ইচ্ছা ছিল মেডিকেলে পড়াশুনা করে ডাক্তার হওয়া, পরিবারের ইচ্ছাও ছিল তাই। কিন্তু বিধিবাম, দুর্ভাগ্যক্রমে মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ না পাওয়াতে বেছে নিই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে। তখন যা মনে হয়েছিলো দুর্ভাগ্য তাই পরে আশীর্বাদ হয়ে আসে আমার জীবনে।

স্নাতকের বিষয় হিসেবে নিই সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং, যা বিকল্প হিসেবে আগে থেকেই পছন্দ ছিল। এই পথে পা বাড়িয়ে মনে হল ভুল করিনি, আইআইটির ছোট পরিসরে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের মাঝে যেমন হৃদ্যতার সম্পর্ক বিরাজ করে, তেমন পরিবেশে মেডিকেলে চান্স না পাবার দুঃখ ভুলে যাই। হয়ত একাডেমিক ফলাফল আহামরি কিছু ছিলোনা কিন্তু পড়াশুনায় ছিলাম আগ্রহী।

পড়াশুনার পাশাপাশি অংশ নিতাম প্রোগ্রামিং কন্টেস্ট, হ্যাকাথন সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়োজিত ফেস্টের বিভিন্ন সেগমেন্টে। এভাবে প্রচুর মানুষের সাথে পরিচয় হয়, নেটওয়ার্কিং এবং যোগাযোগ দক্ষতা বাড়ে। এ বিষয়গুলো ভবিষ্যতে আমাকে প্রচুর সাহায্য করেছিল।

দেখতে দেখতে দুটো বছর কেটে যায়, ৩য় বর্ষে শুরু করি ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা। গবেষণাকর্মে আগ্রহী ছিলাম বরাবর, তাই যখন ইন্টার্ন হিসেবে একটা সেমিস্টার কাটাতে হয় তখন সেখানকার গৎবাঁধা ৯-৫ টা অফিস আর কর্পোরেট কালচার ভাল লাগেনি, মনে হয়েছিল শিক্ষকতা আর গবেষণায় যে স্বাধীনতাটুকু পাওয়া যাবে, তা অন্য কোথাও নেই।

তাই ইন্টার্ন থাকা অবস্থাতেই অল্প অল্প করে শুরু করি গবেষণার কাজ। আমাদের সর্বশেষ প্রজেক্ট হিসেবে রিসার্চ ভিত্তিক থিসিস করতে হত, এর প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করি। তখন থেকেই গবেষণায় হাতেখড়ি।

মাস্টার্স ডিগ্রি যতদিনে অর্জন করি ততদিনে আমার বেশ কিছু পেপার প্রকাশিত হয় যার মধ্যে কয়েকটি বেস্ট পেপার অ্যাওয়ার্ড পায়। গবেষণা করার জন্য সবথেকে ভাল উপায় হচ্ছে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করা, পাশাপাশি একজন শিক্ষক নিজের জন্য সময় বের করতে পারেন আবার পড়াশুনার জন্য সময় বের করতে পারেন।

আর সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ ব্যপার, একজন শিক্ষক সমাজে আনতে পারেন সুন্দর পরিবর্তন। তাই শেষ পর্যন্ত শিক্ষকতা পেশায় যাওয়াই যথার্থ মনে করি। রিসার্চ আর থিসিস এর কাজ মোটেই সহজ নয়, ক্রমাগত করে যেতে হয়, টানা কাজ করেও ফল না পাওয়া যেতে পারে, তখন কাজের মাঝে হালকা একটা বিরতি নেয়া যায়, এই ছোট্ট বিরতিই এনে দিতে পারে একটি ব্রেকথ্রু।

তবে দিনশেষে যখন আমার করা রিসার্চ আলোর মুখ দেখে তখন যে আনন্দটা হয়, তা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব না।

যারা ভবিষ্যতে স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণার কাজ করতে চায় তাদের জন্য আমার পরামর্শ হলো, প্রথমত একটা ভাল একাডেমিক ফলাফল ধরে রাখা, দ্বিতীয়ত কনফারেন্স বা জার্নাল পাবলিকেশনের চেষ্টা করা এবং তৃতীয়ত এক্সট্রাকারিকুলার অ্যাকটিভিটির সাথে জড়িত থাকা।

এতে যেমন গবেষণার জন্য বিভিন্ন বৃত্তি পেতে সুবিধা হয় তেমনি ভবিষ্যৎ সংশ্লিষ্ট সবার কাছে এই বার্তা পৌছায় যে এই প্রার্থী তার কাজের ব্যাপারে আন্তরিক। এছাড়া কারিকুলামের অন্তর্ভুক্ত প্রজেক্ট করার পাশাপাশি বিভিন্ন সহশিক্ষাক্রমিক কার্যক্রমে অংশগ্রহন এবং নিজের নেটওয়ার্ক বৃদ্ধিতে মনোযোগী হতে হবে।

বর্তমানে “Anomaly Detection in Big Data” বিষয়ক গবেষণার জন্য কমনওয়েলথ স্কলারশিপ নিয়ে রিসার্চ করতে যাচ্ছি ইম্পেরিয়াল কলেজ, লন্ডন(UK) তে। আমার স্বপ্ন হচ্ছে গবেষণার মাধ্যমে মানুষের জন্য ইম্প্যাক্টফুল কাজ করা, স্বপ্ন সত্যি করার লক্ষ্য আঁকড়ে ধরেই পাড়ি দিতে চাই ভবিষ্যতের পথ।

– Sadia Sharmin
BSSE 4th batch
Assistant Professor, IUT
Imperial College, London