অনেকের মনের ভেতরই কিছু প্রশ্ন উঁকি দিতে শুরু করেছে। পাই কী জিনিস, আর সেটা নিয়ে কেন মাতামাতি। এমন অযথা মুখস্থ করার কোনো মানে আছে?

পাইয়ের পরিচয়টাই আগে দিই। পাই একটা গাণিতিক ধ্রুবক। আমরা তো সবাই বৃত্ত চিনি। একটা বৃত্তের কোনো একটা বিন্দু থেকে হাঁটা শুরু করে পুরো বৃত্তটা ঘুরে যদি আবার আগের বিন্দুতে পৌঁছানো যায়, তাহলে যতটুকু পথ হাঁটা হবে, সেই দূরত্বকে বলে বৃত্তের পরিধি।

আর আমরা যদি বৃত্তের ওপরের একটা বিন্দু থেকে শুরু করে কেন্দ্র বরাবর সোজাসুজি হাঁটতে শুরু করি, আর তারপর কেন্দ্র পার হয়ে উল্টো পাশের বিন্দুটা পর্যন্ত হাঁটি, যত দূর হাঁটা হবে, সেই দূরত্বকে বলে বৃত্তের ব্যাস।

এবার একটা ব্যাপার ভাবা যাক। আমরা যদি একটা বৃত্তকে চারপাশ থেকে টেনে বড় করে আগের দুই গুণ বানিয়ে ফেলি, তাহলে এর পরিধি যেমন দুই গুণ হয়ে যাবে, ব্যাসও দুই গুণ হয়ে যাবে। আবার চেপেচুপে অর্ধেক বানালে, পরিধি আর ব্যাস দুটোই অর্ধেক হয়ে যাবে। এদের ভাগফল কিন্তু একই থাকবে। একটা বৃত্ত যত বড় বা যত ছোটই হোক না কেন, এর পরিধিকে ব্যাস দিয়ে ভাগ করলে সব সময় একই সংখ্যা পাওয়া যায়। সেই সংখ্যাটাকেই বলা হয় পাই।

কিন্তু পাইয়ের মান আসলে কত?

এখন আমরা জানি যে পাইয়ের মান ৩.১৪১৫৯২৬৫৩৫৮৯৭৯৩২…এভাবে অনন্তকাল চলতে থাকবে, কখনো শেষ হবে না। আধুনিক কম্পিউটার দিয়ে কয়েক লাখ কোটি ঘর পর্যন্ত মান বের করা হয়েছে, আরও হচ্ছে। কিন্তু এ যাত্রার শুরুটা কয়েক হাজার বছর আগে।

প্রাচীন মিসর আর ব্যাবিলনের মানুষদের পাই নিয়ে সামান্য ধারণা ছিল। তারা মেপে বের করেছিল এটার মান ৩-এর কাছাকাছি। কিন্তু গাণিতিকভাবে বের করার কোনো চেষ্টা জানা যায় না।

খেল। এরপর ধীরে ধীরে সারা পৃথিবীর গণিতপ্রেমী মানুষদের ভেতরে একটি জনপ্রিয় দিবস হয়ে উঠল এই পাই দিবস। অঙ্কের কোনো একটা ব্যাপার নিয়েও যে একটা দিবস হতে পারে, উৎসব হতে পারে, এটাই তো দারুণ। গণিত তখন বইয়ের পাতা থেকে এসে আমাদের আনন্দময় সংস্কৃতির অংশ হয়ে যায়।

এই দিনে কেউ পাই মিছিল বের করে, কেউ ‘পাই’ খায়, কেউ গণিত নিয়ে গান বাঁধে, স্কুলে শিক্ষকেরা বাচ্চাদের সঙ্গে অঙ্ক আর সংখ্যা নিয়ে খেলেন, পাইয়ের গল্প শোনান, পোশাকের দোকানে অঙ্কের নকশাওয়ালা জামা বিক্রি হয়, পাইয়ের মান মুখস্থ বলার প্রতিযোগিতাও হয় কোথাও।

অঙ্ক নিয়ে মাতামাতি, সংখ্যার প্রতি মোহ—এসব আপাতদৃষ্টে অর্থহীন মনে হতে পারে। কিন্তু এ থেকে যে ভালোবাসা আর একাগ্রতার জন্ম হয়, সেটার ফল সুদূরপ্রসারী।

পাই দিবস সংখ্যার প্রতি ভালোবাসা উদ্‌যাপনের দিন, আর তাই সংখ্যাপ্রেমী মানুষের কাছে বিশেষ আনন্দের দিন! আর এ দিনটিতেই আমাদের প্রিয় বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইনের জন্মদিন, তাই আনন্দের মাত্রাটাও দ্বিগুণ।

লেখাঃ চমক হাসান

বোস্টন সায়েন্টিফিকের প্রকৌশলী

আরো পড়ুন