৯ম এ বিজ্ঞান নেয়ার পর থেকেই বিজ্ঞানের প্রতি ভালবাসা জন্মায়।আর তাই ইচ্ছে করত বড় একজন এরোনটিকাল বা অটোমোবাইল ইন্জিনিয়ার হব অথবা ডাক্তার হলেও মন্দ না।তবে তা অবশ্যই বিদেশে করব।

কিন্তু টেস্ট পরীক্ষা পর্যন্ত জিপিএ ৫.০০ পাওয়া নিয়ে কোন গুরুত্বই ছিলনা।আমার অবস্হা দেখে সবাই চিন্তায় পড়ে গেল।অনেক কথা শুনতে হল।ব্যাস এমন পড়ার ঠেলা দিলাম ৩ মাসের জিপিএ ৫ এর প্রিপারেশনে চলে এল ৫।

বিপদ তো সামনে। ভর্তি হলাম মাইলস্টোন কলেজে।এবার যদি ৫ না পাই তাহলে তো জীবন বৃথা।ভাল কোথাও চান্স ও পাবোনা।কিন্তু চরম বাস্তবতা হল এমন কলেজেই ভর্তি হয়েছিলাম ভাই যেখানে আমার মত ছেলে টিকে থাকা খুব কষ্টের।

খুব আড্ডা প্রিয়,বন্ধু প্রিয় আর এক কথায় স্বাধীনচেতা মানুষ আমি।আমাকে বদ্ধ রাখলে আমাকে দ্বারা কোন কার্যসিদ্ধি সফলতার সাথে হয়না।তাই এটাও সহজ কথা,আমাকে ফেল নামক অনাকাঙ্ক্ষিত বিষয় বস্তুর সম্মুখিন হতে হল ২ বছর ধরে ২/১ সাবজেক্ট করে।কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়।

তারপরেও আমি চরম মেধাবী এ কথা সবার মুখে তখনও শুনতাম।অবাক হতাম যদিও।
ভাগ্য সুপ্রসন্ন থাকায় ২০১৪ তে কোন রকম পাশ করার ইচ্ছা নিয়ে পরীক্ষা দিয়ে আল্লাহর অশেষ রহমতে জিপিএ ৫.০০ পেলাম।

এই শুরু ধ্বস নেমে আসা।বাবা মার সাথে না থাকায় খুব উন্মুক্ত ছিলাম।বাহিরে পড়তে যাব সিদ্ধান্ত জানালাম।কিন্তু কেউ রাজী হলনা।আমি জেদ করলাম।অবশেষে রাজী হল আর বলল কোন কোচিং এ ভর্তি হও দেশেও পরীক্ষা দাও নিজেকে যাচাই করা হয়ে যাবে।

কিন্তু আমার মনে মনে তো বাহিরে যাব আছেই তাই বইয়ের সাথে চিরতরে সম্পর্ক ছিন্ন করলাম।বাসা থেকে টাকা নিয়ে খরচ করে ফেললাম ভর্তি হলামনা।ঢাবির পরীক্ষার দিন সেন্টারে গিয়ে বন্ধুদের আগায়া দিয়ে আসলাম আর আমার এডমিট কার্ড ফাইলে করেই ঝোলাতে ঝোলাতে আমি চলে আসলাম।এতটাই বোকামি করেছিলাম।

চবি আর মেডিকেলের ফর্ম কিনেছিলাম চট্টগ্রাম আর বরিশাল ঘুড়ব বলে। অবশেষ কপাল পোড়া সংবাদটা শুনলাম যে তারা আমাকে বাহিরে পাঠাতে সাহস পাচ্ছেনা তারা কারন আমি খুব উশৃংখল,সারভাইব করবনা বাহিরে, তাই No।

চান্স পেলাম জার্নালিজম এ চবিতে। কাউকে জানালামনা।যদি কখনো বাহিরের ব্যাপারে রাজী হয়ে যায় সেই আশায়।মেডিকেলের জন্য কোন বিন্দু মাত্র পড়াতো পড়িইনাই ভুলেও।

অবশেষে সব খোয়ালাম আর বাবা টেক্সটাইল ইন্জিনিয়ার হওয়ায় ভর্তি হতে হল এই বিষয়ক একটি ভার্সিটিতে। জীবন বদলে যাচ্ছে।আমি একা।পরিবার দেশের বাহিরে।

কে ঠেকায়?

জড়িয়ে গেলাম সক্রিয় রাজনীতি তে, ক্লাস গ্যাপ,পরীক্ষা মিস,টিচারদের সাথে খারাপ ব্যবহার,মারামারি।

এই করে ২.৫ বছর কাটানোর পর ২০১৭ এর শেষের দিকে সেন্সে ফিরে আসলাম।কি করছি আমি।এ জীবন থেকে ফেরা সম্ভব না যদিনা এ ভার্সিটি বাদ দেই।কিন্তু আছে আর ১.৫ বছর গ্রাজুয়েশনের।তাও ঝুকি নিলাম।ভর্তি বাতিল করলাম।

তখন বাসায় মিথ্যা জানালাম যে ফেল করছি একের পর এক কিন্তু বলিনি পড়াশোনা বাদ দিয়ে দিয়েছি।যাতে ভবিষ্যতে চাপ টা কম পায়। টাকা আসা বন্ধ। খুব কষ্টে যাচ্ছিল।বন্ধুর মাধ্যমে একটা কোচিং সেন্টারে ক্লাস করালাম কিছুদিন আর ২ টা টিউশনি করাতাম।

হয়ত ঐ কোচিং সেন্টারে তোমাদের আমিও পড়াতাম HSC এর পর।কিন্তু সেখানে পড়ানোর যোগ্যতা থাকলেও প্রাতিষ্ঠানিক যোগ্যতা আজ আমার নেই।

আবার বাসায় চাপ দিলাম বাইরে যাবই এবং জানালাম যে আমি এখন কোন ছাত্র নই।মাথায় হাত পড়লেও বাধ্য হয়ে ক্যারিয়ার টা বাচানোর জন্যে রাজি হলেন বাবা।

সব দেশ দেখে কোরিয়া চয়েজ করলাম।আমার সেই শখের বিষয় অটোমোবাইল ।IELTS করলাম ২.৫ মাসে,পরীক্ষা দিয়ে ৬.৫ পেলাম।আমার জন্য এনাফ।ভিসার জন্য এপ্লাই করলাম।সবার দোয়া আছে আমার সাথে কেননা এটাই আমার শেষ ভরসা।না হলে সর্বনাশ কেননা কদিন পর ছাত্রত্ব শেষ।সব আত্মীয় বন্ধু বান্ধব কে বিদায় জানাতে লাগলাম আর বলতে লাগলাম চলে যাচ্ছি।শপিংও করে ফেললাম কেননা কোরিয়ার ভিসা সহসা ক্যান্সেল হয়না।

২০১৮ এর কথা বলছি।সারাদেশে ছাত্র আন্দোলন চলছে,খুব সম্ভবত BUP এর এক ছাত্র মারা যাওয়ায়। তাই ভিসাটা ক্যান্সেল হল কুটনৈতিক কারন দেখিয়ে।যেখানে ৯০ % কোরিয়ার ভিসা হবার পসিবিলিটি থাকে সবসময় সেখানে আমার সাথের একবারে ২৬ জন ক্যান্সেল।তখনি বুঝলাম আল্লাহ আমার কপালে অন্য কিছু লিখে রেখেছেন।

অবশেষে যখন সুইসাইড করব ভাবছি বা পরিবার থেকে কোথাও পালিয়ে যাব তখন অনেকদিন কথা না বলে থাকা আমার বাবা ফোনে কিছু বললেন।

“কি হয়েছে ব্যাটা,যা হবার হয়েছে।আমিতো আছি।আবার পড়তে চাইলে পড়।ভর্তি হও। কোথায় হবা,জানাও।”

সেদিন অনেক কেদেছি।আর আল্লার কাছে শুকরিয়া করেছি এমন পরিবারে জন্ম দেয়ার জন্য।

অবশেষে সব আগের পরিচয় বাদ দিয়ে,নিজেকে সংস্কার করে,মানসিকতা পরিবর্তন করে নেমে পড়লাম আবার ছাত্রত্বের সন্ধানে। কোন ভার্সিটি ৫ বছর গ্যাপ দেয়া কাউকে নিবেনা।খুব ভড়কে গিয়েছিলাম।

পেয়ে গেলাম আমার শেষ আশ্রয়স্থল।
২০১৯ এর জানুয়ারি। কয়েকজন সাথের বন্ধু যারা ইন্টারনি করছে আর রিটেক খেয়ে এখনো রয়ে গেছে তাদের পরামর্শে ভর্তি হলাম উত্তরার IUBAT তে।আবিষ্কার করলাম এক নতুন আমিকে।আসলেই ছোট বেলা যা স্বপ্ন দেখেছিলাম IUBAT সে পথই আমাকে দিয়েছে।

আমি মেকানিকাল এ পড়ছি যা অটোমোবাইল বা এরোনটিকালের পথেই রাখছে আমাকে,আমি ডিবেট করছি, পাবলিক স্পিকিং করছি,একাধিক ক্লাবের সাথে সক্রিয় ভাবে কাজ করছি,একের পর এক মেডেল পাচ্ছি,কত কিছু নতুন শিখছি।যা আমার আগেই সদ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে করা উচিৎ ছিল।

আক্ষেপ টা কোথায় জানেন?
আমার ৫ বছরের জুনিয়ররা যখন তুই বলে ডাকে।তখন নিজেকে ধিক্কার দেই।যখন বিভিন্ন রোষানলে পড়তে হয় তখন ৪ বছরের অতীতকে অভিশাপ দেই।যখন বন্ধুর কোন প্রমোশন হয়।বুকভরা কষ্ট নিয়ে কংগ্রাচুলেশনস জানাই।

যখন বন্ধু বিসিএসের প্রিলি দেয় তখন মরে যেতে আসলেই ইচ্ছে হয়।

যেখানে মাইলস্টোন কলেজ থেকে IUBAT এর দুরত্ব ১৫ মিনিট সেখানে আমার আসতে লেগেছে ৫ বছর।

তাও সব শেষে আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞ যে এখনো ছাত্রত্ব ট্যাগ টা আছে, শত যুদ্ব করে হলেও তা রাখতে পেরেছি।৫ বছর গ্যাপ করে অন্য কজন পারতো জানা নেই।

জানিনা ভবিষ্যতে কি আছে তবে লেগে থাকব,স্বপ্ন পুরন করব আর হে বিদেশের মাটিতে Msc হোক বা Phd করার জন্য হলেও পা রাখব।ইনশাআল্লাহ 🖤

আমি অনুরোধ করব উচিৎ শিক্ষার চেয়ে নিচের আসল শিক্ষা গুলো HSc পরীক্ষার আগ থেকেই নিও

▪কখনও বাবা মার কথা অমান্য করোনা।তাদের কথার মাঝেও তোমার ভবিষ্যত লুকানো
▪নিজের ইচ্ছা থাকবে কিন্তু অভিবাবক বা মেন্টর একজনকে মেনে চলবাই যে কিনা তোমাকে ভুল সঠিক চিনিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
▪বড় হওয়ার স্বপ থাকলে ভীত গড়ে নাও
রাজনীতি নয়।
▪যত হোচট খাওনা কেন হাল ছেড়ে দিওনা।তাহলে কুল আর ফিরে পাবেনা।
▪দিনশেষে পরিবারটাই আসল। কথাটা মাথায় রাখবা।
▪বিশ্বের সব কিছু সম্পর্কে খবর রাখবা।সোর্সফুল থাকবা।মননশীলতার চর্চা করবা।
▪চান্স পেতেই হবে এটা ভেবে এক্সাম দিবা কিন্তু ভাই না পেলেও তুমি কিন্তু ৪/৫ বছর পর প্রতিস্ঠিত একজন মানুষ হবার সুযোগ রাখই।
▪সবসময় ইতিবাচক থাকবা।
▪বড় স্বপ্নের চেয়ে ছোট স্বপ্ন গুলোকে গুরুত্ব দিবা।নিজেকে সমৃদ্ব করা ছাড়া বিকল্প নাই কিন্তু।
দোয়া করি সবার উজ্জল ভবিষ্যত হোক।

উজ্জ হাসান
🎓ডিপার্টমেন্ট অব ম্যাকানিকাল ইন্জিনিয়ারিং
🏫ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস,এগ্রিকালচার এন্ড টেকনোলজি- (IUBAT)

 

জুনিয়রদের জন্য  আপনার অভিজ্ঞতা   শেয়ার করুন আমাদের গ্রুপে