মিলা মাইগ্রেশন ফর্ম ফিল আপ করেছে। টেক্সটাইল ফ্যাশন অ্যাণ্ড ডিজাইন (টিএফডি) থেকে মাইগ্রেট হয়ে অন্য ডিপার্টমেন্টে যাবে। কিন্তু যতক্ষণে সে বুঝতে পারল এ সাবজেক্টটার বিশেষত্ব আর ফিউচার ডিমান্ড ততক্ষণে সময় শেষ। মাইগ্রেশন কনফার্ম হয়ে গিয়েছে। মিলা শত চেষ্টা করেও ব্যাক মাইগ্রেশন করতে পারল না।

এখানে মিলা একটা কাল্পনিক নাম। কিন্তু ২০১৬-১৭ সেশনে এমনটাই হয়েছে। একজন-দুজন না, অনেকেই ব্যাক মাইগ্রেশন করার আবেদন করেছে বা করতে চেয়েছে যা কিনা খুবি বিরল। তোমারও যাতে এ ভুলটা না হয়। তুমি স্মার্ট সুতরাং স্মার্ট ডিসিসনটাই তুমি নিবে।

এইচ এস সি শেষ করে, বহু যুদ্ধ করে ইউনিভারসিটিতে টিকে সাব্জেক্ট চুজিং নিয়ে মহাব্যস্ত?টেনশন কাজ করছে? জানি একটু হলেও ব্যাপারটা নিয়ে ভাবছ কারণ এই পরিস্থিতিতে একটি সিদ্ধান্তই তোমাকে নিয়ে যেতে পারে চরম শিখরে অথবা আছড়ে ফেলতে পারে হতাশার অতল সমুদ্রে।

দুই সিচুয়েশন অনেকটা রাজা- ফকিরের মত অবস্থা, দুই প্রজাতিতে মহা ব্যবধান। এই ফারাকটা হয় ভুল সাবজেক্ট চুজ করে সেটার প্রতি বিতৃষ্ণা সৃষ্টি হওয়া থেকে। সাবজেক্টের কারণে না।

তাহলে তোমাদেরকে একটু চিন্তা মুক্ত করি, বড় ভাই হিসেবে তোমাদের সিদ্ধান্ত নিতে একটু সহজ করে দেই। তবে সংবিধিবদ্ধ সতর্কিকরণ: শেষ সিদ্ধান্ত কিন্তু নিতে হবে তোমারি। আমরা শুধু সাব্জেক্ট সম্পর্কে তোমাদের আইডিয়া ক্লিয়ার করে দিব।

আমি মনে করি টেক্সটাইল ফ্যাশন অ্যাণ্ড ডিজাইন সম্পর্কে জানার পর তোমার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে আর দ্বিধা থাকবে না।

প্রথমেই তোমাদের জবের ব্যাপারটা বলে নেই। নাহ, থাক পরে বলি। :p যেটা তোমরা সবার আগে চাও সেটা সারপ্রাইজ হিসেবে শেষে রেখে দেই। আর হ্যা, সারপ্রাইজটাতে আছে এমন একটা সুযোগ যা খুব কম ভার্সিটিতেই পাবে, এমনকি এ সুযোগ সব ডিপার্টমেন্টএর মদ্ধে কেবল টেক্সটাইল ফ্যাশন অ্যাণ্ড ডিজাইনের জন্যই সিমিত।

আমাদের ডিপার্টমেন্টটা খুবি সাম্প্রতিক। বয়সে এখনো সে তরুণি। প্রথম আত্যপ্রকাশ করে ২০১০ সালে। এখন্ পর্যন্ত বেড়িয়েছে মাত্র ৩ টি ব্যাচ। অথচ সবাই খুবি চমৎকারভাবে পুরো টেক্সটাইল দুনিয়া দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। গান ফ্রেন্ডসের তামিম মৃধা ভাইয়া কিন্তু আমাদের ডিপার্টমেন্টের ছাত্র ছিলেন!

টেক্সটাইল ফ্যাশন এন্ড ডিজাইন (সংক্ষেপে টিএফডি) নাম শুনলে অনেকেই হয়ত ভেবে বসে “ফ্যাশন ডিজাইন শিখবি?” “এটাতো কোর্স বা ডিপ্লোমা করলেই হয়”, “ফ্যাশন ডিজাইনে আবার কীসের ইঞ্জিনিয়ারিং?”, “এটাতো মেয়েদের সাবজেক্ট” অথবা “এটা লিপস্টিক সাবজেক্ট নাতো?” এ কথাগুলা শুরুর দিকে খুব প্রচলিত থাকলেও এখন খুব কম ফেস করতে হয়।

সবার কাছে অনেকটাই পরিচিত হয়ে গেছে। তারপরও ক্লিয়ার করার জন্য বলছি যে এটা লিপস্টিক সাবজেক্ট না। ছেলে-মেয়ে উভয়ের জন্য রয়েছে সমান সুযোগ। এখানে আছে একজন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারের জন্য পরিপূর্ণ কোর্স। বরং এখানে একজন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারের পাশাপাশি তুমি অতিরিক্ত পাবে একজন ফ্যাশন ডিজাইনার হিসেবে আত্যপ্রকাশ করার সুযোগ ।

ইতোমদ্ধেই বড় ভাইয়াদের কাছে নিশ্চয়ি শুনে ফেলেছ যে বুটেক্সের সব সাব্জেক্টের পড়া প্রায় সেম। দু-একটা কোর্স সাব্জেক্টেই আছে ভিন্নতা। আসলে তাই। তবে এখানে মজার বিষয় হল, তুমি অন্য ডিপার্টমেন্টে পড়ে শুধু ইঞ্জিনিয়ারই হবে, বিএসসি লেভেল শেষেই একজন ফ্যাশন ডিজাইনার হতে পারবে না।

অন্যান্য ফ্যাশন ইন্সটিটিউট থেকে পাশ করা ডিজাইনারদের থেকেও কিন্তু তুমি শত গুণ এগিয়ে। কারণ কী জান? কারণ একজন টেক্সটাইল ফ্যাশন ডিজাইনার জানেন কোন কাপড়ে কেমন ডিজাইন দেয়া প্র্যাক্টিকাল, কোন ডিজাইন দেয়া সাশ্রয়ি হবে এটা তিনি জানেন। তাই একজন সাধারণ ফ্যাশন ডিজাইনার শুধুমাত্র তার প্র্যাক্টিকাল নলেজের অভাবে তোমার সাথে প্রতিযোগিতায় পারবে না। ফ্যাশন ডিজাইনার হিসেবে তোমার দর চাক্রির বাজারে এক ধাপ বেড়ে গেল, তাই না?

টিএফডি ডিপার্টমেন্টটি শুধু এ দিকটা থেকেই অনন্য না। পুরো বাংলাদেশে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিভার্সিটি আছে একটাই আর টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার প্লাস ফ্যাশন ডিজাইনারও প্রতি বছর বের হয় মাত্র চল্লিশ জন। অর্থাৎ টিএফডিয়ানরা দেশের অনন্য সম্পদ এতে সন্দেহ নেই।

প্রতি ব্যাচে ৪০ জনের এ ছোট ডিপার্টমেন্টটিতে তুমি পাবে অসাধারণ বন্ধুত্ব, বড় ভাইয়া, আপুদের স্নেহ-মমতা এবং গাইডলাইন। আমাদের ডিপার্টমেন্ট হেড ম্যাডাম এবং কোর্স কোওরডিনেটর স্যার অসাধারণ। আর আমাদের টিএফডি ল্যাবে রঙ, পেন্সিল এবং কাগজ নিয়ে যে মজার ঘটনা ঘটে তা অনন্য এক অভিজ্ঞতা।

এখানে কালার সেন্সটা ভালো হলে খুব হেল্প হয়। যদিও এটা প্রথমেই খুব বেশি ইফেক্ট ফেলে না কারণ সময় যেতে যেতে তুমি অভ্যস্ত হয়ে যাবে। আর যারা ছবি আঁকতে পার না বলে ভয় পাচ্ছ তাদের জন্য বলছি ভয়ের কারণ নেই। আমার অনেক ফ্রেন্ডই আগে কখনো সিরিয়াসলি ছবি আঁকেনি। অথচ এখন তার সেই সুপ্ত প্রতিভা ফুটে উঠেছে পরিপূর্ণভাবে।

এখন তারা পুরোদস্তুর আর্টিস্ট। ফেসবুকে মাঝে মাঝেই তারা তাদের আর্ট ওয়ার্কের পোস্ট দেয়!
তোমার যদি ছবি আঁকতে ভালো লাগে, গ্রাফিক ডিজাইনিং-এর শখ থাকে তাহলে এ সাব্জেক্টটি তোমার জন্যই।

টিএফডি ডিপার্টমেন্টটা যে একেবারেই অনন্য তার প্রমাণ হল ২০১৬-১৭ ব্যাচের ছাত্র-ছাত্রিদের যখন টিএফডি ডিপার্টমেন্ট থেকে মাইগ্রেশন হয় তখন তারা তাদের ভুল বুঝতে পেরে মাইগ্রেশন ঠেকানোর জন্য আবেদন করে। স্বেচ্ছায় অন্য ডিপার্টমেন্টের মাইগ্রেশনের ফর্ম ফিল আপ করে এতো ছাত্র-ছাত্রির মাইগ্রেশন ক্যান্সেল করতে চাওয়ার ইতিহাস বুটেক্সে হয়তো নেই।

টিএফডি সম্পর্কে অনেক কিছুইতো বললাম। এখন তোমাদের জন্য যে সারপ্রাইজ রেখেছি তা খোলাসা করি। আচ্ছা, এমন হলে কেমন হয় একটু ভাব তো। ধর তুমি টিএফডি সাব্জেক্ট নিয়ে বিএসসি শেষ করলে আর বুটেক্স তোমাকে কোনো রকম এক্সট্রা রিকুয়ারমেন্ট, পরীক্ষা ছাড়াই চায়না বা জার্মানিতে এমএসসি করতে নিয়ে গেল? হ্যা, স্বপ্ন না এটা সত্যি।

ইতোমদ্ধেই চায়নার একটি ইউনিভার্সিটি বুটেক্সের শুধুমাত্র টিএফডি থেকে বিএসসি পাশ করা ছাত্র-ছাত্রিদের চায়না থেকে এমএসসি করার জন্য দিচ্ছে অনন্য সুযোগ। তাছাড়া জার্মানি থেকেও এমএসসি করার সুযোগ নিয়ে কথা হচ্ছে। যেখানে জার্মানিতে বহু কাঠখড় পুড়িয়ে মানুষ যেতে পারে না সেখানে টিএফডিয়ানদের এ সুবর্ণ সুযোগটা নিয়ে কথা উঠায় সত্যিই বিস্মিত ও গর্বিত হই।

তাছাড়া ভালো রেজাল্ট করলে অনেক বিদেশি স্কলার্শিপ আছে। আর চাকরি? সেটাতো সব বুটেক্সিয়ানরাই পায়। এখন পর্যন্ত যত টিএফডিয়ান বড় ভাইয়া-আপু বেড়িয়েছেন কেও বসে নেই।

আশা করি লেখাটি পড়ে টেক্সটাইল ফ্যাশন এন্ড ডিজাইন (টিএফডি) সাবজেক্টটির ব্যাপারে তোমার ধারণা পরিষ্কার হল। দ্বিধা দূর হলে চলে আস আমাদের স্বর্গে। হয়তো তোমাকেই পাব টিএফডিকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার কাণ্ডারি হিসেবে।
আমি কাজী ফারহান হোসেন পূর্ব। টিএফডি ব্যাচ: ৪৩।

Kazi Purba