বুটেক্স ভর্তি পরীক্ষা ২০১৮ (৪৫ তম ব্যাচ) ও ২০১৯ (৪৬ তম ব্যাচ) এ আমার অভিজ্ঞতা থেকে নিচের এই লেখাঃ

১. HSC/সমমান এর মূল রেজিষ্ট্রেশন কার্ড না আনলে। (এর ফটোকপি সত্যায়িত সহ/ছাড়া কোনটাই গ্রহণযোগ্য না।)
২. এডমিট কার্ড না আনলে।

পরীক্ষার্থীকে জেনুইন হিসেবে প্রমাণ করতে (১+২) দুইটাই লাগে, এ ব্যাপারে কোনো ছাড় নেই!!!

৩. পরীক্ষার হলে কথা/দেখাদেখি করলে, পরিদর্শকগণ তাকে ভালোভাবে ওবজার্ভ করার পর সাইলেন্ট এক্সপেল করা হয়৷
৪. অন্যের ইন্সট্রুমেন্ট নিলে, যেমনঃ ক্যালকুলেটর। নিজের ইন্সট্রুমেন্ট নিয়ে আসতে ভুলে যাওয়া মানে – সে ইন-সিনসিয়ার!!
৫. পরিদর্শক শিক্ষক স্বাক্ষর করে রোল নম্বর গোল দাগ দিয়ে দেন, এই গোল দাগের বাইরে পরিদর্শককে না জানিয়ে নতুন করে রোল লিখলে বুঝায় যে- কোন ঘাপলা আছে/অন্যের রোল লিখেছে, এটাও বাদ হয়ে যায়!
৬. মোবাইল ফোন/ইলেকট্রনিক ডিভাইস সাথে থাকলে। শিক্ষকরা পর্যন্ত নিজের ফোন নিজ অফিস রুমে অফ করে রেখে আসেন, পরীক্ষা কক্ষে নিয়ে আসেন না।

৭. প্রশ্নপত্র এবং উত্তরপত্র একে অপরের সাথে বদল করলে। এমন স্টুডেন্ট বুটেক্স /কোথাও দরকার নাই।

৮. স্যার, একটু কাইন্ডলি কন্সিডার কইরেন/প্লিজ/সরি/ আজাইরা কিছু-এইটা কোনো কুয়েশ্চান হল!!/চাঁদ উঠেছিল গগনে/কবিতা/ছবি/সাংকেতিক কিছু লেখা থাকলে- পরীক্ষক খাতা দেখার সময় ওই মজার অংশ সবাইকে পড়ে শোনান,অন্যান্য পরীক্ষকরা তা শুনে মজা নেন এবং উত্তরপত্রটা ডাস্টবিনে ফেলে দেন। (সাময়িক মজা দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ)।
ভর্তি পরীক্ষাটা আমার কাছে মনে হয় বাদ দেওয়ার পরীক্ষা – তাই যেকোনো অসদুপায় / নিয়মের ব্যত্যয় যেন না ঘটে এ ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করাই শ্রেয়।

বুটেক্স ভর্তি পরীক্ষায় পরীক্ষা হলে পরিদর্শক স্যারেরা নিম্নোক্ত বিষয়গুলোকে এনাউন্স করে দেনঃ

* পরীক্ষার্থীদের জন্য নির্দেশনাবলী যা উত্তরপত্রে লেখা থাকে সেগুলো ভালভাবে পড়ে নিতে হয়। শিক্ষকেরাও তা জোরেশোরে পড়ে শোনান।

* নিজের নাম বাংলায় লিখতে হয়।
* বাবা এবং মায়ের নাম বাংলা অথবা ইংরেজিতে। আমার মনে হয় বাংলাতেই ভালো।
* রোল নাম্বার এডমিট কার্ডে যেভাবে থাকে- ইংরেজিতে। তবে বাংলাতেও সমস্যা নেই।
* পরীক্ষার্থীর স্বাক্ষর এর জায়গায় – এডমিট কার্ডে যে স্বাক্ষর আছে হুবহু ওইটা দিতে হয়।
* পরীক্ষার উত্তরপত্র পাওয়ার সাথে সাথে গুণে দেখতে হয় যে সবগুলো পেইজ ( সাধারণত ১-১৪) ঠিক আছে কিনা? না থাকলে সাথে সাথে পরিদর্শক স্যারকে বললে তিনি তা চেঞ্জ করে দিবেন। রোল নম্বর লেখার পর উত্তরপত্র আর চেঞ্জ করা যায় না।

* পরীক্ষার প্রশ্নপত্র পাওয়ার সাথে সাথে গুণে দেখতে হয় যে সবগুলো প্রশ্ন (সাধারণত ১-৩৪) আছে কিনা? না থাকলে সাথে সাথে পরিদর্শক স্যারকে বললে তিনি তা চেঞ্জ করে দিবেন।
* প্রশ্নপত্রের উপর কোন কিছু লেখা নিষেধ। বড়জোর হালকা দাগ দিতে পারে যে এই প্রশ্নের উত্তর করেছি।

* রাফ করা যায় উত্তরপত্রের শেষ পেজের নির্দিষ্ট জায়গায় (সাধারণত ১৪ তম পেইজ), যা পরীক্ষার্থীর উত্তরপত্রের নির্দেশনাবলীতেও লেখা থাকে। এজন্য উত্তরপত্রের নির্দেশনাবলী শুরুতেই ভালো করে পড়ে নিতে হয়।

* ২ ঘন্টার যে কোনো পাবলিক পরীক্ষায় ওয়াশরুমে যাওয়ার অনুমতি নেই। পরীক্ষা কক্ষে প্রবেশের আগেই ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে আসা যায়।

* ২ ঘন্টার আগে কেউ উত্তরপত্র+প্রশ্নপত্র জমা দিয়ে বের হতে পারবে না, শেষ হয়ে গেলেও নিজ আসনে চুপচাপ বসে থাকতে হবে।

* ২ ঘন্টা শেষে পরিদর্শকগণ উত্তরপত্র+প্রশ্নপত্র জমা নেওয়ার পর গুনে দেখবেন, সবকিছু ঠিক থাকলে পরিদর্শক স্যারেরা সবাইকে রুম থেকে বেরোনোর অনুমতি দিলে এরপর রুম থেকে বের হওয়া যাবে।

* উত্তরপত্রের সাথে প্রশ্নপত্রও অবশ্যই জমা দিতে হবে। কোনভাবেই প্রশ্নপত্র জমা না দিয়ে বের হওয়া যাবে না।
* লেখার জন্য শুধুৃমাত্র কালো/নীল কলম ব্যবহার করা যাবে। পেন্সিল/লাল/সবুজ কলম ব্যবহার করা যাবে না।
গুরুত্বপূর্ণঃ

* নির্দিষ্ট নাম্বার প্রশ্নের উত্তর – উত্তরপত্রের নির্দিষ্ট নাম্বারের জায়গায়ই দিতে হবে। উত্তরপত্রের নির্দিষ্ট নাম্বার কেটে নতুন নাম্বার লেখা যাবে না। অনেক পেয়েছি এমন করেছে, ফলাফল দুই উত্তরই শূন্য।

* শর্টকাট টেকনিক ব্যবহার করে উত্তরের যথার্থতা নিজে বোঝা গেলেও – খাতায় একটু ইলাবোরেটলি লিখতে হয় ( ইলাবোরেটলি মানে – উত্তরপত্রের ওই অল্প জায়গাতে যতটুকু না লিখলেই নয় ততটুকু; ভূমিকা, উপসংহারের দরকার নেই)।

* পার্শিয়াল মার্কিং এর ব্যাপারে- নো কমেন্ট। এইটা প্রশ্নের ধরণ ও উত্তর এর ধাপ/ভুলের মাত্রার উপর/ পরীক্ষকের উপর নির্ভর করে। পরীক্ষক একটা স্ট্যার্ন্ডাড ঠিক করে সকলের ক্ষেত্রেই তা ফলো করে থাকেন।

উপরের লেখাগুলো বিগত সালের অভিজ্ঞতা থেকে লেখা, এবছরের ভর্তি পরীক্ষায় নিয়মাবলিতে সংযোজন বা বিয়োজন থাকতেই পারে। তাই এটাকে রেফারেন্স হিসেবে না নেওয়াই ভালো!!

শুভকামনা রইল বুটেক্স ভর্তি পরীক্ষার্থীদের জন্য—
মোঃ বাশার উদ্দিন
সহকারী অধ্যাপক, ইয়ার্ণ ইন্জিনিয়ারিং বিভাগ
বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়, তেজগাঁও, ঢাকা-১২০৮