বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রগতি মানুষের জীবনকে সহজ করে দিচ্ছে। চিকিৎসাবিজ্ঞানেও এই অগ্রগতির ফলে অক্ষম ব্যক্তিদের জীবনমান উন্নত হচ্ছে। এরই একটি উদাহরণ হলো আই-লিম্ব হ্যান্ড। আই-লিম্ব হ্যান্ড হলো একটি বায়োনিক হ্যান্ড, যা দুর্ঘটনা বা রোগের কারণে হাত হারা ব্যক্তিদের জন্য একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। এই হ্যান্ডটি মানব পেশির স্নায়ুপ্রান্তের সাথে যুক্ত থাকে এবং ব্যক্তির ইচ্ছানুযায়ী কাজ করে।

আই-লিম্ব হ্যান্ডের মূল কার্যপ্রণালী বেশ জটিল। হাতের অবশিষ্ট অংশের স্নায়ুপ্রান্তে ইলেক্ট্রোড সংযুক্ত করা হয়। এই ইলেক্ট্রোডগুলি ব্যক্তির পেশির সংকেত শনাক্ত করে এবং সে সংকেতকে হ্যান্ডে প্রেরণ করে। হ্যান্ড সেই সংকেত অনুযায়ী কাজ করে।

আই-লিম্ব হ্যান্ড ব্যবহার করে ব্যক্তিরা দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন কাজ স্বাচ্ছন্দে করতে পারেন। জামার বোতাম লাগানো থেকে শুরু করে জুতোর ফিতা বাঁধা, রান্না করা, ছুরি ব্যবহার করা, লেখালেখি করা, মোবাইল ফোন ব্যবহার করা ইত্যাদি কাজ খুব সহজেই সম্পাদন করা যায় এই প্রযু্ক্তি ব্যাবহারের মাধ্যমে।

আই-লিম্ব হ্যান্ডের মূল্য বেশ ব্যয়বহুল। তবে বাংলাদেশেও গত বছর ব্যক্তিগত উদ্যোগে মাত্র ৩০ হাজার টাকার মধ্যে এ হ্যান্ড তৈরি করা সম্ভব হয়েছে। আই-লিম্ব হ্যান্ড প্রযুক্তি শুধুমাত্র হাতের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে অক্ষম ব্যক্তিদের হাঁটাচলায়ও সাহায্য করা হচ্ছে।

প্রযুক্তিটিকে আরো নিরাপদ ও সহজলভ্য করার প্রচেষ্টাও চলমান রয়েছে। শুধু তাই নয় এর সেন্সরের সাথে সরাসরি মস্তিষ্কের নার্ভ সংযোগের চেষ্টাও করা হচ্ছে। আই-লিম্ব হ্যান্ড প্রযুক্তির বিকাশ মানুষের জীবনকে আরও সহজ ও স্বাচ্ছন্দ্যময় করে তুলবে।

আই-লিম্ব হ্যান্ডের অনেক সুবিধা রয়েছে। অক্ষম ব্যক্তিদের স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে সাহায্য করা থেকে শুরু করে তাদের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে তাদের আত্মবিশ্বাস ও মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি সম্ভব হচ্ছে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে। আই-লিম্ব হ্যান্ডের কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: এর মূল্য বেশ ব্যয়বহুল, এর ব্যবহারের জন্য প্রশিক্ষণ প্রয়োজন, এটি এখনও পুরোপুরি পরিপূর্ণ নয়।

আই-লিম্ব হ্যান্ড প্রযুক্তি একটি বিপ্লবী আবিষ্কার। এটি অক্ষম ব্যক্তিদের জীবনকে অনেক সহজ ও স্বাচ্ছন্দ্যময় করে তুলতে পারে। প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে আই-লিম্ব হ্যান্ডের মূল্য কমে আসবে এবং এর ব্যবহার সহজতর হবে। এতে করে আরও বেশি অক্ষম ব্যক্তি এই প্রযুক্তির সুবিধা ভোগ করতে পারবেন।

Mashiat Rahman
MTE-22,
Rajshahi University of Engineering and Technology.