অনেকে আশ্চর্য হচ্ছেন, টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ!
এইটা আবার কী ভাই?
বিএসসি নাকি ডিপ্লোমা?
সরকারী নাকি বেসরকারি?
কলেজ নাকি ইউনিভার্সিটি?
এইগুলো কিভাবে পরিচালিত হয়?
ব্লা ব্লা… আরো অনেক রকম প্রশ্ন।
প্রথমেই বিস্তারিতে না বলে এই ক্যাম্পাসগুলো সমন্ধ্যে কিছু গৎবাঁধা কথা বলি যেগুলো প্রায়ই আমাদের আশেপাশে আকাশে-বাতাসে উড়ে বেড়ায়ঃ
১. নেগেটিভ টাইপঃ
টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ!
ওতো কলেজ ডিগ্রি কলেজ গুলোর মত, আরে ধুর…
এই কলেজগুলোতে তো এমএসসি ও করা হয় নাহ, ল্যাব নাই, শিক্ষক নেই, ওতো ২ দিন আগেও ডিপ্লোমা করা হইতো, আরেহ! এইটা তো অধিভুক্ত কলেজ । মানুষ বুটেক্স পইরাই জব পায় নাহ, আর তুই এইগুলোতে পড়ে কী করবি?
টেক্সটাইল জব করার থেকে গরুর গাড়ি টানা ভালো।
আরেহ! কলেজগুলোতে তো এমনি কোয়ালিটি খারাপ তার উপর রাজনীতি, বন্ধু ভর্তি হইস নাহ খুব র্যাগিং চলে।
কোনোদিন নামিই শুনি নাই !! এইগুলো কবে কইত থেকে আইলো। আমাদের ভার্সিটিতে র্যাগ ডে হয়, অমুক তমুক আর এইগুলোতে পড়লে জীবন বৃথা, টিউশনি পাওয়া যায় নাহ।
মাফ চাই পড়িস না ভাই যে স্যার ক্লাস লেকচার নেই সেই স্যার কোশ্চেন করে না, খাতাও দেখে নাহ, খুব প্যারা।
ভর্তি পরীক্ষা খুব কঠিন, চান্স পাওয়া খুব কঠিন, অনেক প্রতিযোগিতা হয়, ডাবল প্লাস লাগে রে ।
পুরাতন পাগলে ভাত পায় না আইছে নতুন পাগল, এইগুলোর থেকে প্রাইভেট এ ভর্তি হো অনেক ভালো হবে তারপর টুট টুট টুট….
২. পজিটিভ টাইপঃ
কস কি তুই মামা, চান্স পাইছস টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে!!
তোর লাইফ তো সেটেল, আরেহ আমার এলাকার এক ভাই পড়তো, স্টার্টিং এ ৮০ হাজার এ ঢুকছে, প্রমশোন হইলে লাখপতি ভাগ্যে থাকলে কোটিপতিও হবি।
কথা কইস না ভাই, পাশ করার আগেই চাকুরী, ভাইভাও নেয়া হয় নাহ।
টেক্সটাইল এ তো জবের উপরে জব, কলেজগুলোতে পড়াশোনা করা নাই, খালি চিল করে ৪ বছর কাটাবি।
সিনিয়র রাই সব জব দিয়ে দিবে। কোনো কাজ নেই খাবি আর ঘুমাবি। স্যারেরা বন্ধুর মত, ধুর কি যে কইস নাহ এইখানে সাদা খাতা দিয়ে আসলেও পাশ করা যায়, সিজিপিএ ডাজেন্ট ম্যাটার।
তুই তো জানস ই নাহ এই কলেজগুলোতে যারা পড়ে তারা সবাই একেকটা মাল আর লিডার হয়ে বাহির হয়।
চাপ নেই মামা তুই তো জানস ই নাহ; গুগোল,মাইক্রোসফট এর টাইম নাই এইগুলোর সাথে, বিদেশের থেকে দেশের খায়ে দায়ে ভালো স্যালারির জব করবি।
ভর্তি পরিক্ষা একদম সহজ, পরিক্ষা দিলেই চান্স। আরে ব্যাট্যা, বাংলাদেশ তো দাড়ায় আছে টেক্সটাইল এর ওপর, প্যারা নাই চিল ব্রো।
আরেহ এই কলেজ গুলো বুটেক্সকেও টাইম দেয়া নাহ এদের নিজস্ব সিন্ডিকেট আছে, কাউকে ট্যারায় নাহ, তারপর টুট টুট টুট…..
এবার আমরা কলেজগুলোর সম্বন্ধে একবারে বেসিক স্তরের কিছু ধারণা নিয়ে নেই।
শুরুঃ
বাংলাদেশে সরকারের পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে এবং বুটেক্স অধিভুক্ত বিএসসি ইন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি এর ৪ বছর মেয়াদী কোর্সে রয়েছে ছয়টি পাবলিক টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ যেগুলোতে ইন্টারমেডিয়েট পরবর্তী ভর্তি নেয়া হয় ৪ টি ডিপার্টমেন্ট এ। ডিপার্টমেন্ট গুলো হলোঃ
- ১.ইয়ার্ণ ইঞ্জিনিয়ারিং ;
- ২.ফেব্রিক ইঞ্জিনিয়ারিং;
- ৩.এপারেল ইঞ্জিনিয়ারিং:
- ৪.ওয়েট প্রসেস ইঞ্জিনিয়ারিং;
- নোটঃ একটা ক্যাম্পাসের জন্যে প্রতি ডিপার্টমেন্ট এ ৩০টি করে সীট থাকলে ৪ ডিপার্টমেন্ট এর জন্যে একটি ক্যাম্পাসে মোট ১২০টি সীট থাকে অর্থাৎ ৬টা ক্যাম্পাসে সর্বোমোট ৭২০টি সীটের বিপরীতে পরিক্ষা নেওয়া হয়।
নিচে কলেজগুলো সম্পর্কে সংক্ষেপে বিবরণ দেওয়া হলো।
1. পাবনা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, পাবনা। এগারো একরের সৌন্দর্য দিয়ে মোড়া ক্যাম্পাসটি পাবনা শহরের মেরিল রোডে অবস্থিত।
এই প্রতিষ্ঠান এর যাত্রা শুরু হয় ১৯১৫ সালে একটি উইভিং স্কুল এর মাধ্যমে, তারপর সুদীর্ঘকাল এটি ডিপ্লোমা ইন্সটিটিউট ছিল এবং সবশেষে ২০০৬ সাল এখানে “B.Sc. in Textile Engineering”কোর্স চালু হয়। (বি.এস সি এর ৯ টি ব্যাচ বের হয়েছে,১৪তম ব্যাচ চলমান)
Review: পাবনা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ
2. টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, চিটাগাং।
চট্টগ্রাম জেলার মীরসরাই উপজেলার জোরারগঞ্জ থানায় অবস্থিত চট্টগ্রাম টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ।
ক্যাম্পাসটির আয়তন সতেরো একর। চট্টগ্রাম টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ অন্যতম যার ইতিহাস সেই ১৯১১ থেকে শুরু এবং ২০০৬ সাল থেকে এখানে বি.এস.সি চালু করা হয়।
(বি.এস সি এর ৯ টি ব্যাচ বের হয়েছে,১৪তম ব্যাচ চলমান)
3. টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, নোয়াখালী।নোয়াখালি জেলার বেগমগঞ্জ থানার চৌরাস্তা মোড়ে অবস্থিত ক্যাম্পাসটি।
এই ক্যাম্পাসটির যাত্রা শুরু হয় ১৯১৮ সালে। ধীরে ধীরে ডিপ্লোমা কোর্স চালু হয় এবং ২০০৭ সালে বি এস সি ইন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সের শুভ সূচনা ঘটে।
(বি.এস সি এর ৮ টি ব্যাচ বের হয়েছে,১৩তম ব্যাচ চলমান)
সংযুক্তিঃ কেন পড়বেন টেক্সটাইল ইন্জিনিয়ারিং কলেজ,নোয়াখালিতে ?
4. শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, বরিশাল।
১৯৮০ সালে বরিশালের প্রাণকেন্দ্র সি এন্ড বি রোডে জেলা টেক্সটাইল ইন্সটিটিউট নামে প্রতিষ্ঠানটির যাত্রা শুরু হয়।
তখন ২ বছর মেয়াদী সার্টিফিকেট ইন টেক্সটাইল কোর্স চালু ছিল।
১৯৯৪ সালে টেক্সটাইল ডিপ্লোমার ব্যাপকতার কথা বিবেচনা করে বস্ত্র দপ্তর প্রতিষ্ঠানটিতে ৩ বছর মেয়াদী ডিপ্লোমা কোর্স চালু করে।
তখন প্রতিষ্ঠানটির নাম দেওয়া হয়েছিল ইন্সটিটিউট অব টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজি (ITET)।১৯৯৬ সালে নামকরণ করা হয় টেক্সটাইল ইন্সটিটিউট, বরিশাল।
বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির নাম শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ,বরিশাল।
২০১০ সালে কলেজটিতে বি.এসসি ইন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স চালু করে।(বি.এস সি এর ৪টি টি ব্যাচ বের হয়েছে, ১০তম ব্যাচ চলমান)
5. শেখ কামাল টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, ঝিনাইদহ।
শেখ কামাল টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজটি ঝিনাইদহ জেলার প্রানকেন্দ্রে অবস্থিত । ঝিনাইদহ শহর থেকে মাত্র ৭ কিলোমিটার দূরে ঝিনাইদহ-মাগুরা মহাসড়কের পাশে এটির সুবিশাল সবুজ ক্যাম্পাস অবস্থিত
বাংলাদেশের যেকোনো যায়গা থেকে ঝিনাইদহ বাস টার্মিনাল আসার পর মাত্র ৬ কিলোমিটার পরই দৃষ্টি আকর্ষণ করবে 11.2 একরের ক্যাম্পাসটি। (বি.এস সি এর এখনো কোনো ব্যাচ বের হয়নি , ৩য় ব্যাচ চলমান)
Review: Sheikh kamal textile Engineering College, Jhenaidah
6. ডক্টর এম এ ওয়াজেদ মিয়া টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, রংপুর।
সর্ব নতুন এই ক্যাম্পাসটি গত বছর সরাসরি B.Sc. in Textile Engineering কোর্স দিয়ে চালু হয়। ক্যাম্পাসটি রংপুর জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার টুকুরিয়াতে অবস্থিত।
৮ টি টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের মধ্যে এটি সবচেয়ে সুদর্শন ক্যাম্পাস বলে অনেকের কাছেই বিবেচিত। (বি.এস সি এর কোনো ব্যাচ বের হয়নি এবং সেকেন্ড ব্যাচ চলমান)
৭। শেখ রেহানা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, গোপালগঞ্জ
৮। শেখ হাসিনা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, জামালপুর।
শেষ•
এবার টাইম মেশিন হাল্কা ঘুরায়ে আপনাকে খানিকটা পিছনে নিয়ে যেতে চাই, সেই প্রাইমারী ইসকুলের একটা প্রশ্নের মত করেই শুরু করি, পাবলিক টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের গুরুত্ব কী?
স্যার বলতেন গুরুত্ব আসলে সুবিধা ও অসুবিধা ২টাই লিখতে। তাহলে স্যারের প্রতি সম্মান জানিয়ে আমি প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছি তবে একটু উল্টা ভাবে আগে সুবিধা দিতাম তারপর অসুবিধা দিতাম কিন্তু এখানে অসুবিধা দিয়ে শুরু করি,
অসুবিধা•
যেই গগন ভূবন ফুটো করে ভেসে বেড়ানো কথাগুলো শুনে হেসেছিলেন ওইগুলো পুরোপুরি মিথ্যা যে তাও না কিছু সত্যও রয়েছে কিভাবে? আসছি বর্ণনায়,ওহ আমার তো নিঞ্জা টেকনিক টার কথা মনে আছে পয়েন্ট আকারে লিখলে কম সময় দিয়ে বেশি নাম্বার পাওয়া যাইতো…
সবচেয়ে বড় অসুবিধাগুলোঃ
১.২-১ টা ক্যাম্পাস ছাড়া বাকি ক্যাম্পাসগুলোতে রয়েছে যথেষ্ট শিক্ষক-কর্মচারী এর অভাব;এক্ষেত্রে গেস্ট টিচার নিয়ে এসে এ সমস্যার সমাধান করা হয়।
২.অধিভুক্ত কলেজ হওয়ার একাডেমিক কার্যক্রম এ কোনো স্বাধীনতা নেই যার ফলে সেমিস্টার ফাইনাল পরিক্ষাগুলো যথেষ্ট চ্যালেঞ্জিং; এক্ষেত্রে ৬ ক্যাম্পাসের একই বিষয়ের সব শিক্ষকের লেকচার শীট এবং বুটেক্স এর লেকচারশীট দেখতে হয় ভালো রেজাল্ট এর জন্যে তবে পাশ করা সহজ।
৩.বাৎসরিক বাজেট অন্যান্য ইউনিভার্সিটি এর থেকে অনেক কম আসে যা দিয়ে উন্নতি-অবনতি মাপা খুব দুষ্কর ;এক্ষেত্রে একটা কথা ভেবে মনকে সান্ত্বনা দিতে হয় এইরাম ছোট ক্যাম্পাসে বাজেট দিয়াই বা করবে কি।
৪.একই ক্যাম্পাসে উচ্চশিক্ষার কোনো সুযোগ নেই, নেই কোনো প্রাক্টিকেল গবেষণা এর সুযোগ;তবে আপনি চাইলে বাংলাদেশের অন্যান্য ইউনিভার্সিটিগুলোতে এবং বিদেশে উচ্চশিক্ষার ইভেন গবেষণায় যুক্ত হতে পারেন।
৫.বিসিএস এ নেই কোনো আলাদা টেক্সটাইল ক্যাডার;এক্ষেত্রে যদিওবা কাজ চলছে তবে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন পদে সরকারি পদে নিয়োগ হয়ে থাকে এবং টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ এর শিক্ষক নিয়োগ কিন্তু বিসিএস এর নন-ক্যাডার থেকে পিএসসি সিলেকশন করে এছাড়াও বিভিন্ন সরকারি ডিপ্লোমা ইন্সটিটিউটগুলোতে সরকারিভাবে শিক্ষক নিয়োগ হয়ে থাকে।
মাঝে মধ্যে সরকারি ব্যাংকগুলোতে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার্স দের জন্যে আলাদাভাবে কিছু নিয়োগের সার্কুলার পেয়ে থাকে।
৬.রাজনীতি এবং র্যাগিং আছে;
এ ব্যাপারে বলতে গেলে বলা যায়, হ্যাঁ আছে কিন্তু এখানে এই ২ টার ব্যাপারে কোনো প্রকার ভাস্ট কোনো অভিযোগ এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি, মূলত রাজনীতি আনা হয় প্রশাসন এবং সমাজের অনিয়ম এর বিরুদ্ধে কথা বলে নবীন দের লিডিং কোয়ালিটি বাড়ানো ও নিজেদের অধিকার আদায়ে সোচ্চার হওয়ার জন্যে আর র্যাগিং মানে ফানি র্যাগিং হয় অর্থাৎ বলতে পারেন শারীরিক কিংবা মানসিক হেরেসমেন্ট না ফেলে আপন করে নেওয়া।
৭.ক্যাম্পাস এরিয়া খুব ছোট ; এক্ষেত্রে মতামত হলো
এই কয়েজন এর জন্যে যতটুকু জায়গা দরকার তার যথেষ্ট এখানে রয়েছ।
৮.ভর্তির পর সবাই বলবে কলেজে পড়িস, নাম ই তো শুনিনি, কারো গার্লফ্রেন্ড থাকলেও ব্রেকাপ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি আবার সামথিং লাইক দ্যাট পাশের বাসার আন্টি , আংকেল ও সাথে যুক্ত হবে। এটা সমাধানের একমাত্র উপায় ১ বছর পার করা।
সবচেয়ে বড় সুবিধাগুলো•
১.প্রথমত এইগুলো হলো পিউর সরকারি প্রতিষ্ঠান এবং পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে সরকারি ভাবে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি দেওয়া হয় এবং বুটেক্স থেকে সার্টিফিকেট দেয়া হবে।
আর যাই হোক না ভাই আপনে সরকারি ভাবে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার হয়ে বের হবেন ৪ বছর পর। তার মানে একটা পাবলিক ইউনিভার্সিটির একজন ইঞ্জিনিয়ার এর যে মান থাকবে তার মান আর আপনার মান খাতা কলমে সমান।
২.এই কলেজগুলোতে ৪ বছরে বিএসসি পড়তে একাডেমিক ভাবে আনুমানিক ৬০ হাজার টাকা খরচ হবে যা অন্য প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির সাথে তুলনা করলে অনেক কম।
৩.এইগুলোকে পাবলিক কলেজ বলা হয়ে থাকে কেনো? কারণ প্রথমত সরকারিভাবে বাজেট আসে এবং ২য় বিষয়টি হলো বুটেক্স অধিভুক্ত হলেও সবকিছু নির্ধারণ করেন ৬ ক্যাম্পাসের অধ্যক্ষগণ ২-১ টা নিয়ম কানুন ছাড়া বাকিসব ক্ষেত্রে পূ্র্ণ স্বাধীনতা রয়েছে।
৪.কলেজগুলো সাধারণত সেশন জট নেই বললেই চলে, একটা উদাহরণ দেই। ধরেন, এক ক্যাম্পাসে খুব মারামারি হইলো অনেক ঝামেলা হইলো তাতে কিন্তু অন্য ৫ টা ক্যাম্পাসকে বসায় রাখতে পারবে নাহ,পরিক্ষা বাতিল কিংবা ডেট পেছানোর প্রশ্নই আসে না।
৬ ক্যাম্পাসের একই সেশনের সেমিস্টার ফাইনাল একসাথে হয় বলে এদিক থেকে অনেক সুবিধা পাওয়া যায় তবে এক্ষেত্রে জট একবারে নেই এটা বলা যাবে নাহ, জট আছে তবে সেটা সেই ব্যাচের নিজেদের দোষ এ।
৫.এই সব প্রতিষ্ঠান এ শিক্ষার্থী সংখ্যা খুব কম হওয়ার ক্যাম্পাসভিত্তিক ঝামেলা গুলো খুব কম হয়। নিউজ এ আসে না বললেই চলে, বলা যায় শান্তির ক্যাম্পাস।
৬. আবার শিক্ষার্থীদের সংখ্যা কম হওয়ায় সবাই সবাইকে চেনে বন্ডিং টা অনেক বেশি শক্ত হয় এবং বিপদে আপদে সবার হেল্প পাওয়া যায়।
মনে করেন এমন হয়েছে আপনি ফুটবল খেলতে গিয়ে পায়ে আঘাত পেয়েছেন আপনাকে হাসপাতালে নেওয়ার জন্যে কিংবা দেখার জন্যে ২০০-৩০০ জন চলে এসেছে একবারে পুরো ক্যাম্পাস।
ব্যাপারগুলো এইরাম ই হয় সচরাচর তবে ব্যাতিক্রম আছে খুব কম মানে বেয়াদব এর সংখ্যা খুব নগন্য নেই বললেই চলে যা থাকে সব ঠিক হয়ে যায় পরে।
৭.নাম কলেজ হলেও ইউনিভার্সিটি এর সকল স্বাদ পাবেন এখানে, কারণ প্রতিবছর- স্পোর্টসউইক, ক্রিকেট-ফুটবল-ভলিবল টুর্ণামেন্ট (১.ব্যাচভিত্তিক ২.ফ্রাঞ্চাইজিভিত্তিক), শহীদ দিবস, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শোক দিবস, পহেলা বৈশাখ, মিলাদ মাহফিল, বসন্ত উৎসব,
র্যাগ ফেস্টসহ,বিভিন্ন ই-স্পোর্টস এবং বিভিন্ন ইনডোর গেইম যেমন দাবা,ক্যারাম,টেবিল টেনিস সহ আরো অনেক ইনডোর গেমস খেলা হয়, ঠিক এমনি বিভিন্ন ধরনের প্রতিযোগিতা ও উৎসব আয়োজন চলে।
৮.এক্সট্রা কারিকুলাম একটিভিটিস এবং সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রম এও দেখা যায়, তার জন্যে অনেক ধরনের সংগঠন রয়েছে যেমন ক্যারিয়ার ক্লাব, সাইন্স ক্লাব, ডিবেট ক্লাব,আইটি ক্লাব,প্রথম আলো বন্ধুসভা,বিডি ক্লিন, ব্লাড ডোনেটিং গ্রুপ বাধন, ভলিন্টিয়ার ফর বাংলাদেশ ইত্যাদি ইত্যাদি।
এছাড়াও রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর মধ্যে ছাত্রলীগ এবং ছাত্রদলের রাজনীতি ও পরিলক্ষিত হয় পাশাপাশি বিভিন্ন ধার্মিক কার্যক্রম এর মধ্যে তাবলীগ, ইসলামিক কনফারেন্সসহ আরো অনেক রকম সংগঠন ও কাজ রয়েছে।
মোট কথা আপনি যেদিকে যেতে চান সবদিকে কিন্তু সুযোগ রয়েছে
৯.সবচেয়ে অবাক করার বিষয় হলো ব্যাচেলর করা অবস্থায় ঈদানিং অনেকের রিসার্চ পেপার ইন্যারন্যাশনাল জার্নাল এ পাবলিশ হচ্ছে এবং অনেক শিক্ষার্থী ভাল ফলাফল করে বের হয়ে স্কলারশিপসহ দেশের ও বিদেশের
(ইউএসএ,ইউকে,জার্মানী,নেদারল্যান্ড,কানাডা,জাপান,আয়ারল্যান্ড, নিউজেল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া,ফিনল্যান্ড, এস্তেনিয়া, বেলজিয়াম,সাউথ কোরিয়া,চায়নাসহ, মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশের)
বিভিন্ন ভালো ভালো ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করে পিএইচডি অর্জন এবং জবের ভালো অবস্হানে আসীন হয়ে প্রতিষ্ঠানের সুনাম বয়ে আনছেন প্রতিবছর।
১০. ফাইনাল এক্সাম এর আগে জব, বিসিএস এ ক্যাডার, ব্যাংক জব সরকারী টেক্সটাইল কলেজের টিচার , বাংলাদেশ বিমানবাহিনী, আর্মি কিংবা পুলিশের ঊর্ধ্বতন পদে জবে আসিন হয়ে সম্প্রতি অনেক বেশি উন্নতি করছেন এছড়াও অনেক ভাইয়া এবং আপু বিভিন্ন বেসরকারী ইউনিভার্সিটি কিংবা প্রতিষ্ঠানে অত্যন্ত দক্ষতার সহিত শিক্ষকতা পেশায় দায়িত্ব পালন করছেন।
৯৬০ জনের ক্যাম্পাসে প্রয়োজনের তুলনায় বেশী আছে এই প্রতিষ্ঠানগুলোতে।
১১.আর টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজগুলোতে পড়ে কেউ জবলেস থাকে নাহ, ওই যে বলেছিলাম বন্ডিং অনেক বেশি শক্ত হওয়ায় যারা বড় ভাইদের নেটওয়ার্ক এর মধ্যে থাকে তাদের জব এবং ইন্টার্নি এর ব্যাবস্থা ভাইরাই করে দিয়ে থাকে, আবার অনেক প্রতিষ্ঠান এর ই ইতিহাস অনেক সমৃদ্ধ তাই যেসব ভাইয়া ১৯১১,১৯১৫ কিংবা ৮৪ থেকে পড়াশোনা করেছিলা তা যেই কোর্সেই হোক না কেনো তারা এখন জি.এম, এমডি, এজিএম ও একেকটা কম্পানির মালিক উনাদের মধ্যে অনেকেই তারা সবাই জব কিংবা ইন্টার্নি ক্ষেত্রে অনেক হেল্প করেন।
তাই ৪ বছরে চিল করে অথবা সবচেয়ে খারাপ রেজাল্ট করা পাবলিক সবার আগে জব পাওয়ার নজিরও রয়েছে।
১৩.থ্রি-ইডিএটস মুভি আমি যদি ভূল করে না থাকি তাহলে আপনারা সবাই দেখেছেন ওটা কিন্তু একটা ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ কে নিয়েই।
আবার বিশ্বের সব বড় বড় দেশে ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিভার্সিটি থেকে কলেজ এর সংখ্যা বেশি। কি বিশ্বাস হয় না গুগোলে সার্চ দেখুন।
আচ্ছা যাই তো থ্রি-ইডিয়েটস মুভিতে একটা সুইসাইড করা একটা দৃশ্য আছে ওই সুই সাইড ছাড়া যা আছে সব হয় এই টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজগুলোতে। হ্যাঁ ভাই জব ফেয়ার ও হয়।
আচ্ছা সবাই সুবিধা সুবিধা শুনতে বোরিং হয়ে গিয়েছেন অথবা খুব বেশি ইন্টারেস্টেড হয়ে গেছেন।
যারা খুব বেশি ইন্টারেস্টেড হয়েছে তারা নিশ্চয়ই ভাবছেন এইগুলোতে ভর্তি পরিক্ষা কেমন হয় চান্স পাওয়া কি খুব কঠিন ব্লা ব্লা ব্লা….
এই যে নিন সব উত্তরঃ
ভর্তি পরীক্ষার মানবন্টন :
*পদার্থ – ৩০ টি-৬০ মার্ক
*রসায়ন -৩০টি-৬০ মার্ক
* গনিত-৩০টি-৬০ মার্ক
* ইংরেজি-১০টি-২০ মার্ক
১০০ টা MCQ প্রতিটিতে ২ মার্ক করে মোট ২০০ মার্ক। GPA ১০০ মার্ক।
মোট = ৩০০ মার্ক।
*মোট সমযঃ় ১ঘন্টা ২০ মিনিট
*প্রতিটি ভুল উত্তরের জন্য .৫০ নম্বর কাটা যাবে।
যোগ্যতাঃ এসএসসি ও এইচএসসি উভয় পরীক্ষায় ৪.০০ করে গ্রেড পয়েন্ট থাকতে হবে।
★★সবচেয়ে গুরুত্বপুণ বিষয়টি হচ্ছে এইচএসিতে উচ্চতর গনিত,পদার্থ বিজ্ঞান,রসায়ন,আর ইংরেজীতে কমপক্ষে ১৬.৫০ থাকতে হবে ।
আবেদন ফি ১০০০ টাকা
সংরক্ষিত কোটাঃ
*মোট কোটাঃ ৩ টি
*মুক্তিযোদ্বা কোটাঃ ২টি
*নৃ-গোষ্টী কোটাঃ ১ টি
জিপিএ হিসাবঃ
এসএসসি জিপিএ কে ৮ দিয়ে গুন
এইচএসসি জিপিএকে ১২ দিয়ে গুন
কিছু কমন প্রশ্নের উত্তরঃ
১.সরকারি কিনা?
উঃ হ্যাঁ, এগুলো সরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ।একটা সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় যেমন ভাবে চলে এগুলোও ঠিক সেভাবেই চলে ।
২.কত টাকা খরচ হবে ?
চার বছরে ভর্তিসহ ৬০ হাজার টাকায় কম্পিলিট হয়ে যাবে।
৩.সার্টিফিকেট কে দিবে ?
উঃ বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় (বুটেক্স)
৪.টেক্সটাইলের ডিমান্ড কেমন ?
উঃ বুটেক্স এর পরে টেক্সটাইল সেক্টরে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজগুলোকে গুরুত্ব দেয়া হয় অনেক সময় ভাইবা না নিয়েও জব দেয়া হয়।
৫.কত পেলে চান্স হবে ?
উঃ মোটামোটি ৬৫-৭০% নাম্বার থাকলেই চান্স হবে তবে এটা প্রশ্নের উপর নির্ভর করে যদি প্রশ্ন কঠিন হয় তাহলে কম নাম্বার পেলেও যেমন চান্স হবে আবার সহজ হলে অনেক বেশী পেয়েও চান্স হবে না।
৬.কম্পিটিশন কেমন ?
উঃ গতবছর একটা সিটের জন্য ৮/৯ জন ছিল । প্রতিবছর পরীক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ছে । অনেকে জিপিএর জন্য এক্সাম দিতে পারে না তবে আশা করা যায় এই বছর একটা সিটের জন্য ১০/১২ জন লড়াই করবে।
সবার জন্যে শুভ কামনা রইলো।