তানভীর আশরাফ একটি প্রতিভা। একটি নাম। একটি অনন্য মেধা। তিনি প্রমাণ করেছেন চেষ্টা করলে অসম্ভবকে বশ করা যায়।
রাখা যায় মেধার স্বাক্ষর। হওয়া যায় খ্যাতিমান।
তানভীর এসএসসিতে জিপিএ-৫ না পেয়েও বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) তার যোগ্যতার প্রমাণ রেখেছেন।
জিপিএ-৫ না পাওয়ায় নটরডেম কলেজে ভর্তির ফরম কিনতে পারেননি তিনি। এতে অঙ্কুরেই শেষ হয়ে যায় তানভীরের নটরডেম কলেজে পড়ার স্বপ্ন।
তবে এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে এসএসসিতে জিপিএ-৫ না পাওয়ার কষ্ট ভুলেছে তানভীর।
তানভীর জানান, তার এই সাফল্যের পেছনে মায়ের অবদান সবচেয়ে বেশি। ছোটবেলায় পড়ালেখায় আগ্রহ কম থাকলেও মায়ের পীড়াপীড়িতে তাকে পড়তে বসতে হতো।
ক্রিকেট-ফুটবলসহ এদিক-সেদিক ঘোরাঘুরি করে তার সময় কাটতো। কিন্তু পরীক্ষায় বসলেই ভালো নম্বর পেয়ে পাশ করতো তানভীর।
কলেজে ভর্তি হওয়ার পর কলেজের শিক্ষক ও বন্ধুবান্ধব ছাড়াও কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মোহাম্মদ মিজানুর রহমান তাকে অনুপ্রেরণা আর উৎসাহ দিয়েছেন বলে জানান তানভীর।
বুয়েটে চান্স পাওয়াটিকে তানভীর দেখছেন মায়ের স্বপ্নপূরণের প্রথম ধাপ হিসেবে।
বুয়েটে ভর্তির পর ভালো ফলাফলের মাধ্যমে একজন ভালো ইঞ্জিনিয়ার হতে পারলেই মায়ের স্বপ্নপূরণ হবে মন্তব্য করে তানভীর। আর এ জন্যে সে সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন তিনি।
শুধু এইচএসসিতে জিপিএ-৫ ই নয়, এবার বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষায় মেধাতালিকায় জায়গা করে নিয়ে চমক দেখিয়েছেন তানভীর।
বুয়েট ছাড়াও তানভীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় মেধাতালিকায় স্থান লাভ করেছেন।
কিশোরগঞ্জ জেলার কটিয়াদী উপজেলার সহশ্রাম ধূলদিয়া ইউনিয়নের প্রত্যন্ত পূর্ব পুরুড়া গ্রামের ফার্মেসী ব্যবসায়ী আশরাফুজ্জামানের ছেলে।
তানভীরের মায়ের নাম ফারজানা আক্তার।
আশরাফুজ্জামান-ফারজানা দম্পতির তিন সন্তানের মধ্যে তানভীর সবার বড়। তানভীরের ছোট দুই বোনের মধ্যে সাদিয়া আফরিন প্রাপ্তি কিশোরগঞ্জ শহরের জেলা স্মরণী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী এবং ইফফাত আরা সারা নিউটাউন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণি ছাত্রী।
ছোটবেলায় খুব দুরন্ত ছিল তানভীর। পড়ালেখা ফেলে ক্রিকেট-ফুটবলসহ নানা খেলাধুলায় সময় কাটতো তার। তবে মায়ের আকাঙ্ক্ষা ছিলো ছেলে ইঞ্জিনিয়ার হবে। জোর করে তিনি ছেলেকে বসাতেন পড়ার টেবিলে।
স্থানীয় পূর্ব পুরুড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি পাসের পর তানভীরকে ভর্তি করা হয় পার্শ্ববর্তী গচিহাটা পল্লী একাডেমিতে। ২০১৩ সালের জেএসসি পরীক্ষায় তানভীর গচিহাটা পল্লী একাডেমির ছাত্র হিসেবে জিপিএ- ৪.৯৪ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়।
এসএসসিতে ছেলের ভাল ফলাফলের জন্য পরীক্ষার ৬ মাস আগে গ্রামের বাড়ি ছেড়ে মা ফারজানা আক্তার কিশোরগঞ্জ শহরে বাসা ভাড়া নেন। কিন্তু অল্পের জন্য জিপিএ-৫ পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয় তানভীর। ২০১৬ সালে একই প্রতিষ্ঠান থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ- ৪.৮৯ পেয়ে পাস করেন তানভীর।
মা ফারজানা আক্তারের ইচ্ছে ছিল, ছেলেকে নটরডেম কলেজে ভর্তি করাবেন। কিন্তু এসএসসিতে জিপিএ-৫ না পাওয়ায় মায়ের সেই স্বপ্ন আর পূরণ হয়নি। অগত্যা তানভীরকে ভর্তি করানো হয় কিশোরগঞ্জ শহরের সরকারি গুরুদয়াল কলেজে।
বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী তানভীর গুরুদয়াল সরকারি কলেজ থেকে ২০১৮ সালে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হলে মায়ের মুখে হাসি ফুটে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে “ক” ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় এবং এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে “ক” ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় মেধাতালিকায় স্থান পান তানভীর।
পরে বুয়েট ভর্তি পরীক্ষায় ৯৯৫তম স্থান পেয়ে ভর্তির সুযোগ পান তানভীর।
ইঞ্জিনিয়ারস ডায়েরি ” পরিবারের পক্ষ থেকে তানভীরের জন্য রইলো শুভকামনা।