সুপার সাইক্লোন আমফান ( amphan ) বা সঠিক উচ্চারণ “উম্পূন” এগিয়ে আসছে বাংলাদেশ এর উপকূল পানে, সকলকে নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটে যেতে বলা হচ্ছে, গভীর সাগর থেকে সকল মাছধরা ট্রলারকে অফশোরে ফিরে আসতে নির্দেশ দেয়া হচ্ছে কিন্তু মেরিটাইম অথরিটি একই সাথে সকল বড় জাহাজ ও মাদার ভেসেল গুলো কে অনতিবিলম্বে বন্দর ত্যাগের নির্দেশ দিলো । তাদের আরো গভীর সমুদ্রে অবস্থান করতে বলা হলো ।

ব্যাপারটা কেমন যেন না? যেখানে ঝড় হচ্ছে সে সাগরেই কিনা জাহাজকে পাঠানো হচ্ছে নিরাপত্তার জন্যে । কিন্তু কেন? চলুন জেনে আসি এর কারণসমূহ ।

যখন জাহাজ বন্দরে থাকে সেটি মুরিং করা থাকে, সোজা বাংলায় রশি দিয়ে বাঁধা থাকে ।

আর যখন বন্দর তীব্র ঝড়ে আক্রান্ত হয় বিশাল সব ঢেউ এসে আছড়ে পরে, তখন সে মুরিং লাইন ছিড়ে যায়, এক জাহাজ অন্য জাহাজের উপরে আছড়ে পরে, টার্মিনালের উপরে আঘাত দেয় ফলে বন্দর এবং জাহাজ উভয়েই ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে ।

প্রশ্ন হলো বন্দরের চেয়ে কি সাগর বেশি নিরাপদ ?
অবশ্যই নিরাপদ যদি একজন অভিজ্ঞ শান্ত ক্যাপ্টেন তার দায়িত্বে থাকেন, কারণ তিনি জানেন কিভাবে ঝড় সামলাতে হয় ।

প্রথমত: জাহাজ এমন একটা অবস্থান খুঁজে নিবে যেখানে আড়াল আছে বাতাসের থেকে বাঁচার জন্য, যেমন সাইক্লোন পশ্চিম দিক থেকে আঘাত হানলে পশ্চিমে কোনো ক্লিফ/ পাহাড় রেখে পুর্বদিকে জাহাজ অ্যাংকর বা নোঙর করে ইঞ্জিন পর্যাপ্ত স্টার্ণে (ব্যাগার/ রিভার্স) রেখে জাহাজ স্টাবিলাইজ রাখার চেস্টা করতে থাকবে ।

দ্বিতীয়ত: জাহাজ কোনো শেল্টার বা আশ্রয় না পেলে তুলনা মূলক কম উইন্ডের (বাতাসের) দিকে গিয়ে বাতাসের বিপরীতে অ্যাংকর বা নোঙ্গর করে স্টার্নে (ব্যাগার) ইঞ্জিন চালিয়ে টেনশন রাখবে এবং ঝড় থামার অপেক্ষা করবে ।

তৃতীয়ত: কোনো শেল্টার পাওয়া গেলো না, জাহাজ গভীর সাগরে আছে যেখানে অ্যাংকর বা নোঙর করারও কোনো সুযোগ নেই সেখানে ক্যাপ্টেন জাহাজ থামাবেন না, ইঞ্জিন পর্যাপ্ত অ্যাহেডে (সামনে বা জাহাজ আলেক রেখে) রেখে বাতাসের দিকে ছুটতে থাকবেন, জাহাজের বো (সামনের অংশ) দিয়ে ঢেউ এবং বাতাস ভেঙে জাহাজ ঝড়ো এলাকার সীমানার বাইরে নিয়ে যাবেন ।

বর্তমানে আধুনিক সব প্রযুক্তির কল্যানে আগেই সাইক্লোন এর গতিপথ ফোরকাস্ট বা আগেই জানতে পাওয়ায় অনেক জাহাজ ই নিরাপদ রাস্তা বানিয়ে চলতে পারে, তবে নসীব খারাপ হলে এ সকল উপায় অবলম্বন করতে হয় ।

আপনার কাছে মনে হতে পারে এসব ঝড় অনেক কিছু কিন্তু কোনো পোড় খাওয়া মেরিনারকে জিজ্ঞাসা করুন তার মন্তব্য থাকবে Just another day at the sea.

বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ নৌপথে চলাচলকারী জাহাজগুলোর নিরাপত্তা ব্যাবস্থা এতটাই নাজুক যা কোনো প্রফেশনাল দেখলে গা শিউরে ওঠে ।

অধিকাংশ যাত্রীবাহী লঞ্চেই অ্যাংকর বা নোঙর লাগানো থাকেনা, মাঝ নদীতে কোনো বিপদ হলে চর খুঁজে নিয়ে, চরে উঠিয়ে দেয়া বা ঠেকানো বাদে উপায় নেই । পর্যাপ্ত আধুনিক ইনস্ট্রুমেন্টসের অভাব তো আছেই ।

এসব সিচুয়েশন বা পরিস্থিতির ক্ষেত্রে কি কর‍তে হবে তা নিয়মিত বিরতি তে একের পর এক ড্রিলের মাধ্যমে বা অনুশীলন করে সকলে পারদর্শী হয়ে ওঠেন যেটা বাংলাদেশে হয়না বললেই চলে ।

Join our Science Group