পারকিনসন’স রোগ একটি দীর্ঘমেয়াদী স্নায়বিক ব্যাধি যা ক্রমাগত বিভিন্ন অঙ্গ, বিশেষত পেশিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে তোলে। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা যেসব সমস্যার মুখোমুখি হন তার মধ্যে প্রধান হলো কাঁপুনি। ফলে অন্য সব কাজে অসুবিধার পাশাপাশি হাতের কাঁপুনির জন্য খাবার খেতে খুবই অসুবিধা হয়।

এই সমস্যা সমাধানে মেকাট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়াররা আবিষ্কার করেছেন এমন একটি মেকাট্রনিক চামচ যা সহজে রোগীকে খাবার খেতে সাহায্য করবে। এই চামচটিতে একটি এক্সেলারোমিটার এবং একটি জাইরোস্কোপ ব্যবহার করা হয়েছে। এক্সেলারোমিটার হাতের কাঁপুনির ত্বরণ বা আঙ্গুল দ্বারা প্রযুক্ত বল নির্ণয় করে থাকে এবং জাইরোস্কোপ চামচটিকে নির্দিষ্ট একটি অক্ষে স্থির থাকতে সাহায্য করে।প্রায় দুই বছর ধরে গবেষণার পর বর্তমানে যন্ত্রটি হাতের কাঁপুনি প্রায় ৭০ শতাংশ পর্যন্ত কমাতে সক্ষম হয়েছে।

এই মেকাট্রনিক্স প্রযুক্তিটির হাতলের সাথে ধাতব চামচের মত অংশটি সংযুক্ত থাকে। ব্যবহারকারী প্রয়োজনমত এ অংশটি খুলতে বা লাগাতে পারেন। এই অংশটি খুলে ইলেকট্রিক চার্জার ব্যবহার করে যন্ত্রটি চার্জ দেওয়া যায় এবং একবার চার্জে একটানা বেশ কয়েকদিন ব্যবহার করা যায়। এ বিশেষ চামচটি এমনভাবে অবস্থান করে যেন হাতের নড়াচড়ার ফলেও এটি সমান্তরাল থাকতে পারে। এ চামচের হাতলের সাথে একটি ব্যান্ড লাগানো থাকে যার ফলে চামচটি ধরা সহজতর হয়।
শীঘ্রই এ প্রযুক্তির মাধ্যমে সাধারণ চামচের পাশাপাশি কাঁটা চামচ, স্যুপের চামচ ছাড়াও চাবির রিং হোল্ডার ইত্যাদি বাজারে আনতে কাজ করে চলেছেন গবেষকরা।

এই প্রযুক্তিটি বর্তমান মূল্য প্রায় ১৯৫ ডলার প্রায় ২১০০০ টাকা। সাধারণ রোগীদের কথা মাথায় রেখে তাই মালয়েশিয়ার তরুণ ইঞ্জিনিয়াররা তৈরি করেছেন সাশ্রয়ী আরেকটি মেকাট্রনিক চামচ প্রযুক্তি। মেজারমেন্ট ইউনিট, সেন্সর, সার্ভো মটর, কন্ট্রোল ইউনিট, আরডুইনো ন্যানো বোর্ড আর ব্লুটুথ মডিউল দিয়ে তৈরি করা হয়েছে এই চামচটি, যা একই রকমভাবে কাজ করে রোগীদের খাবার খেতে সাহায্য করতে সক্ষম। এ প্রযুক্তিটি ২১ তম এশিয়া প্যাসিফিক আইসিটি অ্যালায়েন্স অ্যাওয়ার্ড জিতে নিয়েছে।

গত ২৫ বছরে সারা বিশ্বে পারকিনসন’স রোগীর সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। এই প্রযুক্তিটি তাদের জীবনকে সহজতর করে তুলবে- এমনটাই প্রত্যাশা গবেষকদের।

Mashiat Rahman
MTE-22,
RUET.