আর কয়েকদিন পরেই টেক্সটাইল কলেজের এডমিশন টেষ্ট। যদিও আমাদের দেশের সবচেয়ে বড় আয়ের উৎস এই বস্ত্রশিল্প (৮২%)।কিন্তু টেক্সটাইল শিক্ষা সম্পর্কে অনেকের সঠিক ধারনা না থাকায় ডিসিশন নিতে পারে না। সবমিলিয়ে আমার আজকের পোস্ট সেসব পরীক্ষার্থীদের জন্য যারা  টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার’হিসাবে নিজের ক্যারিয়ার গড়তে চায়।

বাংলাদেশের টেক্সটাইল খাতকে একধাপ এগিয়ে নিতে বাংলাদেশ সরকার এখন পর্যন্ত ৮ টি পাবলিক টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ প্রতিষ্টা করেছে। টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজগুলো বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত বি.এস.সি ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রী প্রদান করে।

মোট ৯৬০ আসনের বিপরীতে ও প্রতি কলেজে ৪ টি বিভাগে একই সাথে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। অনেকটা মেডিকেলের অনুরুপ।

★ কলেজসমূহঃ

১। টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, ঝিনাইদহ

২। টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, নোয়াখালী

৩। টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, চট্টগ্রাম

৪। টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ,পাবনা

৫। শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, বরিশাল

৬। ডক্টর এম এ ওয়াজেদ মিয়া টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, রংপুর।

৭। শেখ রেহানা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, গোপালগঞ্জ

৮। শেখ হাসিনা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, জামালপুর।

বিভাগ গুলো হলো:

১। Wet Process Engineering (WPE)

২। Fabric Engineering (FE)

৩। Apparel Engineering (AE)

৪। Yarn Engineering (YE)

 

আগেই বলে রাখি টেক্সটাইল কলেজের সিলেবাস পড়াশোনার নিয়ম সবকিছুই বুটেক্সের মতোই। চার ডিপার্টমেন্টেই চার বছরে ১৬৬ ক্রেডিট করে (Apparel Engineering এ ১৬৪ ক্রেডিট)

★ মোট আসন সংখ্যাঃ ৯৬০ টি

★ প্রত্যেক কলেজেঃ ১২০ টি সিট

★ প্রতি ডিপার্টমেন্টেঃ ৩০ টি করে সিট আছে

পরীক্ষা পদ্মতি ও বিস্তারিতঃ

– এখানে সেকেন্ডটাইম দেয়া যাবে তাই সেকেন্ড টাইমারদের জন্য এখানে সুবর্ণ সুযোগ (আগামীবছর নাও থাকতে পারে)

– এসএসসি ও এইচএসসি উভয় পরীক্ষায় ৪.০০ করে গ্রেড পয়েন্ট থাকতে হবে।

– সবচেয়ে গুরুত্বপুণ বিষয়টি হচ্ছে এইচএসিতে উচ্চতর গনিত,পদার্থ বিজ্ঞান,রসায়ন,আর ইংরেজীতে কমপক্ষে ১৬.৫০ থাকতে হবে ।

★ ভর্তির আবেদন প্রক্রিয়াঃ আবেদন ফি ১০০০ টাকা

★ সংরক্ষিত কোটাঃ

মোট কোটা ৩ টি

মুক্তিযোদ্বা কোটা ২টি

নৄ-গোষ্টী কোটা ১ টি

 

★ পরীক্ষার বিষয়সমূহ ও মানবন্টনঃ

মোট ২০০

মোট MCQ থাকবে ১০০টি

প্রতি প্রশ্নের মান ২

মোট সময় ১ঘন্টা ২০ মিনিট

প্রতিটি ভুল উত্তরের জন্য .৫০ নম্বর কাটা যাবে।

★ রেজাল্ট যেভাবে করা হবেঃ

এসএসসি জিপিএ কে ৮ দিয়ে গুন

এইচএসসি জিপিএকে ১২ দিয়ে গুন

★ বিস্তারিত সময়সূচীঃ

আবেদন শুরুঃ ০৫/০৭/২০২২ থেকে ০৭/০৮/২০২২

পরীক্ষা হবেঃ ২০/০৮/২০২২ সকাল ১০ টা থেকে ১১ টা ২০ পযন্ত

রেজাল্টঃ ২৩/-৮/২০২২

★মানবন্টনঃ

মোট MCQ – ২০০

গনিত – ৬০

পদার্থ – ৬০

রসায়ন – ৬০

ইংরেজী – ২০

এবার বিস্তারিত বলি কীভাবে পড়াশুনা করতে হবেঃ

১.পদার্থবিজ্ঞানঃ পদার্থবিজ্ঞানে ম্যাথ অনেক বেশী আসে, যেহেতু ক্যালকুলেটর ব্যাবহার নেই, সব সুএ খুব ভালোভাবে আয়ত্ত করতে হবে, কিছু সুএের সরাসরি কারেকশন ও আসতে পারে।তাই সব সুএের ব্যাবহার খুব ভালো করে শিখতে হবে।

যেমনঃ দুইটা ভেক্টরের মান সমান হলে অথবা শুন্য হলে মান কী হবে অথবা কিরুপ হবে , লোহা ইস্পাতের গুনাংক ?,তাত্তিক প্রশ্ন, প্রতিস্রাংক থেকে থাকতে পারে , মোটকথা যা আগে পড়ছ তা থেকেই আসবে।ভয় পাওয়ার কিছু নাই।

২। রসায়নঃ বেসিক লেভেল থেকে প্রশ্ন আসবে বিক্রিয়ার নাম মনে রাখতে হবে। কঠিন ম্যাথ কম আসে। Organic Chemistry টা একটু ভালো করেপড়তে হবে।

যেমনঃ প্রশ্ন হতে পারে HCL pH=3 প্রতি লিটারে HCL এর পরিমাণ কত?

৩. গনিতঃ শর্টকার্ট আর বেশী বেশী প্র্যাকটিস করতে হবে সাথে বেসিক থাকা লাগবে। অনেক বেশী শটকট মনে রাখলেও সমস্যা পরীক্ষার হলে গিয়ে মাথায় আসে না । তবে ম্যাথ প্রশ্ন standard হবে।

ইমপর্টেন্ট চাপ্টার+টপিকঃ জটিল সংখ্যা , মুলদ্বয় সমান কিনা?,মূলদ সংখ্যা,বিন্ন্যাস সমাবেশ,দ্বিপদী, স্থানাংক, বৃত্তের সমীকরণ, পরাবৃত্ , উপবৃত্ত, ত্রিকোমিতি, ক্যালকুলাস থেকে ডি ডি এক্সের সাধারণ ম্যাথ ,গতিবিদ্যার কিছু ম্যাথ যেগুলো ইন্টারে অনেক ইমপরটেন্ট ছিল।

৪.ইংরেজীঃ বেসিক থাকলেই English উত্তর করা যায়। একটু গুরুত্ব দিলেই ভালো করা যাবে বলে।

এবার আসি তোমাদের কিছু কমন প্রশ্নের উত্তর নিয়েঃ

১. সরকারি কিনা?

উঃ হ্যাঁ, এগুলো সরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ।একটা সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় যেমন ভাবে চলে এগুলোও ঠিক সেভাবেই চলে ।

২. কত টাকা খরচ হবে ?

চার বছরে ভর্তিসহ ৬০ হাজার টাকায় কম্পিলিট হয়ে যাবে।

৩. সার্টিফিকেট কে দিবে ?

উঃ বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় (বুটেক্স)

৪. টেক্সটাইলের ডিমান্ড কেমন ?

উঃ বুটেক্স এর পরে টেক্সটাইল সেক্টরে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজগুলোকে গুরুত্ব দেয়া হয় অনেক সময় ভাইবা না নিয়েও জব দেয়া হয়।

৫.কত পেলে চান্স হবে ?

উঃ মোটামোটি ৬৫-৭০% নাম্বার থাকলেই চান্স হবে তবে এটা প্রশ্নের উপর নির্ভর করে যদি প্রশ্ন কঠিন হয় তাহলে কম নাম্বার পেলেও যেমন চান্স হবে আবার সহজ হলে অনেক বেশী পেয়েও চান্স হবে না।

৬.কম্পিটিশন কেমন ?

উঃ গতবছর একটা সিটের জন্য ৮/৯ জন ছিল । প্রতিবছর পরীক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ছে । অনেকে জিপিএর জন্য এক্সাম দিতে পারে না তবে আশা করা যায় এই বছর একটা সিটের জন্য ১০/১২ জন লড়াই করবে।

৭। বিদেশে গিয়ে পড়াশোনা নিয়ে জানতে চাই?

উঃ দেশের অন্য সব বিশ্ববিদ্যালয়ের মত এখান থেকে অনেক বড় ভাই প্রতিবছর দেশের বাইরে উচ্চশিক্ষার জন্য যাচ্ছে । কিছু

বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম দিলাম যেখানে টেক্সটাইলের জন্য খুব ভাল সুযোগ সুবিধা আছেঃ

* University of Leeds (UK)

* The University of Manchester (UK)

* Heriot-Watt University (UK)

* The University of Nottingham (UK)

* University of Bolton (UK)

* Technische Universität Dresden (Germany)

* Universität Stuttgart (Germany)

* Hochschule Niederrhein University of Applied

Science

(Germany)

* University of Borås (Sweden)

* Universiteit Gent (Belgium)

* Shinshu University (Japan)

* University of Fukui (Japan)

* Kyushu University (Japan)

* Indian Institute of Technology Delhi (India)

৮। দেশে থেকে কী এমবিএ/এমএসসি করা যাবে ?

উঃ কলজ সমূহে এই সুবিধা না থাকলে প্রতিবছর অনেকেই বুটেক্সে/ ঢাবিতে পড়তেছে পাশাপাশি অনেক বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় আছে যেখান থেকেও করা যাবে।

৯। এখান থেকে পড়ে নামের আগে কি ইঞ্জিনিয়ার লেখা যবে?

উঃ এই প্রশ্নটা খুব ব্যাক্তিগত ভাবে করাটা অনুচিত তার কারন এমনিতে ১৬৬ ক্রেডিটের বিশাল সিলেবাস তার উপর এত কষ্ট করে পড়াশোনা করে ইঞ্জিয়ানিরিং সাটিফিকেট নেয়ার পর ইঞ্জিনিয়ার লিখতে না দেয়াটা আমাদের সিস্টেমের সমস্যা।

অনেকে বলে IEB & ITET এর সদস্য না হলে লিখা যাবে না তাদের জন্য বলব আমরা এর মধ্যেই এসব প্রতিষ্টানের সদস্য আর আগামী বছরের শুরুতেই আনুষ্টানিকভাবে ঘোষনা দেয়া হবে।

১০। বুটেক্সে আর এসব কলেজের মধ্যে কি কোন পাথক্য আছে?

উঃ এই প্রশ্নের উত্তর দেয়ার আগে মনে রাখা উচিত এসব প্রতিষ্টান কেবল টেক্সটাইলের জন্যেই এবং অন্য সকল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যতিক্রম।অন্যদিকে বুটেক্স কয়েক বছর আগেও ঢাবির আন্ডারে কলেজ ছিল, দেশে টেক্সটাইলের বিপুল চাহিদার কারনেই বিশ্ববিদ্যালয় করে দেয়া হয়েছে আবার আমাদের পড়াশোনার মান বুটেক্সের মত তাহলে কি কোন পাথক্য নাই?

অবশ্যই আছে সেটা হচ্ছে আমাদের কলেজগুলোতে যেখানে ১০/১১ টা ব্যাচ সেখানে বুটেক্সের ৪০/৪৫ টা ব্যাচ এদিক থেকে জবের ক্ষেত্রে বুটেক্সের খুব ভাল সিন্ডিকেট আছে, দেশের নামিদামি প্রতিষ্টানের ডিরেকটর থেকে শুরু করে অনেক ভাল পদে বুটেক্সের ভাইরা আছে।তাই বলে এখান থেকে পড়ে ভাল কিছু করা যাবে না এমনটা নয়, যোগ্যতা থাকলে সবকিছু করা যায়।

১১। কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় করার করার কোন চান্স কি আছে?

উঃ সকল ইঞ্জিয়ানিরিং বিশ্ববিদ্যালয় শুরু থেকে কখনো বিশ্ববিদ্যালয় হিসাবে থাকে না। কলেজ থেকেই মূলত বিশ্ববিদ্যালয় হয়। দিনদিন আমাদের দেশে যে পরিমাণে টেক্সটাইল শিল্প, আর ইন্ডাস্ট্রির হার বাড়ছে সেইপরিমাণ দক্ষ প্রোকৌশলী তৈরীর জন্য আমাদের আরও বিশ্ববিদ্যালয় দরকার, আশা করা যায় আর কয়েক বছরের মধ্যেই আমাদের টেক্সটাইল কলেজগুলোকে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় হিসাবে পাব।

১২। টেক্সটাইলে জব সিকিউরিটি কেমন?

উঃ এখান থেকে এখন পর্যন্ত যেসব ভাইয়ারা পাশ করে বের হয়েছে সবাই চাকরি পেয়েছে বলা হয়ে থাকে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারের চেয়ে

জবের সংখ্যা অনেক বেশী । সবশেষে একটা কথায় বলব, দেশের বতমান প্রেক্ষাপট বিশ্লষণ করলে অন্যান্য ইঞ্জিনিয়ারের চেয়ে টেক্সটাইল অনেক বেশী সমৃদ্ব, যেখানে দেশে থেকেই ভাল কিছু করার সুযোগ আছে। এখন বাংলাদেশের টেক্সটাইল বিশ্বে দ্বিতীয়

অবস্থানে আছে অন্যদিকে প্রথম অবস্থানে থাকা চীন নিজেদেরকে যতই ইলেকট্রোনিক্স আর রোবোটিক্স প্রযুক্তির দিক নিয়ে যাচ্ছে

আমাদের দেশের টেক্সটাইল তত বেশী এগিয়ে যাচ্ছে আর এই প্রযোগিতায় নিজের দেশের শিল্পকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরতে তুমিও হতে পার একজন দক্ষ বস্ত্রপ্রোকশলী।

১৩। ভাইয়া সবকিছু ঠিক আছে কিন্তু বেতন কেমন ?

উঃ এটা সবার জাতীয় প্রশ্ন সবাই যেকোন সাবজেক্টে পড়ার আগেই বেতন কত হবে, গাড়ি বাড়ি কত দিনে হবে এসব নিয়ে প্রশ্ন করে আর উত্তরে বড় ভাইদের এই কথাটায় আমি বলব “যদি তোমাকে দিয়ে কোন কোম্পানী ১০ লাখ টাকা মাসে ইনকাম করতে পারে তাহলে কেন তারা তোমাকে মাসে ১ লাখ টাকা স্যালারী দিবে না?

আবার যদি তুমি কাজ না পার তাহলে শুধু শুধু এত্ত টাকা বেতন কেনই বা দিবে?” আসল কথা হচ্ছে নিজের স্কিল বাড়াতে হবে নিজেকে যোগ্য করে গড়ে তুলতে হবে।আর বেতন কাঠামো শুরুতে ১৫ থেকে ২০ হাজার থেকে শুরু করে কয়েক বছরেই ৬ ডিজিটের বেতনো হতে পারে।

“শুভকামনা রইল সকল পরীক্ষার্থীর জন্য”

(কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করে জানাও)

লেখাঃমুহাম্মদ সোহান

Read More

ভর্তি সম্পর্কে জানতে যোগ দাও আমাদের গ্রুপে