ধরুন আপনার চার কক্ষ বিশিষ্ট একটি ছোট্ট আবাসিক বাড়ী আছে।

বাড়িটিতে তিনটি শয়নকক্ষ, একটি বৈঠকখানা, দুইটি গোসলখানা, দুইটি বারান্দা, একটি রান্নাঘর আছে এবং বাড়িটিতে বিদ্যুত সংযোগ আছে।

বিদ্যুত কোম্পানির কার্যালয় থেকে মাস শেষে Electricity bill আসার আগেই আপনার বাড়ীর Electricity bill এর একটি আনুমানিক হিসাব তৈরি করতে চান! এবং সেটা করতে চান নির্ভুল ভাবে। কিভাবে করবেন?

আপনি ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার না হলেও, অন্যান্য বিষয় পড়ুয়া ছাত্র হলেও খুব সহজেই করতে পারবেন এই হিসাব!

চলুন দেখা যাক কিভাবে করা যায়—

তবে, হিসাবের প্রস্তুতি নেওয়ার আগে ছোটখাটো কয়েকটি বিষয় জেনে নেয়া দরকারঃ

টেরিফ (Tariff):

খুব সহজ ভাবে বললে এর অর্থ হলো কোন জিনিসের মূল্য- ধাপ অনুযায়ী নির্ধারণ করা। উদাহরণ দেই – মনে করুন মাস শেষে দেখা গেল আপনার ব্যবহৃত বিদ্যুত এর পরিমাণ ৪০৯ ইউনিট এসেছে।

বাংলাদেশের বিদ্যুত ব্যবহারের বর্তমান মূল্য ধাপ (tariff) হলো (বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন এর প্রজ্ঞাপন ২০২০ অনুযায়ী) –
০–৫০ ইউনিট==== ৩.৭৫ টাকা ( ব্যবহার না করলেও দিতে হবে)
০–৭৫————৪.১৯
৭৬–২০০———৫.৭২
২০১-৩০০——–৬.০০
৩০১-৪০০——–৬.৩৪
৪০১-৬০০——–৯.৯৪
৬০০-অধিক—–১১.৪৬ টাকা

তাহলে আপনার ৪০৯ ইউনিটের খরচটি পাঁচটি ধাপে (tariff) হিসাব হবে এভাবে (৭৫x৪.১৯)+(১২৫x৫.৭২)+(১০০x৬)+
(১০০x৬.৩৪)+(৯x৯.৯৪)= ২১১৭.৬৫ টাকা!

(শুধুমাত্র বিদ্যুতের মূল্য)…. এটাই টেরিফ!

বিদ্যুত ব্যবহারের এককঃ

সময়ের একক হলো সেকেন্ড, তেমনি ব্যবহৃত বিদ্যুতের একক হলো কিলোওয়াট-আওয়ার (KWh)। অর্থাৎ ব্যবহৃত বিদ্যুতের পরিমাণকে কিলোওয়াটে হিসাব করতে হয় এবং কতক্ষণ ধরে খরচ হলো সে সময়কে ঘন্টায় হিসাব করতে হয়।

(1000 watt=1 Kilowatt)
উদাহরণঃ 763 ওয়াট হলে হিসাব করতে হবে 763÷100= 0.763 KW আবার যদি 30 মিনিট হয় তাহলে 30÷60= 0.5 hour

(বিদ্যুত ব্যবহার না হলে তার একক শুধু মাত্র Watt, পরিমাণ অনেক বেশি হলে তাকে কিলোওয়াট বা মেগাওয়াটে প্রকাশ করা হয়)

এক কথায়ঃ 1000 watt বা 1KW এর কোন বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি যদি 1 ঘন্টা চলে তাহলে 1 ইউনিট বিদ্যুত খরচ হয়। এটাই হলো বিদ্যুতের একক বা KWh☝

[আপনার ব্যবহৃত সকল ইলেট্রিক্যাল এবং ইলেকট্রনিক জিনিসপত্রের বিদ্যুত গ্রহণের এবং খরচের একটি ক্ষমতা আছে যেটা তার গায়ে অবশ্যই Watt এককে লেখা থাকে]

এবার চলুন আপনার বাড়ী (দসুমা ভিলা)র বিদ্যুত বিলের মাসিক হিসাবটি করে দেখি- ধরে নেই-

* বাড়ীর পাঁচটি কক্ষে পাঁচটি 45W এর বাতি প্রতিদিন গড়ে 7 ঘন্টা করে জ্বলে।

* পাঁচটি 100W এর পাখা প্রতিদিন গড়ে 6 ঘন্টা চলে।

* দুইটি 1744 W এর শীতাতপনিয়ন্ত্রক যন্ত্র প্রতিদিন গড়ে 12 ঘন্টা করে চলে।

* একটি 120 W এর টেলিভিশন প্রতিদিন গড়ে 5 ঘন্টা চলে
* একটি 1119 W এর পানির মোটর প্রতিদিন 1.5 ঘন্টা চলে

* একটি 140 W এর রেফ্রিজারেটর প্রতিদিন 10 ঘন্টা চলে (সকল ফ্রিজ অর্ধেকেরও বেশি সময় স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ থাকে)

* একটি 1000W এর স্ত্রি প্রতিদিন গড়ে 15 মিনিট বা (15÷60)=0.25 ঘন্টা চলে।

* রান্নাঘর, দুইটি গোসলখানা, দুই বারান্দা ও বাহিরে সহ 6 টি 20 W এর বাতি দৈনিক গড়ে 4 ঘন্টা করে জ্বলে।
তাহলে মোট হিসাবটি করতে হবে এভাবে
5×45+5×100+2×1744+120+1119+140+ 1000+120= 6712 watt

বা 6712÷1000= 6.712 কিলোওয়াট (KW)

আর মোট সময় 7+6+12+5+1.5+10+0.25+4= 45.75 (h)

তাহলে ঐ যে বলেছিলাম- ব্যবহৃত বিদ্যুতের একক হয় কিলোওয়াটxঘন্টা (KWh)
সে অনুযায়ী হিসাবটি হবে-
6.712 KW x 45.75 h= 307 KWh ইউনিট।

এবার টেরিফ অনুযায়ী দাম হিসাব করুন-

75×4.19 = 314.25
125×5.72 = 715
100×6 = 600
7×6.34 = 44.38
————————————————
307 ইউনিট = 1674 টাকা*

এবার এর সাথে যোগ করুন ডিমান্ড চার্জ 30 টাকা= 1704 টাকা +5% ভ্যাট (85)
তাহলে সর্বমোট 1789 টাকা।

তবে, যদি মিটার ভাড়া, ট্রান্সফরমার ভাড়া, সার্ভিস চার্জ, মাশুল… ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত থাকে তাহলে সেসব যোগ করে মোট দামের উপর 5% ভ্যাট আরোপিত হয়ে সর্বমোট “বিদ্যুত বিল” হিসাব করতে হবে।

এভাবেই আপনার বাসার সমস্ত ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক জিনিসপত্রের লোড (Load) বা মোট ওয়াট ও চালনা সময় হিসাব করে একটি আনুমানিক বিল তৈরি করতে পারবেন।

ফলে ভুতুড়ে বিল/ অস্বাভাবিক বিল বা যে কোন অসঙ্গতি বুঝতে পারবেন।

আপনি কাল্পনিক কিছু জিনিসপত্র যেমন বাতি পাখা ফ্রিজ মোটর ইত্যাদি ধরে নিয়ে চর্চা করতে পারেন।
এই আধুনিক যুগে এটা আপনার অবশ্যই জেনে রাখা উচিত।
শেষ!
……………

চাইলে জেনে রাখতে পারেনঃ

★ ডিমান্ড চার্জ (চাহিদা মূল্য)ঃ আপনার বিদ্যুতের প্রয়োজন আছে, কোম্পানি লাইন টেনে আপনার বাড়িতে সংযোগ দিল। আপনি বিদ্যুত পেয়ে তার বিল দিচ্ছেন।

লাইন ভাড়া, মিটার ভাড়া ইত্যাদি সবই দিচ্ছেন, হিসাব বরাবর! কিন্তু জনাব এই যে আপনার প্রতিদিন বিদ্যুত দরকার আর কোম্পানি আপনার সেই চাহিদা (demand) মিটাচ্ছে এর মূল্য বা চার্জ দিবেন না!…. এটাই demand charge!

★ সার্ভিস চার্জঃ আপনাকে যে বিদ্যুত সরবরাহের সেবা (Service) দিচ্ছে সেটার চার্জ।

★ পিক আওয়ার- অফ পিক আওয়ারঃ ২৪ ঘন্টার মধ্যে গ্রাহক যে সময়টাতে সবচেয়ে বেশি বিদ্যুত ব্যবহার করে সে সময়সীমাকে বলে পিক আওয়ার (সর্বোচ্চ ব্যবহার সময়)।

উদাহরণঃ যেমন সকাল ৫ টা থেকে রাত ১১ টা….. এই সময়ের মধ্যে মানুষ সবচেয়ে বেশি বিদ্যুত ব্যবহার করে তাই এটা “পিক আওয়ার”
আর বাকি ৬ ঘন্টা সমস্ত কারখানা অফিস ইত্যাদি সব বন্ধ থাকে, মানুষ- বাতি, টেলিভিশন ইত্যাদি সব বন্ধ থাকে… তাই এটাকে বলে “অফ পিক আওয়ার”… বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে।

এটা পৃথিবীর দেশ অঞ্চল ঋতু ইত্যাদির সাপেক্ষে ভিন্নতা লক্ষ করা যায়।

(সর্ব সাধারণের জন্য অনেক কিছু পরিহার করে সহজ ভাষায় লেখা হয়েছে। ছবিতে সরকারি প্রজ্ঞাপন দেখানো হয়েছে)

ধন্যবাদ
মাসুদ আলম

Community of Engineers & Engineering Students (CEES)-BD