ইসরায়েলের সঙ্গে বাংলাদেশের কুটনৈতিক সম্পর্ক থাকুক বা না থাকুক গ্লোবাল দুনিয়ায় এটা কোনো বিষয়ই না। কারণ, আজকাল কোনো যন্ত্রাংশই এককভাবে তৈরি হয় না। একটি সম্পূর্ণ যন্ত্রাংশ তৈরি করার ক্ষেত্রে একাধিক সোর্স বা দেশের ওপর নির্ভরশীল হতে হয়। যেমন একটি যন্ত্রাংশের সার্কিট এক জায়গায় তৈরি হয়, কেবিনেট তৈরি হয় অন্য জায়গায় এবং এসেম্বলী হয় আরেক জায়গায়। বড় বড় যন্ত্রাংশগুলোর কর্পোরেট অফিস, ডিস্ট্রিবিউটর থাকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে।
একটা কথা না বললেই নয়, ইসরায়েলের যন্ত্রাংশ ছাড়া শুধু বাংলাদেশ নয়, সারাবিশ্বই বলা যায় অচল। সামরিক বাহিনী ছাড়াও গত কয়েক দশক ধরেই বাংলাদেশে ইসরায়েলের যন্ত্রাংশ ব্যবহৃত হয়ে আসছে। বাংলাদেশে টেলিকমিউনিকেশন ডিভাইস, নেটওয়ার্কিং ডিভাইস, ট্রান্সমিটার কিংবা রেডিও ফ্রিকুয়েন্সি সংক্রান্ত যন্ত্রাংশ, ডিফেন্সের সিকিউরিটি ডিভাইস, রাডার ডিভাইসের সিংহভাগই তৈরি হয় ইসরায়েলে।
জনপ্রিয় নেটওয়ার্কিং ইকুইপমেন্ট Cisco এবং Junipar এর নির্মাতা ইসরায়েল। বাংলাদেশে ব্যাংকিং সেক্টর থেকে শুরু করে যত ধরনের ডেটা সেন্টার, মোবাইল অপারেটর, ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার, টেলিভিশন স্টেশন, রেডিও স্টেশন, বিভিন্ন ইনটেলিজেন্স ডিপার্টমেন্ট, বিভিন্ন কর্পোরেট অফিস সব জায়গাতে ব্যবহৃত হয় এই Cisco এবং Junipar এর নেটওয়ার্কিং ডিভাইস।
স্যাটেলাইট কমিউনিকেশনে ব্যবহৃত আর.এফ. ট্রান্সমিটারসহ এ সংক্রান্ত বিশ্বের বেশিরভাগ যন্ত্রাংশই ইসরায়েলে তৈরি হয়। বাংলাদেশের বিভিন্ন টেলিভিশন স্টেশন, মিলিটারি ইকুইপমেন্ট, দুতাবাস, ডেটা কমিউনিকেশন প্রোভাইডার, ইত্যাদি জায়গাগুলোতে এই যন্ত্রাংশ ছাড়া প্রায় অচল।
জনপ্রিয় মোবাইল ফোন নির্মাতা Motorola ইসরায়েলের একটি প্রোডাক্ট। Motorola শুধু মোবাইল ফোনই তৈরি করে না- মোবাইল ফোন অপারেটরদের স্টেশনগুলোতে যে রেডিও ইকুইপমেন্টগুলো ব্যবহৃত হয় তার বেশিরভাগ যন্ত্রাংশই Motorola নির্মিত। বাংলাদেশে ওয়্যারলেস ওয়াকিটকি ও বিভিন্ন বেতার যোগাযোগের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত যন্ত্রাংশই হলো এই Motorola ব্যান্ডের, যা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, নৌবাহিনী, নদীবন্দর ইত্যাদি জায়গায় ব্যবহৃত হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে।
শুধু কমিউনিকেশন ইকুইপমেন্টই নয়, বাংলাদেশে মেডিকেল সেক্টরে ব্যবহৃত ইমেজিং স্ক্যানিং সংক্রান্ত বেশিরভাগ যন্ত্রাংশই আসে ইসরায়েল থেকে।
বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী ডেটাবেস সফওয়্যার প্রোগ্রাম ওরাকল ইসরায়েলে তৈরি। বাংলাদেশে ব্যাংকিং সফটওয়্যার থেকে শুরু করে বিভিন্ন বড় বড় সফটওয়্যারগুলো এই ওরাকলের মাধ্যমে তৈরি হয়।
জনপ্রিয় ‘HP প্রিন্টার’ সম্পর্কে আমরা সবাই জানি। এটিও কিন্তু ইসরায়েলে প্রতিষ্ঠিত । প্রথমে এই প্রতিষ্ঠানটির নাম ছিল- indigo এবং ২০০১ সালে Hewlett-Packard (HP) এই indigoকে কিনে নেয়। বর্তমানে ব্যবহারকারীদের সংখ্যায় HP এর প্রিন্টার বাংলাদেশে ১ নম্বর অবস্থানে।
মাইক্রোসফটের জনপ্রিয় অপারেটিং সিস্টেম Windows NT এবং XP Operating Systems এর মূল ডেভেলপমেন্টের কাজটি হয়েছিল ইসরায়েলেই।
যে মাইক্রোপ্রসেসরের আবিষ্কার সারাবিশ্বকে বদলে দিয়েছে সেই মাইক্রোপ্রসেসরও মূল কাজগুলো হয় ইসরায়েলেই। বর্তমানে ইন্টেলের মাইক্রোপ্রসেসর শিল্পে প্রায় ৭৮০০ জন ইসরায়েলি প্রকৌশলী কাজ করে। অর্থাৎ বলা যায়, বাংলাদেশে যত কম্পিউটার ও কৃত্রিমবুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন ডিভাইস ব্যবহৃত হয় তার মূল যন্ত্রাংশ এই মাইক্রোপ্রসেসরটির মূল কাগিরগররাও কিন্তু ইসরায়েলের।
বাংলাদেশের সাথে ইসরায়েলের সরাসরি কুটনৈতিক যোগাযোগ না থাকলেও এসব যন্ত্রাংশ বিভিন্ন ভায়া মাধ্যম হয়ে বাংলাদেশে আসে। বিশেষ করে ইসরায়েলের এই যন্ত্রাংশগুলোর কর্পোরেট অফিস ও ডিস্ট্রিবিউটর রয়েছে- আমেরিকা, কানাডা, যুক্তরাজ্য, হংকং, হাঙ্গেরী, সিংগাপুর সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। তাই অতি প্রয়োজনীয় এই যন্ত্রাংশগুলো কেনা হয় কর্পোরেট অফিস ও ডিস্ট্রিবিউটরদের মাধ্যমে।