ইঞ্জিনিয়াররা কেন বিসিএস / অন্যান্যবিসিএস / অন্যান্য সরকারি এডমিনিস্ট্রেশন এ যাবে?

এক্টু সময় নিয়ে পড়ুন, প্রাইভেট চাকুরিতে আমার ব্যক্তিগত কিছু বাজে অভিজ্ঞতা আজকে শেয়ার করতেছি।

গত ২৮ মে, ২০২০ তারিখে হঠাৎ করেই দুপুর ২ টার দিকে অফিস থেকে আমাকে ফোন করে জানানো হয় আপনি আর সামনের মাস (১ জুন ২০২০) থেকে অফিসে আসবেন না।

কোনো নোটিশ ছাড়াই কি কারনে আমাকে চাকরি থেকে বাদ দেয়া হলো জিজ্ঞাসা করলে এর প্রত্যুত্তরে একাউন্টস (আবুল হোসেন ভাই) বলেন – কি কারনে আমাকে বাদ দেয়া হয়েছে এটা এমডি স্যার ( Engr. Saiful Bari) তাকে জানান নি, শুধু আমাকে যে বাদ দেয়া হচ্ছে এটা জানিয়ে দিতে বলেছে তাকে।

এরপর ওইদিনই দুপুর ৩.৩০ এর পর আমি এই ব্যাপারটা সিউর হওয়ার জন্য আমার এমডি স্যার ( Engr. A.K.M Saiful Bari, PEng. তার FIEB- 8374, DMINB-CE-0011, CDA-0128) কে ফোন দেই।

তিনি আমার ফোন ধরেন নি। তাই আমাকে চাকুরিচ্যুত করার কি কারন সেটা তখন পর্যন্ত জানতেও পারি নি।

এরপর ৩ দিন পর অর্থাৎ ১ জুন, ২০২০ তারিখে আবারো এমডি স্যারকে ফোন করি কারন জানার জন্য, কিন্তু তিনি আমার ফোন ধরেন নি। এখানে উল্লেখ্য যে গত (৫ ফ্রেবুয়ারি ২০১৯ থেকে ২৭ মে ২০২০ পর্যন্ত ) এই ১ বছর ৪ মাস ধরে আমি তার কোম্পানি SB Consultant Ltd. এ চাকরি করছি এবং এইসময়কালে তাকে যেকোন সময় ফোন করলে সে যদি ফোন রিসিভ করতে নাও পারে তাহলে ম্যাসেজ অথবা কিছুক্ষনের মধ্যে ফোন ব্যাক করতো।

কিন্তু ২৮ মে এবং ১ জুন এই দুইদিন তাকে ফোন দিয়ে পাওয়াও যায় নি এবং সে কোন রিপ্লাইও দেয় নি।

তাই উপায় না দেখে আমি একাউন্টসকেই আবার ফোন করে বললাম -ভাই, স্যার তো আমার ফোন ধরতেছে না, কি কারন সেটাও তো জানতে পারলাম না। তাহলে আপনি আমার যাবতীয় পাওনা এবং এক্টি টারমিনেশন লেটার যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমাকে দিয়ে দিন।

উনি বললেন- ঠিকাছে, আমি স্যারের সাথে কথা বলে আপ্নাকে কয়েকদিনের মধ্যে জানাচ্ছি।

এরপর ৮ জুন ২০২০ এ একাউন্টস এর সাথে আবার কথা হয়। কবে দিবেন সবকিছু জিজ্ঞাসা করলে তখন তিনি বলেন – ভাই, টারমিনেশন লেটার দেয়ার কোনো রুলস নাই আমাদের কোম্পানির।

তবে আপনি এক্সপেরিয়েন্স লেটার নিতে পারেন এটা আপনার ভবিষ্যত চাকরির জন্য ভালো হবে। আমি তখন বললাম – ঠিকাছে এক্সপেরিয়েন্স লেটারই দেন। উনি তখন আমাকে বললেন – তাহলে তো আপনাকে রিজাইন দিতে হবে।

আমি হতবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম- এটা কি ধরনের কথা ভাই?? আমি তো রিজাইন দেই নি, আপনারা আমাকে বাদ দিয়েছেন, আমি রিজাইন দিতে পারবো না।আর আমার পাওনা বেতন যা আছে তাড়াতাড়ি দিয়ে দেন।

এক্সপেরিয়েন্স লেটার/টারমিনেশন লেটার যেটাই দিবেন তাড়াতাড়ি দেন কিন্তু রিজাইন দিতে পারবো না। উনি তখন বললেন- ঠিকাছে আপনাকে জানাচ্ছি। এরপর ৯ তারিখেও কথা হয়, উনি আবারও বলেন – জানাচ্ছি।

এরপর ১০ জুন ২০২০ তারিখে দুপুর ১২ টা ৪৯ মিনিটে একাউন্টস আমাকে ফোন দিয়ে বলেন – ভাই আপনার বেতন টা আজকে সন্ধ্যা ৬ টার দিকে এসে নিয়ে যেয়েন।

আমি বললাম – ৬ টার সময় তো অফিস টাইম শেষ, আর তখন তো সন্ধ্যা ও হয়ে যায় আর এখন বাহিরের পরিস্তিতি ও তো খুব এক্টা ভালো না আমি এক্টু আধা ঘন্টা ১ ঘন্টা আগে আসি, আমার কিছু জিনিসপত্র আছে অফিসে সেটাও নেই তারপর আমাকে বেতন দিয়েন।

উনি নাছোড়বান্দার মতো বললেন – না আপনি সন্ধ্যা ৬ টার দিকেই আসুন, তার আগে আসলে আমি দিতে পারবো না, ব্যস্ত থাকবো। আমি উপায় না দেখে বললাম – ঠিকাছে ভাই আমি সন্ধ্যা ৬ টায় আসবো।

এই কথা হওয়ার আধা ঘন্টা পর সে আবার আমাকে ফোন দিয়ে বলে- ভাই আজকে আপনার বেতন টা দিতে পারবো না, পরে কখন দিবো জানাচ্ছি।

এরপর ওইদিনই সন্ধ্যা ৬.৩০ টার দিকে আমি নিচে এক্টু কাজে নামতেছিলাম ওইসময় একাউন্টস থেকে আবার আমাকে ফোন দেয়। ফোন দিয়ে বলে- আপনার বেতন টা নিতে হলে এখনই আসতে হবে আপনাকে।

আমি বললাম- আমি তো অন্য এক্টা কাজে বের হচ্ছি, তাহলে আমি আগামীকাল সকালে যেয়ে বেতন টা নিয়ে আসবো। উনি নাছোড়বান্দার মতো আবারও বললেন – না আপনাকে এখনই আসতে হবে, আমি রাত ৮ টা পর্যন্ত অফিসে থাকবো, পরে আসলে হবেনা।

এখন বেতন না নিলে পরে কখন দিতে পারবো জানি না, আপনি এখনই আসুন। আমি উপায় না দেখে আমার এক স্কুল বন্ধু সহ অফিসে গেলাম যেহেতু রাত হয়ে গেছে আর এই করোনা পরিস্থিতির জন্য রাস্তাঘাটে লোকজন কম, আবার বেতন (ক্যাশ টাকা) নিয়ে আসার সময় ছিনতাইয়ের ভয়।

অফিসে পৌছালাম রাত ৮ টার আশেপাশে। যেয়ে দেখি অফিসে দুইজন পিয়ন আর একাউন্টস ছাড়া কেউ নেই। একাউন্টস এর রুমে পারমিশন নিয়ে ঢুকে সালাম দিয়ে হাই/ হ্যালো করার পর, উনি আমাকে বসতে বললেন।

এরপর বেতন দেয়ার আগে আমাকে উনাদের একটা কাগজে লিখিয়ে নিলেন যে- অফিসের কাছে আমার আর কোনো পাওনা নাই। এরপর সিগ্নেচার করলাম।

উল্লেখ্য যে, কাউকে নোটিশ ছাড়া চাকুরিচ্যুত করলে তাকে এক মাসের এক্সটা স্যালারি দিতে হয়, সেটা আমাকে দেয়া হবেনা আগেই জানানো হয়, আমি তারপরও সিগনেচার সহ লিখে দেই – অফিসের কাছে আমার আর কোনো পাওনা নাই।

এরপর আমার এক্সপেরিয়েন্স লেটার/ টারমিনেশন লেটার এবং মার্চ-২০২০ এর ওভারটাইমের টাকাটা চাই। উনি বললেন – এইগুলো পরে আপনাকে রেডি করে পাঠিয়ে দেয়া হবে। অথচ বেতন নিতে আসার আগে আমি জিজ্ঞাসা করেছিলাম এইসব কিছু রেডি আছে কিনা, উনি হ্যা বলেছিলেন।

এরপর একাউন্টস কে বলি – আমি তো কারনটাই জানলাম না কি জন্য আমাকে বাদ দেয়া হলো। আপনি এক্টু স্যারের সাথে আমার কথা বলিয়ে দেন, স্যার আমার ফোন ধরতেছে না। উনি বললেন- আপনি এখন কল দিলে স্যার ধরবে।

উল্লেখ্য যে বেতন নেয়ার সময়, স্যার একাউন্টস কে ফোনে দিকনির্দেশনা দিচ্ছিলেন। এরপর আমি স্যারকে ফোন দেই, একবার রিং হতেই স্যার ফোন ধরেন। আমি সালাম দিয়ে খোজ খবর জিজ্ঞাসা করি।

এরপর জিজ্ঞাসা করি – স্যার কি কারনে আমাকে বাদ দেয়া হলো আমি তো কিছুই জানতে পারলাম না। উনি তখন একটি খোড়া যুক্তি দেখালেন- আমি নাকি কাজের প্রতি সিনসিয়ার না, আমার কাজে বহুত ভুল।

অথচ এই ১ বছর ৪ মাসে আমাকে কোনো দিনো সে এরকম কিছু বলেন নি আবার এই বছরের শুরুতে (ফেব্রুয়ারিতে) অফিসের ২৫ জন এমপ্লয়ির মধ্য আরেকজন ইঞ্জিনিয়ার আর আমার এই দুই জনের সর্বোচ্চ ইনক্রিমেন্ট করেছেন( ১০ হাজার টাকা)।

গত ৬ মাস ধরে কাজের প্রেসার এতো ছিলো যে আমার ব্লাড প্রেসার হাই হয়ে ১৫৫ হয়ে গেছিল, ওজন ৫ কেজি কমে গেছিলো। এরপর আবার বলে, করোনার এই সময়ে তার অফিসের অনেকগুলো প্রজেক্ট ক্যান্সেল হয়ে গেছে, আমি বেতন দিবো কিভাবে তোমাদের??

আমি তো সরকার না যে জনগনের কাছে ট্যাক্স নিয়ে বেতন দিবো, আমি ক্লাইন্টদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে তারপর তোমাদেরকে দেই।আর অনেক অফিসেই এখন ছাটাই করতেছে।

এরপর আমি বিনয়ের সাথেই বলি- স্যার আমাকে তো কোনো নোটিশ ছাড়াই বাদ দেয়া হইছে, আর আমাকে তো এইজন্য কোনো এক্সটা ১ মাসের স্যালারিও দেয়া হলো না, আবার আমাকে ঈদের বোনাসটাও দেয়া হলো না।

তখন উনি টিটকারিমূলক ভাবে বলেন- বসায়ে বসায়ে তোমাদের ২ মাস বেতন দিলাম আবার কি চাও। অথচ এই এপ্রিল-মে এই দুই মাস আমি বাসায় থেকে অফিসের কাজ করে সাপোর্ট দিয়েছি,কারন হোম অফিস করতে বলা হয়েছিল।

কাজ কম বেশি করতে পারি, কিন্তু যখন যে কাজ দিছে না করি নাই। কিন্তু উনি বললেন -আমি নাকি মে- মাসে কোনো কাজ করি নাই, অথচ মে মাসের শুরুতেই আমাকে অফিস থেকে নতুন এক্টা কাজ মেইল করা হয়, এর কয়েক দিন পর স্যার নিজেই ফোন দিয়ে অন্য এক্টা প্রোজেক্টের ব্যাপারে আপডেট নেন, অফিসের জিএম ( এমডি স্যারের শালা) ও কাজের আপডেট নেন নতুন কাজ যেটা দিয়েছিলেন, আমিও আপডেট দেই।

আমার অন্যান্য ইঞ্জিনিয়ার কলিগ দের সাথেও কাজের ব্যাপারে প্রতিনিয়ত কথাবার্তা হয় কে কি করতেছিলাম। ক্যাড সেকশন- যেটার প্রায় সব এমপ্লোয়ি এমডি স্যারের আত্নীয়, তারা সবাই বাড়িতে চলে যাওয়ার কারনে ড্রয়িং এর টুকিটাকি কাজ গুলো ও আমরাই করতাম এরপর জিএমকে মেইল করতাম, ক্যাড সেকশনের কেউই ছুটির মধ্যে কাজ করে নাই, ওনাদের বাসায় তো পিসিই নাই, কিন্তু ওইযে সব স্যারের আত্নীয় স্বজন।

এরকম মিথ্যা অপবাদ শুনে আমি আর কথা না বাড়িয়ে তর্কে না জড়িয়ে বলি- ভুল ত্রুটি কিছু হলে মাফ করে দিয়েন স্যার, ভালো থাকবেন।

এরপর আমি আমার নোট /খাতাপত্র গুলো একাউন্টস এর উপস্থিতিতেই গুছিয়ে নেই কিন্তু কম্পিউটারের প্রয়োজনীয় কিছু ফাইল নিতে চাইলে উনারা আমাকে নিতে দেয় না, বলে পরে একসময় এসে নিয়ে যেয়েন আজকে অনেক রাত হয়ে গেছে। আমি তার কথা মতোই অফিস থেকে চলে আসি।

এর ২-৩ দিন পর আমি একাউন্টসকে আবারও ফোন দেই -আমার এক্সপেরিয়েন্স লেটার আর ওভারটাইমের টাকাটা কবে দিবে এটা জানার জন্য। উনি বলেন- আপনাকে জানাচ্ছি পরে।

এরপর পুরো জুন মাস কোনো রেসপন্স পাইনি তাদের থেকে। তাই ৩০ জুন নিজে থেকেই ফোন করি একাউন্টসকে, বললাম- ভাই পুরো মাস তো চলে গেলো এখনো এক্সপেরিয়েন্স লেটার আর ওভার টাইমের টাকাটা দিলেন না যে।

উনি বললেন – আর এক দুইদিনের মধ্যে দিচ্ছি। দুইটা জিনিসই একসাথে এসে নিয়ে যেয়েন। ২ দিন পার হয়ে গেলো। ৫ জুলাই-২০২০ এ আমি আবারো ফোন দেই আপডেট জানার জন্য, কখন দিবে??

একটা স্যালারি স্টেটমেন্ট চাইলাম, এক জায়গায় ভাইভা দিয়েছিলাম সেখান থেকে চাই ছিল বলে। উনি বললেন স্যালারি স্টেটমেন্ট দেয়ার নিয়ম নাই। আপনাকে পরে জানাচ্ছি- কখন আসবেন এক্সপেরিয়েন্স লেটার আর ওভারটাইমের টাকা নেয়ার জন্য।

৬ জুলাই -২০২০, দুপুর ১২ টার আশেপাশে আবার ফোন দেই এক্সপেরিয়েন্স লেটার টা নেয়ার জন্য, লেটারটা আমার খুব দরকার ছিলো নতুন চাকুরির জন্য। উনি আবারো বললেন- জানাচ্ছি পরে।

আবার বিকেলের দিকে ফোন দেই আমি, কি অবস্থা জানার জন্য। উনি তখন বললেন – আপনি সন্ধ্যার দিকে অফিসের নিচে গ্যারেজে এসে পিয়নের কাছ থেকে আপনার এক্সপেরিয়েন্স লেটার আর ওভারটাইমের টাকাটা বুঝিয়ে নিয়েন, উপরে অফিসে যাওয়ার দরকার নাই অফিস বন্ধ থাকবে। এরকম অপমান কেন করা হলো আমাকে সেটা বুঝলাম না।

চাকরিতে নিয়োগ দিছিলো এমডি স্যার, আর এক্সপেরিয়েন্স লেটার নিতে হচ্ছে অফিসের পিয়নের হাত থেকে।

এই ব্যাপারটা খুবই অপমানজনক ছিলো আমার কাছে, আমি তারপর ও অফিসে যাওয়ার জন্য বের হলাম কারন আমার এক্সপেরিয়েন্স লেটারটা জরুরি ভিত্তিতে দরকার ছিলো।

পথিমধ্যে অফিসের পিয়ন ফোন করে আমি কোথায় খোজ নিলো, আমি বললাম- আমি রাস্তায়, আসতেছি……।

এরপর অফিসের বিল্ডিং এ পৌছে গ্যারেজে পিয়ন কে না পেয়ে উপরে গেলাম, যেয়ে দেখি অফিসের গেট লক করা। পিয়ন কে ফোন দিলাম সে গ্যারেজে দেখা করতে বললো। নিচে নামলাম আবার।

পিয়ন আমাকে বললো- স্যার এইযে আপনার ওভারটাইমের টাকা আর লেটার টা বুঝে নেন আর এই রিসিভ কপি দুইটায় সাইন করে দিন যে আপনি জিনিস দুইটা বুঝিয়ে পাইছেন।

আমি ওভার টাইমের টাকা নিলাম, গুনে দেখিলাম ঠিক আছে। এরপর এক্সপেরিয়েন্স সার্টিফিকেট হাতে নিয়ে পড়ে দেখি আমার এক্সপেরিয়েন্স লেটারে লেখা আমি ফ্রেবুয়ারি ২০১৯ থেকে এপ্রিল-২০২০ পর্যন্ত এই প্রতিষ্ঠান এ কাজ করেছি, কিন্তু এটা আসলে এপ্রিল-২০২০ না হয়ে মে-২০২০ হবে । দেখেই তো মেজাজ টা খারাপ হয়ে গেলো।

একাউন্টস কে ফোন দিলাম গ্যারেজে দাড়িয়েই। বললাম- এক্সপেরিয়েন্স লেটারে তো ভুল আছে এটা সংশোধন করে দেন। উনি বললেন- এটা ঠিক ই আছে, এমডি স্যার এভাবেই দিতে বলছে।

আমি বললাম – এটা তো ঠিক নেই, আপনারা আমাকে ২৮ মে-২০২০ তারিখে বাদ দিছেন চাকরি থেকে তাহলে আমাকে ২৮ মে-২০২০ পর্যন্ত এক্সপেরিয়েন্স লেটার দেন, এবং এক্টা স্যালারি স্টেটমেন্ট দেন। উনি বললেন- আপনাকে জানাচ্ছি।

একাউন্টস এর সাথে কথা বলে ফোন রাখার পরই, এমডি স্যার আমাকে ফোন দিলেন, বললেন- তোমাকে স্যালারি স্টেটমেন্ট দেয়া যাবে না, এটা দেয়ার নিয়ম নাই।

আর কোনো কোম্পানিতে জয়েন করতে যে প্রিভিয়াস কোম্পানির স্যালারি স্টেটমেন্ট লাগে এটা আমার জানা নেই। আমি বললাম- স্যার স্যালারি স্টেটমেন্ট লাগবে আমার, আর আমার এক্সপেরিয়েন্স লেটারে এক্টু ভুল আসছে স্যার, এটা ফ্রেবুয়ারি -২০১৯ থেকে মে-২০২০ পর্যন্ত হবে।

আমি এই তথ্যই বিভিন্ন জায়গায় সাবমিট করছি। আপনি যে এক্সপেরিয়েন্স লেটার দিছেন সেটা সংশোধন করতে হবে স্যার, এপ্রিল-২০২০ না হয়ে মে-২০২০ হবে কারন আমাকে ২৮ মে ২০২০ এ বাদ দেয়া হয়েছে, আর স্যালারি স্টেটমেন্ট টা আমার দরকার স্যার, দিলে খুব উপকার হয় ।

স্যার বললেন- তোমাকে জানাচ্ছি। আমার উকিলের সাথে এক্টু কথা বলে দেখি।

ফোন রাখতেই একাউন্টস ফোন করে বললেন- আপনি এখন এই লেটার টাই নিয়ে চলে যান। আমি বললাম- স্যার আমাকে জানাবে বললো, এখনই স্যারের সাথে কথা হলো।

এরপর আবার স্যারকে ফোন দিলাম, স্যার বললেন স্যালারি স্টেটমেন্ট দেয়া যাবে না তোমাকে, এটা লাগেনা। আর যদি কোথাও থেকে চায় তাহলে আমাদের মেইল / ফোন করলে আমি বলে দিবো তোমার স্যালারি কেমন ছিলো, স্টেটমেন্ট দেয়া যাবে না।

আমি উপায় নাই দেখে বললাম- ঠিকাছে স্যার, আমি উনাদের মেইল/ ফোন করতে বলবো। আর আমার এক্সপেরিয়েন্স লেটারটা এক্টু সংশোধন হবে স্যার, এটা এপ্রিল-২০২০ এর পরিবর্তে মে-২০২০ পর্যন্ত হবে, আমি এটা রেখে যাচ্ছি এখন। কাল/ পরশু এসে সংশোধন কপি টা নিয়ে যাবো স্যার। স্যার আচ্ছা বলে ফোন রাখলেন।

পরেরদিন ৭ জুলাই, ২০২০ দুপুর ১ টার দিকে আবার ফোন দিলাম একাউন্টস কে, এটা জানার জন্য সংশোধন এর কাজ হইছে কিনা। উনি বললেন – স্যার এব্যাপারে উনাকে কিছু জানান নি। এরপর আমি এরকম ঢিলামো দেখে নিজেই অফিসে চলে গেলাম দুপুর ২ টার দিকে।

অফিসের রিসেপশনে ঢুকে কাচের পার্টিশনের বাইরে থেকেই আমার কলিগ এবং পিয়ন কে হাতের ইশারায় বাইরে ডেকে নিলাম, এতপর উনারা সহ একাউন্টস এর রুমের সামনে গেলাম, এরপর পারমিশন নিয়ে ঢুকলাম, সালাম দিলাম।

এরপর আমাকে একাউন্টস বললেন- ভাই আপনি তো পারমিশন নিয়ে অফিসে ঢুকেন নাই, এটা তো ঠিক হয় নি। আপনি তো এখানকার এমপ্লোয়ি না এখন। আপনি অফিসের নিচে গ্যারেজে ওয়েট করুন।

আমি এমডি স্যারের সাথে কথা বলে আপনাকে জানালে আপনি উপরে আসবেন। এটা শোনার পর আর অপমান সহ্য হলো না, আমি অফিসের বাহিরে গেটের সামনে এসে দাড়িয়ে রইলাম।

এক্টু পর অফিসের পিয়ন এসে বললেন- স্যার আপনি ভিতরে এসে বসেন, দেখলাম আমার অফিসের পিয়ন রেগে মেগে ফায়ার।

আমাকে যে অপমান করা হইছে এটা আমার অফিসের পিয়ন বুঝতে পেরে রেগে মেগে উচ্চস্বরে একাউন্টসকে উদ্দেশ্য করে বললেন- এটা কোন ধরনের আচরন, যেকেউ আসলেই তো রিসেপশনে বসে আর স্যার তো আমাদের এখানে চাকরি করতো এতোদিন।

আমি অশ্রুশিক্ত চোখে রিসেপশনে বসে বসে ভাবলাম- বুয়েট পড়ুয়া একজন নামকরা স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ার এবং তার অফিস এডমিনিস্ট্রেশন এর যে মানবতাবোধ/ সম্মানবোধ নেই তার প্রিভিয়াস কর্মচারীর প্রতি, সেটা একজন অফিসের পিয়নের আছে।

এরপর কিছু সময় বসে রইলাম রিসেপশনে।

এরপর এক্টু পর একাউন্টস থেকে ডাক এলো, ভিতরে গেলাম। উনি বললেন- আপনি যদি রিজাইন দেন তাহলে আমরা আপনাকে মে-২০২০ পর্যন্ত এক্সপেরিয়েন্স লেটার দিবো।

আপনি রিজাইন লেটারে লিখবেন ১৫ মে ২০২০ এ রিজাইন দিছেন আর ৩১ মে ২০২০ পর্যন্ত এখানে চাকুরি করছেন। আমি বললাম আমি তো রিজাইন দেয়নি, আপনারা আমাকে বাদ দিছেন।

উনি আমাকে বললেন- এভাবে ছাড়া দিতে পারবো না,এমডি স্যার এভাবেই নির্দেশনা দিছেন। আমি রিজাইন দিতে রাজি হলাম না, এমডি স্যারকে ফোনে ট্রাই করতে থাকলাম।

উনি ধরলেন না। এরপর আমাকে আবার ওয়েট করতে বলা হলো। এক্টু পর পিয়নকে পাঠিয়ে বলা হলো – এমডি স্যার আপনাকে পরে জানাবে বলছেন, এখন চলে যেতে বলছে আপনাকে।

পুরো ঘটনা আমার অফিসের কিছু কলিগ দেখলেন, সবাই মন খারাপ করলেন কিন্তু কারো কিছু বলার ছিলো না সবারই চাকরি যাওয়ার ভয়। আমি এমডি স্যারকে ফোনে ট্রাই কর‍তে থাকলাম, উনি ধরলেন না ফোন।

আমি আবারো বসে রইলাম, এরপর কয়েকজনের সাথে ডিসকাস করলাম কি করবো। কোনো সল্যুশন পেলাম না।

এরপর আবারো উপায় নাই দেখে- এতো অপমানিত হওয়ার পর ও রিজাইন দিতে রাজি হয়ে গেলাম কারন আমার এক্সপেরিয়েন্স লেটারটা দরকার ছিলো।

এরপর মাগরিবের নামাযের ৫-১০ মিনিট আগে যেয়ে এক্সপেরিয়েন্স লেটারটা হাতে পেলাম, অনেক রিকুয়েষ্ট করার পর প্রেজেন্ট স্যালারিটা এক্সপেরিয়েন্স লেটারে লিখে দেয়।

এর আগে তারা আমার রিজাইন টা নিয়ে নিলো। দুপুর ২ টা থেকে সন্ধ্যা ৭ টা পর্যন্ত আমাকে অপেক্ষা করালো। অফিসের কম্পিউটারে আমার কিছু প্রয়োজনীয় ফাইল ছিলো সেগুলো ও নিতে দিলো না, বললো দেয়া যাবে না, আর আপনার কম্পিউটার অফিসে নাই এখন।

আপনার যে যে ফাইল দরকার আমাদের মেইল কইরেন আমরা পাঠিয়ে দিবো। আবার গতদিনে যে ভুল এক্সপেরিয়েন্স লেটার টা দিয়েছিলো সেটার হার্ড কপি আমি না নিলেও যাওয়ার সময় মোবাইলে সেটার এক্টা ছবি তুলে নিয়ে গেছিলাম, একাউন্টস ভাই আমাকে ফোন থেকে সেই ছবি ডিলিট করে দিতে বললেন, আমি ফোন বের করে উনার সামনেই ছবি ডিলিট করলাম।

আসলে,এমারজেন্সি কেসে যদি লেটার টা লাগে তাই ফোনে ছবি তুলছিলাম, এই ধরনের আচরনে আমি আবারো মনে মনে আশাহত হলাম আর ভাবতে থাকলাম আমি এতোদিন এমন একজন অমানুষ এমডির আন্ডারে চাকরি করেছি।

কষ্ট বাড়তে থাকলো, বুকভরা কষ্ট নিয়ে চোখের পানি লুকিয়ে এক্টু পর মাগরিবের নামাযের পর অফিস থেকে বের হয়ে আসলাম।

২ দিন হয়ে গেলো এখনও এই ব্যাপারটা মাথা থেকেই যাচ্ছে না, ধরে নিলাম একজনের ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠান তার ইচ্ছামতো কোম্পানিতে কর্মাচারি নিয়োগ বা বরখাস্ত করতে পারে কিন্তু আমার আত্নসম্মানবোধ এ আঘাত করার অধিকার তাকে কে দিয়েছে??

আমি এর সুষ্ঠু বিচারের জন্য এক বড় ভাইকে নক করেছিলাম, উনি বললেন- আইইবির মেম্বার নাহলে উনারা তোমার অভিযোগ নিবেন না।

আজ আইইবির মেম্বার না বলে কি আমার রুয়েট থেকে পাশ করার কোনো মূল্য নাই, আমার নিজের কি কোনো আত্নসম্মানবোধ নাই?? এক্স এমপ্লোয়ি হিসেবে কি কোম্পানির কাছ থেকে ভালো ব্যবহার পাওয়ার অধিকার নাই????

জুনিয়র দের এতো টুকুই বলবো-

* যে ভাবেই হোক সরকারি চাকরি ম্যানেজ কর ভাই, অথবা দেশের বাহিরে চলে যাও।

*পাশ করে বের হয়ে প্রাইভেট জবে ঢোকার দরকার নাই।

*যদি অর্থনৈতিক সমস্যার কারনে প্রাইভেট জবে ঢুকতেই হয় তাহলে যেকোন কোম্পানিতেই জয়েন করার পূর্বে তাদের কি কি রুলস/ সুবিধা সব রিটেন ফরমেটে নিতে হবে। যেমন- এপোয়েন্টমেন্ট লেটার, প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্রাটিউটি, বরখাস্ত করলে এক্সটা ২-৩ মাসের স্যালারি দিবে কিনা, এবং অন্যান্য।

*আর SB consultant Ltd. এ তো ভুলক্রমেও ঢোকার দরকার নাই।

আর সিনিয়রদের উদ্দেশ্য বলতে চাই-

*বছরের পর বছর ধরে এরা এভাবেই কর্মচারি ছাটাই এবং খারাপ ব্যাবহার করে আসতেছে, আগেও করছে ভবিষ্যৎ ও করবে।

খোজ নিলে হয়তো আমার মতো অনেক রুয়েটিয়ানই পাওয়া যাবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের। এধরনের প্রতিষ্ঠানের এমডি দের কেউ কিছু বলে না দেখেই এরকম স্পর্ধা বারবার পায়।

*আর স্যালারি স্টেটমেন্ট না দেয়ার অন্যতম কারন যেটা মনে হয়েছে সেটা হচ্ছে- সরকারকে ট্যাক্স ফাকি দেয়া।

*তাহলে রুয়েট এলামনাই, রিওসা, বা আইইবিতে যে সব রুয়েটের বড় ভাই আপুরা গুরুত্বপূর্ণ পদে আছেন অথবা দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উচ্চপর্যায়ে যারা আছেন, আপনারা যদি এই ব্যাপারগুলো নজরে না নেন তাহলে কারা নিবেন???

আমরা তো আপনাদেরই জুনিয়র, আমরা তো রুয়েটেরই প্রডাক্ট। সব চেয়ে বড় কথা হচ্ছে- আমরাও তো মানুষ, আমাদের ও তো আত্নসম্মানবোধ আছে।

(বিঃদ্রঃ অনেকে হয়তো লজ্জাবোধ থেকে এই ঘটনা গুলো এড়িয়ে যায়, কিন্তু আমি এড়িয়ে যেতে চেয়েও পারলাম না। আপনাদের সবার সাহায্য চাই। আর আমরা এড়িয়ে যাই বলেই এরা বারবার অবিচার ও দুর্ব্যবহার করার সুযোগ পায়।

আমার চাকরির বয়স মাত্র ২.৫ বছরের মতো। এই ধরনের বাজে অভিজ্ঞতার ভার নিয়ে আমি আমার বাকি ক্যারিয়ারে কিভাবে সামনে আগাবো???

লেখক: মিনহাজ

সিভিল-১২ সিরিজ- রুয়েট.