বেশকিছুদিন আগে হালিমা মোবাইল বাজারে আসে। কিন্তু ব্রান্ড নাম “হালিমা” নিয়ে কিছুটা বিতর্ক তৈরি হয়।
অনেকেই পজিটিভ আবার কেউ কেউ হালকা নেগেটিভ কমেন্ট করে তাদের নিজস্ব মতামত শেয়ার করেছেন দেখলাম। আজকে আমার ব্যক্তিগত কিছু কথা শেয়ার করব হালিমা টেলিকম এন্ড ইলেক্ট্রনিক্স সম্পর্কে। যেহেতু আমি হালিমা টেলিকমকে কিছুটা ভিতর থেকে জানি। কিভাবে জানি তা না হয় আর একদিন বলব।🙂
কোম্পানির নাম বা ব্রান্ডিং
হালিমা টেলিকম নাম নিয়ে প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই অনেকে নেগেটিভ একটা ধারণা পোষণ করত। কারণ নামটা কিছুটা সেকেলে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান এই ব্যাপারে বিন্দুমাত্র কোন ভ্রুক্ষেপ না করে সাধারণ মানুষ হতে শুরু করে বড় বড় অভিজ্ঞ কর্পোরেট বুদ্ধাদের ভুল প্রমাণ করে পরিশ্রম ও সম্পূর্ণ একক চিন্তা শক্তির মাধ্যমে সারা বাংলাদেশে হালিমা টেলিকমের ব্যবসা ও নাম প্রতিষ্ঠা করেন। যাকে আমরা বলি ব্রান্ডিং।
কোটি কোটি টাকা খরচ করেও অনেক সময় ভাল ব্রান্ডিং করতে পারা যায় না। সেখানে হালিমা টেলিকমের চেয়ারম্যান সেকেলে একটা নামকে যা কিনা অনেকেই বলত টেলিকম কোম্পানির জন্য উপযুক্ত নাম না, আশে পাশে অনভিজ্ঞ মানুষ নিয়ে সম্পূর্ণ নিজ মেধায় নিজের মায়ের নামে আজকের এই হালিমা টেলিকমকে প্রতিষ্ঠা করেন এবং বিজনেস টাইকুন হয়ে যান।
আজকের এই হালিমা টেলিকমের মাসিক বিক্রি সারা বাংলাদেশের সকল টেলিকম কোম্পানির মোট বিক্রির ডাবল। যা কিনা আশ্চর্যকর একটি ঘটনা।
কোম্পানির হেড অফিস ঢাকাতেই হওয়া চাই কিনা ???
অনেকে বলেছিল ঢাকাতে হেড অফিস না করলে কোম্পানি চলবে না। ঢাকার বড় বড় পোস্টের কর্মকর্তারা কুমিল্লাতে নিয়োগ হলে হালিমা টেলিকমে চাকরি করতে আসতে চাইত না। তারা বলত কুমিল্লাতে ভবিষ্যত নাই হালিমা টেলিকমের, ঢাকা আসলে তবেই কোম্পানি চলবে।
কিন্তু চেয়ারম্যানের ছিল অন্য পরিকল্পনা। মফস্বলের গরীব মানুষজনদের স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে এবং মহিলা জনগোষ্ঠীকে শক্তিশালী করতে তিনি কুমিল্লাতেই রয়ে গেলেন। সকল প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে যেয়ে সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত ও ঝুঁকি নিয়ে একগুয়ে মানসিকতা পোষণ করে কুমিল্লাতেই প্রতিষ্ঠা করলেন হালিমা টেলিকমের হেডঅফিস।
শুধুমাত্র ঢাকা কেন্দ্রিক ও উচ্চবিত্ত এক শ্রেণীর কথা না চিন্তা করে সারা বাংলাদেশ ও সাধারণ মানুষের উদ্দেশ্যে কুমিল্লাতে হেড অফিস স্থাপন করে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌছে দেন হালিমা টেলিকমের প্রোডাক্ট।
হালিমা ইলেক্ট্রনক্সি নিয়ে নতুন ভাবে যাত্রা
হালিমা ইলেক্ট্রনিক্স হালিমা টেলিকমের একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। হালিমা টেলিকমের সফলতার পরে হালিমা ইলেক্ট্রনিক্স এর দিকে মনোযোগ দেন ওয়ান ম্যান আর্মি হালিমা টেলিকমের চেয়ারম্যান।
সম্পূর্ণ নতুন একটা প্রতিষ্ঠানকে মাত্র দুই বছরের মধ্যে ইলেক্ট্রনিক্স জগতে একটি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলেন এবং পাঁচ কোটি টাকার মার্কেট তৈরি করেন।
শুরুতে তিনি চেয়েছিলেন ঢাকার বড় বড় কোম্পানী থেকে জি.এম., এ.জি.এম পোস্টের সিনিয়র অভিজ্ঞ লোক নিয়োগ করে হালিমা ইলেক্ট্রনিক্স পরিচালনা করতে। কিন্তু কুমিল্লাতে আসতে না চাওয়ার কারণে তিনি একাই ইলেক্ট্রনিক্স এর হাল ধরেন।
হালিমা টেলিকম থেকে দুই জনকে নিয়ে এসে দায়িত্ব দেন যাদের ইলেক্ট্রনিক্স নিয়ে তেমন কোন ধারণা ছিল না। কিন্তু পরিশ্রম, সৃষ্টিশীল চিন্তা ও অসাধারণ লিডারশীপের কারণে মাত্র ৪৯ জন বিক্রয়কর্মী নিয়ে কাজ শুরু করে আজকে হালিমা ইলেক্ট্রনিক্স বাংলাদেশে একটি সফল প্রতিষ্ঠান।
আমি বাংলা বা হিন্দী ছবিতে জিরো থেকে বিজনেস টাইকুন বা সফল ব্যবসায়ী হতে দেখেছি। বাস্তবে শুরু থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে হালিমা টেলিকমের প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। চোখের সামনে বছরের পর বছর হালিমা টেলিকমের সফলতা দেখে এসেছি।
হালিমা টেলিকমের প্রতিষ্ঠা, চেয়ারম্যানের বিভিন্ন উদ্যোগ, বিভিন্ন সময়ে চড়াই উৎড়াই এর মাধ্যমে আজকের হালিমা টেলিকম যার কাহিনী আসলে কোন বাংলা বা হিন্দী ছবির কাহিনী থেকে কোন অংশে কম নয়।
লেখাঃ তারিক শ্যামল