৩১ আগষ্ট, ১৯৯১ ক্লাস শুরুর পর আমরা প্রথম ব্যাচের ছাত্ররা সবচেয়ে বেশি ঝামেলায় পড়তাম যখন ক্লাসের ফাঁকে গোলপাতার ছাউনি বিশিষ্ট ক্যান্টিনে যেতাম। কিংবা ক্লাসের ফাঁকে বারান্দায়/নিচে দাঁড়িয়ে নতুন বন্ধুরা আড্ডায় মেতে উঠতাম। ঝাঁকে ঝাঁকে অন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীরা ছুটে আসত আমাদের আড্ডার মাঝে।
রাজনৈতিক পরিচয় দিয়ে আমাদের ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করত। আমাদেরকে তাদের দলে টানার চেষ্টায় সবরকম কৌশল অবলম্বন করত। আমরা মনখুলে বন্ধুদের সাথে কথা বলারই সুযোগ পেতাম না।
তখন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটায় মাত্র ভবন ছিল। দোতলায় ক্লাস রুমের পাশে সিনেট রুম ও ভিসি স্যারের রুম ছিল। আমরা প্রায় ৪০জন ছাত্র ঐ সিনেট রুমেই থাকতাম।একরুমে এতজন তবু কোন কষ্টই মনে হয়নি আমাদের।
খুব আনন্দ ফুর্তির মধ্যেই কেটে যেত আমাদের সময়। বহিরাগতদের অযাচিত মেলামেশা ও রাজনৈতিক দলে টানার চেষ্টায় সবাই বিব্রত হতাম। এ অবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য সিনেট রুমবাসী ২৫/৩০ জন ছাত্র একদিন বিকালে বসে গেলাম আলোচনায়। একপর্যায়ে সিদ্ধান্ত হল আমরা যে মতেরই হই না কেন ক্যাম্পাসে কোন রাজনীতি করব না। সবাই একমত হয়ে হাততালি দিয়ে উল্লাস করতে লাগলাম।
আমাদের হাততালির শব্দ শুনে পাশের রুমে বসে থাকা ভিসি স্যার (প্রফেসর ড. গোলাম রহমান) ক্ষিপ্ত হয়ে ছুটে এলেন এবং আমাদের বকতে শুরু করলেন। আমাদের একবন্ধু স্যারকে বুঝিয়ে বলতেই উনি খুব খুশি হলেন এবং ছাত্রদের সাথে ঐক্যমত পোষন করে বক্তব্য দিলেন। পরদিন এই খবরটি চারদিকে ছড়িয়ে পড়ল।
খুলনার বহুলপ্রচলিত দৈনিক পুর্বাঞ্চলসহ কয়েকটি জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত হল। এরপর থেকে আর কোন বহিরাগত আমাদের ক্যম্পাসে আসত না। প্রথম ব্যাচের ৮০ জন ছাত্রছাত্রীরা সবাই এই সিদ্ধান্তের সাথে একমত ছিল।
শুরু হল রাজনীতিমুক্ত অবস্থায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পথচলা।
এ,জেড,এম আনোয়ারুজ্জামান
প্রথম ব্যাচ
কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ডিসিপ্লিন,
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়