গতকাল পর্দা উঠেছে দুনিয়ার খেলাধুলার ইতিহাসে সবচেয়ে খরুচে ফুটবল বিশ্বকাপের আসর।

ফুটবল বিশ্বকাপ, অলিম্পিক থেকে শুরু করে আর সব খেলার সমস্ত বৈশ্বিক প্রতিযোগীতাই শুধু নয়, আর কোন ইভেন্টেই এত বিপুল খরচ আর কখনো দেখেনি দুনিয়ার মানুষ।

সেই ২০১০ সালে যখন ২০২২ বিশ্বকাপের (এবং ২০১৮ বিশ্বকাপের) আয়োজক দেশ সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, তখন কাতারের মত আগ্রহ দেখিয়েছিলো জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র।

এই দেশগুলোর নিয়মিত বিশ্বকাপে অংশ নেয়ার অভিজ্ঞতাই শুধু নয়, তাদের তখনই ছিল ডজনেরও বেশি স্টেডিয়াম।

সেখানে কাতারে ছিল সাকুল্যে একটি স্টেডিয়াম। কাতার অবশ্য জানিয়েছিলো, “If you come, we will build it.” সবাইকে অবাক করে দিয়ে কাতার আয়োজক হয়ে যায়।

ফিফার বিডিং কমিটির অফিসিয়ালদের কয়েক মিলিয়ন ডলার ঘুষ দেয়ার অভিযোগ উঠেছিলো। তৎকালীন এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশনের কাতারী সভাপতি মোহাম্মাদ বিন হাম্মামের মাধ্যমে এই ঘুষ লেনদেন হয়েছিলো বলে অভিযোগ।

সেই অভিযোগের প্রেক্ষিতে ফিফা এথিকস তদন্ত কমিশনও গঠন করেছিলো, যদিও শেষ পর্যন্ত প্রমাণের অভাবে ঐ তদন্ত কমিশন অভিযোগকে খারিজ করে দেয় এই বলে যে, Qatar “pulled Aspire into the orbit of the bid in significant ways” but did not “compromise the integrity” of the overall bid process।

এই এথিকস তদন্ত প্রতিবেদনকে বিশ্বাস দুনিয়ার কম মানুষই করে, পাকা দুর্নীতিবাজরা সাধারণত প্রমাণ রেখে কাজ করে না। তার উপরে ফিফার ঐ আমলের রাঘব বোয়ালরা আরেক দুর্নীতির ঘটনায় ঠিকই ফেঁসে গিয়ে দায়িত্বচ্যুতও হয়েছিলো!

শুধু আয়োজক হওয়াতেই কেন, কাতার ভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল আল জাজিরাও বিশ্বকাপের টিভি সত্ত্ব পাওয়ার জন্যে ফিফাকে ৩০০ মিলিয়ন ডলারের ঘুষ সেধেছিলো বলেও লিকড হওয়া ডকুমেন্টসের বদৌলতে জানিয়েছিলো সানডে টাইমস পত্রিকা!

যাই হোক, ফিফা বিশ্বকাপ ২০২২ এর আয়োজক হয়েছে ১১ হাজার ৫৮১ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এবং প্রায় ২৮ লাখ মানুষের দেশ কাতার (আমাদের এক ঢাকা বিভাগের আয়তন ২০ হাজার ৫০৯ বর্গ কিলোমিটার, ২০১১ সালের আদমশুমারিতেই জনসংখ্যা ছিল ৩ কোটি ৬৪ লাখের বেশি)।

এবং তারা এই ১২ বছরের মাঝে তৈরি করেছে ৭টি নতুন স্টেডিয়াম এবং পুরাতন স্টেডিয়ামটিকেও আধুনিকায়ন করেছে (শুরুতে পরিকল্পনা ছিল ১২ স্টেডিয়ামের, সেটা ৮-এ এসে থেমেছে)।

সেই সাথে স্টেডিয়াম ৮ টিতে যাতায়াতের জন্যে বানিয়েছে সম্পূর্ণ অটোমেটেড মেট্রো। উদ্বোধনী ও ফাইনাল ম্যাচ হবে যেই স্টেডিয়ামে, সেই লুসাইল স্টেডিয়ামের আশেপাশে একটা নতুন শহর, লুসাইল সিটিই গড়ে তুলেছে।

খেলোয়াড় ও সমর্থকদের জন্যে আবাসন ব্যবস্থা, হোটেল- ইত্যাদি। আর, এই বিশাল কর্মযজ্ঞে তাদের খরচ হয়েছে ২২০ বিলিয়ন ইউএসডলার। ব্লুমবার্গের তথ্য মতে যদিও এই খরচ ৩০০ বিলিয়ন ইউএস ডলারও ছড়িয়ে যেতে পারে।

মরুর দেশ কাতারে বিশ্বকাপ আয়োজনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাঁধা ছিল দেশটির মাত্রাতিরিক্ত গরম। গ্রীষ্মে তাপমাত্রা থাকে ৪৩ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড, মাঝে মধ্যে সেটা পৌঁছায় ৫০ ডিগ্রীতেও।

অথচ, ফিফা প্রথমে সেই গ্রীষ্মেই বিশ্বকাপ আয়োজনের অনুমতি দিয়েছিলো। পরে অবশ্য তৎকালীন সভাপতি সেপ ব্ল্যাটার সহ ফিফার অনেক হর্তাকর্তাই কাতারকে আয়োজক বানানোর সিদ্ধান্তকে “ভুল” হিসেবে স্বীকার করেছে।

ফিফাও শেষ পর্যন্ত সূচী পাল্টিয়ে শীতকালে (নভেম্বর-ডিসেম্বরে) নিয়ে গিয়েছে, কিন্তু এই শীতেও সেখানকার তাপমাত্রা থাকবে ২৫-৩০ ডিগ্রীর উপরে। সেই সাথে ৪০-৮০ হাজার দর্শক যখন একসাথে স্টেডিয়ামে হাজির হবে, মানুষের শরীর থেকে বের হওয়া জলীয় বাষ্প, কার্বন ডাই অক্সাইড আর উষ্ণতা যুক্ত করলে খেলা এবং খেলা দেখাটা সহজ হওয়ার কথা নয়।

এর সমাধানে কাতারের স্টেডিয়ামগুলোকে করা হয়েছে সম্পূর্ণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। কেন্দ্রীয় এয়ার কণ্ডিশনিং সিস্টেম আর মাঠের চারদিকের স্ট্যাণ্ডে থাকা বড় বড় এয়ার ডাক্টের মাধ্যমে মাঠের তাপমাত্রা রাখা হবে ২০ ডিগ্রী আর গ্যালারিতে থাকবে ১৮ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড।

কাতারে স্টেডিয়ামের এয়ার কুলার সিস্টেম

এসব কিছুই আসলে খরচকে এমন আকাশ ছোয়া করেছে।

এই ২২০ বিলিয়ন ডলার খরচ আসলে কত বড়?

আমাদের বাংলাদেশের গত ৪ বছরের বাজেট এর কাছাকাছি। সাউথ আফ্রিকা বিশ্বকাপ-২০১০ এর খরচ ছিল ৩.৬ বিলিয়ন ডলার, অর্থাৎ কাতার বিশ্বকাপ-২০২২ এর খরচে ৬১ টা দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপ-২০১০ আয়োজন করা সম্ভব হবে।

সর্বশেষ রাশিয়া বিশ্বকাপ-২০১৮ এর খরচ ছিল ১১.৬ বিলিয়ন ডলার। যে ব্রাজিল বিশ্বকাপ নিয়ে সমালোচনা, বিক্ষোভের অন্ত ছিল না, মারাত্মক খরচের কারণে, সেটাতেও খরচ হয়েছিলো ১৫ বিলিয়ন ডলার।

বিশ্বকাপ আয়োজনের খরচ

সবচেয়ে বড় স্পোর্টস ইভেন্ট, যেখানে অনেকগুলো ও অনেক ধরণের খেলা একসাথে চালাতে হয়, গোটা দুনিয়ার অনেক বেশি দেশ যেখানে অংশ নেয়, ফলে ঐতিহাসিকভাবেই যে অলিম্পিক আয়োজনেই সবচেয়ে বেশি খরচ হয়ে এসেছে, সেখানেও আসলে খরচ কেমন হয়?

২০১৬ সালের রিও ডি জেনারিও সামার অলিম্পিকের খরচ ১৩.১ বিলিয়ন ডলার, গত বছরের টোকিও সামার অলিম্পিকের খরচ ছিল ১৫.৪ বিলিয়ন ডলার।

এ বছরের শুরুতে বেইজিং উইন্টার অলিম্পিকে খরচ হয়েছিলো ৩.৯ বিলিয়ন ডলার।

দুদিন আগে একটা আলোচনা দেখেছিলাম। জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ। মানব ইতিহাসের সবচেয়ে নিখুঁত এক প্রকল্প। পৃথিবী থেকে ১৫ লাখ কিলোমিটার দূরের কক্ষপথে স্থাপন করার কারণে- কোন রকম রক্ষণাবেক্ষণ, আপগ্রেড, ত্রুটি সংশোধন সম্ভব হবে না বিধায়, একদম নিখুঁত করে তৈরি করা হয়েছে এই স্পেস টেলিস্কোপ। ফলে, খরচ বেড়েছে অনেক।

কিন্তু, এই টেলিস্কোপের আয়ুস্কাল ধরা হয়েছে ৫ থেকে ১০ বছর। ১০ বছর পরে মহাকাশযানের জ্বালানি (প্রোপেলেন্ট) শেষ হয়ে গেলে, একই কক্ষপথে থাকবে না, ফলে কোথায় কোন দূরে চলে যাবে যে, পৃথিবীর সাথে আর যোগাযোগই থাকবে না।

তো, সেই আলোচনায় আলোচকরা জেমস ওয়েব নিয়ে মারাত্মক উচ্ছ্বসিত হলেও- এই একটা ব্যাপারেই একটু গাইগুই করছিলেন। এত এত বিলিয়ন ডলার খরচ করে এমন গবেষণা আসলেই কতটুকু জরুরী?

তাও মাত্র ১০ বছরের জন্যে? যেখানে দুনিয়ার কত মানুষের অবস্থা কত সঙ্গীন! ইত্যাদি। সেই জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের খরচ আসলে কতখানি? ১০ বিলিয়ন ডলার।

অর্থাৎ, কাতার বিশ্বকাপের খরচ দিয়ে ২২টি জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ পাঠানো সম্ভব! সেই জেমস ওয়েব টেলিস্কোপের আয়ুস্কাল তবু ১০ বছরের।

কিন্তু, এই স্টেডিয়ামগুলোর? মাত্র ২৮ লাখ মানুষের কাতারের তো এতগুলো স্টেডিয়ামের কোন দরকার নাই যে, তারা বিশ্বকাপের পরেও সেগুলোকে ব্যবহার করবে!

ব্রাজিলের মত ফুটবল পাগল নেশনের ক্ষেত্রেই যেরকম বিশ্বকাপে আলিশান স্টেডিয়ামগুলো নিয়ে করা হবে- সেটা একটা বড় মাথাব্যথার কারণ ছিল, এখানে সেটা আরো বেশী।

কেননা, এই স্টেডিয়ামগুলো পোষা হচ্ছে হাতি পোষার মত। অনেক দেশ তো অলিম্পিক বা ফুটবল বিশ্বকাপ শেষে বাড়তি স্টেডিয়ামকে পরিত্যক্ত হিসেবে ফেলেই রাখে, কেউ কেউ ট্যুরিস্ট স্পট বানিয়ে ফেলে- কেননা স্টেডিয়াম ডিসমেন্টাল করাও বিশাল খরচের ব্যাপার।

স্টেডিয়ামগুলোর অবস্থান ও আসনসংখ্যা

কাতার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, বিশ্বকাপের পরে ৮ স্টেডিয়ামের মধ্যে ৩টি তারা রাখবে, বাঁকি ৫টি ডিসমেন্টাল করবে বা অন্য উদ্দেশ্যে ব্যবহার করবে! মাত্র এক-দেড় মাসের জন্যে কি বিপুল খরচ, চিন্তা করা যায়!

কাতারের প্রাকৃতিক গ্যাস আর তেল বেচা টাকা আছে। দেশটাও খুবই ছোট, জনসংখ্যা খুবই কম। ফলে, টাকার জোর থাকলে কি করা যায় – সেটাই দেখা যাচ্ছে!

কিন্তু, এটাই শেষ খরচ নয়! এই ২২০ বিলিয়ন ডলারের চাইতেও আরো বড় খরচ করেছে কাতার। তা হচ্ছে মানুষের জীবন!

২০২১ সালের গার্ডিয়ান পত্রিকার খবর অনুযায়ী, এই বিশ্বকাপ আয়োজন উপলক্ষে কাতারে যে ইনফ্রাস্টাকচার (স্টেডিয়াম, মেট্রো, দালানকোঠা, সিটি) গড়ে তুলতে হয়েছে, সেই কনস্ট্রাকশনের কাজে মারা গিয়েছে ৬৫০০ জন শ্রমিক, যারা মূলত নেপাল, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, ভারতের মত দেশগুলো থেকে যাওয়া প্রবাসী শ্রমিক।

ভালো সম্ভাবনা আছে যে, এই ৬৫০০ জন শ্রমিকের মধ্যে সবাই বিশ্বকাপ উপলক্ষে কনস্ট্রাকশন কাজে নয়, বরং ২০১১ সাল থেকে মারা যাওয়া এই শ্রমিকদের মাঝে অন্য শ্রমিকও থাকার সম্ভাবনা থাকতে পারে।

তবে, এটা ঠিক যে – এই সময়কালে কাতারে বিশ্বকাপ উপলক্ষেই ব্যপক কর্মযজ্ঞ শুরু হয়, যার জন্যে প্রচুর প্রবাসী শ্রমিককে আনা হয়েছিলো, এবং বিশ্বকাপের আগেভাগেই কাজ শেষ করার জন্যে তাদের উপরে কাজের চাপটাও ছিল সর্বাধিক।

তারচেয়েও বড় কথা, কাতার এই অভিযোগ অস্বীকার করলেও, কোন রকম তদন্ত করার কাজে তারা যায়নি।

সরকারের কমিউনিকেশন অফিসিয়ালসের ভাষ্যমতে, “Although each loss of life is upsetting, the mortality rate among these communities is within the expected range for the size and demographics of the population.”

আইএলও অবশ্য এমন দাবি অস্বীকার করে জানিয়েছে, মধ্যপ্রাচ্য জুড়েই প্রবাসী শ্রমিকদের মধ্যে মৃত্যুর হার স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশী।

কাতারের এক ওয়েব সাইট থেকে পেলাম, ২০১১ থেকে ২০২০ পর্যন্ত নন-কাতারি জনগোষ্ঠী মারা গিয়েছে ১৫৮০১ জন (পুরুষ ১২৪১২ ও নারী ৩৩৯২), সেখানে কাতারি জনগোষ্ঠী মারা গিয়েছে ৭০২৯ জন (পুরুষ ৪১৮৯ ও নারী ২৮৪০)।

সেই ডাটাশিটেই ২০২০ সালে বয়স ওয়ারি মৃত্যুর এক গ্রাফে দেখা যাচ্ছে, কাতারি জনগোষ্ঠীর মধ্যে মৃত্যুর পিক হচ্ছে ৬০ বছর থেকে ৮৪ বছর বয়সীদের মধ্যে, যেখানে নন-কাতারিদের মধ্যে এই পিক অবস্থান করছে ৩৫ থেকে ৫৪ বছর বয়সীদের মধ্যে।

অর্থাৎ কাতারি এই মৃত্যুর মধ্যে একটি বড় অংশ হচ্ছে বয়সকালের স্বাভাবিক মৃত্যু। ২০২০ সালে মৃতদের মাঝে ৪৬% হচ্ছে এশিয়ান দেশগুলোর (মূলত দক্ষিণ এশিয়ার), আর মাত্র ২৬% হচ্ছে কাতারি।

কাতারের ডেমোগ্রাফি অনুযায়ী দেশটির ৪০% আরব কাতারি, ৯% মিশরিয়ান, আর ৩৬% হচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ান।

ফলে, কাতার সরকারের দাবিকৃত এইসব কমিউনিটির ডেমোগ্রাফি আর পপুলেশন অনুযায়ী প্রত্যাশিত রেঞ্জেই মৃত্যুর দাবিটি যে সর্বৈব মিথ্যা, তা তাদের প্রকাশিত ডাটা থেকেই দেখা যাচ্ছে!

আইএলও ও এমনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল সহ বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান শুরু থেকে এই শ্রমিকদের কর্ম পরিবেশ, খুব সামান্য বেতন-ভাতা, তাদেরকে নিয়োগ প্রদানকারী কন্ট্রাক্টরদের উচ্চ ফি প্রদান- এসব নিয়েও অভিযোগ তুলে এসেছিলো।

আগামিকাল থেকে শুরু হওয়া বিশ্বকাপে খেলোয়াড়রা ২০ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেডে খেলবে, দর্শকরা ১৮ ডিগ্রীতে বসে খেলা উপভোগ করবে যে শ্রমিকদের কল্যাণে, সেই শ্রমিকদের কাজ করতে হয়েছে গ্রীষ্মের প্রখর গরমে।

সেই ৪৩-৪৪ ডিগ্রীতে ১২ ঘন্টার শিফটে হাড়ভাঙ্গা খাটুনির কাজ আর কাজ শেষে অস্বাস্থ্যকর ঘিঞ্জি ঘরে গাদাগাদি করে ঘুমানো, ছুটিছাটা বাদেই দিনের পর দিন একই রুটিন- সেই মধ্যযুগীয় খনিতে কাজ করা শেকল পরা দাসদের কথাই কেবল মনে করিয়ে দেয়!

এই জেলখানা থেকে পালিয়ে বাঁচবে, সেই উপায়ও বেশিরভাগের ছিল না, কেননা – কাতারে পৌঁছানোর পরে শুরুতেই তাদের পাসপোর্ট জব্দ করে নেয়া হয়েছিলো বলে এমনেস্টির এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

কাতার পশ্চিমা কিছু সাংবাদিককে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলো, বিশ্বকাপ উপলক্ষে তাদের প্রস্তুতি সরেজমিনে দেখিয়ে তাক লাগিয়ে দিবে- এই ছিল তাদের প্রত্যাশা।

পশ্চিমা এই মিডিয়া সেখানে গিয়ে শ্রমিকদের ইন্টারভিউ নেয়া শুরু করলে, তাদের অবস্থা নিয়ে প্রতিবেদন করতে চাইলে- দুজন সাংবাদিককে কাতার সরকার আটক পর্যন্ত করেছিলো।

পরে, তাদেরকে নিজ দেশের প্লেনে তুলে দেয়!

(পশ্চিমা মিডিয়া যে মহান উদ্দেশ্য থেকে এই কাম করছে, সেটা মনে করার কোন কারণ নাই।তারা তক্কে তক্কেই ছিল, আছে – এশিয়ান মুসলিম দেশ যে কতটুকু ব্যর্থ বা বর্বর- সেইটা যেকোন সুযোগে দেখাতে চাইবে। ঐটা আলাদা আলাপ!)

এভাবেই কাতার আয়োজন করতে চলেছে ফিফা বিশ্বকাপ-২০২২। আগামিকাল থেকে শুরু হচ্ছে এবারের আসর। গোটা দুনিয়াই বিশ্বকাপের দুর্দান্ত ফুটবল শৈলী আর টান টান উত্তেজনার ম্যাচগুলোতে মজে যাবে, মেতে উঠবে! সবার মত আমিও অধীর আগ্রহে বসে আছি।

লাতিন ফুটবলের মুগ্ধ সমর্থক হিসেবে ২০ বছরের অপেক্ষা এবারই কাটবে, ২০ বছর পরে ইউরোপের বাইরে কাপ যাবে! অনেক বছর বাদে ব্রাজিল ভয়ানক শক্তিশালী দল গড়েছে, আর্জেন্টিনা দলটাও দারুণ গোছানো ফুটবল খেলছে অনেকদিন।

ফলে, আশায় বুক বাঁধছি। সেনেগাল, ঘানা, মেক্সিকো, উরুগুয়ে, ইরান, কোরিয়ার মত দেশগুলো ইউরোপিয়ান জায়ান্টদের বেকায়দা ফেলুক, খুব করে চাচ্ছি।

মেসি – ডি ব্রুইনা – নেইমার – এমবাপ্পে – লেভানডস্কিরা কি জ্বলে উঠবে? সালাস – জামারানো – হামেস রদ্রিগেজ – এমবাপ্পেদের যেমন বিশ্বকাপের মঞ্চেই চিনেছি, এবারে কিসেরকম নতুন কোন তারকার আবির্ভাব ঘটবে?

এসব মিলিয়েই আসলে বিশ্বকাপ ফুটবল নিয়ে দারুণ একটা মাস কেটে যাবে আমার! আমার মতই দুনিয়ার কোটি কোটি মানুষের।

শুধু, এই মাসব্যাপী ফুটবলানন্দের দামটা যে কতটুকু চড়া – সেখান থেকে যাতে বিস্মৃত না হই, সেকারণেই দাম সম্পর্কে এই লেখাটা লিখে রাখলাম।

লেখকঃ অনুপম সৈকত শান্ত