বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মাধ্যমে দেশের ৩১টি দুর্গম দ্বীপে উচ্চগতির ইন্টারনেট সেবা নিয়ে পৌঁছে দেবে বাংলাদেশ কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড (বিসিএসসিএল)।

রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, যেসব স্থানে নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ খুবই জটিল বা ফাইবার অপটিক কেবল নিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না, সেসব দ্বীপে যাচ্ছে স্যাটেলাইট ইন্টারনেট।

কোম্পানির চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ জানিয়েছেন ৩১টি দ্বীপ বা চরের মধ্যে ইতিমধ্যে ২০টিতে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ইন্টারনেট সংযুক্ত করা হয়েছে।

এ প্রকল্পের আওতায় এ বছরের মধ্যে বাকি দ্বীপগুলোতে ইন্টারনেট সেবা পাওয়া যাবে।

স্যাটেলাইটের মাধ্যমে দ্বীপ এলাকায় নেটওয়ার্ক স্থাপন প্রকল্পের পরিচালক হামেদ হাসান মুহাম্মদ

মহিউদ্দিন বলেন, ভি-স্যাট প্রযুক্তি ব্যবহার করে দ্বীপগুলোতে ইন্টারনেট সেবা দেওয়ার কাজ চলছে।

পটুয়াখালীর চর কাজল, চর বিশ্বাস, বাহের চর, চর বোরহান ও চন্দ্রদ্বীপে ইতিমধ্যে ইন্টারনেট পৌঁছে দেওয়া হয়েছে জানিয়ে মহিউদ্দিন বলেন, পটুয়াখালীর সাতটি চর বা দ্বীপে এ সেবা দেওয়া হবে।

এছাড়া চাঁদপুরে আটটি, পিরোজপুর, বরিশাল নোয়াখালির একটি করে এবং ভোলার ১১টি দ্বীপে এ ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়া হচ্ছে।

সেইন্টমার্টিন দ্বীপে মোবাইল ইন্টারনেট সুবিধা থাকলেও জরুরি যোগাযোগের জন্য সেখানে স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সেবা চালু করা হবে বলে জানান মহিউদ্দিন।

ইতিমধ্যে ২০টি দ্বীপে বা চরে সেবা শুরু করা হয়েছে জানিয়ে প্রকল্প পরিচালক বলেন, বাকী দ্বীপগুলোতে এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে সংযোগ নিশ্চিত করা যাবে।

প্রতিটি চর বা দ্বীপে পাঁচটি করে ভিস্যাট স্থাপন করে এ সেবা দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে মহিউদ্দিন বলেন, “দ্বীপ বা চরের আয়তন বুঝে এগুলো স্থাপন করা হচ্ছে, অনেক ক্ষেত্রে কমবেশিও হচ্ছে।

স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সেবায় ডাউনলোড স্পিড ১০ এমবিপিএস এবং আপলোড স্পিড ৪ এমবিপিএস সরবরাহ করা হবে। উচ্চগতির ইন্টারনেটের মাধ্যমে দ্বীপবাসীরা সব সুবিধাই নিতে পারবেন।”

এসব দ্বীপের স্কুল বা সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে ওয়াইফাইয়ের মাধ্যমে ইন্টারনেট সেবা দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের হিসাবে প্রকল্পে শেষে এসব এলাকার তিন লাখের বেশি জনগণ এ সেবার আওতায় আসবেন।”

স্যাটেলাইট ইন্টারনেটের মাধ্যমে টেলিমেডিসিন ও শিক্ষায় গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে মহিউদ্দিন বলেন, “ইতিমধ্যে এ বিষয়ে পরীক্ষামূলক কাজ করে সফলতাও পাওয়া গেছে।”

২০১৯ সালের মার্চে শুরু হওয়া এ প্রকল্পে প্রায় ৪০ কোটি টাকা খরচ হচ্ছে বলে জানান তিনি।

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এ মোট ৪০টি ট্রান্সপন্ডার রয়েছে। এর মধ্যে ২৬টি কেইউ-ব্যান্ড ও ১৪টি সি-ব্যান্ডের।

ইতিমধ্যে ৩৫টি বেসরকারি টিভি চ্যানেল বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সম্প্রচার করছে। আরও কয়েকটি টিভি চ্যানেল সম্প্রচার প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে। এছাড়া ডিটিএইচ (ডিরেক্ট টু হোম) সেবাও দেওয়া হচ্ছে।

বেক্সিমকো কমিউনিকেশন্স গত বছর ১৬ মে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো ডিটিএইচ (ডিরেক্ট টু হোম) প্রযুক্তির সেবা চালু করে, যার মাধ্যমে কেবল সংযোগ ছাড়াই স্যাটেলাইট চ্যানেল দেখা যাচ্ছে। আর বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর বাণিজ্যিক যাত্রাও এর মধ্য দিয়েই শুরু হয়।

এরপর গত ১ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর মাধ্যমে বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলোর বাণিজ্যিক সম্প্রচারের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের দুই বছরের মাথায় নিজস্ব আয়ে চলা শুরু করেছে বিসিএসসিএল।

©bdnews24.com