দেশটির রাজধানী’র নাম কিগালি। আপনাদের কি জানা আছে, কিগালি হচ্ছে আফ্রিকা মহাদেশের সব চাইতে পরিষ্কার শহর?
শহরটি এতো’ই পরিষ্কার, এই শহরটি এখন ইউরোপ-আমেরিকার যে কোন শহরের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার অবস্থায় পৌঁছে গিয়েছে।
রুয়ান্ডা তো সেই দেশ, যারা মাত্র দেড় দশক আগেও নিজেরা নিজেরা যুদ্ধ করছিল।
হুতু-আর তুতসি’দের মাঝে লড়াইয়ের খবর তো কয়েক বছর আগেও নিয়মিত শুনতে পেতাম।
সেই রুয়ান্ডার রাজধানী’কে এখন বলা হয় আফ্রিকার সিঙ্গাপুর।
তো, কিভাবে সম্ভব হলো? কিগালি শহর কি সব সময় এমন ছিল?
মোটেই না। মাত্র ১২ বছর আগেও কিগালি ছিল আফ্রিকার অন্যান্য শহর গুলোর মতো’ই অগোছালো এবং অপরিস্কার।
একটা সময় দেশটির সরকার সিদ্ধান্ত নিল- পুরো শহর’কে (ইন ফ্যাক্ট পুরো দেশকে) তারা পরিষ্কার-পরিচ্ছিন্ন করে ফেলবে।
শহরের সকল বস্তি ভেঙে ফেলা হলো। যারা ক্ষতিগ্রস্ত হলো, তাদের আর্থিক সাহায্য দেয়া হলো। শুধু তা-ই না; তাদের জন্য ওই শহরেই এপার্টমেন্ট ব্লক তৈরি করা হলো। তারা সেখানেই এখন থাকে।
শহরের সকল রাস্তা-ঘাট নতুন করে ঢেলে সাজানো হলো। ট্র্যাফিক সিস্টেম নতুন করে তৈরি করা হলো। রাস্তা গুলোতে নতুন সাইন বসানো হলো।
শুধু এটা করে’ই দেশটির সরকার বসে থাকেনি। দেশের সাধারণ জনগণ যাতে এই পরিষ্কার পরিছন্ন প্রক্রিয়ার একটা অংশ হতে পারে; এই জন্য “কমিউনিটি ক্লিনিং” প্রোগ্রাম চালু করা হলো।
প্রতি মাসের শেষ বৃহস্পতিবার প্রতিটা কমিউনিটি’র সদস্য’কে নিজ এলাকা পরিষ্কার করতে হবে। আবার ভেবে বসবেন না, এটা স্বেচ্ছাসেবক টাইপ কোন কাজ। এই কাজ দেশের প্রতিটা নাগরিকের জন্য বাধ্যতামূলক।
এমনকি দেশের সকল মন্ত্রী-এমপি-প্রেসিডেন্টও প্রতি মাসের শেষ বৃহস্পতিবার রাস্তায় বের হয়ে নিজ এলাকা পরিষ্কার করতে বাধ্য।
পুরো দেশ মাত্র ১২ থেকে ১৫ বছরের সম্পূর্ণ বদলে গিয়েছে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার দিক থেকে। কিগালি শহরের কোন ছবি কিংবা ভিডিও দেখলে আপনার মনে হবে- এক্ষুনি গিয়ে ঘুরে আসি।
আপনি হয়ত ভাবছেন- এতো কিছু করতে নিশ্চয় ওদের অনেক টাকা লেগেছে। ওদের নিশ্চয় অনেক টাকা আছে।
আপনাদের জানিয়ে রাখু রুয়ান্ডার মাথাপিচু আয় হচ্ছে মাত্র ৮৮৩ মার্কিন ডলার। যেখানে বাংলাদেশের মাথাপিচু আয় প্রায় ২ হাজার ডলার। অথচ চিন্তা করুন আমাদের ঢাকা শহরের অবস্থা! বসবাসের জন্য পৃথিবীর সব চাইতে নিকৃষ্ট শহর গুলোর একটি হচ্ছে ঢাকা শহর।
আজ বছরের শেষ দিন। আজ আর নিজেদের সমালোচনা করবো না। রাষ্ট্র কিংবা সমাজ কি করছে এই নিয়ে না হয় আজ আর না বলি। আমি আসলে যে কোন কিছু থেকেই শিক্ষা নেই।
আমার সব সময়ই মনে হয়েছে- একদম ছোট বাচ্চা থেকে শুরু করে, রাস্তার ভিক্ষুকের কাছ থেকেও শিক্ষা নেয়ার আছে।
রুয়ান্ডা সম্পর্কে কিছু পড়ারশুনা করার পর আমার মনে হয়েছে- আমরা লুজার হিসেবে জন্মাইনি। আমাদের কর্মকাণ্ড’ই আমাদের লুজার বানায়।
যেই রুয়ান্ডা কিছুদিন আগেও স্রেফ মারামারির জন্য খবরে আসতো, সেই রুয়ান্ডায় এখন মানুষ ঘুরতে যায়- তাদের সাফল্য দেখার জন্য। কিভাবে একটা শহর আফ্রিকার সব চাইতে পরিষ্কার শহরে পরিণত হলো।
এই থেকে শিক্ষা নেবার আছে ব্যক্তি হিসেবে। সমাজ কিংবা রাষ্ট্র যদি কিছু না করি; ব্যক্তি মানুষ হিসেবে আমাকে আমার জীবনের পরিকল্পনা গুলো সঠিক ভাবে নিতে হবে। সেই অনুযায়ী কাজ করে যেতে হবে। যে, যা-ই বলুক; পেছনে ফিরে তাকানোর সুযোগ নেই।
সামনে এগিয়ে যেতে হবে। তাহলে’ই সাফল্য এসে ধরা দিবে। কারন- We are not born as loser. আমাদের কৃতকর্ম’ই নির্ধারণ করে দেয়, দিন শেষে পৃথিবী আমাকে কিভাবে মনে রাখবে।
স্রেফ একটা বিষয় মাথায় রাখতে হবে- পৃথিবী নামক এই গ্রহে পরাজিত মানুষের কোন স্থান নেই। পরাজিত মানুষকে কেউ মনে রাখে না।
– আমিনুল ইসলাম
শিক্ষক
এস্তেনিয়া
আরো পড়ুনঃ আমার ঢাকা শহরটি কবে রুয়ান্ডার রাজধানী কিগালির মত হবে?