Good news হলো আমার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইন ভর্তি পরীক্ষার সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে। আর bad news হলো যেই পরীক্ষা হচ্ছে না সেই এইচএসসি পরীক্ষার উপর ভর্তির ক্ষেত্রে নম্বর বরাদ্দ রাখা! যেটা একটা অকল্পনীয় ব্যাপার!!

কথা হলো অনলাইন ভর্তি পরীক্ষার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসাটা good news কেন? প্রথমত এই অনলাইনে ভর্তি পরীক্ষা নেবার জন্য বিশেষ যেই সফটওয়্যারটি তৈরী হয়েছে সেটির নেতৃত্ব নাকি দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মুনাজ আহমেদ।

কে এই মুনাজ আহমেদ? ২০০৫ সালের আগে পরে উনি ছিলেন ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) উপাচার্য। অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের আন্দোলনের মুখে ওআইসি পরিচালিত আইইউটি উপাচার্য অধ্যাপক মুনাজ আহমেদ নূর পদত্যাগ করেন।

দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে আন্দোলনের মুখে যিনি পদত্যাগে বাধ্য হন সেইরকম একজন ব্যক্তিকে বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকার বঙ্গবন্ধুর নামে গঠিত ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বানান ভাবা যায়।

ভাব খানা এইরকম যেন ব্যার্থ হওয়াটাই যোগ্যতা। যেন “তোমাকেইতো খুঁজছে আওয়ামীলীগ সরকার”! সাধারণত কেউ প্রমাণিত ব্যার্থ হলে সে আস্তাখুড়ে নিক্ষিপ্ত হয়। যেমন উন্নত বিশ্বের সরকার প্রধান incumbent অবস্থায় নির্বাচনে পরাজিত হলে সে রাজনীতি থেকে অবসরে যায়। এটাই নিয়ম।

আমাদের এখানে ওটাও হয় না বরং উল্টো পরাজয়ের কারণ অন্যের উপর চাপিয়ে আরো ক্ষমতাবান হয়। এই মানুষটি যেই লেভেলের তোষামোদি জানে সেটা অকল্পনীয়।

তোষামোদীকে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছে। তাই তার হাত ধরে যাহা কিছুই হবে আমার বিশ্বাস নেই। এইটা করতে পারা মানে এইটা বেঁচে সে আরো উপরে উঠার ধান্দা করবে।

আর bad news বলছি এইজন্যে যে যেই পরীক্ষা হচ্ছে না সেই এইচএসসি পরীক্ষার উপর ভর্তির ক্ষেত্রে কিভাবে নম্বর বরাদ্দ রাখার বিধান করে?

তবে না হওয়া এইচএসসি পরীক্ষা ও সামনের শীতে করোনা পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার আশংকাকে মাথায় রেখে স্বাস্থ্যবিধি শক্তভাবে মেনে অত্যন্ত মান সম্পন্ন একটা ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া উচিত। গতানুগতিক ভর্তি পরীক্ষা নয়।

উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের বাংলা ও ইংরেজি মাধ্যমের সিলেবাস দেখে দুই মাধ্যমের যা কিছু কমন আছে সেটাকে সিলেবাস হিসাবে গণ্য করে অত্যন্ত উঁচু মানের পরীক্ষা নেওয়া উচিত বলে আমি মনে করি। এসএসসি ও এইচএসসির ফলাফল থেকে কোন নম্বর যোগ করার দরকার নেই। এই ভর্তি পরীক্ষাই চূড়ান্ত না।

ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে একটি শর্টলিস্ট তৈরী করা এবং তারপর অনলাইনে ভাইভা নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।

এতে প্রশ্ন ফাঁস বা অন্য কোনভাবে কেউ যদি ভর্তি পরীক্ষায় ভালো করেও ফেলে সেটাকে ফিল্টার করা সম্ভব হবে।

শুধু তাই নয়। এমন একটি ভর্তি পরীক্ষা হওয়া উচিত যেটিকে দেশের অন্যসব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ও এর ফলাফলকে ব্যবহার করতে পারে।

এই করোনা পরিস্থিতিতে সব বিশ্ববিদ্যালয় আলাদা আলাদা পরীক্ষা নিলে করোনা পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার সম্ভবনা আছে।

তাছাড়া ড. মুনাজ আহমেদের নেতৃত্বে যেকোন কিছুতে ঝামেলা থাকতে পারে। প্রশ্ন ফাঁস থেকে শুরু করে অনেক রকমের দুর্নীতির আশংকা আমি করি। তাছাড়া এইরকম অনলাইনে পরীক্ষার কোন ট্রায়াল হয়নি।

শুধু তার মত একজন ব্যক্তির মুখের কথাকে বিশ্বাস করে অনলাইনে ভর্তি পরীক্ষা নিলে আমি মনে করি ডিসাস্টারকে আমন্ত্রণ জানিয়ে নিয়ে আসার মত অবস্থা হবে।

বাংলাদেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়কে এই অনলাইনে ভর্তি পরীক্ষার সিদ্ধান্ত থেকে অবিলম্বে ফিরে আসার আহবান জানাচ্ছি।

এর চেয়ে ভালো হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে যোগ দিয়ে আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষাকে কিভাবে বিশ্ব মানের করা যায় সেই দিকে মনোনিবেশ করা।

ছবিতেঃ লেখক- কামরুল হাসান মামুন
অধ্যাপক, ঢাবি

[নাম্বার রাখা নিয়ে রাবি অধ্যাপক সালেহ হাসান নাকিব এর মন্তব্য পড়ুন “এবারের ভর্তি পদ্ধতিতে এইচএসসির জিপিএর মার্ক না রাখাই উত্তম”]