পদ্মা সেতুর রেলপথ যদি পূর্ণ হয়ে যায় ভারি ট্রেনে। ঘটনাক্রমে ওই সময় সড়ক অংশও পণ্যবোঝাই সব লরির সারি। এমন সময় যদি হঠাৎ করে শুরু হয় ভূমিকম্প। যেনতেন ভূমিকম্প নয়, রিখটার স্কেলে আট মাত্রার। আর ওই ভূমিকম্পে সেতুর পিলারের নিচ থেকে মাটি সরে যায় ৬২ মিটার। আর ঠিক ওই ভয়ংকর সময়ে চার হাজার টনের একটি জাহাজ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ধাক্কা দেয় পদ্মা সেতুতে। তারপরও পদ্মা সেতু তখনও ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকবে!

ব্রিফিংয়ে পদ্মা সেতুর শক্তিমত্তা নিয়ে সাংবাদিকদের কাছে এমন বর্ণনা দেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।

সম্প্রতি পদ্মা সেতুর পিলারের সঙ্গে জাহাজের ধাক্কা লাগার খবর উড়িয়ে দিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘পিলারের সঙ্গে নয়, ধাক্কা খেয়েছে ক্যাপের সঙ্গে।’

২৩ জুলাই শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে পদ্মা সেতুর ১৭ নম্বর পিলারের সঙ্গে রো রো ফেরি শাহ জালালের ধাক্কা লাগে।

এর মাত্র তিন দিন আগে গত মঙ্গলবার রো রো ফেরি শাহ মখদুমও পদ্মা সেতুর ১৬ নম্বর পিলারে ধাক্কা দেয়।

কয়েক দিনের ব্যবধানে পদ্মা সেতুর পিলারে ধাক্কা লাগার ঘটনার বাইরেও এই নৌ রুটে চলাচলরত ফেরি অন্যকিছুর সঙ্গে ধাক্কা লেগে দুর্ঘটনায় পড়ার উদাহরণ রয়েছে বেশকিছু।

গত বছরের ৭ ডিসেম্বর রাত ১২টার দিকে এই রুটে ড্রেজারের পাইপের সঙ্গে ধাক্কা লেগে ডাম্ব ফেরি রানীগঞ্জের তলায় ফাটল ধরে। পরে যাত্রী ও যানবাহন বাংলাবাজার ঘাটে দ্রুত নামিয়ে দেওয়ার পর নোঙর করা হলে ফেরিটি ডুবে যায়। তবে, এসময় প্রচণ্ড কুয়াশা ছিল বলে জানা যায়।

আবার, ২০১৬ সালের ৪ অক্টোবর সন্ধ্যায় এই নৌ রুটে শিমুলিয়া ঘাটের অদূরে মাঝ পদ্মায় ড্রেজারের পাইপের সঙ্গে ধাক্কায় যমুনা নামে একটি ডাম্প ফেরির তলা ফেটে যায়। পরে পদ্মার চরে নোঙর করে পানি অপসারণ করে ফেরিটি মেরামত করা হয়েছিল।

খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ফেরি বা দেশে যেসব জাহাজ চলাচল করে, সেগুলোর পিলারের সঙ্গে ধাক্কা খাওয়ার কোনো আশংকা নেই, সেই দিনও খায়নি। সেদিন ধাক্কা খেয়েছে পিলার ক্যাপের সঙ্গে। জাহাজ ধাক্কা মারলেও কিছু হবে না। আমাদের দেশে তিন থেকে চার হাজার টনের জাহাজ চলে। চার হাজার টনের জাহাজ যদি ধাক্কা মারে, পিলারে পৌঁছাতে পারবে না, আগেই ক্যাপের মধ্যে আটকে যাবে।

চারটি ইঞ্জিনিয়ারিং সেইফটি নিয়ে পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে বলেও জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব। এগুলো হলো- আট মাত্রার ভূমিকম্প হওয়ার পর পিলারের নিচ থেকে ৬২ মিটার মাটি সরে গেলে, ব্রিজের দুটি লেয়ারের নিচেরটিতে হ্যাভি লোডের ট্রেন থাকলে এবং উপরেরটিতে যদি লরি দিয়ে বোঝাই থাকলে। যে ফেরিটি পদ্মাসেতুর পিলারের সঙ্গে ধাক্কা খেয়েছে সেটি ডুবে যায় কিনা আমরা সেই ভয় পাচ্ছিলাম।
এখন চ্যানেল করে দেওয়া হয়েছে; এক চ্যানেল নিয়ে যাবে, আরেক চ্যানেল দিয়ে বের হবে- জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

খন্দকার আনোয়ারুল বলেন, ‘যদি কখনো রিখটার স্কেলের আট মাত্রার ভূমিকম্প হয়, তখন যদি পিয়ারের নিচ থেকে ৬২ মিটার মাটি সরে যায়, মাটি সরে গেলে কিন্তু স্ট্রেংথ কমে যাবে।

‘তখন যদি ব্রিজের দুইটি লেয়ারের নিচেরটি হেভি লোডেড ট্রেন দিয়ে বোঝাই থাকে, আর উপরেরটিতে যদি লরি দিয়ে বোঝাই থাকে লোডেড, তখনই যদি চার হাজার মেট্রিক টনের একটি শিপ গিয়ে পিয়ারের মধ্যে ধাক্কা মারে, তবুও ব্রিজের, পিয়ারের কিছু হবে না। ডু্ ইউ আন্ডারস্ট্যান্ড? এগুলো হলো, ইঞ্জিনিয়ারিং সেফটি।’

তবে তিনি সতর্ক করে বলেছেন, ‘প্রকৃতি যদি এর বাইরে কিছু করে, দ্যাটস অ্যা ডিফারেন্ট থিং।’

 

আরো পড়ুন