিক মানে আনা। আর সার্ভিস এরিয়া। নির্মাণের সময় এবং নির্মাণ শেষ হয়ে গেলে এখানে অফিস এবং বাসস্থান নির্মাণ হবে।
এই তিনটি প্যাকেজ। সিদ্ধান্ত হলো এগুলো আমরা তখনই শুরু করে দেব। এ ক্ষেত্রে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে হাতিরঝিল প্রকল্প নির্মাণে সরাসরি জড়িত সেনাবাহিনীর উইংকে কাজটা দেওয়া হলো।
পাশাপাশি ছোটখাটো তিনটা চুক্তি হলো। আগে থেকেই টেন্ডার ডাকা ছিল, আন্তর্জাতিক টেন্ডার। তিনটাই পেল একটা দেশি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কাজগুলো একত্রে ঠিক ছোট বলা যায় না।
এর মধ্যে জাজিরার যে সংযোগ সড়ক সেখানে পাঁচটা সেতু আছে। এগুলো যোগ করলে দৈর্ঘ্য দাঁড়ায় প্রায় এক কিলোমিটার। তিনটি কন্ট্রাক্ট মিলে প্যাকেজ ১৪০ মিলিয়ন ডলার বা প্রায় এক হাজার কোটি টাকার মতো।
এটা হয়তো পদ্মা সেতুর তুলনায় ছোট কিন্তু আমাদের দেশের তুলনায় অনেক বড় প্যাকেজ। টেন্ডারের মাধ্যমে আমাদের দেশীয় প্রতিষ্ঠান আবদুল মোনেম একাই কাজটি পেল। যদিও তাদের সঙ্গে মালয়েশিয়ার একটা প্রতিষ্ঠান ছিল।
কিন্তু এখানে মালয়েশিয়ার কোনো লোক আমি দেখিনি। সব বাংলাদেশি ছিল। প্রশ্ন আসতে পারে মালয়েশিয়ার নামটা কেন দিতে হলো? কারণ বড় প্রকল্প করতে হলে দেখাতে হয় যে তাদের আর্থিক সংগতি আছে।
প্রতিবছর তারা কতগুলো কাজ করতে পারে। এই কন্ডিশন এরা ফুলফিল করেছিল। যেটা আমাদের কোনো কন্ট্রাক্টরই পারে না। এ জন্য ওরা মালয়েশিয়ানদের এনেছিল। কিন্তু কাজটা বাংলাদেশি ঠিকাদাররাই করেছে।
প্রকৌশলগত দিক থেকে এ কাজও কঠিন। জাজিরার রাস্তাটা মোটামুটি একসময় চর এলাকা ছিল। নরম মাটি। এর ওপর দিয়ে রাস্তা করা, তারপর আবার বন্যার লেভেলের অনেক ওপরে রাখতে হবে।
অর্থাৎ বাঁধের মতো করে তার ওপর দিয়ে রাস্তাটা করতে হবে। এমনিতে করলে সেটি দেবে যাবে। এ জন্য আমরা পুরো ব্যবস্থাটাকে কনসুলেটেড করেছি। যাতে এর ঘনত্বটা বাড়ানো যায়। এ কাজের জন্য মেশিন আনতে হয়েছে জার্মানি থেকে।
নাম হলো সেন্ট কমপ্যাকশন পাইল। এটা প্রযুক্তিগত দিক থেকে খুব দুরূহ নয়। নরম মাটির ভেতরে একটা পাইপের মতো ঢোকায়। ওপর থেকে একটা মেশিন দিয়ে চাপ দেওয়া হয় পাইপের ভেতরে।
পাইপের নিচেরটা বন্ধ করা থাকে। এই প্রক্রিয়ায় মাটিটা নিচে দেবে সরে যায়। আর পাইপটা যখন তোলে আবার তখন এর ওপর থেকে বালু ঢোকে। আমরা চাচ্ছি, যখন কোনো যানবাহন চলাচল করবে তখন এটা যেন দেবে না যায়। বহু পরীক্ষা করা হয়েছে। গাড়িও চলছে, কোনো ধরনের সমস্যা হচ্ছে না।
তিনটি হয়ে গেল। বাকি থাকল বড় দুটি।
এই দুটি প্রকৌশলগত দিক থেকে বেশি দুরূহ। বিশ্বের অন্যতম চ্যালেঞ্জিং প্রকল্প পদ্মা সেতুর এই দুটি পার্ট। একটা হলো নদী প্রশিক্ষণ। আমি বলি ‘রিভার ট্রেনিং’।
‘নদী শাসন’ আমি ব্যবহার করি না। কারণ প্রকৃতি শাসন পছন্দ করে না। তাকে প্রশিক্ষণ দেওয়া যায়। এটা সহজে হলে সেতু করে ফেলতে পারি। কিন্তু নদী যেভাবে নড়াচড়া করে, এটার ধরনই এমন।
তাতে দেখা যাবে, আমাদের সেতু দাঁড়িয়ে আছে কিন্তু দুই দিকে ওঠার উপায় নেই। এই অ্যাপ্রোচ রোড ঠেকাতে আমরা বঙ্গবন্ধু সেতু, অন্যান্য সেতুতে রিভার ট্রেনিং করি—যাতে নদীর পাড়টা ভেঙে নদীর অ্যাপ্রোচ রোডের ভেতরে ঢুকে না যায়।
নদী প্রশিক্ষণ ব্যাপারটি খুবই দুরূহ। কারণ নদীতে স্কাওয়ার (এটা একটা টেকনিক্যাল শব্দ, অর্থ নদীর তলদেশ ক্ষয় হয়ে যাওয়া) এত গভীরে যেতে পারে যে আমরা হয়তো ওপরের দিকে কিছু প্রটেকশন দিলাম। দেখা গেল নিচ থেকে সরে গেছে।
পুরোটাই কলাপস হয়ে গেছে। এ জন্য অনেক নিচে থেকে পাথর, কংক্রিট ব্লক আর কিছুটা নতুন প্রযুক্তির জিও টেক্সটাইল ব্যাগ ব্যবহার করা হলো। সিনথেটিক ফাইবার দিয়ে জিও টেক্সটাইল তৈরি হয়। এটা অনেকটা বস্তার মতো। উদ্দেশ্য হলো এর মধ্য দিয়ে যাতে পানি কিছুটা ভেতর দিয়ে যেতে পারে।
আগে বঙ্গবন্ধু সেতুতে জিও টেক্সটাইল ব্যাগ ব্যবহার করা হয়নি। কিন্তু এবার ব্যবহার করা হচ্ছে। কিছু কিছু বস্তা আছে যেগুলো ৮০০ কেজি। যা মণের হিসাবে ২০ মণ। ২০ মণি বস্তা বালুভর্তি নিচে দেওয়া হচ্ছে।
তার জন্য ড্রেজ করতে হচ্ছে ১০০ ফুটের বেশি। পানির নিচে। আগেই বলে দেওয়া হয়েছে, কত স্লোপ থাকবে, ঢালটা কত হবে, সে অনুসারে কাটতে হবে। সে জন্য স্পেশাল ড্রেজার ব্যবহার করতে হয়। যেটা জিপিএস কন্ট্রোলড, কাটতে কাটতে যায়।
এটা করতে হয় দুই দিকে দুই রকম। মাওয়া সাইটে মাটির ধরন কিছুটা ক্লে বা এঁটেল মাটি। দক্ষিণ দিকে জাজিরার সাইটে ক্লে নেই। সেখানে পলি, বালু এবং বেলে-দোআঁশ মাটি। স্রোত বেশি এলে এটা ক্ষয় হয়ে যেতে পারে। তাই এই নদী প্রশিক্ষণ করা হয়েছে জাজিরার সাইটে সাড়ে ১০ কিলোমিটারের মতো। আর মাওয়া সাইটে মাত্র দেড় কিলোমিটার। গত বছর মাওয়া সাইটে অপপ্রত্যাশিতভাবে ইল্যুশন হয়েছিল বা হঠাৎ ভাঙন দেখা যায়। তখন আরো কিছু বেশি করা হয়।
এটা উজানে বেশি করা হয়, ভাটিতে কম। সাড়ে দশের মধ্যে আট বা সাড়ে আট উজানে, আর ভাটিতে দুই। ওপর থেকে দেখলে দুই মাথায় হকিস্টিকের মতো বাঁকা দেখা যায়। যদি গুগল ম্যাপে যান, তবে দেখবেন সেখানেও বাঁকানো।
পদ্মা নদীতে বন্যার সময় যে প্রবাহ হতে পারে, আমরা তো হিসাব করি ১০০ বছরের জন্য। কোন বছর কত পানি গেছে তার যে রেকর্ডগুলো আছে সেটা বিভিন্ন হিসাব-নিকাশ করে দেখা গেছে। আগামী ১০০ বছরে প্রতি সেকেন্ডে এক লাখ ৪০ হাজার ঘনমিটার পানি যেতে পারে।
এটা পৃথিবীর মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। প্রথম আমাজান। পদ্মা হলো দুই নম্বর। এই পানিটা তো আমাদের নিতে হবে ব্রিজের নিচ দিয়ে। সেই ব্যবস্থা রাখতে হবে যেন পানি সেতুর নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে যেতে পারে।
এভাবে বললে অনেকেই বুঝবেন না। একটা ধারণা দেওয়া যায়, এই যে পানি প্রবাহ এর ২০ সেকেন্ডের পানি যদি আটকাতে পারতাম, তাহলে বৃহত্তর ঢাকা শহরের এক কোটি ৬০ লাখ লোকের এক দিনের খাওয়ার পানি হতো।
এগুলো হলো নদী প্রশিক্ষণের চ্যালেঞ্জ। পৃথিবীর খুব কম ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আছে, যারা এ কাজটি করতে পারে।
স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে তীর ভাঙন, নদীর তলদেশ ক্ষয়, ভূমিকম্প আর ক্লাইমেট চেঞ্জের ডাটা, সব হিসাব-নিকাশ করে কমপক্ষে ৬২ মিটার পর্যন্ত পাইল করলেই হতো।
তবে এখানে আরেক সমস্যা। প্রথম থেকেই বলা হচ্ছে, এতে একটা রেলপথ থাকবে। এটা সাধারণ রেল না। এটাতে যাতে দুটি কনটেইনার নিয়ে মালগাড়ি যেতে পারে সে ব্যবস্থা রাখতে হবে।
বাংলাদেশে সাধারণত দেখি একটি কনটেইনার নেয়। কিন্তু এখানে করা হচ্ছে ভবিষ্যতে একটার ওপর আরেকটি কনটেইনার অর্থাৎ দোতলা কনটেইনার নিয়ে ট্রেন যাতে যেতে পারে।
এ জন্য আমরা যে পাইলগুলো করছি সেটি একটি বিশ্বরেকর্ড। এত গভীরে পাইল কোনো সেতুতে, পৃথিবীর কোনো দেশে গাঁথা হয়নি। ১২২ মিটার! মানে হলো একটা ৪০ তলা দালানের যে উচ্চতা তার সমান হবে।
এখানে আরেকটা নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করছি আমরা—বেজ আইসলিউশন। এখানে ইস্পাতের সেতু হচ্ছে। অনেকটা হার্ডিঞ্জ ব্রিজের মতো। বঙ্গবন্ধু সেতু হচ্ছে পুরোটাই কংক্রিটের ব্রিজ। আর পদ্মায় ইস্পাতের তিন দিক।
নিচের দিক দিয়ে রেল যাবে ইস্পাতের কাঠামোর ওপর দিয়ে। আমরা ছবি দেখি যে অনেকগুলো ট্রায়াঙ্গল এই দুটিই হলো ইস্পাতের। আর শুধু ওপরের যে অংশটা যেটা দিয়ে মোটরগাড়ি চলাচল করবে সেটা কংক্রিটের।
সব মিলে ৪১টি স্প্যান, দেড় শ মিটার করে ৬.১৫ কিলোমিটার। দুই এন্ডে দুটি সাপোর্ট, প্রতিটির নিচে ছয়টা করে পাইল।
এগুলোর আবার সোজা না, নিচের দিকে বাঁকা। বাঁকা করার কারণ আছে, যখন ভূমিকম্প আসে বা বাইরে থেকে কোনো লোড আসে তখন তা মোকাবেলা করার জন্য।
দেখবেন যখন প্রচণ্ড জোরে বাতাস হয়, আমেরিকা বা কোনো কোস্টাল এরিয়াতে যখন সাংবাদিকরা রিপোর্ট করেন তখন দেখা যায় তারা দুই পা একটু ফাঁকা করে দাঁড়ায়। সোজা দাঁড়ানো থাকলে বাতাসে উল্টে যাওযার আশঙ্কা থাকে।
এ কারণে ইনভার্টেড ভি-এর মতো করলে আরো বেশি স্ট্যাবল হয়। এভাবে ছয়টি করে পাইল ব্যবহার করা হয়েছে, যাতে বাইরের দিক থেকে আসা চাপ সামলে নিতে পারে। এটাও কিন্তু ইঞ্জিনিয়ারিং প্ল্যান।
এখানে যে প্রযুক্তি বেজ আইসলিউশন, এটাতে ভূমিকম্পের সময় ফাউন্ডেশন মুভ করবে কিন্তু ওপরেরটা মুভ করবে না। নড়াচড়ার একটা ব্যবস্থা থাকবে। এটাকে পেন্ডুলাম বিয়ারিং বলে। সেটা ব্যবহার করা হচ্ছে।
এর সাহায্যে স্লাইড করতে পারে। আবার ফিরে আসবে। বিশ্বে এটা অনেক জায়গায় ব্যবহার করা হয়েছে। তবে এত বড় প্রকল্পে এখনো ব্যবহার করা হয়নি।
সব মিলে এখন পর্যন্ত মোটামুটি ভালোই এগিয়ে যাচ্ছে। সমস্যা হচ্ছে এটি একটি বিরাট প্রজেক্ট। শুধু বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে না। বৈশ্বিকভাবে তুলনা করলেও এটা খুবই বড় এবং চ্যালেঞ্জিং। সমস্যা কিছু হবেই, সে সমস্যা আমরা সমাধানেরও চষ্টা করছি।”
এক সাক্ষাতকারে জানিয়েছিলেন অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী, পদ্মা সেতুর আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ প্যানেলের চেয়ারম্যান
পড়ুনঃ এক নজরে জাতীয় অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী
আজ দুপুর ১২টার দিকে সর্বশেষ স্প্যানটি বসানোর কাজ শেষ হয়। ৪১তম এই স্প্যান সেতুর ১২ ও ১৩ নম্বর খুঁটির (পিলার) ওপর বসানো হয়।
গতকাল বুধবার বিকেলেই স্প্যানটি খুঁটি থেকে প্রায় ২০ মিটার দূরে ভাসমান ক্রেনে এনে রাখা হয়। আজ সকাল ১০টার দিকে স্প্যানটি নিয়ে খুঁটির দিকে রওনা দেয় ভাসমান ক্রেন। এ সময় ঘটনাস্থলে এক উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়।
সর্বশেষ স্প্যানটির এক পাশে টাঙানো হয় বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা। অন্য পাশে চীনের পতাকা।
স্প্যানটি নিয়ে ভাসমান ক্রেন যখন খুঁটির দিকে রওনা দেয়, তখন উপস্থিত কর্মকর্তাসহ সবাই উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা সঙ্গে নিয়ে কর্মকর্তা ছবি তোলেন।
সকাল সাড়ে ১০টার দিকে স্প্যান নিয়ে ভাসমান ক্রেন খুঁটির কাছে পৌঁছে যায়। তারপর ১২ ও ১৩ নম্বর খুঁটির ওপর স্প্যানটি বসানোর কাজ শুরু হয়।
সবশেষ স্প্যান বসানোর কাজ দেখতে অনেক মানুষ নৌকা, ট্রলার, স্পিডবোট ভাড়া করে কাছাকাছি ভিড় জমায়। আরও কাছে আসতে চাইলে তাদের দূরত্ব বজায় রাখতে সরিয়ে দেওয়া হয়। সবশেষ স্প্যান বসানোর দৃশ্য দেখতে দেখতে দর্শনার্থীরা উল্লাস প্রকাশ করতে থাকে।
সর্বশেষ স্প্যানটি বসানোর মাধ্যমে আলোচিত পদ্মা সেতুর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বড় কাজের সমাপ্তি হলো। এরপর সড়ক ও রেলের স্ল্যাব বসানো সম্পন্ন হলে সেতু দিয়ে যানবাহন ও ট্রেন চলাচল করতে পারবে।
এতে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২৯ জেলার সঙ্গে সারা দেশের সরাসরি সংযোগ স্থাপিত হওয়ার পথ উন্মুক্ত হবে।
পদ্মা সেতুর প্রথম স্প্যানটি খুঁটির ওপর বসেছিল ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর। বাকি ৪০টি স্প্যান বসাতে তিন বছর দুই মাস লাগল।
করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি এবং বন্যার অত্যধিক স্রোত পদ্মা সেতুর কাজে কিছুটা গতি কমিয়ে দিয়েছিল। করোনা ও বন্যা পরিস্থিতির ধকল কাটিয়ে গত ১১ অক্টোবর ৩২তম স্প্যান বসানোর পর অনুকূল আবহাওয়া পাওয়া যায়।
কারিগরি কোনো জটিলতাও তৈরি হয়নি। ফলে, টানা বাকি স্প্যানগুলো বসানো সম্ভব হয়।
সাধারণত সেতু স্টিলের অথবা কংক্রিটের হয়। কিন্তু পদ্মা সেতুটি হচ্ছে স্টিল ও কংক্রিটের মিশ্রণে। সেতুর মূল কাঠামোটা স্টিলের, যা স্প্যান হিসেবে পরিচিত।
খুঁটি এবং যানবাহন চলাচলের পথ কংক্রিটের। প্রতিটি স্প্যানের দৈর্ঘ্য ১৫০ মিটার। ৪২টি খুঁটির সঙ্গে স্প্যানগুলো জোড়া দেওয়ার মাধ্যমে পুরো সেতু দৃশ্যমান হয়েছে।
পদ্মার মূল সেতু, অর্থাৎ নদীর অংশের দৈর্ঘ্য ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। অবশ্য দুই পারে আরও প্রায় চার কিলোমিটার সেতু আগেই নির্মাণ হয়ে গেছে। এটাকে বলা হয় ভায়াডাক্ট। এর মধ্যে স্টিলের কোনো স্প্যান নেই।
পদ্মা সেতু দ্বিতলবিশিষ্ট। স্টিলের স্প্যানের ওপর দিয়ে চলবে যানবাহন। এই পথ তৈরির জন্য কংক্রিটের স্ল্যাব বসানোর কাজ চলছে। সম্পন্ন হয়ে গেলে পিচঢালাই করা হবে। পুরো কাজ শেষ হলে যানবাহন চলাচলের পথটি হবে ২২ মিটার চওড়া, চার লেনের। মাঝখানে থাকবে বিভাজক।
স্প্যানের ভেতর দিয়ে চলবে ট্রেন। সেতুতে একটি রেললাইনই থাকবে। তবে এর ওপর দিয়ে মিটারগেজ ও ব্রডগেজ—দুই ধরনের ট্রেন চলাচলেরই ব্যবস্থা থাকবে। ভায়াডাক্টে এসে যানবাহন ও ট্রেনের পথ আলাদা হয়ে মাটিতে মিশেছে।
কাজ যেভাবে এগিয়েছে
মূল সেতুর কাজ শুরু হয় ২০১৪ সালের নভেম্বরে। কাজ পায় চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি। তাদের সঙ্গে ১২ হাজার ১৩৩ কোটি টাকার চুক্তি হয়।
চার বছরের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা ছিল। কাজ শুরুর পরের বছরই মাওয়ায় স্থাপিত নির্মাণ মাঠের বেচিং প্ল্যান্টসহ একাংশ নদীভাঙনে বিলীন হয়ে যায়।
২০১৭ সালে প্রতিটি খুঁটির নিচে মাটি পরীক্ষায় ২২টি খুঁটির নিচে নরম মাটি পাওয়া যায়। তখন নকশা সংশোধনের প্রয়োজন দেখা দেয়। ফেরিঘাট স্থানান্তরেও সময়ক্ষেপণ হয়।
শুরুতে প্রতিটি খুঁটির নিচে ছয়টি করে পাইল (মাটির গভীরে স্টিলের ভিত্তি বসানো) বসানোর পরিকল্পনা ছিল। যুক্তরাজ্যের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নকশা সংশোধন করে একটি করে পাইল বাড়িয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত দেয়।
এ জন্য খুঁটি নির্মাণকাজ পুরোপুরি শেষ হতে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত লেগে যায়। সব মিলিয়ে এই কাজে প্রায় এক বছর বাড়তি লাগে। এ জন্য মাঝে কাজে কিছুটা গতি হারায়।
ঠিকাদারকে ২ বছর ৮ মাস বাড়তি সময় দেওয়া হয়। নভেম্বর পর্যন্ত মূল সেতুর ৯১ শতাংশ কাজ শেষ হয়।
নদীশাসনের কাজও শুরু হয় ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চীনের সিনোহাইড্রো করপোরেশন। তাদের সঙ্গে চুক্তি ৮ হাজার ৭০৮ কোটি টাকা।
কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল চার বছরে। ২০১৭ সালের দিকে স্রোতের কারণে মাওয়ায় নদীর তলদেশে গভীর খাদ তৈরি হয়।
এ ছাড়া মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তে বিভিন্ন সময় ভাঙনও দেখা দেয়। ফলে নদীশাসনের কাজে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটে। এখন আড়াই বছর সময় বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
নভেম্বর পর্যন্ত নদীশাসনের কাজ শেষ হয়েছে ৭৬ শতাংশ। দুই পারে সংযোগ সড়ক, টোল প্লাজা ও অবকাঠামো নির্মাণের কাজ আগেই শেষ হয়ে গেছে।
এ ছাড়া ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনও সম্পন্ন হয়েছে। সব মিলিয়ে নভেম্বর পর্যন্ত পদ্মা সেতু প্রকল্পের কাজ এগিয়েছে ৮২ দশমিক ৫০ শতাংশ.
ব্যয় ও সেতুর প্রভাব
২০০১ সালের ৪ জুলাই পদ্মা সেতু নির্মাণে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিস্তারিত সমীক্ষার পর ২০০৪ সালে মাওয়া-জাজিরা প্রান্তে পদ্মা সেতু নির্মাণের পরামর্শ দেয় জাপানের দাতা সংস্থা জাইকা।
২০০৭ সালে একনেকে পাস হওয়া পদ্মা সেতু প্রকল্পের ব্যয় ছিল ১০ হাজার ১৬২ কোটি টাকা। ২০১১ সালে ব্যয় বাড়িয়ে করা হয় ২০ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা। ২০১৬ সালে দ্বিতীয় দফা সংশোধনের পর ব্যয় দাঁড়ায় ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা।
এরপর প্রকল্প প্রস্তাব সংশোধন না করে ২০১৮ সালের জুনে আবারও ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা। প্রকল্প শেষ হওয়ার আগে আরেক দফা প্রস্তাব সংশোধন করতে হবে।
পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে ১ দশমিক ২৩ শতাংশ হারে জিডিপি বৃদ্ধি পাবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জিডিপি বাড়বে ২ দশমিক ৩ শতাংশ।
মোংলা বন্দর ও বেনাপোল স্থলবন্দরের সঙ্গে রাজধানী এবং বন্দরনগরী চট্টগ্রামের সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হবে।
সব মিলিয়ে পদ্মা সেতু অর্থনীতিতে যেমন প্রভাব ফেলবে, সহজ হবে মানুষের চলাচলও।
পদ্মা সেতুর কাজ কবে শেষ হচ্ছে
পদ্মা সেতু নির্মাণকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি জানিয়েছে, পদ্মা সেতু যান চলাচলের উপযোগী হতে ২০২২ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত লেগে যাবে।
তবে সরকার চেষ্টা করছে, স্বাধীনতার ৫০ তম বছরের মধ্যেই পদ্মা সেতু উদ্বোধন করার। অর্থাৎ সরকার ২০২১ সালের মধ্যে পদ্মা সেতুর কাজ সম্পন্ন করে যান চলাচল শুরু করতে চায়।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেছেন, আগামী এক বছরের মধ্যেই সেতুটি চালু হবে। পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হতে ১০ মাস থেকে এক বছর লাগবে।
পদ্মা সেতু প্রকল্পের পরিচালক মোঃ. শফিকুল ইসলাম বলেছেন, ”সেতুর কাজ শেষ হতে ২০২২ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত সময় লেগে যাবে বলে জানিয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
তবে আমরা তাদের সাথে আলোচনা করছি যাতে এই সময় এগিয়ে নিয়ে আসা যায়। আমরা স্বাধীনতার ৫০তম বছর, ২০২১ সালের মধ্যেই সেতুটি চালু করতে চাই।”
তবে কর্মকর্তারা বলছেন, এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সরকার অনুরোধ করতে পারে। কিন্তু আন্তর্জাতিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ওপর জোর করার সুযোগ নেই। তবে প্রতিষ্ঠানটি কাজ এগিয়ে নিতে সক্ষম হলে সেটা ২০২১ সালে চালু হতে পারে।
কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি সেটা না পারলে ২০২২ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই।
সেতু চালু করার জন্য এর আগে সর্বশেষ সময় নির্ধারণ করা হয়েছিল ২০২১ সালের জুন মাস। কিন্তু করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে সেই সময় ১০ মাস বেড়েছে।
সেতু পারাপারের টোল কত হবে
পদ্মা সেতু প্রকল্পের পরিচালক মোঃ. শফিকুল ইসলাম জানাচ্ছেন, সাধারণত যেসব নদীতে ফেরি চলাচল করে, সেখানে একটি স্ট্যান্ডার্ড প্রাকটিস রয়েছে যে, ফেরি পারাপারের সময় যানবাহনগুলোকে যে পরিমাণ টোল দিতে হয়, সেতু পারাপারের ক্ষেত্রেও সেটাই টোল নির্ধারণ করা হয়।
সাধারণত বিদেশি অর্থায়নে কোন সেতু নির্মিত হলে কত টাকা টোল হবে, সেটা নির্ধারণে দাতাদের পরামর্শ বা শর্ত থাকে। কিন্তু দেশীয় অর্থায়নে নির্মিত সেতুর টোল কত হবে, সেরকম কোন নিয়মনীতি নেই।
আপাতত সরকারের সেতু বিভাগ পদ্মা সেতুর জন্য যে টোল হারের প্রস্তাব করেছে, সেটি ফেরি টোলের চেয়ে দেড়গুণ বেশি।
সেতু চালু হওয়ার পর পরবর্তী ১৫ বছরের জন্য মোটরসাইকেলের জন্য ১০৫ টাকা, কার জিপের জন্য ৭৫০ টাকা, ছোট বাসের জন্য ২০২৫ টাকা, বড় বাসের জন্য ২৩৭০ টাকা, পাঁচ টনের ট্রাকের জন্য ১৬২০ টাকা, আট টনের বড় ট্রাকের জন্য ২৭৭৫ টাকা, মাইক্রোবাসের জন্য ১২৯০ টাকা টোল প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রতি ১৫ বছর টোলের হার ১০ শতাংশ বাড়ানো হবে। তবে এখনো এই প্রস্তাবের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি সরকার।
তবে শেষ পর্যন্ত টোল কতো হবে, সেটা নির্ভর করে সরকারি সিদ্ধান্তের ওপর।
বাংলাদেশের অর্থ বিভাগের সঙ্গে সেতু বিভাগের চুক্তি অনুযায়ী, সেতু নির্মাণে ২৯ হাজার ৮৯৩ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে সরকার।
১ শতাংশ সুদ হারে ৩৫ বছরের মধ্যে সেটি পরিশোধ করবে সেতু কর্তৃপক্ষ। সেই পরিশোধ বিবেচনায় নিয়েই টোলের এই হার প্রস্তাব করা হয়েছে।
ফেরি কি চালু থাকবে?
এই বিষয়ে এখনো কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে বঙ্গবন্ধু সেতুর ক্ষেত্রে দেখা গেছে, সেতু চালু হওয়ার পরেও আরিচা-নগরবাড়ী রুটে ফেরি পারাপার চালু ছিল।
সুতরাং সেতু চালু হওয়ার পরেও ফেরি চলবে কিনা, সেটি নির্ভর করবে চাহিদার ওপর।
তবে কর্মকর্তারা বলছেন, যেহেতু পদ্মা সেতু পার হয়ে একদিকে ভাঙ্গা, অন্যদিকে শরীয়তপুর-মাদারীপুর যাওয়া সহজ, ফলে এখানে আলাদাভাবে ফেরির প্রয়োজন হবে না। সুতরাং এই রুটে ফেরি চালু থাকার সম্ভাবনা অনেক কম।
সেতুর এখন কী কাজ বাকি রয়েছে?
পদ্মা সেতু প্রকল্পের পরিচালক মোঃ. শফিকুল ইসলাম বলছেন, ”এখন আমাদের অনেকগুলো কাজ বাকি থাকছে। যেমন রোডওয়ে স্ল্যাব, (এটা ৪০ শতাংশের বেশি হয়ে গেছে), রেলওয়ে স্ল্যাব (এটা ৬০ শতাংশের বেশি হয়ে গেছে), ব্রিজের রেলিং, স্ট্রিট ও আর্কিটেকচারাল লাইটিং, গ্যাস ও বিদ্যুৎ লাইন স্থাপন করতে হবে।”
রোডওয়ে স্ল্যাবের ২৯১৭টির মধ্যে ১২৮৫টি স্থাপন করা হয়েছে।
”ঠিকাদারের সঙ্গে আমাদের আলাপ-আলোচনা চলছে। আমরা চেষ্টা করছি, যত তাড়াতাড়ি পারা যায় এসব কাজ শেষ করার জন্য। কারণ সেতুর কাজ দ্রুত শেষ করার জন্য আমাদের ওপর প্রত্যাশা-চাহিদা অনেক বেশি রয়েছে। ” তিনি বলছেন।
আগামী একমাসের মধ্যেই সেতুর কাজ সম্পন্ন করার একটি সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণা করা হতে পারে বলে তিনি জানান।
রেল যোগাযোগ কবে চালু হবে
সেতুর নিচ দিয়ে রেল চলাচল করবে। তবে সেতুর ওপর রেল লাইন স্থাপনের কাজ অর্ধেকের বেশি সম্পন্ন হয়ে গেলেও ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু পর্যন্ত এবং পদ্মা সেতুর পর থেকে রেলের লাইনের কাজের এখনো অনেক বাকি রয়েছে।
ফলে সেতু উদ্বোধন হলেও রেল কবে থেকে চলাচল করতে শুরু করবে, তা এখনো পরিষ্কার নয়।
তবে সেতুর ওপরের রেললাইনের ২ হাজার ৯৫৯টি স্ল্যাবের মধ্যে ১৯৩০টি এর মধ্যেই স্থাপন করা হয়েছে।
পদ্মা সেতু কী পরিবর্তন আনবে
বাংলাদেশে এর আগে আর কোন সরকারি অবকাঠামো এতো বেশি অর্থ খরচ করে তৈরি করা হয়নি। বলা হচ্ছে, দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে এই সেতুটি।
অর্থনীতিবিদ নাজনীন আহমেদ বলছেন, ”পদ্মা সেতু বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে বিশাল ভূমিকা রাখতে যাচ্ছে। প্রথমত, সেটি মানুষের ও পণ্যের যাতায়াতের সময় বাঁচিয়ে দেবে। ফলে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, ব্যবসাবাণিজ্য বৃদ্ধি পাবে, কর্মসংস্থান বাড়বে।”
”আর দ্বিতীয় যেটা হবে, এই সেতুকে ঘিরে অনেক অবকাঠামোগত উন্নয়ন হবে। পণ্য পরিবহন সহজ হওয়ায় অনেকে ওই এলাকায় গিয়ে বিনিয়োগ করবেন।
দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়নে এটা ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। সেসব এলাকায় অনেকে নতুন নতুন কারখানা খুলবেন, ব্যবসা-বাণিজ্য করবেন।”
তিনি বলছেন, হয়তো সেতু হওয়ায় সেখানকার কিছু মানুষ পেশা হারাবে, কিন্তু স্বল্পমেয়াদ এবং দীর্ঘমেয়াদী অর্থনৈতিক সুফলই বেশি।
পদ্মা সেতু নিয়ে আরও কিছু তথ্য
- পদ্মা সেতুতে গাড়ির লেন থাকবে একেক পাশে দুটো করে এবং একটি ব্রেকডাউন লেন। অর্থাৎ মোট ছয় লেনের ব্রিজ হচ্ছে, যদিও একে বলা হচ্ছে ফোর লেনের ব্রিজ।
- পদ্মা সেতুর দৈর্ঘ্য (পানির অংশের) ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। তবে ডাঙার অংশ ধরলে সেতুটির মোট দৈর্ঘ্য প্রায় নয় কিলোমিটার।
- দ্বিতল পদ্মা সেতুর এক অংশ থাকবে মুন্সিগঞ্জের মাওয়ায়, আরেক অংশ শরীয়তপুরের জাজিরায়।
- সেতুর ওপরে গাড়ি চলাচল করবে, রেল চলবে নিচের অংশে।
- পদ্মা সেতু নির্মাণে মোট খরচ করা হচ্ছে ৩০ হাজার ১৯৩ দশমিক ৩৯ কোটি টাকা। চৌঠা ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যয় করা হয়েছে ২৪ হাজার ১১৫ দশমিক ০২ কোটি টাকা। এসব খরচের মধ্যে রয়েছে সেতুর অবকাঠামো তৈরি, নদী শাসন, সংযোগ সড়ক, ভূমি অধিগ্রহণ, পুনর্বাসন ও পরিবেশ, বেতন-ভাতা ইত্যাদি।
ইতিমধ্যে পদ্মা সেতু কয়েকটি রেকর্ড করে ফেলেছে
প্রকল্প সূত্র বলছে, বিশ্ব রেকর্ডের সংখ্যা তিনটি।
প্রথমটি সেতুর পাইলিং নিয়ে। পদ্মা সেতুর খুঁটির নিচে সর্বোচ্চ ১২২ মিটার গভীরে স্টিলের পাইল বসানো হয়েছে। এসব পাইল তিন মিটার ব্যাসার্ধের।
বিশ্বে এখনো পর্যন্ত কোনো সেতুর জন্য এত গভীরে পাইলিং প্রয়োজন হয়নি এবং পুরো পাইল বসানো হয়নি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা।
দ্বিতীয় রেকর্ড হলো, ভূমিকম্পের বিয়ারিং সংক্রান্ত। এই সেতুতে ‘ফ্রিকশন পেন্ডুলাম বিয়ারিংয়ের’ সক্ষমতা হচ্ছে ১০ হাজার টন। এখন পর্যন্ত কোনো সেতুতে এমন সক্ষমতার বিয়ারিং লাগানো হয়নি।
রিখটার স্কেলে ৯ মাত্রার ভূমিকম্পে টিকে থাকার মতো করে পদ্মা সেতু নির্মাণ হচ্ছে।
তৃতীয় রেকর্ড নদীশাসন–সংক্রান্ত। নদীশাসনে চীনের ঠিকাদার সিনোহাইড্রো করপোরেশনের সঙ্গে ১১০ কোটি মার্কিন ডলারের (প্রায় ৯ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা) চুক্তি হয়েছে। এর আগে নদীশাসনে এককভাবে এত বড় দরপত্র আর হয়নি।
এ ছাড়া পদ্মা সেতুতে পাইলিং ও খুঁটির কিছু অংশে অতি মিহি (মাইক্রোইন) সিমেন্ট ব্যবহার করা হয়েছে। এসব সিমেন্ট অস্ট্রেলিয়া থেকে আনা হয়েছে।
এ ধরনের অতি মিহি সিমেন্ট সাধারণত ব্যবহার করা হয় না বলে জানিয়েছেন সেতু বিভাগের কর্মকর্তারা।
চলতে পারবে ৫ তলা উচ্চতার নৌযান
পদ্মা সেতুর নদীতে থাকা ৪০টি পিলারের নিচের পাইল ইস্পাতের। আর ডাঙার দুটি পিলারের পাইল কংক্রিটের। নদীতে যেসব পাইল বসানো হয়েছে, সেগুলো তিন মিটার ব্যাসার্ধের ইস্পাতের বড় বড় পাইপ, যার ভেতরটা ফাঁপা।
২২টি পিলারের নিচে ইস্পাতের এমন ৬টি করে পাইল বসানো হচ্ছে। বাকি ২২টিতে বসানো হয়েছে ৭টি করে পাইল। আর ডাঙার দুটি পিলারের নিচের পাইল আছে ৩২টি, যা গর্তের মধ্যে রড-কংক্রিটের ঢালাইয়ের মাধ্যমে হচ্ছে।
নদীর পানি থেকে প্রায় ১৮ মিটার উঁচু পদ্মা সেতুর তলা। পানির উচ্চতা যতই বাড়ুক না কেন, এর নিচ দিয়ে পাঁচতলার সমান উচ্চতার যেকোনো নৌযান সহজেই চলাচল করতে পারবে।
উচ্চতা সমান কেন?
পদ্মা সেতুটির মূল কাঠামোর উচ্চতা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রায় সমান। এর মূল কারণ, সেতুর ভেতর দিয়ে রেললাইন আছে। সড়ক ও রেললাইন একসঙ্গে থাকলে সেতু সাধারণত সমান হয়। না হলে ট্রেন চলাচল কঠিন হয়ে পড়ে।
প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন, পদ্মা নদীর পানির প্রবাহ পরিবর্তন হয়। কখনো মাওয়া প্রান্তে, কখনো জাজিরা প্রান্তে সরে যায়। আবার মাঝখান দিয়েও স্রোত প্রবাহিত হয়। এ জন্য নৌযান চলাচলের পথ সব স্থানেই সমান উচ্চতায় রাখার চেষ্টা রয়েছে সেতুটিতে।
পদ্মা সেতু দিয়ে দৈনিক চলবে ২৪ হাজার যান
স্বপ্নের পদ্মা সেতু চালু হলে এর সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপিত হবে দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি জেলার। তাই বঙ্গবন্ধু সেতুর তুলনায় পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে দৈনিক যানবাহন চলাচলও হবে কয়েক গুণ বেশি। কিন্তু সেই সংখ্যা কত?
পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে প্রতিবছর কী পরিমাণে যানবাহন চলাচল করবে, তা নিয়ে ২০০৯ সালে একটি বিস্তারিত সমীক্ষা করে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)।
এতে দেখা যায়, ২০২২ সালের শুরুতে যদি পদ্মা সেতু উদ্বোধন হয়, তাহলে ওই বছর সেতু দিয়ে চলাচল করবে প্রায় ২৪ হাজার যানবাহন। সংখ্যাটি প্রতিবছরই বাড়বে। ২০৫০ সালে প্রায় ৬৭ হাজার যানবাহন চলবে পদ্মা সেতু দিয়ে।
সরকার ২০২১ সালের ডিসেম্বরে পদ্মা সেতু যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়ার চিন্তা করছে। তবে সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, সময় আরও কিছুটা বেশি লাগতে পারে।
চালু হলে দেশের মানুষের প্রায় দুই দশক ধরে অপেক্ষার অবসান হবে। আওয়ামী লীগ সরকার ১৯৯৯ সালে পদ্মা সেতু তৈরির প্রাক্-সম্ভাব্যতা যাচাই করেছিল। তখন থেকেই মূলত স্বপ্ন বুনতে থাকে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমের মানুষ।
পদ্মা সেতু চালু হলে দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোর সঙ্গে রাজধানীর যাতায়াতে গড়ে অন্তত দুই ঘণ্টা সময় বেঁচে যাবে। এটা শুধু অভ্যন্তরীণই নয়, আঞ্চলিক যোগাযোগব্যবস্থায়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
সবুজ উদ্দিন খান, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (ঢাকা অঞ্চল)
সেতু বিভাগের তথ্য বলছে, ২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মূল সেতুর নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন।
২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পদ্মা সেতুর প্রথম স্প্যান বসানো হয়। আজ বৃহস্পতিবার সেতুতে ৪১তম অর্থাৎ শেষ স্প্যানটি বসানোর কথা।
এডিবির সমীক্ষা বলছে, পদ্মা সেতু দিয়ে ২০২২ সালে যে ২৪ হাজার যানবাহন চলবে, তার মধ্যে বাস চলবে ৮ হাজার ২৩৮টি, ট্রাক ১০ হাজার ২৪৪টি, মাইক্রোবাস ও ব্যক্তিগত গাড়ি চলবে ৫ হাজারের বেশি।
সমীক্ষায় আরও প্রাক্কলন করা হয়েছে, ২০২৫ সালে পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে দিনে যানবাহন চলাচল বেড়ে দাঁড়াবে ২৭ হাজার ৮০০টি।
২০৩০ সালে হবে ৩৬ হাজার ৭৮৫। ২০৪০ সালে দিনে যানবাহন চলাচল বেড়ে দাঁড়াবে ৫১ হাজার ৮০৭টি।
পদ্মা সেতু নির্মাণ করে লাভ কী হবে, তা নিয়ে ২০০৯ সালে আলাদা সমীক্ষা করে এডিবি ও জাপানের সহযোগিতা সংস্থা জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)।
এতে দেখা যায়, পদ্মা সেতুতে বিনিয়োগের অর্থনৈতিক প্রভাব বা ইকোনমিক রেট অব রিটার্ন (ইআরআর) দাঁড়াবে বছরে ১৮ থেকে ২২ শতাংশ।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (ঢাকা অঞ্চল) সবুজ উদ্দিন খান বলেন, পদ্মা সেতু চালু হলে দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোর সঙ্গে রাজধানীর যাতায়াতে গড়ে অন্তত দুই ঘণ্টা সময় বেঁচে যাবে।
এটা শুধু অভ্যন্তরীণই নয়, আঞ্চলিক যোগাযোগব্যবস্থায়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
যানবাহন চলাচল যত বাড়বে, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ততই বাড়বে। পদ্মা সেতু নির্মাণ করে লাভ কী হবে, তা নিয়ে ২০০৯ সালে আলাদা সমীক্ষা করে এডিবি ও জাপানের সহযোগিতা সংস্থা জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)।
এতে দেখা যায়, পদ্মা সেতুতে বিনিয়োগের অর্থনৈতিক প্রভাব বা ইকোনমিক রেট অব রিটার্ন (ইআরআর) দাঁড়াবে বছরে ১৮ থেকে ২২ শতাংশ।
পরবর্তী সময়ে সেটা বাড়তে পারে। কারণ হিসেবে সেতু বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, বঙ্গবন্ধু সেতু চালু হওয়ার আগে সমীক্ষায় বলা হয়েছিল, ইআরআর হবে ১৫ শতাংশ। পরবর্তী সময়ে তা সর্বোচ্চ ১৮ শতাংশ পর্যন্ত উঠেছে।
স্প্যান বসানোর দিনগুলো
প্রথম স্প্যান: ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ৩৭ ও ৩৮ নম্বর পিয়ারের ওপর বসানো হয় ‘৭ এ’ স্প্যানটি। এটি বসানো হয় সেতুর জাজিরা প্রান্তে। ওই সময় সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের উপস্থিত ছিলেন।
দ্বিতীয় স্প্যান: ২০১৮ সালের ২৮ জানুয়ারি জাজিরা প্রান্তে ৩৮ ও ৩৯ নম্বর পিলারের ওপর বসে ‘৭ বি’ স্প্যানটি। এতে ৩০০ মিটার দৃশ্যমান হয় পদ্মা সেতু।
তৃতীয় স্প্যান: ২০১৮ সালের ১১ মার্চ ‘৭ সি’ নম্বর স্প্যানটি বসে ৩৯ ও ৪০ নম্বর পিলারের ওপর। এতে সেতুর দৃশ্যমান হয় ৪৫০ মিটার।
চতুর্থ স্প্যান: ২০১৮ সালের ১৩ মে ‘৭ ই’ স্প্যানটি বসে আগেরটির পাশের ৪০ ও ৪১ নম্বর পিলারের ওপর। দৃশ্যমান হয় ৬০০ মিটার।
পঞ্চম স্প্যান: ‘৭ এফ’ স্প্যানটি বসে ২০১৮ সালের ২৯ জুন। এটাতে ৪১ ও ৪২ নম্বর পিলারের ওপর স্থাপন করা হয়। দৃশ্যমান হয় পৌনে এক কিমি (৭৫০ মিটার)।
ষষ্ঠ স্প্যান: ছয় মাস ২৫ দিনের মাথায় বসে ষষ্ঠ স্প্যান। ২০১৯ সালের ২৩ জানুয়ারি পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তে ৩৬ ও ৩৭ নম্বর পিলারের ওপর ‘৬ এফ’ স্প্যানটি বসানো হয়েছে। ফলে সেতুর মূল কাঠামোর ৯০০ মিটার দৃশ্যমান হয়।
জাজিরা প্রান্তের তীরের দিকের ষষ্ঠ শেষ স্প্যান বসে। সপ্তম স্প্যান: পদ্মা সেতুর সপ্তম স্প্যানটি বসে ২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি।
জাজিরা প্রান্তে পদ্মা সেতুর ৩৫ ও ৩৬ নম্বর পিলারের ওপর স্প্যান ‘৬-ই’ বসানোর মাধ্যমে এই প্রান্তে দৃশ্যমান হয় সেতুর ১০৫০ মিটার।
অষ্টম স্প্যান: ২০১৯ সালের ২২ মার্চ পদ্মা সেতুর ৩৫ ও ৩৪ নম্বর পিলারের ওপর অষ্টম স্প্যানটি বসানো হয়। ‘৬ ডি’ স্প্যান বসানোয় ১২০০ মিটারের সেতু দৃশ্যমান হয়।
নবম স্প্যান: পদ্মা সেতুর নবম স্প্যানটি বসে মাওয়া প্রান্তে। এটি ছিল মাওয়া প্রন্তের প্রথম স্প্যান। ২০১৯ সালের ১০ এপ্রিল ‘৩ এ’ স্প্যান ১৩ ও ১৪ নম্বর পিলারের ওপর বসানোয় সেতুর ১৩৫০ মিটার দৈর্ঘ্যে রূপ নেয়।
দশম স্প্যান: ২০১৯ সালের ২৩ এপ্রিল শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে ৩৩ ও ৩৪ নম্বর পিলারের ওপর ১০তম স্প্যান বসে। ‘৩ বি’ স্প্যানটি বসানোর ফলে সেতুর দেড় কিলোমিটার (১৫০০ মিটার) দৃশ্যমান হয়।
১১তম স্প্যান: এটি মাওয়া প্রান্তের দ্বিতীয় স্প্যান। ২০১৯ সালের ২৫ মে ১৪ ও ১৫ নম্বর পিলারের ওপর স্প্যান ‘৩বি‘ বসানো হয়। এতে সেতুর ১৬৫০ মিটার দৃশ্যমান হয়।
১২তম স্প্যান: ২০১৯ সালের ২৯ জুন পদ্মায় বসে দ্বাদশ স্প্যান। ‘৩সি’ স্প্যানটি বসানো হয় ১৫ ও ১৬ নম্বর পিলারের ওপর। এতে সেতুর ১৮০০ মিটার দৃশ্যমান হয়।
১৩তম স্প্যান: ২০১৯ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর ১৩তম স্প্যান বসানো হয়। জাজিরা প্রান্তে ২৪ ও ২৫ নম্বর পিলারের ওপর ‘৪এফ’ স্প্যানটি বসানো হয়। এর মধ্য দিয়ে পদ্মা সেতুর ১৯৫০ মিটার দৃশ্যমান হয়।
১৪তম স্প্যান: ২০১৯ সালের ২২ অক্টোবর ১৪তম স্প্যান বসানো হয়। জাজিরা প্রান্তে ২৩ ও ২৪ নম্বর পিলারের ওপর স্প্যানটি বসানো হয়। এর মধ্য দিয়ে পদ্মা সেতুর ২১০০ মিটার (২ দশমিক ১ কিলোমিটার) অংশ দৃশ্যমান হয়।
১৫তম স্প্যান: ১৯ নভেম্বর ২০১৯ মাওয়া প্রান্তে পদ্মা সেতুর ১৫তম স্প্যান বসানো হয়। সেতুর ১৬ ও ১৭ নম্বর পিলারের ওপর স্প্যান ‘৩ডি’ বসানো হয়। এ স্প্যানটি বসানোর মধ্য দিয়ে সেতুর ২২৫০ মিটার দৃশ্যমান হয়।
১৬তম স্প্যান: ২০১৯ সালের ২৬ নভেম্বর পদ্মায় বসানো হয় ১৬তম স্প্যান। ৪ডি স্প্যানটি বসে জাজিরা প্রান্তের ২২ ও ২৩ নম্বর পিলারের ওপর। এতে ২৪০০ মিটার দৃশ্যমান হয়।
১৭তম স্প্যান: ১১ ডিসেম্বর ২০১৯ বসানো হয় পদ্মা সেতুর ১৭তম স্প্যান। মাওয়া প্রান্তে ১৭ ও ১৮ নম্বর পিলারের ওপর ৩-ই স্প্যানটি বসানো হয়। এই স্প্যানটি বসানোর মধ্য দিয়ে সেতুর ২ হাজার ৫৫০ মিটার দৃশ্যমান হয়।
১৮তম স্প্যান: ২০১৯ সালের ১৮ ডিসেম্বর পদ্মা সেতুর ১৮তম স্প্যান বসানো হয়। আর এতে করে দৃশ্যমান হয় সেতুর দুই হাজার ৭০০ মিটার। ‘৪সি‘ স্প্যানটি বসে সেতুর ২১ ও ২২ নম্বর পিলারের ওপর।
১৯তম স্প্যান: ২০১৯ সালের শেষ দিনে ৩১ ডিসেম্বর পদ্মা সেতুর ১৯তম স্প্যান বসানো হয়। সেতুর ১৮ ও ১৯ নম্বর পিলারের ওপর ‘৩ এফ’ নামে এ স্প্যানটি বসানো হয়। এতে সেতুর ২৮৫০ মিটার দৃশ্যমান হয়।
২০তম স্প্যান: ২০২০ সালের ৬ জানুয়ারি ২০তম স্প্যান বসানো হয়। ১এফ স্প্যানটি বসানো হয় সেতুর ৬ ও ৭ নম্বর পিলারেরর ওপর। এর মধ্যদিয়ে পদ্মা সেতুর তিন কিলোমিটার দৃশ্যমান হয়।
১এফ স্প্যানটি ছিল সেতুর সর্ব প্রথম তৈরি করা স্প্যান। কিন্তু নির্ধারিত পিলার দুটি প্রস্তুত না থাকায় এটাকে আগে বসানো যায়নি।
যার কারণে এক বছর তিন মাস আগে ২০১৮ সালের ১২ অক্টোবর এই স্প্যানটি অস্থায়ীভাবে সেতুর ৪ ও ৫ নম্বর পিলারের ওপর বসানো হয়েছিল।
২১তম স্প্যান: ১৪ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে সেতুর ২১তম স্প্যান স্থাপন করা হয়। এতে ৩১৫০ মিটার দৃশ্যমান হয়ে ওঠে। জাজিরা প্রান্তে ৩২ ও ৩৩ নম্বর পিলারের ওপর ৬বি স্প্যানটি বসানো হয়।
২২তম স্প্যান: ২০২০ সালের ২৩ জানুয়ারি মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে বসানো হয় পদ্মা সেতুর ২২তম স্প্যান। সেতুর ৫ ও ৬ নম্বর পিলারে ‘১ই’ স্প্যানটি বসানোর মাধ্যমে দৃশ্যমান হয় সেতুর তিন হাজার ৩০০ মিটার।
২৩তম স্প্যান: ২ ফেব্রয়ারি ২০২০ জাজিরা প্রান্তে বসে পদ্মা সেতুর ২৩তম স্প্যান। ৬-এ স্প্যানটি সেতুর ৩১ ও ৩২ নম্বর পিলারের ওপর বসানো হয়। এতে তিন হাজার ৪৫০ মিটার দৃশ্যমান হয়।
২৪তম স্প্যান: ১১ ফেব্র্রুয়ারি ২০২০ ২৪ তম স্প্যান বসানো হয়। ৩০ ও ৩১ নম্বর পিলারের ওপর বসানো হয় ‘৬এ‘ স্প্যানটি। এর ফলে ৩ হাজার ৬০০ মিটার দৃশ্যমান হলো।
অবশ্য এই স্প্যানটি রেলওয়ে এবং রোডওয়ে স্লাব বসানোর সুবিধার্থে এর আগে ২০১৯ সালের ৬ মে ১২ ও ১৩ নম্বর পিলারের ওপর অস্থায়ীভাবে বসানো হয়েছিল।
২৫তম স্প্যান: ২০২০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি জাজিরা প্রান্তে বসে পদ্মা সেতুর ২৫তম স্প্যান। ৫-ই স্প্যানটি ২৯ ও ৩০ নম্বর পিলারের ওপর বসানো হয়। এটি বসানোর পর সেতুর তিন হাজার ৭৫০ মিটার দৃশ্যমান হয়।
২৬তম স্প্যান: ২০২০ সালের ১০ মার্চ পদ্মা সেতুতে ২৬তম স্প্যান বসানো হয়। জাজিরা প্রান্তে ২৮ ও ২৯ নম্বর পিলারে ৫-ডি আইডি নম্বরের স্প্যানটি বসানো হয়। ফলে সেতুর ৩৯০০ মিটার দৃশ্যমান হয়।
২৭তম স্প্যান: ২৮ মার্চ ২০২০ পদ্মা সেতুতে ২৭তম স্প্যান বসানো হয়। জাজিরা প্রান্তের ২৭ ও ২৮ নম্বর খুঁটির ওপর ৫-সি আইডির স্প্যানটি বসানো হয়। যার মাধ্যমে সেতুর ৪ হাজার ৫০ মিটার দৃশ্যমান হয়।
২৮তম স্প্যান: ১১ এপ্রিল ২০২০ সেতুতে ২৮তম স্প্যান বসানো হয়। সেতুর প্রায় মসাঝামাঝি অংশে ২০ ও ২১ নম্বর পিলারের ওপর ৪-বি স্প্যানটি বসানো হয়। যার মাধ্যমে সেতুর ৪ হাজার ২০০ মিটার দৃশ্যমান হয়।
২৯তম স্প্যান: ২০২০ সালের ৪ মে ২০২০ করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে সেতুর ২৯তম স্প্যান বসানো হয়। মুন্সীগঞ্জ প্রান্তে ১৯ ও ২০ নম্বর পিলারের ওপর ৪-এ স্প্যানটি বসানো হয়। এতে পদ্মা সেতুর ৪ হাজার ৩৫০ মিটার অংশ দৃশ্যমান হয়।
৩০তম স্প্যান: ২০২০ সালের ৩০ মে সেতুর ৩০তম স্প্যান বসে। সেতুর জাজিরা প্রান্তের ২৬ ও ২৭ নম্বর পিলারের ওপর ‘৫বি’ নম্বর এ স্প্যানটি বসানো হয়। এতে সেতুর সাড়ে ৪ কিলোমিটার দৃশ্যমান হয়।
৩১তম স্প্যান: ২০২০ সালের ১০ জুন পদ্মা সেতুর ৩১তম স্প্যানটি বসানো হয়। সেতুর ২৫ ও ২৬ নম্বর পিলারের জাজিরা প্রান্তে ৫-এ স্প্যান বসানো হয়। এতে পদ্মা সেতুর ৪ হাজার ৬৫০ মিটার অংশ দৃশ্যমান হয়।
৩২তম স্প্যান: ২০২০ সালের ১১ অক্টোবর সেতুর মাওয়া প্রান্তে ৩২তম স্প্যান বসানো হয়। সেতুর ৪ ও ৫ নম্বর পিলারের ওপর ১-ডি আইডির স্প্যানটি বসানো হয়। এতে সেতুর ৪ হাজার ৮০০ মিটার দৃশ্যমান হয়েছে।
৩৩তম স্প্যান: ২০২০ সালের ১৯ অক্টোবর মাওয়া প্রান্তে পদ্মাসেতুর ৩ ও ৪ নম্বর পিলারের ওপর বসানো হয় ৩৩তম স্প্যান ‘ওয়ান-সি’। এর মাধ্যমে দৃশ্যমান হয় সেতুর ৪ হাজার ৯৫০ মিটার।
৩৪তম স্প্যান: ২৫ অক্টোবর ২০২০ সেতুর মাওয়া প্রান্তে ৭ ও ৮ নম্বর পিলারের ওপর স্প্যান ২-এ বসানো হয়। ৩৪তম এ স্প্যান বসানোর ফলে দৃশ্যমান হয় সেতুর ৫ হাজার ১০০ মিটার।
৩৫তম স্প্যান: ৩০ অক্টোবর ২০২০ সেতুর মাওয়া প্রান্তে ৮ ও ৯ নম্বর পিলারের ওপর বসানো হয় ৩৫তম স্প্যান ২-বি)। এর মাধ্যমে দৃশ্যমান হয় সেতুর ৫ হাজার ২৫০ মিটার।
৩৬তম স্প্যান: ২০২০ সালের ৬ নভেম্বর ২ ও ৩ নম্বর পিলারের ওপর ৩৬তম স্প্যান (স্প্যান ১-বি) এর মাধ্যমে দৃশ্যমান হয় সেতুর ৫ হাজার ৪০০ মিটার।
৩৭তম স্প্যান: ২০২০ সালের ১১ নভেম্বর মাওয়া প্রান্তের ৯ ও ১০ নম্বর পিলারের ওপর ৩৭তম স্প্যান (স্প্যান ২-সি) এর মাধ্যমে দৃশ্যমান হয় সেতুর ৫ হাজার ৫৫০ মিটার।
৩৮তম স্প্যান: ২০২০ সালের ২১ নভেম্বর পদ্মা সেতুর ৩৮তম স্প্যান বসানো হয়।
মাওয়া প্রান্তের ১ ও ২ নম্বর খুঁটির ওপর ১-এ নামের স্প্যানটি বসানো হয়। এর মধ্যদিয়ে সেতুর ৫৭০০ মিটার দৃশ্যমান হয়। অবশ্য খুঁটির চেয়ে ১ নম্বর পিলারের গঠন সম্পূর্ণ আলাদা।
ওই খুঁটিতে ১৬টি পাইল স্থাপন করা হয়। অন্যান্য স্থাপন করা পিলারে ৬/৭টি পাইল। ১ নম্বর খুঁটির ওপর দিয়েই মাওয়াপ্রান্ত দিয়ে সেতুতে গাড়ি ও ট্রেন প্রবেশ করবে।
৩৯তম স্প্যান: ২০২০ সালের ২৭ নভেম্বর ১০ ও ১১ নম্বর পিলারের ওপর ৩৯তম স্প্যান (স্প্যান ২-ডি), এর মাধ্যমে দৃশ্যমান হয় সেতুর ৫ হাজার ৮৫০ মিটার।
৪০তম স্প্যান: ২০২০ সালের ৪ ডিসেম্বর ১১ ও ১২ নম্বর পিলারের ওপর ৪০তম স্প্যান (স্প্যান ২-ই) এবং এর মাধ্যমে দৃশ্যমান হয় সেতুর ৬ হাজার মিটার (৬ কি. মি)।
৪১তম স্প্যান: সর্বশেষ ৪১ নম্বর স্প্যান (স্প্যান ২-এফ) বসে ২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বর ১২ ও ১৩ নম্বর পিলারের ওপর। এর মাধ্যমে দৃশ্যমান হয় সেতুর পুরো ৬ হাজার ১৫০ মিটার।
ব্যয় বেড়েছে তিনগুণ
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানিয়েছেন, ২০২২ সালের মার্চে পদ্মা সেতু জনসাধারণের যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে।
এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান জানিয়েছেন, কয়েক দফা নকশা পরিবর্তনের ফলে সেতুর দৈর্ঘ্য বেড়েছে। এতে ব্যয় বেড়েছে। অপরদিকে শেষ দিকে সেতুর জন্য বাড়তি কিছু জমি অধিগ্রহণ করতে হয়েছে।
তাতেও বেড়েছে সেতুর নির্মাণ ব্যয়। আর নকশা পরিবর্তন হলে সেতুর দৈর্ঘ্য বাড়লে সময় তো বাড়বেই। এছাড়া এ বছর করোনোর কারণেও সেতুর কাজ অনেকটাই বাধাগ্রস্ত হওয়ায় সময় বেড়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
শিবচরের উন্নয়ন
শিবচর উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, পদ্মাসেতুকে ঘিরে মাদারীপুর জেলার শিবচরের চরাঞ্চলে এখন উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। পদ্মাসেতুর সঙ্গে যুক্ত এক্সপ্রেসওয়ে শিবচরের উপর দিয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে।
এই এক্সপ্রেস হাইওয়ের পাশে নতুনভাবেই গড়ে উঠেছে কমপক্ষে ১০টি বাজার। পুরানো হাট-বাজারগুলোতেও আধুনিকতা এসেছে। তাছাড়া রেললাইনের দুইটি স্টেশনও শিবচরে হচ্ছে।
আর এই স্টেশনকে ঘিরেই ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে। সহজেই দূর-দূরান্ত থেকে কম খরচে মালামাল বহন করতে পারবে। এদিকে পদ্মাসেতুকে কেন্দ্র করেই শিবচরে ১০৮ একর জায়গায় ১৯শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে শেখ হাসিনা তাঁত পল্লী নির্মাণ হবে।
১৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, এক হাজার ৬৪টি প্লট নিয়ে দাদা ভাই হাউজিং প্রকল্প নির্মাণ করা হয়েছে, সম্প্রতি চালু হয়েছে বীর মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল করিম তালুকদার টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ।
পদ্মার পাড়ের ৭৫ একর জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে শেখ হাসিনা ইনস্টিটিউট ফর ফন্ট্রিয়ার টেকনোলজি, ৪শ’ একর জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে শিবচর ইউনিয়নে বিসিক শিল্প নগরী স্থাপনের।
ন্যাশনাল জুডিসিয়াল একাডেমি ও সংস্কৃতি কেন্দ্র নির্মাণ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে পৌরসভা ও সংলগ্ন এলাকায়।
মহাসড়কে ট্রমা সেন্টার নির্মাণ শুরু হয়েছে। নির্মিত হবে কর্মজীবী মায়েদের জন্য বেগম রোকেয়া কর্মজীবী মহিলা হোস্টেলসহ ট্রেনিং সেন্টার ও ডে-কেয়ার সেন্টার। আধুনিক কাঁচাবাজারসহ শপিং কমপ্লেক্স নির্মাণ শুরু হচ্ছে শিগগিরই।
তথ্যঃ প্রথম আলো, বিবিসি বাংলা, কালের কন্ঠ, জাগো নিউজ
আরো পড়ুন
- পদ্মা সেতু নির্মাণে চ্যালেঞ্জসমূহ
- পদ্মায় প্রশ্নযুক্ত বাংলাদেশের মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন সক্ষমতা
- সেতু প্রকৌশলবৃত্তান্ত
- পদ্মাসেতুর ছবি-ভিডিও প্রকাশে নিষেধাজ্ঞা!
- পদ্মাসেতু নির্মাণঃ বড় প্রকল্প, তবে চ্যালেঞ্জ হিসেবে প্রথম নয়!
- পদ্মা সেতু নির্মাণে ম্যানেজমেন্ট আর টেকনিক্যাল পয়েন্ট অফ ভিউ: গিগা প্রশ্নবিদ্ধ মেগা প্রজেক্ট
- পদ্মা সেতুঃ কিছু জনমুখী প্রশ্নের ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্লেষণ (মূল ডিজাইন রিপোর্টসহ)