যদি বলি 4D মানে কি? 4D মানে চতুর্থ মাত্রা বা চতুর্থ ডাইমেনশন। এখন জানতে হয় ডাইমেনশন কি? সহজে বলতে কোন কিছুর অবস্থান নির্ণয় করতে যা যা দরকার তার প্রত্যেকটি একেকটি ডাইমেনশন।
আর এই ডাইমেনশন পরিমাপ করা হয় কোন রেফারেন্স ফ্রেমে বা প্রসঙ্গ কাঠামোর সাপেক্ষে। আর রেফারেন্স ফ্রেম হল যার সাপেক্ষে কোন বস্তুর অবস্থান বের করবেন তাই রেফারেন্স ফ্রেম।
মনে করুন আপনি একটি ইটের ব্লক একটি খুঁটির কিছুটা দুরে রাখলেন। এখানে ওই খুঁটিটি হল রেফারেন্স ফ্রেম। এখন যদি বলা হয় খুঁটি থেকে ব্লকটির দূরত্ব কত?
ধরে নিলাম দূরত্ব ৩ ফুট। মানে ব্লকটি খুঁটি থেকে ৩ ফুট দূরে। তারমানে এই ৩ ফুট একটি ডাইমেনশন। ধরলাম এই ডাইমেনশনের নাম ‘দৈর্ঘ্য’। তাহলে দৈর্ঘ্য একটি ডাইমেনশন।
এখন যদি বলি খুঁটি থেকে ব্লকটি প্রস্থের দিক থেকে কত দূরত্বে আছে? আপনি বললেন ১ ফুট। তাহলে আরেকটি ডাইমেনশন পেলাম ‘প্রস্থ’।
এখন যদি বলি ব্লকটি কত উচ্চতায় আছে খুঁটির সাপেক্ষে? আপনি বললেন ২ ফুট। তাহলে আরেকটি ডাইমেনশন পেলাম ‘উচ্চতা’।
এখন দেখুন কোন বস্তুর অবস্থান বের করতে ৩ টি ডাইমেনশন দরকার। তাই আমাদের স্থির বা জড় জগতের তিনটি মাত্রা অর্থাৎ আমরা 3D প্রাণী।
এখন ভাবুন কেউ এসে ঐ ব্লকটি উঠিয়ে দৌড় দিল। এই দৌড়ানোর সময় আমি আপনার কাছে ব্লকটির অবস্থান জানতে চাইলাম। আপনি ব্লকটির অবস্থান কিভাবে আমাকে বলবেন?
আপনি অবস্থান বলতে গেলে দেখবেন ক্রমাগত ব্লকটির খুঁটি থেকে দৈর্ঘ্যের, প্রস্থের এবং উচ্চতার তিন দিক থেকে অবস্থান পরিবর্তন হচ্ছে। তো এভাবে কখনোই সঠিক ভাবে আপনি আমাকে ব্লকটির অবস্থান বলতে পারবেন না।
এখন আমি যদি বলি বিকাল ৫ টা বেজে ৩ মিনিটে ব্লকটি খুঁটি থেকে ১০ ফুট দৈর্ঘ্যে, ৭ ফুট প্রস্থে আর ২ ফুট উচ্চতায় আছে। আবার বিকাল ৫ টা বেজে ৫ মিনিটে ব্লকটি ঐ খুঁটি থেকে ১৫ ফুট দৈর্ঘ্যে, ১২ ফুট প্রস্থে আর ২ ফুট উচ্চতায় আছে।
তাহলে গতিশীল অবস্থায়ও ব্লকটির অবস্থান বলে দেয়া যাচ্ছে। কিন্তু এর জন্য নতুন একটি টার্ম যোগ করতে হচ্ছে আর তা হল সময়। তাহলে সময়ও কোন বস্তুর অবস্থান বের করতে সাহায্য করে। তাই সময়ও একটি ডাইমেনশন।
এবার আমরা পেলাম মহাবিশ্বের মাত্রা চারটি বা মহাবিশ্বের চতুর্থ মাত্রা। তাহলে আমরা বলতে পারি স্থির বস্তুর তিনটি ডাইমেনশন এবং গতিশীল বস্তুর চারটি ডাইমেনশন। তাহলে গতিশীল জগতে আমরা 4D প্রাণী।
এখন যদি স্থির বস্তুর তিনটি মাত্রা বা দৈর্ঘ্য, প্রস্থ এবং উচ্চতা মিলে একটি মাত্রা ধরি যাকে বলা হয় স্থান এবং চতুর্থ মাত্রা সময়কে আরেকটি মাত্রা ধরি তাহলে আমরা দুটি মাত্রা পাই আর তা হল স্থান-কাল বা স্পেস-টাইম।
বিজ্ঞানী আইনস্টাইনের মতে এই মহাবিশ্বের সব কিছু দুই মাত্রার এই স্পেস-টাইমের চাদরের উপরে আছে। যদি একটা চাদর টান টান করে ধরে এর উপর একটি ভারি বল রাখা হত তাহলে কাপড়টা কিছুটা নিচের দিকে বেঁকে যায়।
একই ভাবে স্পেস-টাইমের উপর ভারি বস্তু যেমন গ্রহ, নক্ষত্র, ব্ল্যাক হোল ইত্যাদি থাকলে স্পেস-টাইম বেঁকে যায় যাকে বলে স্পেস-টাইম কার্ভেচার। এই স্পেস-টাইম কার্ভেচারই হল গ্র্যাভিটি।
গ্র্যাভিটিকে আরো সহজ করে বুঝতে, একটি টান টান করে ধরা চাদর কল্পনা করুন। এখন ওই চাদরের উপর একটি ভারি বল রাখুন।
ধরে নিলাম এই বলটা হল সূর্য। তাহলে চাদরকে কিছুটা নিচের দিকে বাকিয়ে দিয়ে এর উপর বলটি অবস্থান করবে। এখন এই বলটি চাদরকে যতটুকু বাঁকিয়ে দিয়েছে ওই সীমানাটুকুকে মনে করুন সূর্যের গ্র্যভিটেশনাল এরিয়া।
এবার আরেকটি ছোট বা কম ভর বিশিষ্ট বলকে আগের বলের গ্র্যাভিটেশনাল এরিয়া অর্থাৎ চাদরের ভাজে ছেরে দিন। ছোট বলটিকে ধরলাম পৃথিবী। তাহলে ছোট বলটি নিজে চাদরকে কিছুটা বাঁকিয়ে বড় বলের চারদিকে ঘুরতে ঘুরতে ঘর্ষণ-বলের ফলে গতি হ্রাস হয়ে বড় বলের গায়ে গিয়ে লাগবে।
কিন্তু স্পেস-টাইমে এমন হয়না কারণ স্পেস-টাইমের কোন ঘর্ষণ নেই। তাই সূর্যের স্পেস-টাইমে কার্ভেচারে অর্থাৎ গ্র্যাভিটেশনাল এরিয়াতে পরে পৃথিবী নিজেও স্পেস-টাইমইয়ে কিছুটা কার্ভেচার করে বা নিজের গ্র্যাভিটি তৈরি করে সূর্যের চারদিকে ঘুরতে থাকে।
আর স্পেস-টাইমের যেহেতু ঘর্ষণ নেই তাই কোন পৃথিবী তার নিজের গতি হ্রাস পায় না এবং সূর্যের কাছে সংঘর্ষও হয়না।
এভাবে সূর্যও মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির গ্র্যাভিটেশনাল এরিয়াতে থাকে ঘুরতে থাকে। এভাবে মহাবিশ্বের প্রতিটা ভর বিশিষ্ট বস্তু স্পে্টাইমে কার্ভেচার করে নিজ নিজ গ্র্যাভিটি তৈরি করে অন্য কারো গ্র্যাভিটেশনাল এরিয়ার কারণে ঘুরতে থাকে।
আর এই কথা গুলোই আলচনা হয় আইনস্টাইনের স্পেশাল থিওরি অফ রিলেটিভিটি বা আপেক্ষিকতার বিশেষ তত্ত্বে।
ছবি সূত্র: গুগল।