লোডশেডিং কেনো হয়? প্রধান প্রধান কারিগরি কারনগুলো জেনে নিন।
আপনারা নিশ্চয়ই জানেন যে, বিদ্যুৎতের সামগ্রিক ব্যবস্থার সাথে তিনটি বিষয় জড়িত,
- ১.বিদ্যুৎ উৎপাদন,
- ২. বিদ্যুৎ পরিবহন/সঞ্চালন,
- ৩.বিদ্যুৎ বিতরন।
সুতরাং তিনটির যেকোনো একটিতে ফল্ট/সমস্যা হওয়া মানেই বিদ্যুৎ বিভ্রাটের সৃষ্টি হবে।কিভাবে আসুন তা জেনে নিই।
১. বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলোর সমস্যাঃ যেসকল প্রতিষ্ঠান বিদ্যুৎ উৎপাদন করে।
যেমন আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন, পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র, নর্থ-ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি, পিডিবি এবং বেসরকারি
যেমন সামিট,ডরিন,ইউনাইটেড পাওয়ার ইত্যাদি মিলিয়ে অনেক প্রতিষ্ঠান বিদ্যুৎ উৎপাদন করার কাজ করে থাকে।
ঢাকার আফতাবনগরে অবস্থিত “ন্যাশনাল লোড ডিসপ্যাচ সেন্টার সংক্ষেপে এনএলডিসি এই প্রতিষ্ঠানটি প্রতিদিনের,প্রতি মুহূর্তের গ্রাহকদের বিদ্যুৎতের চাহিদা পর্যবেক্ষণ করে।
তারা সেই চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র গুলোকে উৎপাদন বাড়াতে/কমাতে বলে।যেমন আজকে এনএলডিসি বললো যে সারাদেশে সন্ধ্যা ৬.৩০ হতে রাত ১০ টা পর্যন্ত চাহিদা ৯ হাজার মেগাওয়াট।
এবার বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র গুলোকে সেই অনুযায়ী উৎপাদন করার নির্দেশ দেয়া হলো।তারা উৎপাদন করা শুরু করলো।
এবার যদি হঠাৎ করে কোন একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে সমস্যা দেখা দেয়, বন্ধ হয়ে যায় এবং যদি উক্ত কেন্দ্রটি তখন ৫০০ মেগাওয়াট উৎপাদন করে তাহলে সেই ৫০০ মেগাওয়াট উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাবে।
ফলে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ঐ মুহূর্তে ঘাটতি দেখা দিবে।
এই ঘাটতি পূরনের জন্য সাময়িক সময় ৫০০ মেগাওয়াট পরিমান ব্যবহার কমাতে হবে।আর এনএলডিসি তখন বিদ্যুৎ বিতরণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে যেমন আরইবি/পল্লী বিদ্যুৎ, ডিপিডিসি, ডেসকো,নেসকো ইত্যাদিকে নির্দেশ দেয় যে লোড কমানোর জন্য।
তখন বিতরনকারী প্রতিষ্ঠান গুলো কম গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোর বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইনগুলো সাময়িক বন্ধ করে দেয়। সুতরাং বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের সমস্যার জন্যও বিদ্যুৎ বিভ্রাট, লোডশেডিং হয়ে থাকে।
মনে রাখুন একটা বিদ্যুৎ কেন্দ্র একবার বন্ধ হলে,কোন ফল্ট হলে কমপক্ষে ৫/৬/৭ ঘন্টা এমনকি কখনো কখনো ২/৩ দিনও লেগে যায় পুনরায় উহা চালু করতে।
২. বিদ্যুৎ পরিবহন/সঞ্চালনের সমস্যাঃ সারা বাংলাদেশে যত বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র রয়েছে সেসবের উৎপাদিত বিদ্যুৎ সকল বিতরনকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে পৌঁছাতে বা ছড়িয়ে দেয়ার জন্য যে প্রতিষ্ঠানটি কাজ করে তা হলো পাওয়ার গ্রীড কোম্পানি অব বাংলাদেশ বা পিজিসিবি। এদের লাইন বিশাল বড় বড় হয়ে থাকে।
এই লাইনের কোথাও সমস্যা দেখা দিলে বিদ্যুৎ পরিবহনে সমস্যা দেখা দেয়।ফলে বিদ্যুৎ সব জায়গায় ছড়িয়ে দিতে পারেনা।
যেমন আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি যে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে তা পিজিসিবি পরিবহন করে নিয়ে আসে।যদি কোন কারনে সেই লাইনে ফল্ট দেখা দেয় তাহলে আশুগঞ্জ কেন্দ্রে উৎপাদন বন্ধ করে দিতে হবে কারন যেই লাইনে বিদ্যুৎ যাবে সেটাতে সমস্যা।
তাই পরিবহন লাইনের সমস্যার কারনেও বিদ্যুৎ বিভ্রাট হয়ে থাকে।মনে রাখুন প্রতিদিনি গড়ে কোন না কোন লাইনে,গ্রীডে সমস্যা, ফল্ট হচ্ছেই।
৩.বিদ্যুৎ বিতরণজনিত সমস্যাঃ বিদ্যুৎ বিতরণে যে সব প্রতিষ্ঠান জড়িত তা হলো আরইবি/পল্লী বিদ্যুৎ, ডিপিডিসি, ডেসকো, নেসকো, ওজোপাডিকো, পিডিবি।
এদের মধ্যে মাত্র ২/৩ টি প্রতিষ্ঠান ছাড়া বাকি প্রায় সবারই লাইনগুলো খুবি দুর্বল এবং অনেক দীর্ঘ ৫০/৬০/৭০ কি.মি. এমনকি ১০০/১২০ কি.মি. হয়ে থাকে।
প্রতিদিনি লাইন মেইনটেন্যান্স, বাজে মালামাল,আনকভার চিকন সরু তার ইত্যাদির কারনে প্রতি মুহূর্তেই লাইনে ফল্ট হচ্ছে, যন্ত্রপাতি পুড়ে যাচ্ছে ফলে বিদ্যুৎ বিভ্রাট হচ্ছে।
অর্থ্যাৎ বিতরনকারী প্রতিষ্ঠানের হ-য-ব-র-ল লাইন ও মালামাল কিংবা সাবস্টেশনের পর্যাপ্ত ক্যাপাসিটি না থাকার জন্যই সবচেয়ে বেশি বিদ্যুৎ বিভ্রাট হচ্ছে।
তাই যতদিন না উন্নত মালামাল, উন্নত লাইন, আধুনিক প্রযুক্তি, স্ট্যানডার্ড ডিজাইন না হবে ততদিন যতই উৎপাদন বাড়ুক না কেনো লোডশেডিং থেকে মুক্তি মিলবে না বিশেষ করে গ্রামীণ জনপদে।
আমাদের কমিউনিটি গ্রুপে লিখুন