লিখাটি একজন ৩০ উর্ধ্ব বয়সী দেশের একজন ইন্জিনিয়ার এর।দেশের এত উন্নতি পেশীজীবী এর সভ্য মানুষ হয়েও এবার নিজের এলাকায় ই হামলা এর শিকার হতে হল ‘অপু ভাই’ এর বাহিনী এর কাছে।
ঘটনা প্রসংগ
২’ অগাস্ট ২০২০, সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টা। স্থান উত্তরা ৮ নম্বর সেক্টর পাব্লিক কলেজের সামনে। যায়গা টায় স্কুল জীবন থেকে আড্ডা দিয়ে বড় হয়েছি, তাই আমাদের বন্ধু মহলে যায়গাটা চেম্বার নামে পরিচিত৷
দিনে যে যাই করি, বিকেল সন্ধ্যায় কম বেশি সবাই একবার হলেও চেম্বারে ঘুরে না গেলে, মনে হয় দিনের কোন একটা কাজ বাকি রয়ে গেছে!
প্রতিদিনের মতই কয়েকজন আড্ডা দিচ্ছিলাম।
হটাৎ দেখলাম ৬০/৭০ জনের একটা বিশাল দল সামনে দিয়ে হেটে গিয়ে একটু সামনে যেয়ে কার সাথে যেন মিট করলো, খুব উৎসাহ উদ্দীপনার সাথে।
দুর থেকে দেখে একজন কে চেনা গেল, যাকে টিকটক লাইকি ইউজার দের কল্যানে পুরো বাংলাদেশ চেনে এখন! অপু ভাই! নাম শুনেই মন চায় উঠে দাড়ায় একটা সালাম দেই!
এদের উদ্ভট চুলের কাটিং আর কালার, আর জবড়জঙ কাপড় চোপড় দেখে এদের চিন্তে খুব একটা সমস্যা হয় না। বুঝলাম হয়তো গেট টুগেদার টাইপের কিছু।
এরা প্রায় সময় আমাদের গাড়ি বাইকের সাম্নে এসেও ভিডিও শ্যুট করে। আমরা এদের একেবারেই চিনি না, পাত্তাও দেই না। স্বাধীন দেশ, এরা যা মনে চায় করুক, আমরা আমাদের মতই থাকি!
একটু পর বন্ধু রবিন গাড়ি নিয়ে আসলে, ওর গাড়ি নিয়ে আরো ৩ বন্ধু স্বজল, তুষার আর মুরাদ ঘুরতে বের হয়। মোড় ঘুরে একটু সাম্নেই ঐ টিক্টক/ লাইকি বাহিনী পুরো রাস্তা দখল করে আড্ডা দিচ্ছিলো।
গাড়ির হর্ন দিতেই ঊনারা খুব বিরক্ত। উনাদের বাবার রাস্তা তো, তাই আরকি। গাড়ির দরজা খুলে রবিন শুধু প্রশ্ন করে, সমস্যা টা কি? ব্যাস! কোন কথা বার্তা ছাড়া সবাই হামলে পড়লো ওর ঊপর।
আমি, শাকির আর তারেক দৌড়ায় গাড়ির কাছে পৌছাতে পৌছাতে অলরেডি রবিনের মাথা ফাটায় ফেলছে, তাও মারতেছে। শাকির রবিনকে ছুটাইতে গেল ওরেও ৫/৬ জন ধরে নিয়ে মেরে মাথা ফাটায় দিলো।
রবিন রে ছুটানোর ট্রাই করতেছি, কিন্তু মারা বন্ধ হয় না, হেলমেট, কাঠ, হাত যে যেটা দিয়ে পারতেছে মারতেছে! বন্ধু তুষার সুযোগ বুঝে গাড়িটাকে একটু দুরে নিয়ে চলে যায়, তাই গাড়ি ভাংগার সুযোগটা পায় না ওরা!
৬০/৭০ জন মিলে ৭ জনকে মারলে যা হয় আরকি, উপর্ঝুপরি মাইর ঝুটলো কপালে! মার খাওয়ার পর প্রথম কতক্ষন তো বুঝিই নি কে মারলো, কেন মারলো? কিছুই তো করলাম না, তাহলে মারলো কেন?!
আমরা যারা ছিলাম, তাদের প্রত্যেকের বয়স ৩০+। সবাই ফুল টাইম প্রফেশনে আছি, কেউ ডাক্তার, কেউ ইঞ্জিনিয়ার, কেউ বা ব্যাবসায়ী।
আমরা তো কেউ মারামারির বয়স, মন মানসিকতা, অবস্থা, অবস্থান কোন কিছুতেই নেই। ইভেন ওরা এই রকম করবে জানলে হয়তো ওদিক দিয়ে যেতাম ই না!
যখন ওরা মারছে,ওদের শুধু বল্লাম, কার গায়ে হাত দিছস তোরা জানস না! সাথে সাথে একজন উড়ে এসে হেল্মেট দিয়ে ঘাড় পিঠের উপর বসায় দিয়ে বল্লো, ” পুরা বাংলাদেশ চালাই আমরা, ৫ মিনিটে ৫০০ মানুষ খাড়া করায় দিমু, কইছ তোগো বাপেরে, এই বাপ মাইরা থুয়া গেছে…. ”
এরা নরমাল না ভাই, এদের সবার বয়স ২০-২৫ এর মধ্যে। এরা পাগলের মতন বেপরোয়া হিট করছে, হিট করেই ২/৩ মিনিটের মধ্যে রেইল লাইন দিয়ে সব ভ্যানিশ! এরা একজন ও স্বাভাবিক ও সুস্থ মানসিকতায় ছিল না।
যেই যায়গা টাতে ছোট বেলা থেকে বড় হইছি, যেখানে এলাকার মুরুব্বি থেকে শুরু করে টং দোকানদার পর্যন্ত সবাই আমাদের চেনে, জানে; যেখানে সুখে দুখে সবাই একসাথে বছরের পর বছর বেড়ে উঠছি, সেই যায়গায় কত গুলো সামাজিক প্রতিবন্ধির কাছে কোন কারন ছাড়া এভাবে মাইর খাবো, কোন দিন ভাবতে পারি নাই!
এ যে কত বড় অপমান।
কিছুক্ষন পর, এলাকার সব বন্ধু বান্ধব মিলে ওদের অনেক খোজা খুজি করেও কাউকে পাই নি। ২ টা থানার বেশ কয়েকটা টীম অলরেডি হন্যে হয়ে খুজতেছে ওদের।
১ জনকে ধরেছেও অলরেডি।
রবিন আর শাকির কে এমন মারা মারঁে, আমার চোখে খালি এটাই ভাসতেছে! ট্রাস্ট মি ওদের যায়গায় আমি হলে হয়তো স্পট ডেড হয়ে যাইতাম।
আমার প্রশ্ন হলো এরা কারা? এরা এমন কেন? আমাদের দোষ টা কি? রাস্তা বন্ধ করে যা মনে চায় করবে, গাড়ির হর্ন ও বাজাতে পারবো না?
কোন ভদ্র ঘরের সভ্য সমাজের ছেলে মেয়ে নিশ্চই রাস্তা ঘাটে এইসব টিকটক লাইকি করে না। তাহলে অপু ভাই টাইপ কতগুলা বস্তির সামাজিক প্রতিবন্ধির কাছে আমরা বাকি সবাই কি জিম্মি হয়ে গেলাম?
এদের অনেক ফ্যান ফলোয়ার আছে তাই?
আপ্নাদের এই সমাজ ব্যাবস্থাকে আমার লাল সালাম 🙏
একটু নিছক বিনোদন, খারাপ কি? এই চিন্তা ভাবনা করে অনেকেই এসব প্রতিবন্ধিদের ফেমাস বানিয়ে সমাজের ক্যান্সার বানিয়ে দিচ্ছেন।
এখনই যদি টিকটক, লাইকি এগুলো নিয়ে চিন্তা ভাবনা না করা হয়, তাহলে খুব শীঘ্রই হয়তো এরা আরো ভয়ানক বিষ ফোড়া হয়ে দাড়াবে!
আজ আমরা ভিকটিম, আগামীকাল আপনারা কেউ! মার খাবেন, অপমান হবেন কিন্তু কিছু করতে পারবেন না।
মামলা? বিচার? কি লাভ ভাই?
নিজের ঘরের সামনে মার তো খেয়েই ফেল্লাম, অপমান যা হবার তা তো হয়েই গেলাম! ভাই সমতুল্য ফ্রেন্ডের মাথা ফেটে সারা গা বেয়ে রক্ত ঝড়লো, এই রক্ত ফেরত দিতে পারবেন?
বাদ দেন ভাই, তারচেয়ে আপনারা বরং ওদের ভিডিও গুলো শেয়ার দিয়ে ওদের আরেক্টু ফেমাস বানিয়ে দিন 🙂
ভাল থাকুক টিকটক আর লাইকি ওয়ালা মানুষগুলো!
আর শুভবুদ্ধি? এসব উদয়ের প্রয়োজন এদেশে নেই।
ইতি
ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ হাসিবুল হক