ভাইয়া, আমিও কি রকেট সায়েন্টিস্ট হতে পারব?

এই প্রশ্নটি আমি প্রায়ই পাই ছোটদের কাছ থেকে। আজ খুব সংক্ষেপে উত্তরটি দিতে চাইঃ

আমাদের প্রথমেই কিছু বিষয় স্বাভাবিক করে আনতে হবে। বিজ্ঞানী হওয়া বা বড় কোন কোম্পানির চাকরি করাকে অস্পৃশ্য কোন স্বপ্ন হিসেবে ভাবার মনোভাব থেকে বেরিয়ে আসতে হবে আমাদের।

আমরা যখন কোন বিদেশিকে দেখি জটিল কোন কিছু নিয়ে কাজ করছে, তখন খুব স্বাভাবিকভাবেই আমরা বিষয়টি মেনে নিই। ওরা তো পারবেই। অথচ কোন বাংলাদেশি যদি এমন কিছু করে, প্রথমেই আমরা তা অবিশ্বাস করি; কেন, কীভাবে – অনেক প্রশ্ন জুড়ে দিই সাথে।

আমরা কখনও বিশ্বাসই করিনা যে, আমাদের দিয়েও সম্ভব। দেশের বড় বড় কোম্পানিগুলোর মাথায় বসিয়ে রেখেছি বিদেশিদের আর কিছু হতেই বিদেশ থেকে কাজ করিয়ে নিই।

যেখানে জনশক্তি আমাদের সবচেয়ে বড় সম্পদ, সেখানে আমরা বসিয়ে রেখেছি বিপুল সম্পদের এই ভান্ডারটিকে।

যে দেশের মেধাবীদের সেরারা প্রকৌশল বিদ্যা পড়ে, সে দেশ যদি বাইরের দেশ থেকে ফ্লাইওভারের নকশা আনে, তাহলে তরুণদের ভবিষৎ খর্ব করা সহ গোটা শিক্ষা ব্যবস্থাটির উদ্দেশ্যই বৃথা হয়ে যায়।

আমি একবার বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট (BS-1) কেন বাংলাদেশের উপর অবস্থান না করে ইন্দোনেশিয়ার উপর আছে, তা ব্যাখ্যা করেছিলাম ফেইসবুকে।

হাসান সাদ ইফতি

Hassan Saad Ifti

তখন দেশের সেরা সেরা বিদ্যাপিঠে পড়া অনেকেই বলেছিলেন, “কে এই ছেলে? এত কিছু ও জানে নাকি?” অথচ আমার সেই গাণিতিক ব্যাখ্যাটি কক্ষপথ বিদ্যা বা Orbital Mechanics এর যে কোন বই খুললেই পাওয়া যাবে।

Vis-viva equation টি দিয়ে স্কুলের বাচ্চারাও এই ব্যাখ্যাটি দিতে পারবে। আর উড়ন প্রকৌশলের যে কোন শিক্ষার্থী স্নাতক পর্যায়ে রকেট বা স্যাটেলাইটের কক্ষপথ নির্ণয় করতে শিখে। পুরকৌশলীরা যেমন ব্রিজ বানায়, আমরা তেমনি বিমান বা রকেট তৈরি করি।

আর কিছুই নয়। হাজার বছর ধরে গোলামী করতে করতে নিজেদের স্বকীয়তা যেন হারিয়ে ফেলেছি আমরা।

রকেট সায়েন্স হল ইংরেজিতে কথ্য ভাষায় ব্যবহৃত শব্দ। এর প্রকৃত নাম উড়ন প্রকৌশল বা Aerospace Engineering. মানুষ যেমন ডাক্তার হয়, তেমনি মানুষ উড়ন প্রকৌশলী বা Aerospace Engineer ও হতে পারে। ‘ভাল’ রকেট সায়েন্টিস্ট হবে কিনা, সেটা অন্য প্রসঙ্গ।

আমার জানামতে অনেকেই এখন বাংলাদেশ থেকে উড়ন প্রকৌশল পড়ছে। তোমরাও পারবে। ভয় পেলেই ভয়, না পেলেই নয়।

শুধু চাই অধ্যবসায়। তোমার জেগে থাকা প্রতিটি মুহূর্ত কাজে লাগাও নিজের বিকাশের জন্য। একদিন তোমরাই বাংলাদেশ থেকে মঙ্গলে রকেট পাঠাবে।

হাসান সাদ ইফতি

Hassan Saad Ifti With Dr Kevin Bowcutt, Chief Scientist of Hypersonics at Boeing. He’s working towards realising human hypersonic flight. I’m a big fan of his, and it was incredible to meet him in person. Great minds are indeed the humblest of people. His ted talk can be found here: https://youtu.be/SJWoKsfsSaA

হয়ত একদিন তোমরাই বঙ্গোপসাগরের বুক থেকে নিজেদের রকেটে নিজেদের স্যাটেলাইট পাঠাবে।

ছবিতে ২০১৪ সালের আমি। হ্যাঁ, একজন রকেট বিজ্ঞানী। একজন রকেট বিজ্ঞানী দেখতে এমনও হতে পারে। হ্যাংলা-পাতলা, বাংলাদেশি। হতে পারে মফস্বলের ছেলে। হতে পারে বাংলা মাধ্যমের ছাত্র।

– হাসান সাদ ইফতি

বর্তমানে অক্সফোর্ডে পিএইচডিরত

আরো পড়ুন