Ragib Hasan:

জীবনে সব কিছু চলেনা সব সময় সরল রেখায়, বিশেষ করে পড়ালেখার ক্ষেত্রে এটা হাড়ে হাড়ে সত্যি। অসুখে কিংবা কোনো দুর্ঘটনায় অনেক সময়েই প্রথমবারে কাঙ্ক্ষিত ফল মিলেনা, পড়া হয়না হয়তো পছন্দের বিষয়টা। কিন্তু দুঃখজনক হলো, আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় সেকেন্ড চান্সের কোনো ব্যবস্থাই নাই।

শুরুটা হয় স্কুল থেকেই। কোনো বিষয়ে কম নম্বর পেলে বন্ধ হয়ে যায় হয়তো বিজ্ঞান পড়ার রাস্তা। বায়োলজি না পড়লে পরে আর পড়া যাবেনা চিকিৎসা বিজ্ঞান। অথবা এসএসসিতে বাণিজ্য বা কলা শাখায় পড়লে সারা জীবনের জন্য বন্ধ বিজ্ঞান পড়ার রাস্তা। সেই স্কুল জীবনের একটা পরীক্ষার কারণে সারা জীবনেই থাকে স্বপ্নের দরজাটা বন্ধ।

অথচ এমনটা কি হতে পারে না, প্রত্যেকেই পাবে আরো সুযোগ? দরকার হলে বেসিক প্রিরিকুইজিট পরে পড়ে নিয়ে বাণিজ্যের ছাত্ররাও পারবে পড়তে কম্পিউটার বিজ্ঞান? বা বায়োলজিতে পড়াশোনা করে পরে পড়তে পারবে প্রকৌশল?

বাংলাদেশী একজন চিকিৎসক আমাদের প্রতিবেশী ছিলেন আলাবামাতে এক সময়ে, ভদ্রমহিলার ব্যাকগ্রাউন্ড শুনে হয়েছিলাম বিষ্মিত, উনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে পরে আমেরিকাতে ইলেকট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং ও কম্পিউটার সাইন্সে ব্যাচেলর ও মাস্টার্স করেছিলেন।

এর পরে যোগ দিলেন NASA এর রকেট ডিজাইনের সেন্টারে। বহু বছর প্রকৌশলী হিসাবে NASA-তে কাজ করেছেন, তার পর কী মনে হল, বাচ্চারা বড় হবার পরে ৪৫ বছর বয়সে হঠাত চাকুরি ছেড়ে দিয়ে মেডিকেল স্কুলে হলেন ভর্তি, ৪ বছর মেডিকাল স্কুল, তার পর রেসিডেন্সি, এভাবে আমেরিকার মেডিকাল সিস্টেমের সবটা আবার পেরিয়ে হলেন সুপ্রতিষ্ঠিত একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। এখানে যতদিন ছিলেন, আমার ইউনিভার্সিটির মেডিকাল সেন্টারের বিজ্ঞাপনে রাস্তায় বসানো বিশাল বিলবোর্ডে উনার ছবি দেখানো হত, এমনই খ্যাতি।

এই যে যাঁর কথা বললাম, তিনি কিন্তু দ্বিতীয় সুযোগ পেয়েছিলেন ক্যারিয়ারে, সেইরকম সুযোগ আসলে সবারই প্রাপ্য। আমার এক সহকর্মীর স্নাতক পর্যায়ের পড়াশোনা সঙ্গীতে, কিন্তু পরে পড়েছেন কম্পিউটার বিজ্ঞান, হয়েছেন সেটার অধ্যাপক। সুযোগটা ছিলো উন্মুক্ত, তাই পছন্দের বিষয়ে পেরেছেন যেতে।

আমাদের দেশের শিক্ষা ও অন্যান্য জায়গায় তাই চাই দ্বিতীয়বার সুযোগ পাবার সুযোগ। কৈশোর বা ছাত্রাবস্থার একটামাত্র পরীক্ষা জীবনের সব দরজা বন্ধ করে দিবে, সেটা তো হতে পারে না, তাই না? আর ট্র্যাক পাল্টানো, পড়াশোনার বিষয় পাল্টানো, সেটার জন্যও চাই যথেষ্ট সুযোগ।

স্বপ্নে, বাস্তবে সবাই পাক সেকেন্ড চান্স, জীবনকে পাল্টে দেয়ার সুযোগ …

লেখকঃ শিক্ষক, কম্পিউটার সাইন্স বিভাগ  এলাবামা বিশ্ববিদ্যালয়, যুক্তরাষ্ট্র