বাংলাদেশের মধ্যে যদি ছোট্ট একটা আলাদা জগত বলা হয় আইইউটিকে তাহলেও বোধহয় অত্যুক্তি হবে না।

সচেতন ছাত্রসমাজের কাছে আইইউটি তার স্ব-মহীমায় উজ্জ্বল। বিশেষ করে ইঞ্জিনিয়ারিং ভার্সিটিতে পড়ার স্বপ্ন যাদের, তাদের অনেকেরই প্রথম পছন্দ থাকে আইইউটি। যার পুরো নামঃ Islamic University of Technology (IUT). ঢাকার অদূরে গাজীপুর শহরের বোর্ডবাজারে এটি অবস্থিত। বিশ্ববিদ্যালয়টি মুসলিম দেশগুলোর সমন্বয়ে গঠিত আন্তর্জাতিক সংস্থা “ও আই সি” পরিচালিত এবং ও আই সি’র সেক্রেটারী জেনারেল এই ভার্সিটির চ্যান্সেলর।

এছাড়াও বাংলাদেশী ভিসি’র পাশাপাশি এখানে রয়েছেন ও আই সি নিযুক্ত একজন বিদেশী প্রো-ভিসি। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের তথ্য মোতাবেক বাংলাদেশের প্রাইভেট, পাবলিক, এবং ইন্টারন্যাশনাল এই তিন ক্যাটাগরীর ভার্সিটির মধ্যে হাতে গোনা যে কয়টি ইন্টারন্যাশনাল ভার্সিটি আছে তার মধ্যে আইইউটি অন্যতম। প্রায় তিন শতাধিক বিদেশী স্টুডেন্ট এখানে অধ্যয়নরত।

Iut

Iut

আইইউটি ক্যাম্পাসের অন্যতম প্রধান অংশঃ পাশাপাশি অডিটোরিয়াম, এডমিন বিল্ডিং এবং ক্যাফেটেরিয়া।

আইইউটিকে সুন্দরভাবে তুলে ধরতে হলে দুইটি চিত্র তুলে ধরতে হবে। একটা হচ্ছে ২০১৭ সালের আগ পর্যন্ত আইইউটি যেমন ছিল সেই রূপটা এবং পরবর্তীতে সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে সামান্য চেইঞ্জ হওয়া আইইউটি। ভালোভাবে বোঝার সুবিধার্থে প্রথমে চেইঞ্জ আসার আগের আইইউটি নিয়েই কথা বলবো। তারপর শুধু নতুন যোগ হওয়া বিষয়গুলো তুলে ধরবো।

প্রথম অংশ (২০১৭ এর আগে)

বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং এর জন্য আইইউটিতে চারটা ডিপার্টমেন্ট: কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং(CSE), ইলেক্ট্রিক্যাল এন্ড ইলেক্ট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং (EEE), মেকানিক্যাল এন্ড কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং (MCE), সিভিল এন্ড এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং (CEE)। মোট সিট সংখ্যা ২২০ যার মধ্যে ১১০ টা সিট ‘ও আই সি’ পার্শিয়াল স্কলারশীপ এর আওতায় এবং বাকিগুলো সেল্ফ ফিন্যান্স এর আওতায়। যারা পার্শিয়াল স্কলারশীপ পায়, তারা ভর্তির সময় আইইউটিকে ৬৫০০ ইউ এস ডলার পে করে এবং এর পর তাদের আর কোন খরচ বহন করতে হয় না।

কিন্তু যারা সেল্ফ ফিন্যান্স এ ভর্তি হয় তাদের ক্ষেত্রে এই ৬৫০০ ডলার এর পরেও সেকেন্ড, থার্ড এবং ফোর্থ ইয়ারে উঠার সময় আরো তিন বার ৩৫০০ ডলার করে পে করতে হয়। অর্থাৎ, সেল্ফ ফিন্যান্সে পড়তে চাইলে মোট ৬৫০০+(৩৫০০+৩৫০০+৩৫০০) = ১৭০০০ ডলার খরচ হয়। স্কলারশীপ আর সেল্ফের ব্যাপারটা এখানেই শেষ, টাকা-পয়সার লেনদেনও খতম! এর পর ক্লাস শুরুর পর থেকে পাশ করে বের হওয়া পর্যন্ত সব আইইউটিয়ানই সমান এবং সবাই হল, ক্যাফেটেরিয়া কিংবা ক্লাসরুম সবক্ষেত্রে একদম সেইম সার্ভিস পেয়ে থাকে।

টাকা পে করার পর ভার্সিটি লাইফের থাকা, খাওয়া, চিকিৎসার যাবতীয় খরচ নিয়ে আর কোন চিন্তা করতে হয় না কোন স্টুডেন্টকেই, সবকিছু আইইউটি বহন করে। পাশাপাশি প্রত্যেকেই ক্লাস শুরুর দিন থেকে কনভোকেশানের আগ পর্যন্ত প্রতি মাসে ৩০০০ টাকা করে পকেট এলাউন্স পায়।

এটা আইইউটিয়ানদের কাছে সব থেকে প্রিয় ব্যাপারগুলোর একটা! অল্পসংখ্যক স্টুডেন্ট হওয়ায় মাত্র দুইটা হল আইইউটির- সাউথ হল এবং নর্থ হল। লম্বা ভবনদুটি একপাশে আরেকটা ভবন দ্বারা কানেক্টেড হয়ে ইউ আকৃতি ধারণ করেছে। এই দুই হলের মাঝে লাল ইট বিছানো সুন্দর রাস্তাটায় বিকেলে ক্রিকেট খেলা হয়।

রাস্তার দুপাশে রয়েছে সারি সারি সুন্দর নারিকেল গাছ। হলে এক রুমে চারজন করে থাকতে হয় এবং প্রত্যকের রুমমেট থাকে শুধুমাত্র নিজের ডিপার্টমেন্টের এবং নিজ ব্যাচেরই বন্ধুরা। প্রতিটি রুমের এক কোণায় বেসিন আছে হাতমুখ ধোয়া কিংবা পানিপানের জন্য।

এছাড়া হলের প্রতিটা ফ্লোরে শীতের দিনে গরম এবং গরম এর দিনে ঠান্ডা ‘খাবার পানি’র ব্যবস্থা আছে। ক্যাফেটেরিয়ায় সকালে তেহারি, খিচুড়ির সাথে গরুর মাংস কিংবা আনলিমিটেড ব্রেড, বাটার, জেলি এবং ডিম থাকে। দুপুর এবং রাতে থাকে ভাত/পোলাও/রুটি এবং গরুর মাংস, মুরগীর মাংস। সপ্তাহে একদিন খাসীর মাংস থাকে। শুক্রবার রাতে থাকে সকলের জন্য চাইনিজ আইটেম, যা অনেকের কাছেই খুব প্রিয়! এছাড়া রমজানে মাসে থাকে বিখ্যাত খাবার হামুস।

আবাসিক হল এবং একাডেমিক বিল্ডিংয়ের মাঝের চিত্র।

আইইউটির হলে প্রত্যেক রুমে প্রত্যেকটা পিসি’র জন্য রয়েছে ব্রডব্যান্ড কানেকশান। আছে ল্যানের মাধ্যমে যেকোন কিছু শেয়ারের ব্যবস্থা। আইইউটির যেকোন রুমে বসে এর মাধ্যমে অন্য যেকোন রুম থেকে শেয়ার করা ফোল্ডার কপি করা কিংবা মুভি দেখা যায় অনায়াসেই। অনলাইন গেমের জন্য আইইউটির হলকে স্বর্গরাজ্য বলা যায়। কিছু ছেলেকে দেখা যায় কানে হেডফোন লাগিয়ে সারাক্ষণ গেমিংয়ে ব্যস্ত।

রাতের বেলা দশটার পর পর শুরু হয় স্ট্রীট ক্রিকেট, একাডেমিং বিল্ডিং এর সামনে এই খেলাটা উইকেন্ডের সময় সারারাত চলে। অল্প কয়টা ডিপার্টমেন্ট, অল্প স্টুডেন্ট এবং ছোট্ট সুন্দর সাজানো আবাসিকে থাকার দরুন আইইউয়ানদের ছোট-বড় সবার সাথে খুব ভালো সম্পর্ক গড়ে ওঠে। আইইউটিয়ান ব্রাদারহুড প্রতিটি আইইউটিয়ানেরই অন্য রকম আবেগ এবং গর্বের বিষয়! এটা গেলো হল লাইফের সামান্য একটা অংশ। এছাড়া আরো অনেক ইন্টারেস্টিং ব্যাপার আছে!

দ্বিতীয় অংশঃ

২০১৬ সালের শেষের দিকে এসে ভর্তির ক্ষেত্রে আইইউটি যুগান্তকারী একটি সিদ্ধান্ত নেয়। এতদিন শুধু মুসলিম দেশগুলোর মুসলিম ছাত্ররা এখানে পড়ার সুযোগ পেত, কোন ছাত্রী পড়তে পারতো না। ২০১৬ সালের ভর্তি পরীক্ষায় প্রথমবারের মত ছাত্রীদেরকে ভর্তি পরীক্ষার অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়া হয় এবং সব ডিপার্টমেন্টেই বেশ কিছু সিট বাড়ানো হয়। সর্বশেষ ২০১৭ সালের ভর্তি পরীক্ষার নোটিশ অনুযায়ী আগের চারটা ডিপার্টমেন্টের পাশাপাশি এদেশের স্টুডেন্টদের ডিমান্ডের কথা চিন্তা করে খোলা হয়েছে নতুন আরো দুটি ডিপার্টমেন্ট- সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং এবং বিটিএম।

এখন ছয়টা ডিপার্টমেন্টে মোট সিটসংখ্যা ৬৩০ যার মধ্যে স্কলারশীপ আগের মতই ১১০ টা এবং বাকি সবগুলো সেল্ফ ফিন্যান্স এর আওতায়। আগে ভর্তি পরীক্ষার জন্য যারা আবেদন করতো তাদের মধ্য থেকে বেছে বেছে ২০০০ থেকে ২৫০০ জনকে পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ দেয়া হতো, কিন্তু এখন বেশী সিটের কারণে ৫০০০+ জনকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়া হয়। তাছাড়া বাকি সব কিছুই আগের মতোই আছে। ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ইংরেজীতে হয়, বাংলা অনুবাদ থাকেনা কোন প্রশ্নের। এখন যেহেতু ছাত্র সংখ্যা বেড়ে গেছে তাই সবাই হলে জায়গা পায় না।

এক্ষেত্রে দূরবর্তী ছাত্রদেরকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়। মেয়েদের জন্য সুন্দর হল নির্মাণ করা হয়েছে, ২০১৮ সালের জানুয়ারিতেই তারা হলে সিট পেয়ে যাবে। এছড়াও সব ক্লাসরুমকেই স্মার্ট ক্লাসরুমে পরিণত করার প্রক্রিয়াও প্রায় শেষ। দ্বিতীয় অংশের আলোচনায় এটুকু পরিষ্কার বোঝা গেল যে, আইইউটির সবকিছু প্রায় আগের মতই আছে, শুধু ব্রাদারহুডের পাশাপাশি সিস্টারহুডও চলে এসেছে এবং দুটো নতুন ডিপার্টমেন্টসহ কিছু সিট বেড়েছে।

আর যেহেতু সবাই হলে থাকতে পারবেনা সেহেতু রেসিডেন্সিয়াল এবং নন রেসিডেন্সিয়াল সিস্টেম চালু আছে, যার যেটা ইচ্ছা চয়েস করতে পারে। এগুলোর নিয়ম-কানুন খরচের বিভিন্নতা বিস্তারিতভাবে আপডেট দেয়া থাকে ওয়েবসাইটে।

আরো কিছু কথাঃ

আইইউটি সম্পর্কে আরো কিছু মজার তথ্য আছে। এই ছোট্ট সুন্দর ক্যাম্পাসের ডিজাইন করেন টার্কিশ আর্কিটেক্ট পামির মেহমুত, যিনি একজন এম আই টি গ্রাজুয়েট ছিলেন। গেট থেকে শুরু করে মসজিদ, ফাইভ পিলার্স, এডমিন বিল্ডিং, একাডেমিক বিল্ডিং, ল্যাব, ক্যাফেটেরিয়া, হল, ইনডোর গেমিং জোন, লন্ড্রী, টিচার্স কোয়ার্টার সবকিছুই সুন্দর করে বিশেষ ধরনের লাল ইট দিয়ে তৈরী। এমনকি আইইউটিতে কোথাও কোন কংক্রিট কিংবা বিটুমিনের রাস্তা নেই, সব রাস্তাই ইটের।

এককথায় সবুজ বিশাল মাঠ, “ও আই সি” ট্রি পার্ক, লেক আর সুন্দর সুন্দর ফুলগাছগুলো বাদ দিলে পুরো ক্যাম্পাসই শুধু লাল আর লাল। তাইতো আইইউটিকে বলা হয় রেড হ্যাভেন বা লাল স্বর্গ। বাস্কেটবলের জন্য আছে সুন্দর উডেন কোর্ট, আছে অনেকগুলো টেবিল টেনিস জোন, জিমনেশিয়াম এবং নেটে ঘেরা সুন্দর একটি লন টেনিস গ্রাউন্ড। এছাড়া ক্রিকেট এবং ফুটবল যারা খেলে তাদের জন্য তো আইইউটি লাইফটা এক কথায় জোশ!

ডিপার্টমেন্টাল টুর্নামেন্ট, ইয়ার ভিত্তিক টুর্নামেন্ট, কান্ট্রিভিত্তিক ফুটবল টুর্নামেন্টসহ বহু ম্যাচ হয় আইইউটিতে। খেলাগুলোয় বাংলাদেশী আইইউটিয়ানদের পাশাপাশি বিদেশী খেলোয়াড়্গুলোর নান্দনিক এবং এগ্রেসিভ খেলা দুইটা বিষয়ই চোখে পড়ার মতো।

বার মাসে তের পার্বণের বাংলাদেশের এক কোণায় ছোট্ট আইইউটিতে উৎসব যেন লেগেই থাকে। একেকটা ডিপার্টমেন্ট এর উদ্যোগে বছরে একটা করে মোট চারটা ফেস্ট থাকে যেখানে সারা দেশের বিভিন্ন ভার্সিটির হাজার হাজার স্টুডেন্ট অংশগ্রহণ করে এবং প্রতিটা ফেস্টে লক্ষ লক্ষ টাকার পুরস্কার দেয়া হয়।

আইইউটিতে আছে অনেকগুলো সোসাইটি। ইসলামিক নলেজ সিকার্সদের জন্য এস আই কে এস, ডিবেটারদের জন্য রয়েছে ডিএস, এছাড়া রোবোটিক সোসাইটি, কম্পিউটার সোসাইটি বিজনেস আইডিয়া বিষয়ক সোসাইটি সহ বিভিন্ন সোসাইটিগুলো ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশুনার পাশাপাশি অন্যান্য ক্ষেত্রেও সেরাদের সেরা হয়ে উঠতে ব্যাপক অবদান রাখে।

আর দেশবিখ্যাত অনেক ফটোগ্রাফারের আঁতুড়ঘর আইইউটি ফটোগ্রাফিক সোসাইটি তো সবাই চেনে। আইইউটির ছাত্র-ছাত্রীদের লেখা প্রকাশের জন্য রয়েছে দৈনিক আইইউটি ব্লগ। প্রায় প্রতিটা আইইউটিয়ানই পড়াশুনার পাশাপাশি কোন না কোন কো-কারিকুলার এক্টিভিটিতে অংশগ্রহণ করে।

এবার আসি পড়াশুনার বিষয়ে। জানুয়ারীর শুরুতেই ক্লাস শুরু হয় এবং দশ মাসে দুই সেমিস্টার কম্পপ্লিট করতে হয়। নভেম্বর-ডিসেম্বর দু’মাস টানা বন্ধ থাকে আইইউটি। সারাবছরে আর বড় ছুটি ভাগ্যে জোটে না কারো! ঈদুল আজহা বা ঈদুল ফিতরেও তাই সাত দিন ছুটি পাওয়া মানে বিরাট ব্যাপার।

মিডটার্ম বা সেমিস্টার ফাইনালের আগে পি এল বলে কিছু নেই। সর্বোচ্চ তিন-চার দিন ছুটি থাকে। মিডটার্মে প্রতিদিন পরীক্ষা হলেও সেমিস্টার ফাইনালে প্রতি পরীক্ষার আগে একদিন করে ছুটি থাকে। শুধুমাত্র উইকেন্ডের পর যে কোর্সের পরীক্ষা থাকে, সেটার আগে দুইদিন ছুটি মেলে ভাগ্যজোড়ে!

আইইউটির সবকিছুর শিডিউল ফিক্সড। ভর্তির পর পড়াশুনা করলে ঠিক তিন বছর দশ মাস লাগে ইঞ্জিনিয়ার হতে। প্রতিবছর নভেম্বরের মাঝামাঝিতেই কনভোকেশানের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে এক একটা ব্যাচের ছাত্রদের বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ হয় এবং তার পরেই নতুন ব্যাচের জন্য ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।

সত্যি কথা বলতে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের তুলনায় আইইউটি লাইফটা কিছু বুঝে ওঠার আগেই শেষ হয়ে যায়। ফার্স্ট ইয়ারে পাওয়া ফ্রেশার্সের টি-শার্টটা পুরোনো হতে না হতেই গায়ে জড়াতে হয় ফেয়ার ওয়েলের টি শার্ট।

 

ইসলামের পাঁচটা স্তম্ভ তাই এখানে গেটের মতো করা হয়েছে পাশাপাশি পাঁচটা পিলার দিয়ে

ইসলামের পাঁচটা স্তম্ভ তাই এখানে গেটের মতো করা হয়েছে পাশাপাশি পাঁচটা পিলার দিয়ে

এই ছিল আইইউটি তথা লালস্বর্গের খন্ড খন্ড কিছু চিত্র। পরিচিত অপরিচিত নির্বিশেষে শুধুমাত্র আইইউটিয়ান পরিচয়টাই প্রতিটি আইইউটিয়ানের সাথে অন্যদের পারস্পারিক ভ্রাতৃত্বের জন্য যথেষ্ট। এক্স আইইউটিয়ানদের একটা বড় অংশ আমেরিকা, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া সহ বিভিন্ন দেশে উচ্চশিক্ষার জন্য অবস্থান করছেন, কেউ কেউ পড়াশুনা শেষ করে শুধু চাকুরীতে মনোনিবেশ করেছেন। এছাড়া অনেকেই দেশের কর্পোরেট জগতে কিংবা সরকারী সেক্টরে ক্যারিয়ার গড়েছেন। যে যেদিকেই যাক, প্রতিটা আইইউটিয়ানই সিনিয়রদের কাছ থেকে পেয়ে থাকে অফুরন্ত সহযোগীতা এবং ভালোবাসা।

ছোটদেরও আন্তরিক শ্রদ্ধাবোধ আর ভালোবাসায় গড়ে ওঠা আইইউটিয়ান ব্রাদারহুড সত্যিই প্রশংসনীয়। আসলে আইইউটি সম্পর্কে লিখে শেষ করা যাবেনা। শুরুতে আইইউটিকে কেন ভিন্ন একটা জগত বলেছিলাম তার আরও একটা কারণ বলি। এখানে সব ধরনের রাজনীতি নিষিদ্ধ এবং কোন দলাদলি নিয়ে ঝামেলা নেই।

বাংলাদেশে যতই হরতাল অবরোধ চলুক, কিংবা ক্রান্তিকাল যাক, আইইউটির শিডিউল আপন গতিতে চলতে থাকে। প্রোটক্টেড ক্যাম্পাস সম্পূর্ণ ঝামেলামুক্ত থাকে সব সময়।

হলে থেকে বুঝারও উপায় নেই যে বাইরে কি চলছে। গাজীপুরের জরাজীর্ণ বোর্ড বাজারে যতই ধূলাবালি, আবর্জনা আর ট্রাফিক জ্যাম থাকুক না কেন, আইইউটি গেট দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করলেই সবুজ মাঠ পেরিয়ে লাল লাল ভবনগুলোর ভিতরে সব সময় থাকে শুনশান নীরবতা, স্বর্গীয় শান্তি। এ যেন সত্যিই লালরাঙা এক স্বর্গ!!

Written by: জাফর আহমদ (Zafor Ahmad), CEE’14, IUT