আজকে কথা বলবো বাংলাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রকৌশল সম্পর্কিত বিশ্ববিদ্যালয় রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট) নিয়ে। প্রকৌশল ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের জন্য রুয়েট ভর্তি পরীক্ষা সম্পর্কে যাবতীয় খুঁটিনাটি আলোচনা করবো এখানে।
উচ্চমাধ্যমিকে গণিত, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, ইংরেজি এই চারটি বিষয়ে প্রাপ্ত মোট গ্রেড পয়েন্টের উপর ভিত্তি করে শিক্ষার্থীরা ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য আবেদন করতে পারে। এই গ্রেড পয়েন্ট প্রতিবছর উচ্চমাধ্যমিকের ফলাফলের উপর ভিত্তি করে পরিবর্তিত হয়।
২০১৭ সালে এই চার বিষয়ে সম্ভবত ২০ এর মধ্যে ১৮.৫ চাওয়া হয়েছিল। ২০১৮ সালে তা ছিল ১৮ এবং ২০১৯ সালে ১৮.৫ চাওয়া হয়েছিল। আবেদনকারী সকল শিক্ষার্থীর মধ্যে থেকে এই গ্রেড পয়েন্টের ভিত্তিতে সর্বোচ্চ ৯০০০ জনকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া হয়।
রুয়েটে দুটি গ্রুপে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।
ক গ্রুপে আবেদনকারী শিক্ষার্থীরা কেবল ইঞ্জিনিয়ারিং পরীক্ষায় অংশ নেয় এবং খ গ্রুপে আবেদনকারীরা ইঞ্জিনিয়ারিং+আর্কিটেকচার পরীক্ষায় অংশ নেয়। ইঞ্জিনিয়ারিং পরীক্ষার সময় থাকে ২ ঘন্টা এবং সর্বমোট ৩৫০ নম্বরের প্রশ্ন করা হয় যার মধ্যে গণিত, পদার্থবিজ্ঞান এবং রসায়ন এই তিনটি বিষয় থেকে ১০টি করে প্রশ্ন থাকে এবং ইংরেজি বিষয়ের প্রশ্ন থাকে ৫টি (১০০+১০০+১০০+৫০=৩৫০)।
এরপর খ গ্রুপের পরীক্ষার্থীদের জন্য ১০ মিনিট বিরতি দেওয়া হয় এবং বিরতির পর ১ ঘন্টার আর্কিটেকচার পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় যাতে মোট ১০০ নম্বরের প্রশ্ন করা হয়।
এবার আসি বিষয়ভিত্তিক আলোচনায়। সাধারণত রুয়েট ভর্তি পরীক্ষায় গণিত বিষয় থেকে একটু ট্রিকি কোশ্চেন করা হয়, মেইনলি স্যারেরা পরীক্ষার্থীদের বেসিক ধরার জন্য এমনটা করেন। তবে বইয়ের প্রতিটা টাইপভিত্তিক সমস্যার বেসিক ক্লিয়ার থাকলে এই প্রশ্নগুলো সহজে উত্তর করা যায়।
এজন্য এস ইউ আহমেদ এবং কেতাবউদ্দীন স্যারের বইয়ের সবগুলো অঙ্ক ভালভাবে রপ্ত করার সাথে সাথে বিগত বছরে রুয়েট ভর্তি পরীক্ষায় আসা প্রশ্নগুলোও ভালভাবে প্র্যাক্টিস করে রাখতে হবে। পদার্থবিজ্ঞানের প্রশ্নগুলো একটু সহজ করা হয় এবং সূত্রগুলো ভাল মতো আয়ত্তে থাকলে খুব কম সময়ে এগুলো অ্যান্সার করা যায়। শুধু রুয়েট না, সবগুলো প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষাতেই পদার্থবিজ্ঞান বিষয় থেকে এমন প্রশ্ন করা হয় যেগুলো তুলনামূলকভাবে সহজ থাকে এবং দ্রুত উত্তর করে শেষ করা যায়। তবে অঙ্ক করার জন্য সূত্রগুলো ভালভাবে রপ্ত করা থাকলে দ্রুত প্রশ্ন বুঝে উত্তর করে ফেলা যায়।
প্র্যাক্টিসের জন্য যেকোন একটা ভাল লেখকের বইয়ের সবগুলো গাণিতিক সমস্যা সমাধান করে রাখতে হবে এবং থিওরি সম্পর্কে বেসিক ক্লিয়ার থাকতে হবে। রসায়নে ভাল করতে হলে গাণিতিক সমস্যা এবং থিওরিতে সমানভাবে জোর দিতে হবে। হাজারী কিংবা সঞ্জিত কুমার গুহ স্যারের বইয়ের গাণিতিক সমস্যাগুলো অবশ্যই করে রাখতে হবে।
যেখানে যেখানে গুরুত্বপূর্ণ বিক্রিয়া আছে সেগুলো সব ভালোভাবে শিখে নিতে হবে। ভর্তি পরীক্ষায় সাধারণত রসায়নে অন্যান্য চ্যাপ্টারের তুলনায় বেশি প্রশ্ন থাকে জৈব রসায়ন থেকে, এগুলো পারার জন্য সব গুরুত্বপূর্ণ বিক্রিয়াগুলো ভালভাবে বুঝে শিখতে হবে। সকল বিষয়ের জন্য একই কথা প্রযোজ্য- বিগত বছরগুলোয় রুয়েট ভর্তি পরীক্ষায় আসা সমস্যাগুলো বার বার প্র্যাক্টিস করতে হবে, এতে প্রশ্নের প্যাটার্ন সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যাবে।
এছাড়া দক্ষতা বাড়ানোর জন্য গাণিতিক পদার্থবিজ্ঞান, গাণিতিক রসায়ন কিংবা কোচিং এর নোটগুলো দেখা যেতে পারে, তবে মেইন বই এবং কোশ্চেন ব্যাঙ্ক ক্লিয়ার না থাকলে এসব করার প্রয়োজন নেই। রুয়েট ভর্তি পরীক্ষায় ইংরেজি বিষয়ের প্রশ্নগুলো একটু ভিন্ন ধরনের আসে।
ইংরেজিতে ভাল নম্বর তুলতে চাইলে গ্রামারের ওপর ভাল দক্ষতা থাকার পাশাপাশি কোশ্চেন ব্যাঙ্ক সল্ভ করতে হবে, প্র্যাক্টিসের পরিমাণ বাড়াতে হবে।
রুয়েটে বিভাগসমূহের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দিচ্ছি এবার। রুয়েটে তিনটি অনুষদে মোট ১৪টি বিভাগ আছে। এগুলো হল-
1. ECE Faculty
* Electrical and Electronic Engineering (EEE)
* Computer Science and Engineering (CSE)
* Electrical and Computer Engineering (ECE)
* Electronics and Telecommunication Engineering (ETE)
2. CE Faculty
* Civil Engineering (CE)
* Building Engineering and Construction Management (BECM)
* Urban and Regional Planning (URP)
* Architecture
3. ME Faculty
* Mechanical Engineering (ME)
* Mechatronics Engineering (MTE)
* Industrial and Production Engineering (IPE)
* Chemical and Food Process Engineering (CFPE)
* Materials Science & Engineering (MSE)
* Glass and Ceramic Engineering (GCE)
রুয়েটের সর্বমোট আসন সংখ্যা ১২৩৫ টি (৫টি উপজাতিদের জন্য)।
ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পর প্রায় প্রথম ৫০০০ জনের তালিকা প্রকাশ করা হয়। গত ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় মেরিট লিস্টে কত সিরিয়াল পর্যন্ত কোন বিষয় পেয়েছে এবং বিভাগসমূহের আসন সংখ্যা কত তা সংক্ষেপে এখানে দেয়া হল-
*EEE – শুরু 30, শেষ 979, আসন 180
*CSE – শুরু 58, শেষ 1312, আসন 180
*ME – শুরু 211, শেষ 1861, আসন 180
*CE – শুরু 281, শেষ 2110, আসন 180
*ECE – শুরু 1370, শেষ 2151, আসন 60
*IPE – শুরু 1476, শেষ 2454, আসন 60
*MTE – শুরু 858, শেষ 2555, আসন 60
*ETE – শুরু 1715, শেষ 2642, আসন 60
*CFPE – শুরু 1983, শেষ 2854, আসন 30
*MSE – শুরু 2230, শেষ 3152, আসন 60
*BECM – শুরু 2411, শেষ 3127, আসন 30
*URP – শুরু 3112, শেষ 3839, আসন 60
*GCE – শুরু 2788, শেষ 3918, আসন 60
*ARCH – শুরু 44, শেষ 287, আসন 30
তবে এই সংখ্যা প্রতি বছর একই রকম থাকে না, শিক্ষার্থী ভর্তির ওপর ভিত্তি করে কমবেশি হয়।
আপাতত এতটুকুই। রুয়েট ভর্তি সংক্রান্ত মোটামুটি তথ্য এখানে তুলে ধরতে চেষ্টা করেছি, পরীক্ষা সংক্রান্ত আপডেটস পরবর্তীতে জানিয়ে দেয়া হবে। ভর্তি পরীক্ষার সকল নোটিশ পাওয়া যাবে রুয়েটের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে-
সাজিয়া আফরিন মুনিয়া
রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
পুরকৌশল, ১৯ সিরিজ
রুয়েট ভর্তি বিষয়ে যেকোনো প্রশ্ন করো আমাদের গ্রুপে