আমাদের দেশে দুটো আন্তর্জাতিক বিশ্বববিদ্যালয় আছে। এর একটি হলো IUT বা ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজি। এটি ঢাকার পাশেই গাজীপুরে অবস্থিত। এত organization of islamic cooperation বা OIC-র একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান। তেল সমৃদ্ধ দেশের পৃষ্টপোষকতা থাকলেও এখানে পড়াশুনা বেশ ব্যয়বহুল। প্রতি ছাত্রের পেছনে খরচ হবে প্রায় ১৫ হাজার থেকে ২৫ হাজার ডলার। যদিও টাকার অংক নিয়ে আমি নিশ্চিত নই। কম বেশি হতে পারে। তবে যেটাই হোক আমাদের দেশের পার্স্পেক্টিভে ব্যয়বহুল।
আইইউটি – IUT (একটি লাল স্বর্গের উপাখ্যান)

Asian University for Women AUW
আরেকটি হলো এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর ওমেন (AUW)! এটি চিটাগং-এ অবস্থিত এবং সত্যিকার অর্থেই এটি একটি আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়। এর অর্থায়নসহ অন্যান্য সহযোগিতায় আছে আমেরিকা, জাপান, ব্রিটেন, কুয়েতসহ কয়েকটি দেশ। এই দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা অনেকেই জানেন না। নাম শুনলেও বেশি কিছু জানেনা। এরা নিভৃতে চালিয়ে যাচ্ছে তাদের কার্যক্রম। কেউ কিন্তু দাবি করছে না যে “ওখানে ছাত্র ও শিক্ষক রাজনীতির অধিকার দিতে হবে”! কেউ কোনদিন কিন্তু বলেনি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বে কিন্তু সমাজ সচেতনতা শিখবে না এ কেমন শিক্ষা? ওখানে শিক্ষক নিয়োগে কি রাজনীতি আছে? ওখানকার ভিসি নিয়োগে কি রাজনীতি আছে? ওদুটোত আমাদের দেশেই এবং আমার দেশের অনেকেই ওখানে পড়ছে!
জনগণের করের টাকায় চললেই বুঝি যা ইচ্ছে তা করার লাইসেন্স পেয়ে যায়? কারো কাছে জবাবদিহি করতে হয় না। জনগণের টাকায় চলে বলেই ছাত্রদের অভিবাবকদের চাওয়ার কোন মূল্য নেই, তাদের সন্তানের জীবনের মূল্য নেই! পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো জনগণের করে চলে মানে সকলের কান্ট্রিবিউশন আছে। বাবামায়েরা সরাসরি যৎসামান্য খরচ করে বলে ক্ষমতাবানরা তাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে খেলার অধিকার পেয়ে যায়। এ গরিবের বউ সকলের ভাবি হওয়ার অবস্থা। শিক্ষক হিসাবে যাকে ইচ্ছে তাকে নিয়োগ দিলাম, শিক্ষক হয়ে, না শিক্ষক – না রাজনীতিবিদ হওয়ার সুযোগ দিলাম তাহলে কি এইভাবে আদর্শ বিশ্ববিদ্যালয় হতে পারে? অন্যের সন্তানদের লাঠিয়াল হিসাবে ব্যবহার করার অধিকার আমাদের কে দিয়েছে? একদল ছাত্রকে আরেকদল ছাত্রশিক্ষকদের হামলা করতে লেলিয়ে দেওয়ার অধিকার আমাদের কে দিয়েছে?
ন্যূনতম দায়বদ্ধতা থাকলে এইরকমটি চলতে পারতো না।
গতকাল শুনলাম আমাদের সরকার প্রধান বলছেন “সরকার টাকা দেয়”! মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কথায় কথায় টাকার খোটা দিবেন না প্লিজ!
সরকার টাকা দেয় না। জনগণ টাকা দেয়। সরকার কেবল জনগণের টাকার জিম্মাদার এবং ব্যবহার করার জন্য জনগণ কর্তৃক নিয়োজিত সেবক। সেবক হয়ে মালিকের ন্যায় কথা বলবেন না।
আমার দুই বন্ধুর দুই মেয়ে পড়ে এই দুই বিশ্ববিদ্যালয়ে। তাদের একজনকে জিজ্ঞেস করেছিলাম সে কেন IUT পছন্দ করে।
এক কথায় উত্তর: এখানে কোন রাজনীতি নাই। সন্তানকে ওখানে পাঠিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকতে হয় না। আমার ধারণা বাংলাদেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া গার্ডিয়ানদের মতামত চাইলে তারা সবাই একবাক্যে বলবে: আমরা রাজনীতি মুক্ত একটি ক্যাম্পাস চাই। এই চাওয়াটা একটু বেশি চাইল্ডিশ বা ইন্নোসেন্ট মনে হতে পারে কিন্তু এটাই সত্য। প্রত্যেক সন্তানের পিতামাতা এবং আপনজন চান তাদের ছেলেমেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করে মানুষ হবে। কথাটা কিন্তু পড়াশুনা করে মানুষ হওয়া। মানুষ হওয়া মানে কি? বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় লেজুড়বৃত্তির ছাত্ররাজনীতি না করলে মানুষ হওয়া যায় না? ছাত্ররাজনীতি করে কতজনের জীবন ধ্বংস হয়েছে? লেজুড়বৃত্তির এই ছাত্র রাজনীতি করে কতজন বড় বিজ্ঞানী, ভালো রাজনীতিবিদ, বড় অর্থনীতিবিদ, বড় ইঞ্জিনিয়ার , বড় ডাক্তার হয়েছেন? হার্ভার্ড এমআইটি ক্যামব্রিজে পড়ে কি সবাই লেজুড়বৃত্তি রাজনীতি করেই বড় হয়? যদি করত তাহলে কি এইসব বিশ্ববিদ্যালয় পৃথিবীসেরা হতে পারতো? আমাদেরকে এইসব নিয়ে ভেবে আমাদের ভবিষ্যৎ সন্তানদের সত্যিকারের শিক্ষা গ্রহণের পরিবেশ তৈরী করতে হবে। বর্তমানে যা হচ্ছে সেটা হলো তাদের ভবিষ্যৎ ধ্বংসের পরিবেশ তৈরী করেছি এবং সেই কারণেই সমাজে আজ ভালো মানুষের এত অভাব। সব চোর বাটপার লুটেরা মিথ্যুক!
– কামরুল হাসান মামুন
অধ্যাপক
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়