কথায় যেন মুক্তো ঝরে, প্রজ্ঞায় যেন পর্বতসম, চেহারায় যেন নূরানী আলো, লেখায় যেন অতল সাগর। আজকে আমি কথা বলব যুগের অন্যতম শ্রেষ্ঠ স্কলার এবং এমন একজন মানুষ যাকে বাদ দিয়ে ওয়েস্টার্ন একাডেমিয়াতে ইসলামিক স্কলারশীপ চিন্তাও করা যায় না। বিভিন্ন নন-মুসলিম স্কলার যার কাছে শ্রদ্ধায়, ভালোবাসায় মাথা নত করেন।

ডঃ সাইয়েদ হোসাইন নাসের বর্তমান বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ দার্শনিক, ধর্মতাত্ত্বিক, বিদগ্ধ পন্ডিত, অ্যাকাডেমিশিয়ান, গবেষক ও আলোচক। তিনি বর্তমানে আমেরিকার নামকরা বিশ্ববিদ্যালয় জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির ইসলামিক স্টাডিজ ডিপার্টমেন্টের ইমেরিটাস প্রফেসর।

তিনি ১৯৩৩ সালে ইরানে জন্মগ্রহণ করেন। মাত্র ১৩ বছর বয়সে শিক্ষার জন্য আমেরিকায় গমন করেন।

তিনি ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি (এমাইটি) থেকে আন্ডারগ্রাজুয়েট ডিগ্রী অর্জন করেন।

এখানে উল্লেখ্য যে কিউএস ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি র‍্যাংকিং-এ পৃথিবীর সেরা ১০০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে এমআইটির অবস্থান ১ নম্বরে।

বলা রাখা ভালো এখানে বাংলাদেশের মাত্র দুইটি ইউনিভার্সিটির র‍্যাংকিং ৫০০-র মধ্যেও নেই। ইতিহাসে ইরানীদের মধ্যে তিনিই প্রথম এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা শুরু করেন।

এরপর পৃথিবীর আরেক শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয় হার্ভাড ইউনিভার্সিটি থেকে মাস্টার্স ও পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করেন।

প্রথমদিকে ইডেনবার্গ ইউনিভার্সিটি ও টেম্পল ইউনিভার্সিটিতে যোগদান করেন। ১৯৮৪ সাল থেকে জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটিতে ইসলামিক স্টাডিজ ডিপার্টমেন্টের ফুলটাইম প্রফেসর হিসেবে অধ্যাপনা শুরু করেন এবং বর্তমানে ইমেরিটাস প্রফেসর হিসেবে রয়েছেন।

ব্যক্তি জীবনে অসংখ্য সম্মাননা পেয়েছিলেন তার মধ্যে উল্লেখিত কয়েকটি হচ্ছে-
👉 ২০০০ সালে “লাইব্রেরি অফ লিভিং ফিলোসফার’স”-এর মধ্যে তাকে অন্তর্ভুক্ত করে তার উপরে একটি ভলিয়ম লেখা হয়।

👉 পৃথিবীর ইতিহাসে তিনিই প্রথম মুসলিম ও নন- ওয়েস্টার্ন স্কলার হিসেবে সম্মানজনক Gifford Lectures-এ লেকচার প্রদান করেন।

👉 সুইডেনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ আপসালা ইউনিভার্সিটির ধর্মতত্ত্ব ডিপার্টমেন্ট থেকে ‘সম্মানজনক ডক্টর’ উপাধি লাভ করেন।

👉 ১৯৯৯ সালে টেমপ্লেটন রিলিজিয়ন অ্যান্ড সাইন্স অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন।

প্রতিভাধর ব্যক্তিত্বের অধিকারী তিনি লেখক হিসেবে ৫০-টিরও অধিক একাডেমিক বই রচনা করেছেন।

ইসলামিক সাইন্স, ধর্ম ও পরিবেশবিদ্যা, দর্শন, ইসলামিক দর্শন, সুফিজম, অধিবিদ্যা, তুলনামূলক ধর্মসহ বিভিন্ন ডিসিপ্লিনে ৫০০-র অধিক আর্টিকেল লিখেছেন। নামকরা বিভিন্ন একাডেমিক জার্নালে তাঁর এই আর্টিকেলগুলো প্রকাশিত হয়েছে।

ফার্সি, ইংরেজি, ফরাসী, আরবি ও ইন্দোনেশিয়ান ভাষায় তার লেখাগুলো প্রকাশিত হয়েছে। সম্পাদক ও অনুবাদক হিসেবেও তার অনেকগুলো লিখনী রয়েছে। Perennial philosophy-তে তার অগাধ জ্ঞান ও পাণ্ডিত্য রয়েছে।

তার লিখিত সেসব একাডেমিক কাজকর্মের বিবরণ বা তালিকা এখানে তুলে ধরলে এই পোস্টটি অনেক দীর্ঘ হবে বিধায় এখানে উল্লেখ করছি না।

জ্ঞানজগতে অসামান্য অবদানের জন্য প্রতিভাবান এই মানুষটির উপরেই এখন অন্যান্য গবেষকগণ বিভিন্ন আর্টিকেল ও বই লিখছেন।

জেনে আনন্দিত হবেন যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্ব ধর্ম ও সংস্কৃতি বিভাগে আমার সরাসরি শিক্ষক ড. মোঃ আবু সায়েম স্যার সম্প্রতি তার উপরে পিএইচডি ডিগ্রী সম্পন্ন করেছেন।

ইউটিউবে তার অসংখ্য জ্ঞানগর্ভ, যুক্তিযুক্ত ও একাডেমিক আলোচনা রয়েছে যেগুলো ভালোভাবে অনুধাবনের জন্য ন্যূনতম একাডেমিক যোগ্যতা থাকতে হয়।

তার জীবনীর উপর অনেকগুলো বই লেখা রয়েছে। সেগুলোর মধ্যে অন্যতম সেরা হচ্ছে-
– The Philosophy of Seyyid Hossein Nasr.
– The Essential Seyyid Hossein Nasr.

তার সবচেয়ে বিখ্যাত গ্রন্থ হচ্ছে The Study Quran. ইংরেজি ভাষায় পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে স্কলারলি অনুবাদ ও তাফসীর গ্রন্থ হচ্ছে এই জগতবিখ্যাত গ্রন্থটি।

পরবর্তী পর্বে আমি এ বিষয়টি নিয়ে আরেকটি পোস্ট দিব ইনশাআল্লাহ।

আমি কয়েক বছর ধরে বিশ্বের বিভিন্ন মুসলিম, নন-মুসলিম স্কলারদের খোঁজখবর করছি, তাদের বইগুলো সংগ্রহ করছি।

কোন কোন সময় ইউটিউবে তাদের বক্তব্যও শুনছি। কিন্তু ডঃ সাইয়েদ হোসাইন নাসেরের মতো স্কলার আমি খুঁজে পাইনি বললেই চলে।

এনারা কাজ করেন নীরবে-নিভৃতে। ফেসবুকে বা ইউটিউবে তাদের পেজ বা চ্যানেল খুঁজে পাওয়া যাবে না।

সে হিসেবে লাখ লাখ অনুসারীও থাকবে না- এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু যারা সোনা বা ডায়মন্ড চিনতে পারে, খুঁজে বেড়ায় তারা ঠিকই এনাদের অনুসন্ধান করবে।

রিসার্চ মেথডলজি সম্পর্কে যাদের মোটামুটি ধারণা রয়েছে তারা জানেন গুগল স্কলার প্রোফাইল কি জিনিস।

একজন স্কলারের একাডেমিক বই, আর্টিকেল মোট কতজন সাইটেশন করেছেন, তার হিসাব গুগল বের করে। সেখানে এনার সাইটেশন সংখ্যা ১৭১১১!

আবারও বলছি সতের হাজার! বর্তমান বিশ্বে এবার পরে দ্বিতীয় কোন একজন স্কলার খুঁজে পাবেন না যার সাইটেশন সংখ্যা এনার ধারের কাছেও রয়েছে।

তাকে নিয়ে যেখানে পিএইচডি ডিগ্রি করা হচ্ছে, সেখানে ফেসবুকে তাঁর সম্পর্কে বিশদ আলোচনা করার পুরোপুরি অসম্ভব।

উনার কথা যতই আমি শুনি ততই তার প্রতি মুগ্ধ হয়ে পড়ি। যারা ইংরেজি ভাষা বুঝতে পারেন তারা ইউটিউবে তার লেকচারগুলো করে শুনতে পারেন।

আল্লাহ তায়ালা তার নেক হায়াত বাড়িতে দিন- আমীন।

© Muhammad Tanbir