রুয়ান্ডা উন্নত বিশ্বের কাতারেও না , ইউরোপের দেশও না। সিংগাপুর, মালেশিয়াও না। তারপরও সঠিক সময় সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ এবং রাষ্ট্র পরিচালনায় দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের মাধ্যমে করোনা মোকাবিলায় বিশ্বকে চমকে দিয়েছে যুদ্ধ বিধ্বস্ত আফ্রিকার দেশ রুয়ান্ডা। কি করেছে রুয়াণ্ডাঃ

এক) প্রতিটি শহরে টেস্টিং সেন্টার বসিয়ে একেবারে বিনামূল্যে রেন্ডমলি পথচারীদের টেস্ট করেছে এবং খুবই দ্রুত টেস্টিং এর ফলাফল জানিয়ে দিয়েছে। ইউরোপের ল্যাবে যে রেজাল্ট দিয়েছে- রুয়ান্ডার মফস্বল শহরেও ল্যাব থেকেও একই ফলাফল এসেছে।

দুই) রুয়ান্ডা বায়োমেডিক্যাল সেন্টারের ডাইরেক্টর সাবিন সানজিমানা বলেন- কেউ গাড়ীতে, মটর সাইকেলে কিংবা পায়ে হেঁটে গেলেও তাকে অনুরোধ করা হয় বিনামূল্যে করোনা টেস্ট করতে। ঠিকানা সংগ্রহ করে- রোগীর রেজাল্ট ঘরে গিয়ে পৌঁছে দেয়া হয়। যদি পজিটিভ রেজাল্ট আসে তবে- Dedicated COVID-19 Clinic এ নিয়ে আসা হয়।

তিন) এ পর্যন্ত করোনা সম্পৃক্ত প্রতিটি কেসকে সফলতার সাথে ট্রাক করে- আইসোলেশানে রাখা হয়েছে এবং সম্পৃক্ত রোগীর সংস্পর্শে যারাই এসেছে তাদেরকেও কঠোরভাবে ১৪ দিন আইসোলেশানে রাখা হয়েছে।

পরবর্তী টেস্ট করে নেগেটিভ রেজাল্ট আসলে রোগীকে নিজ ঘরে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে। আর পজিটিভ আসলে পুনরায় ক্লিনিকের তত্তাবধানে রাখা হয়েছে।

চার)সাবিন সানজিমানা বলেন- আমরা সবসময় লক্ষ রেখেছি- একজন করোনা রোগীও যেন-আনডিটেকটেড না থাকে।

পাঁচ) আমাদের কাজের মূলমন্ত্র ছিলো প্রিভেনশান এবং কনটেইনমেন্ট ।

ছয়) রাজনৈতিক নেতৃত্ব গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেছে।

প্রেসিডেন্ট Kagame স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে পরিপূর্ণভাবে জবাবদিহিতার আওতায় রেখেছেন। বিনা চিকিৎসায় একজন রোগীও মারা গেলে -মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী থেকে সচিব পর্যন্ত সবাইকে কঠোরভাবে জবাবদিহি করার নির্দেশ জারি করা হয়েছে।

সাত) মানুষের মাঝে রাজনৈতিক মতপার্থক্য যাই থাকুক না কেন- জনগণের সবাই একেবারে শুরু থেকেই পূর্ণ শৃঙখলার সাথে মাস্ক পরেছে, দূরত্ব বজায় রেখেছে, অপ্রয়োজনে ঘরে থেকে বের হওয়া সহ যাবতীয় মেলামেশা বন্ধ রেখেছে।

আট ) প্রতিটি ক্লিনিকে হিউম্যান সাইজের রোবটের মাধ্যমে কোভিড-১৯ রোগীদের শারীরিক তাপমাত্রা নেয়া সহ প্রয়োজনীয় জিনিস সাপ্লাইয়ের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

মানুষের সাথে রোবট কেয়ারগিভার হিসাবে কাজ করছে। জানিান, রুয়াণ্ডাকে ডিজিটাল রুয়ান্ডা বলা হয় কিনা?

নয়) প্রথম থেকেই যারা ফার্স্ট রেসপন্ডারস তাদের প্রটেকশানের জন্য যাবতীয় পিপিই’র ব্যবস্থা করা হয়েছে।

দশ ) কম্যুনিটি হেল্থ কেয়ার ওয়ার্কস, পুলিশ ফোর্স এবং উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি শিক্ষার্থীকে ভলান্টিয়ার হিসাবে কাজে লাগানো হয়েছে।

পুরো দেশ ব্যাপী এই ডেডিকেটেড টিম – নিজ দায়িত্বে করোনা রোগিকে ট্রাক করে একজন রোগী সুস্থ হয়ে ঘরে ফিরে না যাওয়া পর্যন্ত কাজ করে গেছে এবং এখনো করছে।

একটা জাতির ডেডিকেশান থাকলে সেই জাতি যতই দরিদ্র হোক, রিসোর্সের স্বল্পতা থাকুক, নানা প্রতিকূলতার পাহাড় ডিঙ্গাতে হোক- তারপরও তাদের সাফল্য আসে। যার প্রমাণ যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ রুয়ান্ডা।

এই ডেডিকেশনের কারণেই পুরো পৃথিবীতে করোনায় পাঁচলক্ষ ছিয়াশি হাজার মানুষ মারা গেলেও রুয়ান্ডাতে মারা গেছে মাত্র চারজন। যে রুয়ান্ডার যুদ্ধ আর দুর্ভিক্ষের খবর গুলো শুধু আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় আসতো আজ সেই দেশের বিস্ময়কর সাফল্যের খবর আসছে।

মাত্র এক দশক আগেও সিংগাপুর -মালেশিয়া থেকে আমাদর দেশে ছাত্ররা পড়তে আসতো। আর, এখন সেই সব দেশে পড়তে যাওয়ার জন্য আমরা লাইন ধরি। কিছুদিন পর হয়তো রুয়ান্ডায়ও উচ্চ শিক্ষার জন্য যেতে হবে।

চিকিৎসা খাতে ব্যাপক জালিয়াতি করে ভুয়া করোনা রেজাল্ট দেয়ার জন্য আজ ইতালি-ইউরোপের পত্রিকায় বাংলাদেশের অভিবাসী বন্ধ করার জন্য যখন পত্রিকার হেডলাইন নিউজ হচ্ছে।

পুরো বিশ্বকে তাক লাগানো রুয়ান্ডাকে তখন আন্তর্জাতিক বিশ্ব দাঁড়িয়ে স্ট্যান্ডিং অভেশান জানাচ্ছে। আসুন সব ক্ষেত্র জালিয়াতির শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করে নিজ দেশকে সিংগাপুর , মালেশিয়া ভেবে পুলক বোধ করি ।

আর রুয়ান্ডা-উগান্ডা দেশগুলোকে নিয়ে হাসাহাসি করি। শুধু মনে রাখবেন- উন্নতির শিখড়ে পৌঁছাতে আপনি যখন শম্ভুক গতিতে ছুটছেন- পুরো বিশ্ব তখন চিতাবাঘের মতো দৌড়াচ্ছে।

– আরিফ মাহমুদ

[আমাদের ব্যাকআপ পেজ https://www.facebook.com/112775043417701
ব্লগ পেজ https://www.facebook.com/263474267635558
কমিউনিটি গ্রুপ https://m.facebook.com/groups/144322856218316/
ওয়েবসাইটে পড়ুন: EngineersDiaryBD.com/latest-news/]