Power Factor এর জন্য জরিমানা কেনো দিতে হয়???

এই প্রশ্নটি প্রতিটি নাগরিক, শিল্প কারখানার মালিক ও বড় বড় বানিজ্যিক গ্রাহকদের একটা কমন প্রশ্ন।

উপরোক্ত প্রশ্নের উত্তর সহজে বুঝতে নিচের দুটি প্রশ্ন খুবি গুরুত্বপূর্ণ।

প্রশ্ন নাম্বার-১ঃ কোন গ্রাহকের Power Factor এর মান ৭০% এর অর্থ কি???

প্রশ্ন নাম্বার -০২ঃ Power Factor কিভাবে বিদ্যুৎ ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির উপর প্রভাব বিস্তার করে??? বা কেনো নিম্ন মানের Power Factor এর জন্য গ্রাহকদের উপর জরিমানা আরোপ করা হয়???

এই দুটি প্রশ্নের উত্তর জানলেই বুঝতে পারবেন কেনো নিম্ন মানের Power Factor এর জন্য জরিমানা আরোপ করা হয়।

সাধারন কথাঃ Power Factor বলতে বাস্তবিক অর্থে কোন গ্রাহক বা সিস্টেম মোট পাওয়ারের কতটুকু ব্যবহার করছে সেটা মাপার মানদণ্ড হলো এই Power Factor.

Power Factor=(ব্যবহৃত পাওয়ার/মোট পাওয়ার)
যদি মোট গ্রহণকৃত পাওয়ার ও ব্যবহৃত পাওয়ার সমান হয় তাহলে Power Factor এর মান হবে ১ বা ১০০%

প্রশ্নের উত্তর নাম্বার-১.কোন শিল্প কারখানার Power Factor এর মান ৭০% এর অর্থ হলো,ঐ শিল্প কারখানা মোট যতটুকু পাওয়ার সিস্টেম থেকে গ্রহন করে তারমাত্র ৭০% ব্যবহার করে এবং ৭০% এর জন্যই বিদ্যুৎ বিল দেয়।

উদাহরণ হিসেবে যেমন ধরুন কোন একজন শিল্প গ্রাহক সিস্টেম থেকে পাওয়ার নিচ্ছে ১০০ কিলোওয়াট, তাহলে মাত্র ঐ শিল্প কারখানাকে ৭০ কিলোওয়াটের জন্য বিদ্যুৎ বিল দিতে হচ্ছে। বাকি ৩০ কিলোওয়াটের বিল মিটারেই আসেনা।

তাহলে সেই বাকি ৩০ কিঃওঃ গ্রহনকৃত পাওয়ার কোথায় যায়??? সেটার উত্তর ২ নাম্বার প্রশ্নের জবাবে পাবেন।

উত্তর নাম্বার-২. বিভিন্ন স্থানে ব্যবহৃত কিছু কিছু লোড যেমন মটর,এসি,ইন্ডাকশন কুকার ইত্যাদি সিস্টেম থেকে যতটুকু পাওয়ার গ্রহন করে তার পুরোটা খরচ/শোষন করতে পারেনা।

গ্রহনকৃত পাওয়ারের কিছু অংশ তার মাঝে স্টোর থাকে সেটা সে নিজেও খরচ করেনা এবং অন্যকেও খরচ করতে দেয়না।এই জাতীয় লোডকে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ভাষায় ইন্ডাকটিভ লোড বলে।

অর্থাৎ এদের মাঝে কিছু পাওয়ার স্টোর করার বৈশিষ্ট্য আছে। তাহলে দেখা যাচ্ছে যে, সে যতটুকু পাওয়ার সিস্টেম থেকে গ্রহন করে ততটুকু পাওয়ার সে নিজেও খরচ করেনা আবার অন্যকেও খরচ করতে দেয়না।

কিন্তু সেই স্টোরকৃত পাওয়ার যদি সে(ইন্ডাকটিভ লোড) গ্রহন না করতো তাহলে ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি সেই পরিমাণ পাওয়ারটুকু অন্য কোন একজন গ্রাহকের কাছে বিক্রি করতে পারতো এবং বিদ্যুৎ বিলও পেতো।

কিন্তু যেহেতু সেই স্টোরকৃত পাওয়ারের জন্য ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি কোন বিদ্যুৎ বিলও পায়না তাই তারা একটা জরিমানা নির্ধারণ করে দেয় গ্রাহকদের বিশেষকরে শিল্প বা বানিজ্যিক গ্রাহকদের যেনো তারা এমন একটা ডিভাইস ব্যবহার করে যাতে সেই স্টোরকৃত পাওয়ার সিস্টেম থেকে না নিতে হয়।

আর সেই ডিভাইসকে বলে ক্যাপাসিটর ব্যাংক। আরো আছে সিনক্রোনাস কনডেনসার।

ইন্ডাকটিভ লোড আর ক্যাপাসিটিভ লোড ( ক্যাপাসিটর ব্যাংক) পরস্পর পর্যায়ক্রমে একটা স্টোর করে আবার অন্যটা গ্রহণ করে এভাবে পুনরায় বিপরীত ক্রমেও চলতে থাকে।

অর্থাৎ স্টোরকৃত পাওয়ারটা যাতে বারবার সিস্টেম থেকে গ্রহন করা না লাগে সেজন্যই ক্যাপাসিটর ব্যাংক ব্যবহার করা হয়।

যাতে ক্যাপাসিটর ও ইন্ডাকটিভ লোড পরস্পর চার্জ, ডিসচার্জ হয়ে সিস্টেম থেকে অতিরিক্ত পাওয়ার স্টোর করে না রাখে।

স্টোরকৃত পাওয়ারের জন্য ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি যেহেতু কোন বিল পায়না তাই তারা জরিমানা আরোপ করে।

গ্রাহক যাতে ক্যাপাসিটর ব্যাংক ব্যবহার করে তার জরিমানা কমিয়ে আনে বা সেটা পুষিয়ে নেয় সেজন্য গ্রাহকদেরকে তা ব্যবহার করতে বলে।আর তখনি সিস্টেম থেকে গ্রহন করা পাওয়ার আর খরচ/শোষন করা পাওয়ার সমান হবে।

তখনি ঐ শিল্পকারখানার Power Factor 100% হবে।এতে ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির লস হবে না।
[বিঃদ্রঃ স্টোরকৃত পাওয়ারটাই রিএ্যাকটিভ পাওয়ার (KVAR/MVAR) হিসেবে বিবেচিত হয়]

লেখকঃ মাহফুজ আলম

ডুয়েট