২য় পর্বঃ পরিক্ষার হলে মন নিয়ন্ত্রণ)
1ম পর্বে আমি পরিক্ষা-পূর্ব প্রস্তুতির সময়ে করণীয় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছিলাম। আজ ২য় পর্বে থাকছে পরিক্ষা চলাকালীন সময়ে নিজের মনকে নিয়ন্ত্রণ এবং কৌশলী হওয়ার জন্য কিছু কার্যকরী দিক-নির্দেশনা।যারা ১ম পর্বটি কোনো কারণে মিস করে গেছেন, তাদের জন্য এই পোস্টের  লিংক টি দেওয়া আছে,পড়ে আসতে পারেন।তাহলে শুরু করা যাক আজকের কথাবার্তা? 🙂
// ১ম পর্বের পর থেকে.………..
♪♪পরীক্ষার হলে কি করব :[১] পরিক্ষার হলে ঢোকার পরে যদি হাতে কিছু সময় পাওয়া যায় তাহলে আমার সাজেশন থাকবে একটা ছোটো-খাটো মেডিটেশনে করে ফেলো।এটা আমি নিজেও করি।তেমন আহামরি কিছু না, দুহাতে কান চেপে আশেপাশের শোরগোল থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে,চোখ দুটি বন্ধ রেখে নিজেকে ‘সেলফ মোটিভেটিং’ কিছু কথা বলা-

  • -“হ্যা,আমি পারব,কারণ আমি আমার সাধ্যমত পরিশ্রম করেছি।”
  • -“এই পরিশ্রম কখনোই বৃথা যাবে না।আমি যা করেছি,তারই ফল পাব,যা পড়েছি,সেটাই পারব-সোজা কথা।”
  • -“কোনো অবস্থাতেই ধৈর্য হারাবো না,কোনো অবস্থাতেই না।এখন যেমন শান্ত আছি, মাথাটা পুরোপুরি ঠান্ডা আছে,এভাবেই থাকতে হবে….এভাবেই…..মাত্র কয়েকটা ঘন্টা।”
  • শুধু প্রথাগত পরিক্ষা নয়,সকল এথলেট এবং আর্মি ট্রেইনিরাও তাদের নিজ নিজ মিশনের আগে এ ধরণের মেডিটেশন ফলো করে।আর বলাই বাহুল্য, এটা অত্যন্ত কার্যকরী।

[২] প্রশ্নপত্র হাতে পাওয়ার পর পরই সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ যে কাজ তা হলো ৪-৫ মিনিট খরচ করে পুরো প্রশ্নটা একবার পড়ে নেওয়া, আরও ভাল হয় যদি এ সময় নিজের মনমতো কিছু কী-ওয়ার্ড প্রশ্নেপত্রের মধ্যেই কলম দিয়ে মার্ক করে রাখতে পারো (বিশেষ করে ইংরেজি পরিক্ষায় প্যাসেজ পড়ার সময়) ।তুমি পরিক্ষার শুরুতেই পুরো প্রশ্নটা একবার পড়ে নেওয়ায় তিনটি চমৎকার বেনিফিট পাবে-

  • (i) প্রশ্নে কোনো ভুল-ত্রুটি থাকলে আগে ভাগেই তা জানতে পারবে।
  • (ii) কোন প্রশ্নের পর কোন প্রশ্ন লিখবে তা ঠিক করে নিতে পারবে।
  • (iii) পরবর্তিতে যখন উত্তর করতে যাবে,তখন প্রশ্নগুলো তোমার কাছে আগের তুলনায় যথেষ্ট সহজ মনে হবে।এই বেনিফিট টা কিন্তু অনেক বেশিই গুরুত্বপূর্ণ ।
  • তাই সময় নষ্ট হবে এই অজুহাতে প্রশ্ন হাতে পাওয়ার পর পুরোটা অন্তত একবার না পড়ে কখনো লেখা শুরু করবে না,ঠিক আছে তো? 🙂

[৩] পরিক্ষায় প্রশ্নের ক্রম(Serial) ঠিক রেখেই পরিক্ষা দিতে হবে–এ ধরণের মানসিকতা যেন কখনোই তৈরি না হয়।যে প্রশ্ন তোমার কাছে তুলনামূলক সহজ মনে হবে সেটা দিয়েই পরিক্ষা দেওয়া শুরু করবে এবং ক্রমান্বয়ে সহজ থেকে জটিল প্রশ্নের দিকে এগোতে থাকবে।
[৪] কোনো প্রশ্ন উত্তর করতে না পারলে কখনোই জেদ করে ওটার পেছনে অতিরিক্ত সময় ধরে পরে থাকবে না,এ ধরণের জেদ কিন্তু তোমার পুরো পরিক্ষাটাকেই ধ্বংস করে দিতে পারে।
তাই অন্য প্রশ্নের দিকে এগিয়ে যাও, পরে সময় পেলে ওটা নিয়ে আবার চিন্তা-ভাবনা করা যাবে।
[৫] নৈর্ব্যক্তিক পরিক্ষায় ভাল করার সবথেকে কার্যকর উপায় হচ্ছে–শুরুতেই বড় বড় গাণিতিক সমস্যা গুলোর দিকে নজর না দিয়ে জ্ঞানমূলক বা কম সময় ব্যয় করে যেসব প্রশ্নের উত্তর করা যায় সবার আগে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সেগুলোর উত্তর করে নেওয়া, তারপর বাকি প্রশ্ন গুলোর উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করা।
এটা না করে যদি, MCQ গুলোর উত্তর সিরিয়ালি করে যাও,তাহলে দেখা যাবে তুমি শুরু থেকেই বড় বড় প্রশ্নের উত্তর করে এসে সময়ের অভাবে শেষের দিকের অনেকগুলো সহজ প্রশ্নের উত্তর করতে পারলে না ! মানে জেনুইন কিছু মার্ক তোমার হাতছাড়া হয়ে গেল!
এর থেকে বড় দু:খের বিষয় আর কিছু আছে বল? 🙁
ধরো, এতো সতর্কতা অবলম্বনের পরেও দূর্ভাগ্যবশত তুমি সময়ের সাথে দৌড়ে পারলে না।তোমার হাতে একটা প্রশ্ন লেখার সময় আছে কিন্তু লিখতে হবে আরও দুটি প্রশ্ন।এমন পরিস্থিতিতে কি করা উচিৎ বলো তো? তখন তোমার উচিৎ হবে সংক্ষিপ্তভাবে দুটি প্রশ্নেরই উত্তর করে আসা। এসময় বুলেট পয়েন্ট আকারে শুধুমাত্র মেইন পয়েন্ট গুলো লিখে আসতে পারলেও তুলনামূলকভাবে ভাল নম্বর পাবার সম্ভাবনা থাকে।
[৬] একটা কথা আবার মনে করিয়ে দিচ্ছি, “Think positive, Be positive, Do positive.”
তোমাকে মনে করতে হবে যেনো প্রশ্নগুলো তুমি বাড়িতে তোমার পড়ার টেবিলে বসেই সলভ করছ।পরিক্ষার হলে যে চাপ থাকে তা যেন তোমাকে কোনোভাবেই স্পর্শ করতে না পারে।
তোমরা হয়ত একটা ব্যাপার খেয়াল করেছো যে, কোনো সমস্যা বাড়িতে বসে হয়ত আমরা সহজেই সমাধান করে ফেলতে পারি কিন্তু পরিক্ষার হলে ঐ একই প্রশ্ন আসলে- হয় এটা সমাধান করতে বেশি সময় লাগে অথবা আমরা এটার উত্তর করতেই পারি না ! কেন এমনটা হয় বলো তো?
-শুধুমাত্র পরীক্ষার হলের প্রেশারটা মাত্রাতিরিক্তভাবে নিজের ওপর নেওয়ার জন্য। এই চাপটাকে এড়াতে না পারলে , বিশ্বাস কর -তোমার মাথায় যা-ও বা ছিল,সেটাও বেরিয়ে যাবে।পরিক্ষার হলে এই চাপ সহ্য করার ক্ষমতাই কিন্তু ভাল-মন্দের পার্থক্য গড়ে দিতে অসম্ভব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
তাই পরিক্ষার প্রিপারেশন নেওয়ার সময় যতই সিরিয়াস থাকো না কেনো, পরিক্ষার হলে কিন্তু কোনোরকম টেনশন,ভয়-ভীতি, চাপ মনে আনাই যাবে না।আর এটা যদি নিশ্চিত করতে পারো, তাহলে আমি তোমাকে নিশ্চয়তা দিচ্ছি, তোমার পরীক্ষা তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি ভাল হবে।
পরিক্ষার হলে ‘চাপমুক্ত’ থাকার কয়েকটা কার্যকরী ট্রিকস সাজেস্ট করছিঃ

  • ♦ মুখে চুইংগাম রাখতে পারো।
  • ♦ পুরো প্রশ্নটা পড়ার পর পরই একটা নি:শব্দ হাসি দিয়ে ফেলো😃কোনো কারণ না থাকা সত্ত্বেও যদি এই হাসিটা দিয়ে ফেলা যায়, তাহলে তোমার মানসিক চাপ শুরুতেই অনেকখানি কমে যাবে।
  • ♦কোনো জটিল প্রশ্ন দেখলে, স্যারের চালাকির প্রশংসা করে হলেও আরেকবার নি:শব্দে হাসি দাও।
  • ♦ কোনো প্রশ্নের মনমত/সময়মাফিক উত্তর করতে পারলে মনে মনে নিজেই নিজেকে পিঠ চাপড়ে দাও-“সাবাশ ব্যাটা!”
  • ♦ধরো, কোনো একটি প্রশ্ন উত্তর করবার সামর্থ্য তোমার ভাল মতই ছিল,কিন্তু দূর্ভাগ্যবশত সংশ্লিষ্ট সূত্রটি তোমার মাথায় আসছে না, কিংবা উত্তর করতে গিয়ে মাঝে কোথাও ভুল করে ফেলেছো সেটা ধরতে পারছ না।এসময় কিন্তু মোটেই নার্ভাস হওয়া যাবে না। মনে রেখো- শুধু তুমিই নও,এই হলে যারা পরিক্ষা দিচ্ছে সবাই তোমার মতই রক্ত-মাংসে গড়া মানুষ।তাই এ ধরণের ভুল করা বা ভুলে যাওয়ার মত ঘটনা প্রত্যেকের ক্ষেত্রেই ঘটতে পারে।কিন্তু এতে হতাশ না হয়ে পরবর্তী প্রশ্নের উত্তর করার জন্য এগিয়ে যাওয়ার সামর্থ্যটা সবার থাকে না; হ্যা,বিশ্বাস কর, অনেকেরই থাকে না।তাই তুমি যদি হতোদ্যম না হয়ে এগিয়ে যেতে পারো, শেষ হাসিটা তোমারই হবে,নিশ্চিত থাকো। 🙂

অবশেষে…………………………
পরিক্ষা শেষ হল। 😃
♪♪ পরিক্ষার পরে কি করব :
আজব ব্যাপার ! যার জন্য এত কাঠখড় পোড়ানো হলো, সেই পরিক্ষাই তো শেষ, তাহলে এখন আবার কি করতে হবে !!

হুম,কথায় যুক্তি আছে।
যদি এটা কোনো সেশন (যেমন: HSC,SSC বা টার্ম )এর সর্বশেষ পরিক্ষাটি হয়ে থাকে তাহলে তুমি মুক্ত,তোমাকে আমার আর কিছু বলার নেই।
কিন্তু যদি তুমি ধারাবাহিকভাবে পরিক্ষার মধ্যেই থাকো,অর্থাৎ তোমার সামনে ওই সেশনের আরও পরিক্ষা থেকে থাকে তাহলে অল্প কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ করা এখনো বাকি আছে।
এবার সেগুলো নিয়ে একটু কথা বলি,কেমন?

  • [১] পরিক্ষার হল থেকে বের হওয়ার পর, কোনো প্রশ্নের উত্তর কি হতে পারে কিংবা কার কতগুলো উত্তর ঠিক বা ভুল হয়েছে এসব বিষয় নিয়ে কোনো অবস্থাতেই বন্ধুদের সাথে আলোচনা করা যাবে না।কিন্তু, কেন করা যাবেনা?কারণ যেই পরিক্ষা চলিয়া গিয়াছে তাহা চিরতরেই গিয়াছে,উহাকে রোমন্থন করিয়া কপাল চাপড়াইবার মত সময় নিশ্চয়ই আমাদিগের হস্তে নাই?আছে কি? 😃আসলে এটা পরবর্তী পরিক্ষার আগে তোমার হতাশা বাড়ানোর একটা চমৎকার এবং স্ব-নিবেদিত ব্যবস্থা।তাই,তোমার পরিক্ষা যতই ভাল হোকনা কেনো-তুমি যেমন অন্যকে পরিক্ষার প্রশ্ন-উত্তর সম্পর্কে ২য়বার জিজ্ঞাসা করবে না,তেমনিভাবে অন্যকেউ তোমাকে এসব ব্যপারে জিজ্ঞাসা করলে সযত্নে বিষয়টি এড়িয়ে যাবে।এখানেও কিন্তু পরিক্ষা শুরুর ঠিক আগের সময়ের মতই সেসব ধূর্ত ফ্রেন্ডদের আনাগোনা ঘটতে পারে, তাই এক্ষেত্রেও এদের থেকে সাবধান। 😑
  • [২] ধরলাম বন্ধুদেরকে কোনো ভাবে ম্যানেজ করে বাসায় চলে আসলে,কিন্তু মা বাবাকে তো পরিক্ষা সম্পর্কে রিপোর্ট দিতেই হবে,তাই না?এর থেকে তো নিস্তার নেই ।তাহলে উপায়?
  • এক্ষেত্রেও তোমাকে কৌশলি হতে হবে।যত সংক্ষেপে সম্ভব পরিক্ষার অবস্থা জানিয়ে পরবর্তী পরিক্ষার প্রস্তুতিতে মন দাও। “খারাপ হয়েছে/মনমতো হয়নি” ভুল করেও এসব কথা বলতে যেও না কিন্তু, তাহলে প্রশ্ন-উত্তর পর্ব চলতেই থাকবে । 😑
  • [৩] অনেকেরই একটি অভ্যাস আছে, বাসায় এসেই বই খুঁজে খুঁজে পরিক্ষার প্রশ্ন গুলোর উত্তর বের করার চেষ্টা করে, এবং সেখান থেকে নিজের করে আসা উত্তর গুলোর মধ্যে কয়টি ঠিক বা ভুল হল তা হিসাব করে ফেলে।আচ্ছা তুমি নিজেই নিজের কাছে প্রশ্ন করো তো, যে কাজটি করলে এর আদৌ কোনো বেনিফিট আছে কি না?আমার তো মনে হয় না এই কাজের পেছনে ভাল কোনো যুক্তি আছে,বরং এতে একদিকে যেমন তোমার পরবর্তী পরিক্ষা-প্রস্তুতির অনেকগুলো মূল্যবান সময় নষ্ট হচ্ছে তেমনিভাবে যদি তুমি দেখো যে সহজ কিছু প্রশ্নের উত্তর দূর্ভাগ্যবশত ভুল করে এসেছো,সেটা পরবর্তী পরিক্ষার আগে তোমার মনোবলকে যথেষ্ট দূর্বল করে দিতে পারে।তাই,কোনোভাবেই আর বিগত পরিক্ষার চিন্তা মাথায় আনবে না ।তোমার যদি প্রশ্নের উত্তর গুলো মেলাতেই হয়, সেটা ওই সেশনের সবগুলো পরিক্ষা শেষ হওয়ার পরেও করতে পারবে,তখন তো তোমার হাতে অফুরন্ত সময়,তাই না?একটা কথা মাথায় রেখো, তুমি যত তাড়াতাড়ি বিগত পরিক্ষাটিকে ভুলে যেতে পারবে, তোমার পরবর্তী পরিক্ষা ভাল হওয়ার চান্স ততই বাড়বে,গ্যারান্টি দিলাম। 🙂পরিক্ষা নিয়ে আমার কথা-বার্তা এখানেই শেষ করব।সম্পূর্ণ লেখাটি ধৈর্য্য ধরে পড়ার জন্য সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ।উপরের কথাবার্তার সামান্যতম অংশও যদি কারও জীবন গঠণে এতটুকু ভূমিকা রাখে,তাহলেই আমার লেখাটি সার্থক মনে হবে।শেষ করব মহামতি আইনস্টাইনের একটি অসাধারণ উক্তি স্মরণ করে – “পৃথিবীর সবাই জিনিয়াস,কিন্তু আপনি যদি একটি মাছকে তার গাছ বেয়ে ওঠার সামর্থ্য দিয়ে বিচার করেন,তাহলে সে শুধু সারাজীবন নিজেকে অপদার্থই ভেবে যাবে।”

ভাল থাকবেন সবাই । 🙂

লিখেছেনঃ
রাফি উর রশিদ‎, BUET
১ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন। 

(পেজের লেখা বা সেবা যদি ভালো লাগে অথবা কোনভাবে আপ্নারা উপকৃত হন, তাহলে ৫* রিভিউ দিয়ে মতামত জানান। এটা আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা। পেজের লেখাগুলো সবার আগে পেতে ফলোয়িং অপশনে গিয়ে সী ফার্স্ট সেট করুন। নিয়মিত লাইক না দিলে লেখা আ[পনার সামনে যাবেনা। কমেন্ট এ লেখা সম্পর্কে আপনার মতামত জানান। গুরত্বপূর্ণ লেখাগুলো শেয়ার করে নিজের টাইমলাইনে রাখুন) Write Review here – https://www.facebook.com/pg/EngineersDiary16/reviews/?ref=page_internal join our Community group https://www.facebook.com/groups/CEESBD/ Science Study- https://www.facebook.com/groups/ScienceStudy.EngineersDiary/ Join for admission Query https://www.facebook.com/groups/EMV17/ visit our website- https://engineersdiarybd.blogspot.com/ )