গবেষণার কাজ শুরুর সবার আগের ধাপ হল গবেষণার জন্য জুতসই একটা বিষয় খুঁজে বের করা। এটা বড় একটা ধাপ। আসলে এটা গবেষণার আসল কাজের সমান কঠিন একটা ব্যাপার। কারণ কী? কারণ হলো সঠিক প্রশ্ন বা সমস্যা খুঁজে বের করাটাই গবেষণার সাফল্যের অর্ধেক অংশ।
হাতের পাঁচ আঙুল যেমন সমান হয়না, তেমনি সব রিসার্চ প্রবলেমও এক রকমের না। কোনোটা সহজ সমস্যা — সমাধান করা সহজ, কিন্তু তা করে কৃতীত্ব তেমন কিছু পাবেন না। দুধ্ভাত টাইপের কাজ আর কি।
সেরকম সমস্যা বেছে নিলে আপনার কাজ হবে সহজ, কিন্তু লাভ কম। পক্ষান্তরে যদি খুব দুরূহ সমস্যা বেছে নেন, তাহলে সমাধান করতে ঘাম ছুটে যাবে, কিন্তু একবার সমাধান করতে পারলে সেটা বিশাল ব্যাপার।
আবার অন্য দিকও আছে — দীর্ঘমেয়াদে ক্যারিয়ার চিন্তা করলে এমন জিনিষ নিয়ে কাজ করা উচিৎ, যার বাস্তব গুরুত্ব অনেক বেশি। খুব এবস্ট্রাক্ট টাইপের অথবা খুব অল্প মানুষ যা নিয়ে মাথা ঘামায়, এমন জিনিষ নিয়ে কাজ করতে পারেন বটে। কিন্তু তাতে আপনার নিজের ক্যারিয়ারে লাভ হবার সম্ভাবনা কম।
যেমন, ধরা যাক (তর্কের খাতিরে) ব্লাক বেঙ্গল ছাগলের রঙ কালো কেনো এবং গায়ে বোঁট্কা গন্ধ কেনো, তা নিয়ে গবেষণা করছেন। এটা হয়তো ইন্টারেস্টিং একটা কিছু হতে পারে, পেপার পাবলিশ হবে পারে, কিন্তু যতক্ষণ না পর্যন্ত বাস্তব জীবনের কোনো বড় সমস্যা সমাধানে আপনার এই কাজটার ভূমিকা থাকবে অনেক, ততক্ষণ এই গবেষণার দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব কমই হবে।
আরেকটি বিষয় হলো ফান্ডিং এবং বাস্তব প্রয়োগ। আপনি যা নিয়ে কাজ করছেন, সেই বিষয়ে ফান্ডিং এজেন্সিদের আগ্রহ কেমন? এবং আপনার বিষয়ে অন্যান্য গবেষকেরাও কি কাজ করছেন?
উদাহরণ দেই, ২০০১-২০০২ সালের দিক নাগাদ সেন্সর নেটওয়ার্ক ও পিয়ার-টু-পিয়ার নেটওয়ার্ক ছিলো হট টপিক, কম্পিউটার সাইন্সে। সবাই ঐ বিষয়ে কাজ করেছে।
কিন্তু এখন আর কেউ এইগুলা নিয়ে কাজ করে না। ফলে আপনার যদি লক্ষ্য হয় গবেষণা করে কাজটা পাবলিশ করা এবং তা দিয়ে এডমিশন বা চাকুরির ক্ষেত্রে কাজে লাগানো, তবে এই বিষয়গুলাতে কাজ করে খুব একটা লাভ হবে না।
গবেষণার সঠিক বিষয় ও সমস্যা নির্ধারণ তাই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হুট করে টপিক ঠিক না করে তাই আগে ভেবে চিন্তে কাজ করেন, ভেবে চিন্তে বিষয় বেছে নিন।
কীভাবে সমস্যা বেছে নিবেন? কয়েকটা প্রশ্নের জবাব বের করেন –
(১) এটা কি গুরুত্বপূর্ণ?
(২) এটার কি বাস্তব প্রয়োগ আছে?
(৩) এটা কি খুব সহজ?
(৪) এটা কি খুব কঠিন?
(৫) এটা কি ইতিমধ্যেই কেউ সমাধান করে ফেলেছে?
(৬) এটার ব্যাপারে অন্যদের আগ্রহ কেমন?
(৭) এই সমস্যা সমাধানের প্রয়োজনীয় রিসোর্স বা সাহায্য আপনার হাতের নাগালে আছে কি?
আর একটা কথা মনে রাখবেন, যেটা আমার শ্রদ্ধেয় পিএইচডি এডভাইজর প্রফেসর মেরিঅ্যান উইন্সলেট উঠতে বসতে বলতেন,
“Don’t work on Solutions in search of a problem”,
মানে বাস্তব জীবনে সমস্যা না থাকলে কাল্পনিক সমস্যা বানিয়ে তার সমাধানের উপরে কাজ করাটা চরম বোকামি।
তাই নবীন গবেষকদের জন্য পরামর্শ — গবেষণার বিষয়টি ভেবে চিন্তে নির্বাচন করেন। সফল গবেষণার প্রথম ধাপ সেটাই।
লেখকঃ Ragib Hasan
একাডেমিক পেপার রাইটিং এ সহযোগীতা নিতে আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। মেসেজ করুন Thesis and Research Papers Support পেজে।
রিসার্চ এবং পেপার রাইটিং নিয়ে অনুশীলন একাডেমি এবং JBRATRC আয়োজন করেছে মাস্টার কোর্স। এনরোল করতে এই লিংকে ভিজিট করুন।