পরশু রাতে মারা গেছে জেমস রান্ডি ।

না , করোনার কারনে নয়, স্বাভবিক বার্ধক্যজনিত অসূস্থতায় মারা গেলেন তিনি। বয়স হয়েছিল ৯২ বছর।

তার মৃত্যুতে শোক জানাচ্ছেন বিজ্ঞানী, বিজ্ঞান কর্মী, সাংবাদিক, শিক্ষাবিদ সহ বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন স্তরের মানুষ। একই সাথে, জেমস রান্ডি যাদের ধান্দাবাজি ফাস করে দিয়েছেন,তারা হয়তো এখন আনন্দে মিষ্টি বিলাচ্ছে।

ভাল কথা, কে এই James Randi ?

জেমস রান্ডির আসল নাম Randall James Hamilton Zwinge। ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন স্টেজ ম্যাজিশিয়ান হিসেবে। লেখাপড়া খুব বেশি করেন নি। কলেজ থেকে ক্লাস পালিয়েছেন। তারপর থেকে বিভিন্ন সার্কাস দলে এবং নাইট ক্লাবে ম্যাজিক দেখিয়ে বেড়িয়েছেন জীবনের প্রথম কয়েক বছর। স্টেজে নিজেকে The Amazing Randy বলে পরিচয় দিতেন।

 

তারপর তিনি একসময়য় দেখলেন, ম্যাজিককে ‘অলৌকিক ক্ষমতা’ দাবি করে অনেক মানুষ বিভিন্নভাবে আমজনতাকে প্রতারিত করছে। তিনি তখন এদের ভন্ডামি দেখিয়ে দেওয়া শুরু করলেন।(সোর্স)

 

আপনারা হয়তো AXN চ্যানেলের Breaking the magician’s code: Magics Biggest secret finally revealed সিরিয়ালটা দেখেছেন । ( আগে না দেখলেও এখন দেখতে পারেন । ইউটিউবে, টরেন্টে এভয়েলেবল)

এই সিরিজে ভ্যাল ভ্যালেন্টিনো নামের একজন আমেরিকান ম্যাজিশিয়ান বিভিন্ন ম্যাজিক দেখায় প্রথমে, তারপর সেই ম্যাজিক কিভাবে করল সেই ট্রিকটাও দেখিয়ে দেয়।

কিভাবে আইফেল টাওয়ার গায়েব করা যায়, কিভাবে নায়িকার শরীর দুই ভাগ করে কেটে আবার জোড়া লাগানো যায়, কিভাবে পানির উপর হাটা যায়, কিভাবে আকাশে ভেসে বেড়ানো যায় , কিভাবে টুপির মধ্যে থেকে খরগোশ বের করা যায় বা অদৃশ্য করা যায় –এইরকম কয়েক শো ম্যাজিকের ট্রিক দেখানো হয়েছে এই সিরিয়ালে।(ভিডিও লিংক)

 

নিজের নিরাপতার জন্য ভ্যাল ভ্যালেন্টিনো কোনো কথা বলেন না, একটা মুখোশ পরে শো করেন । ( এ কারনে তাকে মাস্কড ম্যাজিশিয়ান ও বলা হয়)

গুজব শুনেছিলাম, পেশাদার ম্যাজিশিয়ানদের সব ট্রিক ফাস করে দেওয়ার কারনে ক্ষিপ্ত হয়ে তারা নাকি ভ্যাল ভ্যালেন্টিনোকে খুন করার চেষ্টা করেছিল।

যাই হোক , জেমস রান্ডির প্রসংগে ফিরে আসি। জেমস রান্ডিও এইরকম ভাবে তার শেখা বিভিন্ন যাদুর ট্রিক দিয়ে মানুষদের সাহায্য করা শুরু করলেন।

দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর আমেরিকায় প্রচুর ‘প্যারানর্মাল রিসার্চার’ এর আবির্ভাব ঘটল। তারা বিভিন্ন জায়গায় অনেক প্যারানর্মাল ঘটনা দেখাতেন মানুষদেরকে । এসব থেকে বাচার জন্য মানুষের কাছ থেকে টাকা পয়সাও নিত।

জেমস রান্ডি এসবের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শুরু করলেন। নিজের সংগঠন , জেমস রান্ডি এডুকেশনাল ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করলেন। এই সংগঠনে যুক্ত হলেন ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, জ্যোতির্বিদ,মনোবিদ সহ বিভিন্ন পেশার বিশেষজ্ঞরা। তারা বিভিন্ন অলৌকিক ঘটনার চুলচেরা বিশ্লেষণ করে দেখলেন, সবই ভুয়া । সবই নরমাল ঘটনা, কোনো প্যারানর্মাল কিছু নাই।

গুজব এবং ভুয়া প্যারানর্মাল তথ্যের বিস্তার ঠেকাতে জেমস রান্ডি এডুকেশনাল ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে ওপেন চ্যালেঞ্জ ঘোষনা করা হয়েছিল। কেউ যদি কোনো প্যারানর্মাল ঘটনা না ব্ল্যাক ম্যাজিকের ক্ষমতা দেখাতে পারে, তাহলে তাকে ১ মিলিয়ন পাউন্ড ( বাংলাদেশি ৮ কোটি টাকা) দেওয়া হবে। আর যদি এমন কোনো ঘটনা দেখাতে না পারে, তাহলে তার ব্যবসা বন্ধ করতে হবে।

বলা বাহুল্য , কেউ সে চ্যালেঞ্জ জিততে পারেনি। অনেকে এসেছিল অলৌকিক ক্ষমতা দেখাতে, কিন্তু ধরা খেয়ে সবাই ফিরে গেছে।

২.

রান্ডির জীবনের কয়েকটা বিখ্যাত কান্ড কীর্তির কথা শোনাই।

  • ১। ইউরি গেলার নামের এক লোক দাবি করলেন, তিনি ‘সাইকিক পাওয়ার এর অধিকারী। এই সাইকিক পাওয়ার বা মানসিক শক্তি দিয়ে তিনি চামচ বা স্টিলের রড বাকিয়ে ফেলতে পারেন।জেমস রান্ডি ইউরি গেলারের ম্যাজিক ট্রিক ধরে ফেললেন খুব সহজে। তিনি দেখালেন, সাইকিক পাওয়ার বা টেলিকাইনেসিস নামে কিছু নাই । মনের শক্তি দিয়ে ,হাতে টাচ না করে কোনো কাজ করা সম্ভব না। কাজ করতে হলে অবশ্যই বল প্রয়োগ করতে হবে।ইউরি গেলারের ম্যাজিকে , চামচের বিশেষ অংশ নরম থাকত । ওই অংশে হাত দিয়ে অল্প চাপ দিলেই বেকে যেত সেটা।জেমস রান্ডির কাছ থেকে ধরা খাওয়ার পর ইউরি গেলার আবার নতুন প্রযুক্তি নিয়ে এলেন। কয়েক ঘন্টা একটা স্টেজের উপরে অপলক চোখে তাকিয়ে থাকতেন চামচের দিকে । এক সময় দেখা গেল, চামচ বেকে গেছে।জেমস রান্ডি এটার ও রহস্য বের করে দিলেন। চামচটা দুইটা আলাদ ধাতু দিয়ে বানানো হত (লোহা আর নিকেল এর দুইটা পাত থাকত ভিতরে, উপরে গ্যালভাইনাইজড করে সুন্দর ফিনিশিং দেওয়া হত। বোঝার কোনো উপায় নেই যে ভিতরে আলাদা দুইটা পাত) ।এরপর উজ্জ্বল আলো ফেলা হত চামচের উপর। ফলে লোহা আর নিকেল , দুইটাই দৈর্ঘ্যে অল্প অল্প করে বৃদ্ধি পেত। লোহা যতটুকু লম্বা হত, নিকেল তত লম্বা হত না। ফলে ,অসম দৈর্ঘ্য প্রসারনের জন্য চামচটা এক সময় বাকা হয়ে যেত।ফিজিক্সের এই ঘটনা দর্শকদের সামনে লুকিয়ে রেখে ইউরি গেলার বলতেন, আমি সাইকিক পাওয়ার দিয়ে চামচ বাকিয়ে ফেলছি । জেমস রান্ডি তার ধান্দাবাজি ফাস করে দিয়েছিলেন। The truth about uri geller নামে একটা বইও লিখেছিলেন তখন তিনি(সোর্স)

 

  • ২। হোমিওপ্যাথি যে ভুয়া, এর ওষুধের মধ্যে পানি আর চিনি ছাড়া আর কোনো কেমিকাল নাই, সেটা প্রমান করার জন্য তিনি নিজের শরীরের উপরেই পরীক্ষা করেছিলেন।তিনি গেলেন একটা হোমিওপ্যাথির দোকানে। ৬ মাসের ঘুমের ওষুধ কিনলেন। তারপর সেই ৬ মাসের ওষুধ একসাথে খেয়ে ফেললেন।এত ঘুমের ওষুধ খাওয়ার পরেও তার একটুও ঘুম এল না। তিনি হেটে চলে বেড়ালেন ঠিকমত।পরবর্তীতে তিনি টেড টকেও দর্শকদের সামনে লাইভ হোমিওপ্যাথি খেয়ে দেখিয়েছেন, এর কোনো ইফেক্ট নাই।(সোর্স)

 

  • ৩। পিটার পপফ ( Peter popoff) নামে এক Faith healer ধান্দাবাজি ব্যবসা করছিলেন আমেরিকায়। শত শত মানুষ তার সেশনে আসে অডিটোরিয়াম ভর্তি করে। পপফ দর্শক সারি থেকে একেকজনকে র‍্যান্ডমলি দাড় করান। তারপর তার নাম, বাপের নাম, বাসার ঠিকানা, বয়স, হবি,অসুখ বিসুখ সহ ১৪ গুষ্টির কথা বলে দিয়ে চমকে দেন তাকে। দাবি করে, ঈশ্বর তাকে এইসব তথ্য জানিয়ে দিচ্ছেন, কোনো এক অলৌকিক উপায়ে।তারপর দর্শককে স্টেজে এনে বিশেষ পদ্ধতিতে ( মন্ত্র পড়ে, হাত পা নাড়ানাড়ি করে) ওই রোগীর দেহ থেকে শয়তান বের করে দেন। রোগী সর্বরোগ থেকে সূস্থ হয়ে ওঠেন।জেমস রান্ডি দেখালেন, পপফের কানে খুব ছোট একটা হেডফোন লাগানো থাকে। এই হেডফোন দিয়ে তার এ্যাসিস্ট্যান্ট রা বলে দেয় , কোন লোকের নাম কি, কার বয়স কত,কার কি অসুখ। অডিটোরিয়াম এ ঢোকার সময়েই সবাই যে রেজিষ্ট্রেশন ফর্ম ফিল আপ করে, সেখান থেকেই এই তথ্যগুলা পাওয়া যায়।

 

  • ৪। ক্যালিফোর্নিয়ার লরেন্স লিভারমোর ল্যাবরেটরি থেকে একবার র‍্যান্ডির কাছে ফোন আসে। তাঁরা এক ব্যক্তির সন্ধান পেয়েছেন যিনি তাঁর হাতের উল্টো পিঠে রাখা ম্যাচের বাক্সকে “মনের শক্তি” তাঁর কথামত দাঁড় করাচ্ছে এবং শোয়াচ্ছে! কী আজব ব্যাপার স্যাপার! তাঁরা র‍্যান্ডিকে ফোন করলেন, বিষয়টি জানালেন।র‍্যান্ডি ব্যাখ্যা দিলেন —

“এই যাদুটি করা খুব সহজ, ম্যাচের বাক্স হাতের উপর রাখার সময় বাক্সটি একটু খুলে হাতের একটু চামড়া বাক্সের ভেতর ঢুকিয়ে বন্ধ করে দিতে হবে। মাংসপেশী সম্প্রসারণ আর সঙ্কুচনের প্রভাবে এমনিতেই ম্যাচের বাক্সটি দাঁড়াবে এবং শুয়ে পড়বে।”

  • ৫ । জেমস হাইড্রিক নামের এক ধান্দাবাজ দাবি করলেন, তিনি হাত দিয়ে টাছ না করেই বইয়ের পাতা উল্টাতে পারেন। রান্ডি তাকে চ্যালেঞ্জ করলেন। তার বইয়ের পাতায় কিছু পাতলা ফোম আর বাদাম রেখে দিলেন।টেবিলে বই রেখে, সে কয়েক পা দুর থেকে হেটে এসে টেবিলের কাছাকাছি বসত। হেটে এসে ও টেবিলের সামনের বসাতে, তার বডির সম্মুখমুখী মুভমেন্টের কারনে সম্মুখমুখী একটা এয়ার কারেন্ট তৈরি হত। এই এয়ার কারেন্ট বইয়ের পাতাতে গিয়ে ধাক্কা লাগত, সে শুধু টাইমিং করে হাত উচু করত, মনে হত সাইকিক পাওয়ার ।রান্ডি বইয়ের চারপাশে পাতলা ফোম ছিটিয়ে রাখার পরে হাইড্রিক ওই ট্রিক খাটাতে পারেনি। ধরা পড়ে যায় সে।এই ধরনের অনেক ধান্ধাবাজের গল্প, এবং তাদের জারিজুরি ফাস করে দেওয়ার কাহিনী তিনি লিখেছেন তার ১০ টা বইতে। Conjuring এবং The Faith healers তার সবচেয়ে জনপ্রিয় বই

(জানামতে, তার কোনো বই এখনো বাংলায় অনুবাদ হয়নি। আগ্রহী কোনো অনুবাদক কি এগিয়ে আসবেন প্লিজ?)

  • ৬। শুধু রিয়েল লাইফে নয়, তিনি প্রচুর লাইভ টিভি অনুষ্ঠানে হাজির হয়েছেন। হিন্দি পিকে সিনেমায় পিকে আর গুরুজী যেমন লাইভ বিতর্কে বসেছিল, সেইরকম ভাবে জেমস রান্ডি অনেক টিভিতে লাইভ বিতর্ক করেছেন। Exploring psychic powers এইরকম একটা টিভি শো ছিল।

 

টিভি পর্দায় অভিনেতা হিসেবেও দেখা গেছে তাকে অনেক জায়গায়। অতি সাম্প্রতিক – নেটফ্লিক্স এর The Messiah তার উদাহরণ। এই টিভি সিরিয়ালে দেখা যায়, পায়াম গোলশিরি নামক এক লোক সিরিয়ার মরুভূমি থেকে উঠে এসে নিজেকে ইমাম মাহদি / দি মেসায়া/ ত্রানকর্তা হিসেবে দাবি করছে। ঘটনাচক্রে সে নিউইয়র্কে পৌছায়, ভিক্টোরিয়া মেমরিয়াল লেকে পানির উপর দিয়ে হেটে হেটে লোকজনকে মুগ্ধ করে।

 

টিভিতে তখন জেমস রান্ডি পায়াম গোলশিরিকে চ্যালেঞ্জ করে, আমার সামনে, টিভি ক্যামেরার সামনে , সকল চেকিং এর মধ্যে দিয়ে মেসায়া আবার এসে পানির উপর দিয়ে হেটে দেখাক । ট্রিক বাদে তার যদি কোনো অলৌকিক ক্ষমতা থাকে, সে অবশ্যই আবার হাটতে পারবে।

মেসায়া পায়াম গোলশিরি সেই চ্যালেঞ্জ নেয়নি।

সব মিলিয়ে প্রায় ৫০ টা সিনেমা বা টিভি শোতে জেমস রান্ডি অভিনয় করেছেন। অধিকাংশ জায়গায় তিনি নিজের পেশাগত পরিচয়েই অভিনয় করেছেন।

 

নিজের জেমস রান্ডি ফাউন্ডেশন বাদেও তিনি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন Committee for Skeptical Inquiry যেটা বিশ্বের অনেকগুলা স্কেপটিক সংগঠনের একটা আমব্রেলা। কার্ল স্যাগান, আইজ্যাক আজিমভ সহ অনেক বিজ্ঞানী এমনকি নোবেল লরিয়েট এই সংগঠনে যুক্ত হয়েছিলেন।

 

বিশ্বব্যাপীই একটা নতুন আন্দোলন শুরু করে দিয়েছিলেন তিনি, যেটা Skeptic Movement নামে পরিচিত। বিভিন্ন দেশের অজ্ঞতা, কুসংস্কার,গুজব দূর করে, মানুষকে শিক্ষিত সচেতন করে তুলতে এই স্কেপটিক মুভমেন্ট ( সংশয়বাদী আন্দোল) অনেক ভূমিকা রেখেছে।(সোর্স)

 

জেমস রান্ডির দেখানো পথে পরবর্তীতে বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় অনেক স্কেপটিক সংগঠন এর জন্ম হয়েছে। উইকিপিডিয়ার এই লিস্টে কমপক্ষে ২৬ টা এমন সংগঠন এবং চ্যালেঞ্জের কথা পাওয়া যায়।(সোর্স)

 

আমাদের প্রতিবেশী ,ভারতের কোলকাতাতেই ‘ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিত” নামে একটা সংগঠন আছে। তারা যেকোনো অলৌকিক ঘটনা দেখাতে পারলে ৫০ লক্ষ রুপি দিবে । এই দলের মূল কর্নধারের নাম প্রবীর ঘোষ। তার লেখা ‘অলৌকিক নয় ,লৌকিক’ বইটা খুব জনপ্রিয় ।

বাংলাদেশে এমন কোনো সংগঠন নাই। তবে বিচ্ছিন্নভাবে অনেকে চেষ্টা করছেন। যেমন-

  • ১। জুয়েল আইচ একবার চ্যালেঞ্জ দিয়েচিলেন, কেউ যদি চীন থেকে আমদানি করা নকল ডিম দেখাতে পারে, তাহলে তাকে এক লক্ষ টাকা দেওয়া হবে। এখনো কেউ এই চ্যালেঞ্জ গ্রহন করেনি। কিন্তু ডিম সংক্রান্ত গুজব চলছে সমানে।(সোর্স)।সাভারের বাংলাদেশ প্রাণীসম্পদ গবেষণা ইন্সটিটিউট এর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আতাউল গনি রব্বানি ও একই চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলেন। কোনো দাবিদার পাননি তিনিও।(সোর্স)

 

  • ২। খুলনায় ALO – Antisuperstition Learning Organization নামে একটি সংগঠনের কথা জানা যায়, যারা এমন অলৌকিক ঘটনা প্রমাণে এক লক্ষ টাকার চ্যালেঞ্জ দিয়েছিল।(সোর্স)

 

  • ৩। Baba Exposed নামের একটি ফেসবুক গ্রুপ বিভিন্ন ফকির/কবিরাজ/ঘোস্ট হান্টার/প্যারানরমাল রিসার্চার এর ভন্ডামি উন্মোচন করে দেয়। এদের সবচেয়ে বড় সাফল্য- এবিসি রেডিও ৮৯.২ এফ এম এর ‘ডর’ নামক অনুষ্ঠান বন্ধ করা।আরজে কিবরিয়া আর রাদবি রেজার পরিচালনায় এই রেডিও শো তে লাইভ প্লানচেট করা হত, জিন নামানো হত, আংটি পাথর আতর বিক্রি করা হত। সোশাল মিডিয়ায় এদের ভন্ডামি প্রকাশ করার পরে পুলিশ একশন নেয়। আরজে রেজা কে পুলিশ এরেস্ট করে। এবিসি রেডিও অথরিটি ডর অনুষ্ঠানটা বন্ধ করে দেয় এবং আরজে কিবরিয়া কে এবিসি রেডিও থেকে বহিষ্কার করে।(সোর্স)

 

  • ৪। বিভিন্ন টিভি চ্যানেল এ তালাশ, খোজ,ইনভেস্টিগেশন ২৪,সার্চ লাইট জাতীয় বিভিন্ন অনুসন্ধানী অনুষ্ঠান দেখায় এখন। এরা বিভিন্ন অপবিজ্ঞান না ধান্দাবাজির ব্যবসা এক্সপোজ করে নিয়মিত।যেমন- ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভির তালাশের এই এপিসোডে দেখা যাচ্ছে, যশোর এলাকায় এক কবিরাজ জিনের সাহায্যে করোনার চিকিতসা করাত। তালাশের ক্যামেরা-সাংবাদিক দেখে তারা ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছে। ক্যামেরার সামনে কনফেস করেছে যে এইভাবে করোনা নিরাময় সম্ভব নয়।

 

  • ৫। জনপ্রিয় লেখক ও অনুবাদক মুহম্মদ নাজিম উদ্দিন এর ‘পেন্ডুলাম’ নামক বইয়ের নায়ক চারু আহসান কে দেখা যায় একটি কাল্পনিক স্কেপটিক সংগঠন চালাতে । এটা পুরোপুরি কাল্পনিক চরিত্র ,নাকি মুহম্মদ নাজিম উদ্দিনের পরিচত কেউ এমন কার্যকরম চালাচ্ছেন , এবং তাকে দেখে তিনি এই বই লিখতে ইনস্পায়ার্ড হয়েছেন, সেটা জানা যায়নি ।(সোর্স)

আমরা, বাংলাদেশের মানুষ অনেক বেশি গুজব শুনি, গুজব শুনে কাজ করি।

জেমস রান্ডির মত বিচার বিশ্লেষণ করিনা, চিলে কান নিয়ে গেছে শুনেই দৌড় মারি চিলের পেছনে।

পদ্মাসেতুতে কল্লা লাগবে শুনেই ছেলেধরা সন্দেহে নিরীহ মা কে পিটিয়ে মেরে ফেলি।

চাদের গায়ে রাজনৈতিক নেতার ছবি দেখা গেছে শুনেই রাস্তায় নেমে ভাংচুর শুরু করি।

 

থানকুনি পাতা খেলে করোনা সেরে যাবে শুনে গভীর রাতে থানকুনি পাতা খুজি।

 

বিভিন্ন রোগে ডাক্তারের কাছে না গিয়ে অন্যান্য অপচিকিতসক দের কাছে ছুটি, এবং নিজেরাই নিজেদের বিপদ ডেকে আনি।

 

জেমস রান্ডির মত বিশ্লেষণী ক্ষমতার লোক আমাদের ঘরে ঘরে দরকার। ৯২ বছরের দীর্ঘ জীবনে রান্ডি পৃথিবীবাসীকে সচেতন করার যে কাজ শুরু করেছিলেন , সেই ধারা চালিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব এখন আপনার,আমার,প্রত্যেক সচেতন মানুষের।

লিখাঃ জহিরুল ইসলাম