তানজির চৌধুরী তুহিন (জন্ম ২৬ সেপ্টেম্বর ১৯৭৪) বাংলাদেশী সঙ্গীতশিল্পী, গায়ক-গীতিকার, অভিনেতা এবং স্থপতি।

তিনি বাংলা রক ব্যান্ড শিরোনামহীনের সাবেক কণ্ঠশিল্পী। ২০১৭ সালে তিনি শিরোনামহীন ত্যাগ করেন।

এরপর ২০১৮ সালে নতুন ব্যান্ড আভাস গঠন করেন।

সঙ্গীতের পাশাপাশি কয়েকটি টেলিভিশন নাটকেও অভিনয় করেছেন তিনি।

সংক্ষিপ্ত জীবন বর্ণনা ও শিক্ষা-

তুহিনের বেশ নামকরা একক ক্যারিয়ার রয়েছে যার মধ্যে বেশ কয়েকটি স্টুডিও সাউন্ডট্র্যাকস অন্তর্ভুক্ত। “তবু” হল প্রথম একক ট্র্যাক।

২০১৪ সালে, তুহিন বিবিসির রিয়েলিটি টেলিভিশন সিরিজ “আমরাই পারি’র হোস্ট হিসাবে অংশ নিয়েছিলেন যুদ্ধের চরম আবহাওয়া সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়ানোর জন্য।

২০১৬ সালে, তিনি সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের পরিবার এর সদস্যদের জন্য “Inauguration drive for Toys R Yours season 2” এ অংশ নিয়েছিলেন।

তানজির তুহিনের জন্ম ঢাকায় ।

শৈশব তিনি সেখানে কাটিয়েছেন।

তুহিন দশম শ্রেণি পর্যন্ত ঢাকার গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কুলে পড়াশোনা করেছেন।

তিনি ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন এবং তারপরে আর্কিটেকচারে বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা করেন।

প্রথম বেশ কয়েক বছর ধরে, যখন স্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়তেন,  তুহিন বুলবুল ললিতাকলা একাডেমি থেকে নজরুল গীতি এবং শাস্ত্রীয় সংগীত শিখতেন, যেখানে নারায়ণ চন্দ্র বসাক, আক্তার সাদমানী, কিরণ চন্দ্র রায়, রফিকুল ইসলাম, তপন মাহমুদ এবং কিংবদন্তি ওস্তাদ নিয়াজ মোহাম্মদ চৌধুরী তাঁর সংগীতের মাস্টার ছিলেন।

২০০০–২০১৭: (শিরোনামহীন)

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয় বর্ষে অধ্যয়নকালে বাংলা রক ব্যান্ড শিরোনামহীনের প্রতিষ্ঠিাতা সদস্য এবং বেসবাদক জিয়াউর রহমানের সাথে তার পরিচয় হয়।

তারা দুজনই সে সময়ে সহপাঠী ছিলেন। ২০০০ সালে শিরোনামহীনের তৎকালীন ভোকাল মহিন দেশ ত্যাগ করায়, সে বছরের ডিসেম্বরে ভোকাল হিসেবে তুহিন শিরোনামহীনে যোগ দেন।

শিরোনামহীনের সাথে তুহিনের প্রথম প্রকাশিত অ্যালবাম জাহাজী (২০০৪)। তুহিনের গাওয়া সাইকেডালিক রক ঘরানার “হাসিমুখ” গানটি ব্যপক জনপ্রিয়তা লাভ করে,  যা মূলত শিরোনামহীনকে প্রাথমিক পরিচিতি এনে দিয়েছিল।

পরবর্তীতে সতের বছরে দলটির সঙ্গে তিনি ইচ্ছে ঘুড়ি (২০০৬), বন্ধ জানালা (২০০৯), শিরোনামহীন রবীন্দ্রনাথ (২০১০), শিরোনামহীন শিরোনামহীন (২০১৩) অ্যালবামগুলি প্রকাশ করেন।

২০১৭ সালের মাঝামাঝি সময়ে তুহিন শিরোনামহীনের সাথে অন্তর্দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন।

সে সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তিনি জানান, “আমি ব্যক্তিগত কারণে শিরোনামহীন ছাড়ছি, কিন্তু গান নয়।”

সে বছরই ৭ অক্টোবর তুহিন ব্যান্ড ত্যাগ করেন।

নতুন ভোকাল হিসেবে শেখ ইশতিয়াক শিরোনামহীনে যোগ দেন।

শিরোনামহীনের সাথে আইনি যুদ্ধ

২০১৮ সালে তুহিন আভাস নামে নতুন ব্যন্ড গঠনের পরপরই শিরোনামহীনের সাথে আইনি দ্বন্ধে জড়িয়ে পড়েন।

২০১৯ সালে বাংলাদেশ কপিরাইট অফিসের ভাষ্য অনুযায়ী শিরোনামহীনের গানসমূহের গীতিকার এবং সুরকার সূত্রে আইনগত সত্ত্বাধিকারী দলটির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য জিয়া।

সে দিক বিবেচনায় জিয়ার অনুমতিসাপেক্ষে এ সকল গান পরিবেশনের আইনত বাধ্যবাধকতা সৃষ্টি হয়।

সে বছরের আগস্টে কপিরাইট অফিসের রায় অগ্রাহ্য করে তুহিন আভাস বান্ডের হয়ে শিরোনামহীনের গানগুলি পরিবেশন করছিলেন।

ফলে ২০১৯ সালে আগস্টে শিরোনামহীন আদালতে অভিযোগ জানায়। আদালত তুহিন এবং তার ব্যান্ড আভাসের প্রতি শিরোনামহীনের গান পরিবেশনের আইনগত নিষেধাজ্ঞা জারি করে।

এই রায়ের বিরুদ্ধে আভাস ব্যান্ড আপিল জানায়। ২০১৯ সালের ২১ অক্টোবর শিরোনামহীন ব্যান্ডের ৪৯টি গানের বিষয়ে আদালতের দেয়া নিষেধাজ্ঞা ছয় মাসের জন্য স্থগিত করে উচ্চ আদালত।

ফলে ২০২০ সাল নাগাদ তুহিন এবং তার ব্যান্ড আভাস গানগুলো পরিবেশন করতে পারছিলেন।

পরবর্তীতে উক্ত আইনে শিরোনামহীন ব্যান্ড দল পুনারায় উচ্চ আদালতে আপিল জানালে ২০২০ সালের ২০ জানুয়ারি শিরোনামহীন নিজেদের পক্ষে মাললা জিতে।

তুহিন শিরোনামহীনের তিনটি গান: “হয় না”, “পরিচয়” এবং “আহত কিছু গল্প” পরিবেশন করতে পারবেন, কারণ এই গানগুলোর গীতিকার-সুরকার ছিলেন তুহিন।

২০১৭ থেকে সোলো ক্যারিয়ারঃ

২০১৭ সালে তুহিন একটি স্বতন্ত্র সংগীত জীবন শুরু করতে শিরোনামহীন ত্যাগ করেছিলেন।

তিনি বাংলাদেশের সংগীত শিল্পে বিভিন্ন সংগীতশিল্পী ও সুরকারদের সাথে বেশ কয়েকটি গানে কাজ করছেন।

আজ অবধি তুহিনের একক কেরিয়ারে বেশ কয়েকটি স্টুডিও সাউন্ডট্র্যাক অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

তবু হ’ল প্রথম একক ট্র্যাক।

এছাড়াও “দেহ স্টেশন” সিনেমায় “সত্য মিথ্যার কুণ্ডলি” শিরোনামের একটি সিনেমা-ট্র্যাক সংগীত সমালোচকদের প্রশংসা পেয়েছিল এবং পাশাপাশি তার ফ্যানরাও প্রশংসা করেছিলো।

তিনি ২০১২ সালে দ্বিতীয় একক ‘বিবেক’ করেছিলেন।

অভিনয়

সঙ্গীতচর্চার পাশাপাশি তিনি কয়েকটি বাংলা টেলিভিশন নাটকে অভিনয় করেছেন।” মধ্যরাত্রিতে তিনজন দুর্ভাগা তরুণ ” নাটকের মাধ্যমে অভিনয়ে তার অভিষেক ঘটে।

নাটকটি বাংলাদেশি লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবালের একই নামের গল্প অবলম্বনে নির্মিত।

২০১১ সালে তিনি মাসুদ হাসান উজ্জ্বল পরিচালিত “থতমত এই শহরে” টেলিভিশন নাটকে অভিনয় করেন অপি করিমের সাথে।

২০১৩ সালে তিনি মিজানুর রহমান আরিয়ান পরিচালিত “ট্রাম কার্ড” নাটকে জিকো চরিত্রে অভিনয় করেন বিদ্যা সিনহা সাহা মীমের বিপরীতে।

অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি বিটিভিতে প্রচারিত, চরমভাবাপন্ন আবহাওয়া মোকাবেলার উদ্দেশ্যে নির্মিত বিবিসির “আমরাই পারি” রিয়েলিটি টেলিভিশন ধারাবাহিকে উপস্থাপনার কাজ করেছেন।

চিত্র অংকন

তুহিন আঁকতে ভালোবাসেন এবং চিত্রকর্মের বিশাল সংগ্রহ রয়েছে।

ডুডলস, অ্যাবস্ট্রাক্ট এবং আধুনিক স্ট্রোক, তেলের চিত্রগুলির জলের রঙ থেকে প্রতিকৃতি প্রতিকৃতি, তুহিনের একটি অনন্য চিত্রশৈল রয়েছে যা তার শহরে বেড়ে ওঠার প্রতিফলন।

২০০০ সালে ধানমন্ডির অ্যালায়েন্স ফ্রান্সেসে দে ঢাকায় তাঁর একটি একক চিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

তুহিন বেশ কয়েকটি বইয়ের জন্য বইয়ের কভারও ডিজাইন করেছেন। তিনি এই বইগুলির অভ্যন্তরীণ সজ্জাও করেছেন।

ব্যাক্তিগত জীবন

তুহিনের স্ত্রীর নাম লাবোনি ফেরদৌস। তার একসাথেই থাকেন এবং তার দুইটি সন্তান আছে, যাদের নাম শান্ত ও নেহা।