প্রথমত একটি অ্যাডভান্সড ফান্ডামেন্টাল রিসার্চ ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সেখানকার গবেষক হিসাবে নিয়োগের জন্য একটি আন্তর্জাতিক সার্চ কমিটির মাধ্যমে একটি নিয়োগ বোর্ড তৈরী করতে হবে নচেৎ রাজনীতি আর স্বজনপ্রীতি থাকবেই এবং বিদ্যমান ইনস্টিটিউটের মত এটিও আরেকটি ইনস্টিটিউট হয়ে যাবে।

সেই সার্চ কমিটির মাধ্যমে কমপক্ষে তিনটি লেয়ারে নির্বাচনী বোর্ডের সম্মুখীন হয়ে বিশ্বমানের গবেষকদের নিয়োগ দিতে হবে এবং একই সাথে বিশ্বমানের বেতন ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা দিতে হবে নচেৎ বিশ্বমানের গবেষকরা কেন বাংলাদেশে আসবে?

এর মাধ্যমে বিশ্বমানের বাংলাদেশী গবেষকরা দেশে ফিরে আসার সুযোগ পাবে। নিয়োগ পাওয়ার পর তাদের উপর গবেষণা করার চাপ এবং গবেষণা করতে পারলে রিওয়ার্ড নিয়ত যুগপৎ বজায় রাখতে হবে। প্রমোশনের ক্ষেত্রে বয়স বা অভিজ্ঞতার চেয়ে যোগ্যতাকেই মূল মানদন্ড হিসাবে বিবেচনা করতে হবে যাতে ৩০ বছরের একজন গবেষক ৫০ বছরের গবেষককে কাজের দ্বারা ডিঙাতে পারে।

সেই ইনস্টিটিউটে বিশ্ব মানের পিএইচডি প্রোগ্রাম চালু করতে হবে। বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী ফেললোশিপের অধীনে যেই কোটি কোটি টাকা দিয়ে বিদেশে মাস্টার্স আর পিএইচডি করতে পাঠানো হয় সেই পরিমান টাকার ফেলোশিপ দিয়ে পিএইচডি প্রোগ্রাম চালু দেশ বিদেশের যোগ্য গবেষকরা পিএইচডি করতে আগ্রহী হবে। সেখানে প্রচুর বিশ্বমানের পোস্ট-ডক নিয়োগ দিতে হবে এবং তাদের ফেলোশিপের পরিমানও বিশ্বমানের হতে হবে।

এইরকম একটা ইনস্টিটিউটই হতে পারে দেশের উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেমন বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা ইনস্টিটিউটেটি জন্য শিক্ষক ও গবেষক তৈরির কারখানা। এর মাধ্যমে দেশে গবেষণার একটি পরিবেশ সৃষ্টি হবে। এইরকম একটি ইনস্টিটিউট যখন দেশে থাকবে তখন দেশে আন্তর্জাতিক মানের বিজ্ঞানী থাকবে যাদের অবস্থানের কারণে দেশের সামগ্রিক পরিবেশেরও পরিবর্তন আসবে। সত্যিকারের আন্তর্জাতিক মানের একটি ইনস্টিটিউট দেশের মান বৃদ্ধিতেও কাজে লাগবে। উন্নত দেশ হওয়ার জন্য এর কোন বিকল্প নেই।

বর্তমানে যেইসব সরকারি গবেষণা ইনস্টিটিউট আছে সেগুলো ধানের চোঁচার মত। বাহির থেকে দেখতে ধানের মত লাগলেও ভিতরে চাউল নেই। আমাদের দেশের গবেষণা ইনস্টিটিউটগুলোতে সায়েন্টিস্ট, প্রিন্সিপাল সাইন্টিস্ট দিয়ে ভরা যাদের অধিকাংশেরও পিএইচডি নেই। আর পোস্ট-ডক rarely দুয়েকজনের থাকলেও থাকতে পারে। অথচ ভারতের যেকোন একটি ইনস্টিটিউটের দিকে তাকান। বেশিদূর যেতে হবে না।

কলকাতার বোস ইনস্টিটিউট বা Indian Association for the Cultivation of Science কিংবা সাহা ইনস্টিটিউটের দিকে তাকান। সেখানে শত শত গবেষক পিএইচডি করছে। সেখানে একেকটিতে ৪০ থেকে ১০০ জন বা তারও বেশি পোস্ট-ডক কাজ করছে। সেখানে যারা গবেষক হিসাবে কর্মরত তাদের প্রায় কেবল পিএইচডি না একাধিক পোস্ট-ডক্টরাল অভিজ্ঞতা আছে। আমাদের এখানে মাস্টার্স ডিগ্রিধারী প্রিন্সিপাল সায়েন্টিস্ট হয়ে বসে আছে। এখান থেকে বের হয়ে না আসতে পারলে দেশের শিক্ষার মান কোনদিন ভালোর দিকে যাবে না।

একটা আন্তর্জাতিক মানের গবেষনা ইনস্টিটিউটই হতে পারে মানসম্পন্ন শিক্ষা বিস্তারের বীজতলা। এটি এমন একটি ইনস্টিটিউট হবে যেখানে চাকুরী পাওয়ার স্বপ্ন নিয়ে বড় হবে আমাদের স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বর্তমানে বড় হওয়ার জন্য বড় স্বপ্ন নেই তাদের। বিসিএস ক্যাডার হওয়ার স্বপ্ন সত্যিকারের বড় হওয়ার স্বপ্নকে ছিনতাই করে নিয়েছে।