রাজধানী ঢাকার মোহাম্মদপুরে অবস্থিত দেশের অন্যতম স্বনামধন্য কলেজটি সম্পর্কে চলো জেনে নেয়া যাক।
পরিচিতি:
১৯৫৪ সালের ১৯ মার্চ খ্রিষ্টান মিশনারিরা পুরান ঢাকার মনির হোসেন লেনে এই বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। তখন এর নাম ছিল “সেন্ট যোসেফ ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল”। পরে ১৯৬৫ সালে ঢাকার ৯৭, আসাদ এভিনিউতে স্থানান্তরিত করা হয়।
স্বাধীনতার পর সরকারী প্রজ্ঞাপন অনুসারে, বিদ্যালয়টিতে বাংলা মাধ্যম চালু করা হয় এবং “সেন্ট যোসেফ মাধ্যমিক বিদ্যালয়” নামে স্কুলটির কার্যক্রম চলতে থাকে।
২০০১ সালে প্রতিষ্ঠানটিতে “কলেজ শাখা” যুক্ত করা হয় এবং নাম পরিবর্তিত হয়ে “সেন্ট যোসেফ উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়” নির্ধারিত হয়। বিদ্যালয়টিতে বাংলা এবং ইংরেজি দুটি ভার্সনই চালু রয়েছে।
এখানকার শিক্ষার্থীগণ “যোসেফাইট” নামে পরিচিতি লাভ করেন।
ঐতিহ্যবাহী স্কুল হিসেবে প্রতিষ্ঠানটির অত্যন্ত সমৃদ্ধ ইতিহাস রয়েছে। তবে, আমাদের আজকের আলোচনা শুধুমাত্র কলেজ কেন্দ্রিক থাকবে।
বিস্তারিত :www.sjs.edu.bd
এক নজরে কলেজটি:
নাম: সেন্ট যোসেফ উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়
আয়তন: ৩.১৫ একর
প্রতিষ্ঠাকাল: ২০০১ (কলেজ শাখা)
ভবনঃ পরস্পর সংযুক্ত একটি চারতলা ও একটি দোতলা বিল্ডিং
ডিজাইনার: রবার্ট বুগি (বিখ্যাত ডিজাইনার, যিনি কমলাপুর রেল স্টেশনেরও ডিজাইন করেছেন)
শিক্ষার্থী: ১৪৮০ জন ছাত্র (বর্তমান)
বিদ্যালয় দিবস: ১৯ মার্চ (Josephite Day)
ঠিকানা: ৯৭, আসাদ এভিনিউ (গেট), মোহাম্মদপুর, ঢাকা – ১২০৭
সংক্ষিপ্ত নাম: St Joseph / SJHSS
মূলমন্ত্র (Motto):
প্রজ্ঞা ও পুণ্যের সাথে হও অগ্রসর (Advancing in wisdom and virtue)
ক্যাম্পাসে যা যা রয়েছে:
দৃষ্টিনন্দন, স্বতন্ত্র ডিজাইনের অসাধারণ একাডেমিক ভবন,
২ টি ক্যান্টিন,
বাস্কেটবল কোর্ট,
উন্মুক্ত অডিটোরিয়াম,
ভলিবল কোর্ট,
টেবিল টেনিস কোর্ট,
ক্রিকেট এর প্র্যাক্টিস গ্রাউন্ড,
ফুটবল ও হ্যান্ডবল খেলার সুবিধাসমৃদ্ধ মাঠ,
সুসজ্জিত ও সমৃদ্ধ লাইব্রেরী
চমৎকার ব্যবস্থাপনাযুক্ত আধুনিক ল্যাবরেটরি
ড্রেসকোড:
কলেজের মনোগ্রামযুক্ত সাদা শার্ট
অ্যাশ প্যান্ট,
কালো কেডস/সুজ,
মনোগ্রামসহ ব্লু সোয়েটার (শীতকালে)
ক্লাস টাইম:
সকালে ৮.০০ টা থেকে দুপুর ১ টা।
সকালে ৭.৫০ টার পরে গেট বন্ধ হয়ে যায়, আর কেউ প্রবেশ করতে পারে না।
ভর্তি:
মহামান্য আদালতে রীট পিটিশনের প্রক্ষিতে ২০১৫ সাল থেকে ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে এই কলেজে ভর্তি হতে হয়। লিখিত এবং মৌখিক দুটি ধাপে এই প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা সম্পন্ন হয়।
আসনসংখ্যা :
সর্বমোট ৭৪০ (only for boys)
বিজ্ঞান: ৫০০ (বাংলা মাধ্যম: ৪০০, ইংরেজি মাধ্যম: ১০০)
ব্যবসায় শিক্ষা: ১৭০
মানবিক: ৭০
বেতনঃ
বিজ্ঞান শাখা (বাংলা)- ১৭০০
বিজ্ঞান শাখা (ইংরেজি) -২০০০
ব্যবসায় শিক্ষা শাখা -১৬০০
মানবিক শাখা -১৫০০
ক্লাব :
সেন্ট যোসেফ তার শিক্ষার্থীদের জন্য সহ-শিক্ষামূলক কার্যক্রমগুলোকে অত্যন্ত আগ্রহের সাথে স্বাগত জানায়। ১৫টি ক্লাব রয়েছে কলেজটিতে।
ক্লাবগুলো প্রতি বছরই বিভিন্নধরনের আন্তঃকলেজ ফেস্টের আয়োজন করে থাকে এবং অত্যন্ত দক্ষতার সাথে ইভেন্টগুলো পরিচালনা করে থাকে। সারাদেশের সবচেয়ে পুরাতন ও ঐতিহ্যবাহী বিজ্ঞান ক্লাবের মধ্যে Scintilla Science Club (SSC) একদম প্রথম সারিতে রয়েছে।
এছাড়াও Josephite Debating Club (JDC) প্রতিবছরই বড়বড় প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে বিজয়ের মালা ছিনিয়ে আনে। একই সাথে বাৎসরিক আন্তঃকলেজ ডিবেট ফেস্টের আয়োজন করে কলেজের সম্মান প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি করে চলেছে। এছাড়াও, নিয়মিত কাজ করে চলা অন্যান্য প্রধান ক্লাবগুলো হলো:
Josephite Cultural Forum (JCF)
Josephite Eco Earth Club (JEEC)
Josephite Drama Group (JDG)
Josephite Language & Reading Club (JLRC)
Josephite Math Club (JMC)
Chess Club
Josephite IT Club
Josephite Business Club (only for the Students of Arts & Commerce group)
খেলাধুলা:
জীবনে সুস্থ থাকার জন্য শরীরচর্চা ও খেলাধুলার কোনো বিকল্প নেই। তাই তো কলেজটিতে পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলায়ও রয়েছে সমান গুরুত্ব।
বাস্কেটবল গ্রাউন্ডে নিয়মিত প্র্যাক্টিস ও প্রায়ই বিভিন্ন টুর্নামেন্ট আয়োজন করা হয়। এমনকি, কলেজের প্রিন্সিপাল, ভাইস প্রিন্সিপালও প্রায় সময় বিকেলে ছাত্রদের সাথে গেমসে অংশগ্রহন করেন।
আন্তঃকলেজ বাস্কেটবল, টেবিল টেনিস, হ্যান্ডবলে এই কলেজ বরাবরই ভাল করে আসছে। এছাড়াও আন্তঃকলেজ ফুটবল, ক্রিকেটেও কলেজটির ভাল অবস্থান রয়েছে।
প্রতিবছর সেকশনভিত্তিক দল গঠন করে ক্রিকেট/ফুটবল টুর্নামেন্ট, Josephite Premiere League আয়োজন করা হয়।
প্রাতিষ্ঠানিক ফলাফল:
প্রতিষ্ঠানটি এই দিক দিয়ে অন্য সবার চেয়ে আলাদা অবস্থান বজায় রেখেছে, সেটি হলো ; শুধুমাত্র বোর্ড পরীক্ষায় ভাল করাকে কখনোই নিজেদের লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য হিসেবে না ধরা। প্রতিটি বিষয়েই শিক্ষকগণ টপিকগুলোর Basic এর উপর অনেক বেশি গুরুত্ব দেন। শুধু মুখস্ত নয় বরং “পরিষ্কারভাবে বুঝে তারপর শিখতে” উৎসাহ দেন।
একই সাথে, সবসময়ই বোর্ড পরীক্ষার চেয়ে এডমিশন টেস্টে ভাল করাকে অধিক গুরুত্ব দেয়া হয়।
তাই বলে যে, বোর্ড রেজাল্ট যে ভাল হয় না, তেমনটি কিন্তু নয়! 😊
আর, মূল Focus টা যেহেতু এডমিশন টেস্টেই থাকে, তাই প্রতিবছরই ভর্তি পরীক্ষায় দুর্দান্ত রেজাল্ট করে থাকে যোসেফাইটরা। দেশের ইঞ্জিনিয়ারিং, মেডিকেল, ভার্সিটির পাশাপাশি বাইরের দেশেও স্কলারশিপে অনেক শিক্ষার্থী প্রতিবছর পড়তে যাচ্ছে।
©Beni
Kishor Bormon
যেকোনো জিজ্ঞায় কমেন্ট করুন