এই লেখাটা যারা নিজে খুঁজে পড়বে, আমার বিশ্বাস তারা সবাই এডমিশন প্রস্তুতি নিচ্ছো এবং ইতিমধ্যে এইচএসসি শেষ হয়েছে। এখন সময় নষ্ট করার কোন সুযোগ নেই। তাই যারা সায়েন্স পড়ছো  এবং ইঞ্জিনিয়ারিং টার্গেট রাখছো তাদের জন্য কিছু টিপস আমি পয়েন্ট আউট করে দিচ্ছি:

  • স্টপ ওয়াচ ধরে দিনে ১০ থেকে ১২ ঘন্টা পড়ার চেষ্টা করো
  • সবার আগে কোশ্চেন ব্যাংক সলভ করে ফেলো। কোশ্চেন ব্যাংক সলভিং সিকোয়েন্স: ভারসিটি কোশ্চেন ব্যাংক- ঢাবি কোশ্চেন ব্যাংক- ইঞ্জিনিয়ারিং কোশ্চেন ব্যাংক- বুয়েট প্রিলি কোশ্চেন ব্যাঙ্ক- সিকেরুয়েট কোশ্চেন ব্যাংক- বুয়েট রিটেন কোশ্চেন ব্যাংক।
  • ম্যাথ এ ইম্পর্টেন্স দাও, কেতাব স্যারের বইয়ের সব ম্যাথ সলভ করো।
  • হাতের লেখা একদম ছোট করে ফেলো।
  • বুয়েট প্রিলির আগ পর্যন্ত ক্যালকুলেট ছাড়া কোশ্চেন ব্যাংক সলভ করতে থাকো। সব ম্যাথই হাতে করার চেষ্টা করো।
  • টাইমার ধরে কোশ্চেন ব্যাংকের mcq গুলো সলভ করো।
  • বাসায় একজন হোম টিউটর থাকাটা জরুরী। কারণ পড়তে যেয়ে প্রচুর প্রবলেম তৈরি হবে যেগুলো পার্সোনালি ক্লিয়ার করা প্রয়োজন। [বাসায় না থাকলে আমাদের এখানে যোগাযোগ করতে পারো]
  • উদ্ভাসের এক্সাম এর ধরন একবার ধরতে পারলে উদ্ভাসের এক্সামে তোমার হাতে প্রচুর টাইম থাকবে। এটা খুবই উপযোগী ট্রিকস। কারণ যে কোনো এডমিশন এক্সামে কখনোই সময় এক্সট্রা থাকে না।
  • যারা ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে চাচ্ছো ‘বায়োলজি হেটার’ বলে তারা দিনে অবশ্যই জিওলজি আর বোটানির প্রত্যেকটা চ্যাপ্টারের যে পার্টটা তোমার সবচেয়ে কঠিন লাগে সেটা একবার করে পড়বা এবং মুখস্ত করে ফেলবা। যেমন ‘চলন ও অঙ্গচালনা’ থেকে সব হাড়ের নাম ও সংখ্যা অথবা ‘উদ্ভিদ শারীরতত্ত্ব’ থেকে গ্লাইকোলাইসিস।  তুমি যদি এইচএসসি লেভেলে থাকো কখনো বায়োলজি ছেড়ে স্ট্যাটিস্টিক  নিও না। কারণ এডমিশনে বায়োলজি না পড়ে তুমি যতগুলো mcq একবারে দাগাতে পারবে স্ট্যাটিসটিক্স এ তার ডাবল সময়ে ক্যালকুলেশন করে ততগুলোই দাগাতে পারবে বলে আমার বিশ্বাস।
  • পানি বেশি করে খাবে। পড়ার টেবিলে পানির বোতল রাখবে। কিছুক্ষণ পরপর অল্প অল্প করে পানি খাবে। এতে বারবার ওয়াশরুমে দৌড়াদৌড়ি করতে হবে না।
  • রাতে বারোটার মধ্যে ঘুমিয়ে যাবে। সকাল সাতটার মধ্যে পড়াশোনা শুরু করার চেষ্টা করবে।
  • যারা গান শুনে পড়াশোনা করো তারা সব গানের ভোকালস অনলি ভার্সন ডাউনলোড করে সেগুলো শুনবে।
  • সম্ভব হলে বুয়েটের এক্সামগুলোর চার থেকে সাত দিন আগে ঢাকায় চলে যাবে।
  • সবগুলো এডমিশন পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন এর ডেট, এডমিট কার্ড দেওয়ার ডেট, এক্সামের ডেট, আবার এডমিশন টেস্ট সবগুলো শেষ হয়ে যাওয়ার পর প্রত্যেকটা ইউনিভার্সিটির ভাইভার ডেট রিমাইন্ডার হিসাবে এখনই সেট করে রাখো। একটা আলাদা ডায়েরি নিয়ে সেখানেও এগুলো লিখে রাখতে পারো।

যারা বুয়েট প্রিলিতে এক্সাম দিতে পারছ না:

এটা তোমাদের জন্য সিকেরুয়েটের বেস্ট অপরচুনিটি। বুয়েটের প্রিলি বা রিটেন দেওয়ার পরে সিকেরুয়েট এক্সাম দেয়ার ধৈর্য রাখাটা অনেক কঠিন। আমি নিজেই এটা ফেস করেছি। বুয়েট দিয়ে এসেও এটা ভাবার সুযোগ নেই যে, সিকেরুয়েটের সব প্রিপারেশন তোমার নেওয়া হয়ে গেছে।

FAQ: এখানে আমার পার্সোনাল তথ্যগুলো দিচ্ছি।

এসএসসি : ১২১৬

এইচএসসি : ১২৩৩

মেডিকেল এক্সাম :

  • মার্ক : ৫২.২৫
  • পজিশন : ২০৬৪২

যারা মেডিকেলেও চান্স পেতে চাও তারা এক্সামের দুই সপ্তাহ আগ থেকে ফিজিক্স আর সাধারণ জ্ঞান পড়বে।

ঢাবি : (বিজ্ঞান)

  • উদ্ভাস ফাইনাল মডেল টেস্ট : পজিশন ৪০-৬০ এর মধ্যে ছিলো।
  • Mcq : ৩৪.৫
  • রিটেন : ২০.৫
  • পজিশন: ৪১৭২

(মানবিক)

  • Mcq : ২৮.২৫ (প্রতি সাবজেক্টে আলাদা পাস করতে হয়)
  • রিটেন: ২৭
  • পজিশন : ৬৬৪

ঢাবি বিজ্ঞানে mcq এ বেস্ট এফোরট দিতে হবে। ঢাবিতে নির্দিষ্ট পরিমাণ নাম্বার না পেলে তোমার রিটেন খাতা দেখবে না। আমার সময় সম্ভবত ৩৪ মার্ক পর্যন্ত নিয়েছিল। এটা প্রতি বছর চেঞ্জ হয়। আর  খুব সমস্যা না হলে তিনটি ইউনিটেই এক্সাম দিও। কোশ্চেন পরীক্ষা শুরুর ৫ মিনিট আগে  দিয়ে  দিবে।

বারবার ঘড়ি চেক করবে। আমি আগে বায়োলজি কোশ্চেন চেক করেছিলাম আর তখনই এগারোটা কোশ্চেন অ্যানসার সহ রেডি রেখেছিলাম। বেল দেওয়ার দুই তিন মিনিটের মাঝে পুরো বায়োলজি আনসার করা হয়ে গিয়েছিল। রিটেনে কোন সাবজেক্ট আলাদাভাবে পাশ করতে হয় না কিন্তু mcq তে আলাদাভাবে পাশ করতে হয়।

এক্ষেত্রে তুমি রিটেনে যে সাবজেক্টে পাশ করতে পারবে না সে সাবজেক্ট রিলেটেড ডিপার্টমেন্টগুলো চয়েজ দিতে পারবে না। সবগুলো ইউনিটের সাবজেক্টের একটাই চয়েজ লিস্ট থাকে। আর্টস বা কমার্স এ সাইন্সের শিক্ষার্থীদের  জন্য সিট প্রায় ১/৩ ভাগ। আমার প্রথম কলে প্রিন্টিং এন্ড পাবলিকেশন্স এসেছিল।

রাবি: (আমার শিফটে)

  • এমসিকিউ: ৫৩.২৫
  • পজিশন : ৮৩৫

রাবিতে তোমার শিফটের কোশ্চেন যত কঠিন হবে সেটা তোমার জন্য তত ভালো। প্রতি শিফটে আলাদা পজিশনিং হয় আর প্রায় ১৬০০ পর্যন্ত নেয়। বিজ্ঞান আর মানবিক দুটো ইউনিটে এক্সাম দেওয়ার চেষ্টা করবে। ম্যাথ+বায়ো দাগানো ভালো, তাহলে তুমি সব সাবজেক্ট চয়েজ দিতে পারবে।

এখানে পাশ-ফেল এর বিষয়টা ইউটিউবে অনেকেই এক্সপ্লেইন করে রেখেছেন, ভালো করে দেখে নিবে। যারা ইংলিশ রিটেন এক্সাম এর জন্য সিলেক্টেড হয়েছো তারা শুধু সিনোনিম এন্টোনেম ভালো করে পড়বা আর ফ্রি হ্যান্ড রাইটিং একদম নিজের মত করে লিখবে।

রাবিতে আমার পজিশনে ফিজিক্স বা কেমিস্ট্রি এই ধরনের সাবজেক্ট গুলো এসেছে।

বুয়েট প্রিলি :

আমি ৬৩ টা প্রশ্নের উত্তর করেছিলাম। দুটো শিফটেই সহজ কোশ্চেন ছিল। অবশ্যই মনে রাখবা পুরো কোশ্চেন কমপক্ষে দুইবার সলভ করতেই হবে। প্রথম ১০ মিনিট  কেমিস্ট্রি, পরের ১৫ মিনিট ম্যাথ, পরের ১০ মিনিট ফিজিক্স সল্ভ করবে। যেগুলো পারবা দাগিয়ে দিবে। দ্বিতীয় রাউন্ডে আবার পুরো কোশ্চেন দেখতে হবে এবং বাকিগুলো সল্ভ করতে হবে। ভুল প্রশ্ন থাকলে ব্ল্যাঙ্ক রাখবে।

GST:

  • Mcq : ৬২
  • পজিশন : ২৫২৭

ঠান্ডা মাথায় বেশি পড়াশোনা না করে এক্সাম দিবে। শাহজালালের ইঞ্জিনিয়ারিং সাবজেক্টগুলো চয়েসের প্রথমে রাখা উচিত। আমার খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউআরপি এসেছিল।

বুয়েট রিটেন :

এ ব্যাপারে আমার কিছু বলা উচিত না। বুয়েটিয়ানদের কাছ থেকে পরামর্শ নিবে।

CKRUET:

  • উদ্ভাস ফাইনাল মডেল টেস্ট পজিশন : 400র কাছাকাছি
  • পজিশন : ৪০৬১
  • প্রায় ৫৮০০ পর্যন্ত নিয়েছে
  • আমার এসেছে মেকাট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং, রুয়েট

তিনটা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব সাবজেক্ট একসাথে চয়েজ দিতে হবে। এক্ষেত্রে CSE তে নিয়েছে প্রায় ২৩০০ পর্যন্ত। তুমি যদি 5000 এর মধ্যে থাকো তবে ধরে রাখতে পারো, যে ইউনিভার্সিটির সাবজেক্টগুলো তোমার প্রথমের দিকের চয়েস আছে সেই ইউনিভার্সিটিতেই তোমার আসবে। আর সিকেরুয়েটের সব সাবজেক্টেই ‘ভালো’ অর্থাৎ ইম্পরট্যান্ট।

যারা কোনোটাতেই চান্স পাবা না চোখ বন্ধ করে কৃষিতে এক্সাম দিবে। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণার দিক দিয়ে এবার অন্য সব বিশ্ববিদ্যালয় কে ছাড়িয়ে গেছে।

মনে রেখো, জীবনের জন্য পড়াশোনা, পড়াশোনার জন্য জীবন না। যত ভালো সাবজেক্ট পাবা ফিউচারে ততবেশি পড়াশোনা করেই যেতে হবে।

লিখেছেনঃ নৈঋতা মাশিয়াত রহমান

MTE 22 Series

Rajshahi University of Engineering & Technology.