সাস্টেইনেবল এভিয়েশন ফুয়েল (SAF) এর মূল থিওরি হল জৈব বস্তু থেকে জ্বালানী উৎপাদন করা, তারপর এর দহনে যে পরিমাণ কার্বন উৎপন্ন হবে তা আবার যখন জ্বালানী উৎপাদনের জন্য উৎপাদক চাষ করা হবে তখন পুরোপুরিভাবে তাত্তি¡কভাবে উৎপাদক দ্বারা শোষিত হবে।

এর লক্ষ্য অন্তত ৫০% কম গ্রীনহাউজ গ্যাস এবং কার্বন নিঃসরণ করা। SAF প্রচলিত জ্বালানীর তুলনায় ৮০% কম কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃসরণ করতে পারে। গ্রীনহাউজ দূষণের একটা বড় অংশ আসে এভিয়েশন কোম্পানি থেকে।

উদাহরণ দিয়ে ব্যাপারটা সহজে বুঝা যাবে। লন্ডন থেকে সান ফ্রান্সিসকো তে ইকোনমি ক্লাসের প্রতি টিকিটের জন্য পরিবেশে অন্তত এক টন CO2 নিঃসরিত হয়। শুধুমাত্র ২০১৯ সালে বানিজ্যিক উড়োজাহাজ গুলো থেকে ৯১৮ মিলিয়ন মেট্রিক টন CO2 নিঃসরিত হয়েছে। শুধু তাই নয়।

সড়ক পথের তুলনায় বিমান থেকে প্রায় ৭৪% বেশি কার্বন দূষণ ঘটে। বর্তমান সময়ে এভিয়েশন শিল্পতে ২০১৩ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ফুয়েল এফিশিয়েন্সিতে তারা যত অগ্রগতি লাভ করেছে তার তুলনায় ফ্লাইটের পরিমাণ বেড়েছে চারগুণ বেশি।

কাজেই SAF একটি সময়োপযোগী এবং অতি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ। সাস্টেইনেবল এভিয়েশন ফুয়েল তৈরি হয় রান্নার তেল, শস্য, গৃহস্থালীর বর্জ্য এমনকি কার্বন ডাই অক্সাইড থেকেও। রোলস রয়েস এবং এয়ারবাস তাদের ইঞ্জিনে পরীক্ষামূলকভাবে ১০০% SAF ব্যাবহার করছে।

তবে ইতিমধ্যে ২০১৬ সাল থেকে প্রচলিত জ্বালানী তেলের সাথে মিশ্রিত করে জৈব জ্বালানী ব্যাপকভাবে ব্যাবহার হয়ে আসছে। ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট এসোসিয়েশন এর তথ্যমতে এখন পর্যন্ত প্রায় ৩৭০০০০ এরও বেশি ফ্লাইটে মিশ্রিত SAF ব্যাবহৃত হয়েছে।

ব্রিটিশ সরকার গত জুলাইয়ে SAF এর ব্যাপারে একটি কনসালট্যাশন গঠন করে যেটি ২০২৫ সাল থেকে এভিয়েশন জ্বালানীতে ঝঅঋ এর অনুপাত বাড়ানোর লক্ষ্যে কাজ করছে।

এবং গত নভেম্বরে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এবং বিল গেটস ৪০০ মিলিয়ন ইউরোর বিনিয়োগ ঘোষণা করেন ক্লিন টেকনোলজির উপর। তবে প্রশ্ন হচ্ছে আসলেই কি ১০০% SAF সম্ভব হবে?

আমেরিকাতে ২০১৯ সালে তাদের সর্বমোট ব্যাবহৃত শক্তির ৫% আসে জৈবজ্বালানী থেকে যার ৪৫ শতাংশই ইথানল। এভিয়েশনেও প্রচলিত জ্বালানীর সাথে ইথানল মিশিয়ে SAF করা হয়। বর্তমানে জ্বালানির সাথে মাত্র ১০% ইথানল ব্যাবহার করা হচ্ছে। মূলত এই ইথানল ভুট্টা থেকে উৎপাদন করা হয়।

৩৭ মিলিয়ন হেক্টর জমি যা আমেরিকার মোট ফসলি জমির ২২%, ব্যাবহৃত হয় ভুট্টা উৎপাদনে। উৎপাদিত ভুট্টার ৪০ শতাংশই ইথানল তৈরিতে ব্যাবহৃত হয়। অর্থাৎ প্রায় ৮.৮% ফসলি জমি ইথানল উৎপাদন এর জন্য ব্যাবহৃত হচ্ছে। এত পরিমাণ জমিতে এমন কিছু উৎপাদন হচ্ছে যা আমরা খেতে পারিনা, ব্যাপারটা অযৌক্তিক।

ডেভিড পিমেন্টেল, একজন কৃষি গবেষক, যিনি প্রথম ডিডিটি নিষিদ্ধকরণ নিয়ে দাবি তুলেছিলেন, তিনি এই ইথানলের ব্যাপারে একটি হিসাব করেন যেখানে তিনি দেখান যে প্রতি লিটার জ্বালানী ইথানল উৎপাদনে সব মিলিয়ে প্রায় ৬৬০০ কিলোক্যালরি শক্তি খরচ হয় যেখানে প্রতি লিটার ইথানল দহনে কেবল ৫১৩০ কিলোক্যালরি শক্তি ফেরত আসছে।

অর্থাৎ ২৯ শতাংশ শক্তির অপচয় হচ্ছে। শুধু তাই নয়, আমাদের পানযোগ্য পানিরও অপচয় ঘটে। মিঠা পানির ৮০% ই ব্যয় হয় কৃষি কাজে। সেখানে এত বড় একটা অংশ খাবার অযোগ্য কিছুর পেছনে ব্যয় করাটা অনেকের কাছেই গ্রহণযোগ্য নয়। মূলত ইথানল উৎপাদন করা হচ্ছে ভুট্টা থেকে।

আর ভুট্টা মাত্র .২৫% সৌরশক্তি কাজে লাগাতে পারে ফটোসিন্থেসিসে।

অর্থাৎ এখানেও শক্তির সঠিক ব্যাবহার হচ্ছে না। খাবারের জন্য শক্তি খরচ করাটা যৌক্তিক অবশ্যই। তবে শক্তির জন্য খাবার উৎপাদন পুরোপুরি যৌক্তিক নয়।

অন্যদিকে ভোজ্যতেল থেকেও এভিয়েশনের জ্বালানি তৈরির পদ্ধতিও SAF এর অন্তর্ভুক্ত। এই পদ্ধতিতে প্রতি গ্যালন জ্বালানি তৈরিতে আট গ্যালন ব্যাবহৃত ভোজ্যতেল দরকার হয়। তবে আশার ব্যাপার হচ্ছে, এই সবুজ জ্বালানী কিংবা SAF নিয়ে অনেক কোম্পানিই উচ্চতর গবেষণা চালাচ্ছে।

সবকিছু ঠিক থাকলে হয়তো আমরা তাদের লক্ষ্য অনুযায়ী ২০৫০ সাল নাগাদ শতভাগ নিঃসরণমুক্ত এভিয়েশন ফুয়েল পেতে পারি এবং ব্রিটিশ এয়ারলাইনস এর সর্বপ্রথম এই লক্ষ্য বাস্তবায়নের পরিকল্পনা রয়েছে।

Writer: এহসানুল মাহের নিয়াজ