কামরুল হাসান মামুনঃ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তথা বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার বারোটা বাজিয়েছে “গণতন্ত্র”। বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত হবে মেরিটোক্রেসি চর্চার মাধ্যমে গণতন্ত্র চর্চার মাধ্যমে নয়।

বিশ্ববিদ্যালয় এমন একটি জায়গা যেখানে অনবরত এবং নিরবিচ্ছিন্নভাবে মেরিটকে বা মেধাকে সম্মান দিয়ে তাদেরকে নানাভাবে সামনে নিয়ে আসবে। আর ব্যবস্থাটি এমন হবে যেখানে যারা মেরিটের দৌড়ে পিছিয়ে পড়বে তাদেরকে সামনে আগাতে ক্রমাগতভাবে উৎসাহ জুগিয়ে যাবে।

আমাদের এখানে কি হচ্ছে? ফ্যাকাল্টির সর্বোচ্চ নেতা ডিন নিযুক্ত হবেন নির্বাচনের মাধ্যমে। বুলশিট। একটি সমাজে, সেটি যেই সমাজই হউক না কেন, অধিকাংশ মানুষ গড় মানের, অনেক মানুষ গড় মানের নিচে। খুব সামান্য সংখ্যক মানুষ থাকে অত্যন্ত উঁচু মানের।

এই উঁচু মানের মানের মানুষদের প্রতি স্বাভাবিকভাবেই এক ধরণের ঈর্ষা থাকবে। এই উচ্চ মানের মেধাবীরা আবার একটু অহমবোধ সম্পন্ন হয়।

তাই তারা একে ওপরের পিঠ চুলকাতে পারে না। আর নিম্ন ও মাঝারি মানের মেধাবীরা তাদের স্বল্প মেধাকে কম্পেন্সেট করার জন্য একে অপরের পিঠ চুলকিয়ে দলবদ্ধ হয়।

তাই ভোট হলে নিম্ন ও মাঝারি মানের মেধাবীরাই জিতবে। এটাই স্বাভাবিক। এবং এইজন্যই একটু পরিসংখ্যানের দিকে নজর দিলে এইটা একদম স্পষ্ট প্রমাণিতও হবে।

আমাদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নেতৃত্বে এক ঝাঁক অমেধাবী।

এইজন্যই আমি ৭৩-এর অধ্যাদেশের পক্ষে আমি নই।

বঙ্গবন্ধু আমাদের শিক্ষক ও শিক্ষার মঙ্গলের কথা বিবেচনায় নিয়েই এই অধ্যাদেশ দিয়েছিলেন। আর আমরা শিক্ষকরাও এই অধ্যাদেশের অপব্যবহার করে তার বিশ্বাস ও আস্থার অবমাননা করেছি এবং করে যাচ্ছি।

স্বাধীনতার পর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মানে কেবল ধসই নেমেছে। এই সময়ে যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতৃত্বে ছিলেন তাদের মেধার মানও ক্রমান্বয়ে কমেছে।

কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়কে বড় পর্দায় রেখে একে বিচার বিশ্লেষণ করলে এইসব স্পষ্ট হতো। কিন্তু কে করবে এই বিচার বিশ্লেষণ?

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর চ্যান্সেলর করতে পারতেন। কিন্তু তিনিও এই অমেধাবীদের নেতৃত্বে আনার একটি পার্ট।

ভাবুনতো কোন একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ভিসি পদ খালি হয়েছে। সরকার কেমন শিক্ষককে খুঁজে বের করে নিয়োগ দিবে?

সে কি সবচেয়ে মেধাবী একজনকে খুঁজবে যেন তার নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয় মেধা বিকাশে এগিয়ে যায়? পাগল হয়েছেন। খোজ হবে একজন জি হুজুর যাচ্ছি হুজুর টাইপের একজন শিক্ষককে।

তাহলে কিভাবে বলব আমাদের সরকার দেশের আগত প্রজন্মের, অর্থাৎ আপনার আমার সন্তানদের মঙ্গল চান। বরং উল্টোটা বলুন।

এতকিছু দেখেও আমরা কিন্তু ওই নিয়োগকর্তাদের প্রশংসায় গা ভাসিয়ে দেই। বলি শিক্ষা বান্ধব সরকার। সত্যিই কি সেলুকাস!

 

লেখক: কামরুল হাসান মামুন

অধ্যাপক

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়