হুয়াওয়ে ইজ ইনএভিটেবল: অ্যাভেঞ্জারস এন্ডগেমে যদিও থ্যানোসকে বলতে শোনা যায় ‘I am Inevitable’ কিন্ত শেষে দেখা যায় সে আসলে ইনএভিটেবল না, আয়রন ম্যান তার ব্যান্ড বাজায়া দেয়। তবে এই ‘I am Inevitable’ কথাটা কিন্ত বলতে পারে Huawei।

চাইনিজ টেক জায়ান্ট Huaweiকে আপনি যতটা বড় হিসেবে জানেন, Huawei তার চেয়েও বড়। এই কথা শোনার পর Huawei সম্পর্কে যে ধারণা হল Huawei আসলে তারচেয়েও বড়।

অনেকেই হুয়াওয়েকে স্মার্টফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান হিসেবে জানে। কিন্তু হুয়াওয়ে বিশ্বের সবচেয়ে বড় টেলিকমিউনিকেশন যন্ত্র উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন ধরণের স্মার্ট অ্যাপ্লায়েন্সেস তৈরিতেও হুয়াওয়ের জুড়ি নেই।

প্রযুক্তি দুনিয়ায় কল, এসএমএস কিংবা ইন্টারনেট সেবার জন্য মোবাইলকে সেল টাওয়ারের সাথে কানেক্টেড থাকতে হয়। Guess who is dominating this network infrastructure market? HUAWEI!

এই মুহূর্তে 5G খাতে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি Huawei’র হাতে। Huawei’র হাতে এই মুহূর্তে আছে ১৩,৪৭৪ টি ফাইভ জি প্যাটেন্ট।

শুধু তাই নয় Standard Essential Patents বা সংক্ষেপে যেটাকে SEP বলা হয় সেক্ষেত্রেও Huawei’র আধিপত্য।

Huawei’র হাতে আছে ১৯% Standard Essential Patents, যেটা নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্যামসাং এর কাছে আছে ১৫%। বিশ্বখ্যাত দৈনিক Wall Street Journal ২০১৯ এ একটা প্রতিবেদন করে।

সেখানে দেখানো হয় এ বিভিন্ন দেশ Huawei কে ব্যান করলেও কিভাবে তাদের দেশে 5G ইউজ করতে গেলে Huawei কে পে করা লাগবেই তাদের প্যাটেন্ট স্বত্বের কারণে।

Huawei থেকে লাইসেন্স (পরোক্ষ) না নিয়ে তারা ফাইভ জি ইউজ করতে পারবে না।

সমস্যা শুধু Huawei’র 5G প্যাটেন্ট স্বত্ব নিয়েই না, আরো আছে। খেয়াল করে দেখেন বাংলাদেশে যখন 4G আসলো তখন কিন্ত মোবাইল টাওয়ার বদলাতে হয়নি।

জাস্ট আগের টাওয়ারগুলোতেই 4G Network ইকুইপমেন্ট আপগ্রেড করছে। সেম জিনিস 5G’র জন্যও প্রযোজ্য। আগের টাওয়ারগুলোতে 5G Network ইকুইপমেন্ট আপগ্রেড করতে হবে।

এখন সমস্যা হচ্ছে অধিকাংশ দেশেই আগের 4G Network এ কিন্ত অলরেডি Huawei’র সিস্টেম ইন্সটল আছে। সেগুলোকে পুরোপুরি রিপ্লেস করে নতুন কোন কোম্পানির 5G Network সিস্টেম ইন্সটল গেলে একদিকে যেমন প্রচুর সময় দরকার, অন্যদিকে খরচ হবে অসম্ভব বেশি।

Wall Street Journal এর সেই প্রতিবেদন অনুযায়ী এরকম একটা পুরোপুরি নেটওয়ার্ক পুরোপুরি রিপ্লেস করতে গেলে ৫-১০ বছর প্রয়োজন!

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্ররোচনা এবং প্রেশারে ইউকে নিজেদের 5G Infrastructure থেকে Huawei কে ব্যান করেছে। এরপর তাদের সংস্কৃতি সচিব অলিভার ডাউডেনের বক্তব্য শুনুন-

“Huawei কে পুরোপুরি নিজেদের network infrastructure থেকে সরাতে সময় লাগবে ২০২৭ সাল পর্যন্ত। এতে ইউকের 5G প্ল্যান অন্তত তিন বছর পিছাবে। এবং এই প্রক্রিয়ায় মোট খরচ হবে $2.5 Billion (২০ হাজার কোটি টাকা)!”

Huawei’র 5G টেকনোলজি এই মুহূর্তে বিশ্বে বেস্ট। এবং খরচেও অন্যান্য প্রতিদ্বন্দ্বী কোম্পানির তুলনায় Surprisingly সস্তা।

অনেকটা Huawei ফোনের মত। আর সবচেয়ে বড় কথা অন্যান্য প্রতিদ্বন্দ্বী যেমন স্যামসাং, নোকিয়া, এরিকসনের তুলনায় Huawei’র 5G টেকনোলজি অন্তত এক বছর আগানো।

অর্থাৎ Huawei’র 5G টেকনোলজি চালু হওয়ার পর বছরখানেকের মধ্যেও এসব কোম্পানি সেম কোয়ালিটির 5G সেবা দিতে পারবে না।

এখন পর্যন্ত USA, UK, Australia, New Zealand, Canada, Singapor এই দেশগুলো Huawei’র 5G টেকনোলজি পুরোপুরি ব্যান করেছে সাইবার সিকিউরিটির ইস্যু তুলে।

তবে বাংলাদেশের মত দক্ষিণ এশিয়া, আফ্রিকা কিংবা লাতিন আমেরিকার দরিদ্র দেশগুলোর কাছে Huawei’র 5G টেকনোলজি চুজ করা ছাড়া আর কোন অপশন নেই।

সস্তা, টেকসই এবং আগের 4G ইনফ্রাস্ট্রাকচারের সাথে পুরোপুরি Compatible হুয়াওয়ের এই 5G টেকনোলজি বাদ দিয়ে অন্য কোন কোম্পানির 5G টেকনোলজি আমরা অ্যাফোর্ড করতে পারব না। না রাজনৈতিকভাবে না অর্থনৈতিকভাবে।

কাজেই এসবের আলোকে এটা বললে মোটেও অত্যুক্তি হবে না যে “হুয়াওয়ে ইজ ইনএভিটেবল!”

সবশেষে আরেকটা বিশেষ তথ্য দেই। সম্প্রতি ইন্ডিয়ার সাথে চায়নার বর্ডার ক্ল্যাশের কারণে ইন্ডিয়ার টেলিকমিউনিকেশন ইন্ডাস্ট্রি থেকে Huawei’র 5G ব্যান করার একটা কথা উঠেছে।

যাইহোক Oxford Economics নামক একটা অ্যানালিটিক প্রতিষ্ঠান হিসেব করে দেখিয়েছে যে যদি ইন্ডিয়া Huawei’র 5G ব্যান করে তবে ২০৩৫ সাল নাগাদ আগামী পনের বছরে ইন্ডিয়ার জিডিপি লস হতে পারে 4.7 বিলিয়ন ডলার থেকে 27.8 বিলিয়ন ডলার।

এই সময়ে ইন্ডিয়াতে কেউ বিনিয়োগ করতে গেলে বিনিয়োগ খরচ বেড়ে যাবে ৮ থেকে ২৭ শতাংশ পর্যন্ত!

তথ্যসূত্র: Wall Street Journal, CNBC, Oxford Economics
Rayhan Ahmed
Bangladesh Marine Academy

পোস্ট লিংক