জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) এর পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. এ এ মামুন বিশ্বের শীর্ষ দুই শতাংশ বিজ্ঞানীদের মধ্যে তালিকাভুক্ত হয়েছেন।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সেরা বিজ্ঞানীদের মধ্য থেকে শতকরা দুই জনকে নিয়ে প্রকাশিত এ তালিকায় স্থান পান তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ভিত্তিক গবেষকদের প্রকাশিত একটি জার্নালে এ তালিকাভুক্তি হয়েছে।
স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ব্যবহার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক জন আইওনিডিস, কেভিন ডব্লিউ বয়াক এবং নেদারল্যান্ডস-ভিত্তিক জেরোইন বাস এক গবেষণায় বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখার এক লাখ ৫৯ হাজার ৬৮৩ জন বিজ্ঞানীর এই তালিকা প্রকাশ করেন।
প্রত্যেক বিজ্ঞানীকে তাদের নিজস্ব গবেষণা কাজের উদ্ধৃতি (সাইটেশন) সংখ্যার ভিত্তিতে এ তালিকায় স্থান দেওয়া হয়।
ড. মামুন দেশের শীর্ষস্থানীয় বিজ্ঞানীদের মধ্যে রয়েছেন। সারা বিশ্বে বিভিন্ন গবেষণা জার্নালে তার ৪১৭টি প্রকাশনা রয়েছে এবং তার গবেষণা থেকে ১২ হাজারেরও বেশি উদ্ধৃত করা হয়েছে।
তার গবেষণার বিষয়ের মধ্যে রয়েছে প্লাজমা ফিজিক্স, কোয়ান্টাম ফিজিক্স ও মেডিক্যাল ফিজিক্স।
পদার্থবিজ্ঞানে অবদানের জন্য ড. মামুন ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমির ফেলো হিসেবে নির্বাচিত হন।
তিনি ২০০৯ সালে পদার্থবিদ্যায় অসামান্য অবদানের জন্য জার্মানির আলেকজান্ডার ভন হোমবোল্ট ফাউন্ডেশন থেকে ফ্রেড্রিক উইলিয়াম ‘ব্যাসেল রিসার্চ অ্যাওয়ার্ড’ অর্জন করেন।
ড. মামুন যুক্তরাজ্যের সেন্ট অ্যান্ড্রুস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কমনওয়েলথ বৃত্তি নিয়ে পিএইচডি অর্জন করেছেন এবং জার্মানির হোমবোল্ট পোস্টডক ফেলো।
জাবি উপাচার্য ড. ফারজানা ইসলাম এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ড. মামুনের অসাধারণ কৃতিত্বের জন্য তাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার (১০ নভেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ থেকে পাঠানো এক অভিনন্দন বার্তায় উপাচার্য বলেন, অধ্যাপক ড. এ এ মামুনের এ সম্মান বিশ্ববিদ্যালয়ের খ্যাতি ও সুনাম আরও বৃদ্ধি করেছে।
তার এ গৌরবে বিশ্ববিদ্যালয় ঋদ্ধ হয়েছে। উপাচার্য খ্যাতিমান বিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. এ এ মামুন-এর উত্তরোত্তর সাফল্য ও দীর্ঘ কর্মময় জীবন কামনা করেন।
এর আগে বাংলাদেশে কর্মরত বিজ্ঞানীদের মধ্যে গুগল স্কলারসে ১২ হাজার ‘স্কলারস সাইটেশন’র মাইলফলক অতিক্রম করে দেশ সেরা গবেষক হওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন অধ্যাপক ড. এ এ মামুন।
তার হাত ধরে বাংলাদেশের মাটিতে ডাস্টি ফিজিক্সের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এ বিষয়ে তার পিএইচডির থিসিস নিয়ে প্রায় ৫০০টির বেশি প্রবন্ধ লেখা হয়েছে। নিজে লিখেছেন প্রায় ৪১৪টি প্রবন্ধ।
গুগল স্কলারসের সাম্প্রতিক তথ্যমতে, ড. মামুনের সাইটেশন সংখ্যা ১৫ হাজারের কাছাকাছি। যা অন্যান্য গবেষকদের থেকে অনেক উপরে অবস্থান করছে। তার গবেষণাকর্মকে অন্যান্য গবেষকরা তাদের গবেষণায় তথ্য সূত্র হিসেবে ব্যবহার করেছেন। দেশে এর আগে কখনও একজন গবেষকের গবেষণাপত্র থেকে এত বেশি তথ্য সূত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়নি। সেই দিক দিয়ে ড. মামুনের গবেষণাপত্র তথ্য সূত্রের ব্যবহারে শীর্ষে রয়েছে।
এরআগে বাংলাদেশের কোনো বিজ্ঞানীর গবেষণার সূত্র হিসেবে এত গুগল সাইটেশন হয়নি। বাংলাদেশে কর্মরত বিজ্ঞানীদের মধ্যে এখন পর্যন্ত কেউ ১২ হাজার সাইটেশন লাভ করেনি।
যা এক অনন্য রেকর্ড। বর্তমানে তিনি পদার্থের চতুর্থ অবস্থা প্লাজমা ফিজিক্স নিয়ে কাজ করছেন।
ড. মামুন প্লাজমা ফিজিক্সে অবদানের জন্য জার্মান চ্যান্সেলর পুরস্কার, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত থেকে একাধিকবার ‘বাংলাদেশ একাডেমি অব সায়েন্স’ গোল্ড মেডেলসহ দেশ-বিদেশে নানা পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।
এছাড়া লন্ডনের ইনস্টিটিউট অব ফিজিক্স থেকে ডাস্টি প্লাজমা ফিজিক্সের ওপর যৌথভাবে প্রকাশিত হয়েছে ‘ইনট্রোডাকশন টু ডাস্টি প্লাজমা’।
আন্তর্জাতিক এই খ্যাতনামা গবেষক জাবির পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে বিএসসি-এমএসসিতে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হন। এমএসসিতে সব বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি নম্বর পেয়েছিলেন তিনি। তার এমএসসির থিসিসের বিষয় ছিল ‘প্লাজমা ফিজিক্স’।
১৯৯৩ সালে জাবির পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে প্রভাষক পদে যোগ দেন তিনি। সে বছর কমনওয়েলথ স্কলারশিপ নিয়ে ব্রিটেনের সেন্ট অ্যান্ডুজ ইউনিভার্সিটিতে পিএইচডি করতে যান।
ফিজিক্যাল রিভিউ লেটারস, ফিজিক্যাল রিভিউ ই. ইউরোপিয়ান ফিজিকস লেটারের মতো নামকরা জার্নালে তার গবেষণাকর্ম প্রকাশিত হয় এবং এ গবেষণাকর্মের ভিত্তিতে প্লাজমা বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন জার্নালে ৫০০টিরও বেশি প্রবন্ধ লিখেছেন।
দেশের সবচেয়ে বেশি গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশের স্বীকৃতি হিসেবে ২০১৩, ২০১৪ এবং ২০১৫ সালে পরপর তিনবার দেশসেরা ও বর্ষসেরা গবেষক নির্বাচিত হন।
বর্তমানে ড. মামুন জাবির সিনেট সদস্য ও ওয়াজেদ মিয়া বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতিসহ গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন।
সেরা বিজ্ঞানীদের তালিকায় স্থান লাভ করাসহ নানাবিধ অর্জনের ব্যাপারে অধ্যাপক ড. এ এ মামুন বলেন, তরুণ প্রজন্মের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের গবেষণায় এগিয়ে আসতে হবে এবং বিশ্বমানের গবেষণা প্রতিযোগিতায় নামতে হবে।
শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা যদি গবেষণা না করে, তাহলে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার সামগ্রিক মানোন্নয়ন কোনো দিন ঘটবে না।
গবেষণা নিয়ে নিজের স্বপ্ন ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে তিনি বলেন, আমি বিজ্ঞান গবেষণায় তরুণ প্রজন্মের গবেষকদের উদ্বুদ্ধ করতে এবং বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে বিশ্বমানের গবেষণার পরিবেশ গড়ে তুলতে প্রতি বছর স্বর্ণপদক পুরস্কারের কথা চিন্তা করছি।
যুক্তরাজ্যের চ্যান্সেলর কর্তৃক যে পদক পেয়েছি সেই পদকের অর্থ দিয়ে ‘এএ মামুন গোল্ড মেডেল’ দিতে চাই এবং মারা যাওয়ার আগেই এটা করে যেতে চাই।