বুয়েট-আইইউটি-ঢাবিতে প্রথম হওয়া ছাড়াও এবছর বেশকিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় শীর্ষস্থান অধিকার করে সবার নজর কেড়েছেন মেফতাউল আলম সিয়াম।

মেডিকেলের ভর্তি পরীক্ষায় ৫৯তম হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৯৪ হাজার ৫০৯ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ১১৭ দশমিক ৭৫ নম্বর (মোট নম্বর ১২০) পেয়ে প্রথম হয়েছেন তিনি।

এছাড়া গুচ্ছ ইঞ্জিনিয়ারিং ভর্তি পরীক্ষায় হয়েছেন ৩য়।

বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার ময়দানহাটা ইউনিয়নের দাড়িদহ গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত এনজিও কর্মকর্তা খোরশেদ আলম এবং গৃহিণী মুনজিলা আলমের বড় ছেলে মেফতাউল আলম। মা-বাবার সঙ্গে বসবাস করেন বগুড়া শহরের রহমাননগর এলাকায় ভাড়া বাসায়। সেখান থেকেই এ বছর বগুড়ার সরকারি আজিজুল হক কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন তিনি।

বাবার চাকরির সুবাদে প্রাথমিকের গণ্ডি পর্যন্ত কেটেছে দেশের বিভিন্ন শহরে। শৈশব থেকেই স্বপ্ন ছিল চিকিৎসক হওয়ার। সেই স্বপ্ন নিয়ে মাধ্যমিকে ভর্তি হন বগুড়ার বিয়াম মডেল স্কুল ও কলেজে। ষষ্ঠ শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষায় ২৫২ থেকে রোল হয় ২০। সপ্তম শ্রেণিতে ক্লাসের সেকেন্ড বয় হন। অষ্টম শ্রেণিতে ক্লাসের সেরা হন।

এসএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়ে ভর্তি হন সরকারি আজিজুল হক কলেজে। এইচএসসি পরীক্ষাতেও গোল্ডেন জিপিএ-৫ পান।

ভর্তি পরীক্ষায় সফলতা নিয়ে নিজের ফেসবুক আইডিতে স্ট্যাটাসের মাধ্যমে নিজের কথা তুলে ধরেন তিনি।

“আমি কখনো নিজের ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে কথা বলি না। কিন্তু একটা বিষয় গত কয়েক মাস যাবত খুব নজরে এসেছে। আমি ঢাবি ক ইউনিট এ প্রথম হয়েছি, IUT তে প্রথম হয়েছি এবং সবশেষে বুয়েট ভর্তি পরীক্ষায়ও প্রথম হয়েছি। কেউ না কেউ প্রথম হতোই, সেখানে হয়ত এবার আমি প্রথম হয়েছি। তো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বেশ কিছু বিষয় আজকে আমি তুলে ধরবো।

প্রথমত কিছু মানুষের মন্তব্য এইধরনের, ‘যারা অনেক বেশি মেধাবী তাদের একটার বেশি পরীক্ষা দেওয়া উচিত নয়। অনেক শিক্ষার্থী waiting list এ depressed থাকে। অনেকে কোথায়ও chance পায় নি এখনও।’ তো আমি আশা করি এখনও যারা কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারে নি তারা যেন তাদের যোগ্যতা বলে সফল হয়।

আমিও একজন ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী। আমারও ভর্তি হওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকে। একটা জায়গায় পরীক্ষা দিয়ে আমি যে chance পাবই এমন confidence আশা করি পুরো বাংলাদেশে কারোই থাকে না।এখন আসি আমি তো IUT, DMC তে chance পেয়েছি তারপরও কেন xm দিলাম।আমার লক্ষ্য ছিল বুয়েটে ভালো ফলাফল করা।

DMC তে আমি ভর্তি হইনি। IUT তে আমি CSE তে admit ছিলাম। পরবর্তীতে আমি বুঝতে পারি CSE থেকে আমার research এর সুবিধা কম। আমি বুয়েটের জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকি IUT class off রেখে। DU তেও ভালো ফলাফল পেয়ে যাই।

একটা নিশ্চয়তা আসে কারণ IUT DMC দুটোই হাতের বাইরে। বুয়েটের ফলাফল দেরিতে হওয়ায় Eng গুচ্ছ তেও অংশগ্রহণ করি। ওখানেও ভালো ফলাফল আসে।

বুয়েটের ফলাফলে প্রথম হওয়ার পর গত তিন বছরের পরিশ্রম সামনে ভেসে ওঠে, চোখ ঝাপসা হয়ে যায়। যখন Intermediate এ আপনি selfie তুলে FB তে post দিয়ে shine করছিলেন তখন আমার মত আরো দশ জন চুপ করে নিজের কাজে মন দিয়েছিল।

আজ আমার মত আরো দশ জন ভর্তি পরীক্ষায় shine করেছে। এখন আপনার একজন শিক্ষার্থী কয় জায়গায় xm দিয়েছে সেটা নিয়ে মতামত করার অধিকার নেই।যদিও এসব মতামত ভিত্তিহীন কারণ seat ultimately খালি হবেই। জাতি হিসেবে আমরা কখনো logical না emotional.

দ্বিতীয়ত,আমি Eng গুচ্ছ তে আশানুরূপ ফলাফল করতে পারি নি, এমন কিছু news খুব viral হতে দেখেছি। হ্যাঁ ব্যক্তিগতভাবে হয়ত আরো ভালো আসা করতেই পারি, কিন্তু position যে আরো পিছায় নি সে শুকরিয়া করতে আমি ভুলিনি। আর ফলাফলে সন্তুষ্ট হই নি এই ধরনের কোনো তথ্য আমি কাউকে সরবরাহ করিও নি।

তৃতীয়ত, আমি কোথায় coaching করেছি। DU result এর পর প্রায় সব coaching আমাকে অভিনন্দন জানিয়েছে। অনেকেই বলেছেন টাকার কাছে বিক্রি,ব্যবসায়িক মানসিকতা, ব্যক্তিত্বহীন ইত্যাদি। So here’s the truth.

আমি Eng এর জন্য Udvash, Omeca তে admit ছিলাম।মেডিকেলের জন্য Unmesh, Medico, Retina তে xm দিয়েছি। Inter থেকেই অনেক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতাম যার কারণে UCC, EPP এসব coaching এর সাথেও সবসময় যোগাযোগ ছিল। যেকোনো সমস্যায় তারা পাশে ছিল।

ভর্তি পরীক্ষার বিভিন্ন stage এ বিভিন্ন xm দিয়েছি।যদিও এক্ষেত্রে college জীবনের অনেক শিক্ষকের ভূমিকাই প্রধান। এখন ফলাফল শেষে তারা সৌজন্যের খাতিরে অভিনন্দন জানাতে পারেই। মনে করতে পারেন, ভালই business এর কারবারি আছে এখানে।

উত্তরে বলতে পারি আপনার মত সস্তা মানসিকতার মানুষ আর দশজন নয়।

আরো কিছু point..

” আচ্ছা BUET কবে scientist or researcher বানানো শুরু করলো, এটা তো engineering university”

এটার উত্তর আমি বলতে চাচ্ছি না। আপনি বুয়েটের subject গুলো থেকে কি কি possibility আছে সেটা একবার net এ ঘেটে দেখবেন, দেখে জানাবেন আদৌ কেউ BUET থেকে research এ গিয়েছে কি না।

আর একটা বিষয় উল্লেখ করবো আমি। হ্যাঁ আমি IUT, DU, BUET এ first হয়েছি কিন্তু আমিও মানুষ। আর দশজনের মতোই রক্তে মাংসে গড়া আবেগ অনুভূতি সম্পন্ন মানুষ।

একজন মানুষের 2 min এর সাক্ষাৎকার বা একটা news article দেখে কখনো একজনের personality judge করবেন না। আপনি কখনো আমাকে সামনাসামনি দেখেন নি,কথা বলেন নি বা পরিচিত কারো থেকে আমার সম্বন্ধে তথ্যও নেন নি।

হ্যাঁ আমিও অবসরে আর দশজনের মত বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেই, রেস্তোরাঁয় বসি,ছুটিতে বেড়াতে যাই,আমিও উপন্যাস পড়ি, আমিও গ্রামের বাড়িতে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বড়শি দিয়ে মাছ ধরি, আমিও বইমেলায় যাই, আমিও ছবি আঁকি, আমি পড়ার টেবিলে ঘুমিয়েও যাই, আমিও olympiad এ অংশগ্রহণ করি

(Science olympiad national 8th- regional 1st, math olympiad regional winner, BdChO national 1st ),

আমিও বন্ধুদের সাথে fun করি,আমিও photography করি। photography র একটা page ও run করি।

আমার profile এ যারা গিয়েছেন তারা আশা করি বিষয়টা ইতোমধ্যেই জানেন। তাই এত জায়গায় first হয়েছি বলে আমাকে আর দশজন মানুষের থেকে আলাদা ভাববেন না। তারপরও কিছু কিছু মানুষ থাকবেই যাদের কাজ অন্যের পেছনে লাগা,আমরা কখনও সফলদের উৎসাহিত করি না, উল্টোটায় যদিও আমরা বেশ পারদর্শী।

অনেকগুলো কঠিন কথা বলে ফেললাম, কাউকে ব্যক্তিগতভাবে আঘাত করার জন্য নয়,এইধরনের মন্তব্য কারা করেছেন তাদের নামও আমি জানি না।তবুও কেউ যদি আমার কথায় ব্যক্তিগত ভাবে আঘাত পেয়ে থাকেন আমি তার জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখিত।

আমাকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

আশা করি আগামী বছরগুলোতে আমি যাদের সহপাঠী হিসেবে পাবো,তারা যেন এমন দৃষ্টিভঙ্গিতে আমাকে না দেখে।”

By Meftaul Alam Seyam