এইতো কইদিন আগেই আমরা শুনলাম যে BTCL কর্তৃক আয়োজিত এক নিলামে বাংলাদেশ এর প্রায় সব টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি গুলো তাদের স্পেকট্রাম ক্রয় করেছে। অনেকের মনে এই প্রশ্ন জাগতে পারে এই স্পেকট্রাম টা আবার কি?
আমরা আজকে এই স্পেকট্রাম সম্পর্কে একটি সহজ ধারণা নেওয়ার চেষ্টা করবো।

প্রথমেই আসি স্পেকট্রাম কী?

স্পেকট্রাম এর বাংলা অর্থ করলে দাড়ায় বর্ণালী। এখন আমাদের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে যে টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি গুলো বর্ণালী কিনে কি করবে? উত্তর টা আসলে লুকিয়ে আছে এই শব্দের মধ্যেই । আমরা যে মোবাইল ফোন ব্যাবহার করি টা ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক তরঙ্গ ব্যবহার করে ডাটা বা তথ্য আদান প্রদান করে থাকে ।

এই যে ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক তরঙ্গ ব্যবহার করে আমরা একে অপরের সাথে কানেক্টেড হই এর একটা নির্দিষ্ট ফ্রিকোয়েন্সি আছে , এই ফ্রিকোয়েন্সি টাই আসলে স্পেকট্রাম। সহজ ভাষায় বলতে গেলে স্পেকট্রাম হলো একটি নির্দিষ্ট ফ্রিকোয়োন্সি যার মাধ্যমে আমাদের মোবাইল ফোন বা রেডিও স্টেশন গুলি একে অপরের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে থাকে।

এখন এই আদান প্রদান করার সময় সবাই মিলে যদি একটি নির্দিষ্ট স্পেকট্রাম ব্যাবহার করি তাহলে একজনের সাথে আরেকজনের ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক তরঙ্গের ওভারল্যাপ বা সংঘর্ষ হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছুই নয়। দেখা গেলো বিমান সেবা প্রদানকারী রেডিও টাওয়ার আর আপনার মোবাইল টাওয়ার একই স্পেকট্রাম ব্যাবহার করছে।

সুতরাং আপনার কথা গুলো বিমান এর পাইলট এর অতি গুরুত্তপূর্ণ তথ্যের সাথে ওভারল্যাপ হলে কি সাংঘাতিক দুর্ঘটনা ঘটবে তা একবার চিন্তা করুন। ঠিক এই কারণে সরকার নির্দিষ্ট করে দেয় কে কোন স্পেকট্রাম ব্যাবহার করতে পারবে আর টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি গুলো সরকারের কাছে থেকে ওই নির্দিষ্ট পরিমাণ স্পেকট্রাম এর মধ্যে থেকে কিছু স্পেকট্রাম কিনে নেয় যাতে গ্রাহক ভোগান্তিতে না পড়ে।

সুতরাং যে যত বেশি স্পেকট্রাম কিনবে সে তত বেশি ভালো সেবা দিতে পারবে। সারাবিশ্বে নিয়মিত স্পেকট্রাম নিলাম হয়ে থাকে । এই বছরের মার্চ মাসের শেষে দেশে ৫এ পরিষেবা প্রদানের উদ্দেশ্যে “রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি অকশন-২০২২’ নামে নিলাম অনুষ্ঠিত হয় ।

নিলামে প্রতি মেগাহাটর্জ স্পেকট্রামের ফ্লোর প্রাইস বা বেইজ প্রাইস ছিলো ৬ মিলিয়ন ডলার, টাকার হিসাবে যা ৫১ কোটি ৯০ লাখের একটু বেশি। মোট ১৮ ব্লকে স্পেকট্রাম নিলাম হয়েছিল । এরমধ্যে ২ দশমিক ৩ গিগাহার্টজ বা ২৩০০-২৪০০ মেগাহার্টজে ৬টি ব্লক এবং ২ দশমিক ৬ গিগাহার্টজে বা ২৫০০-২৬৯০ মেগাহার্টজে ১২ টি ব্লক ছিলো। যার মধ্যে সর্বাধিক স্পেকট্রাম ক্রয় করেছিলো গ্রামীণফোন।

লেখকঃ মোঃ আরিফুল ইসলাম