ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, ময়মনসিংহ বিভাগের অন্যতম সেরা বিদ্যাপীঠ। এটি অন্যান্য সরকারি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের মত বি.এস. সি ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রী প্রদানকারী সরকারি প্রকৌশল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এমইসি বাংলাদেশের প্রকৌশল শিক্ষায় স্নাতক হওয়ার জন্য একটি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে একাডেমিকভাবে যুক্ত।
ইতিহাস
২০০৫ সালে তৎকালীন বিএনপি সরকার নতুন ৩টি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ করার উদ্যোগ নেয়। যার মধ্যে প্রথমে একনেকে MEC এর বিল অনুমোদন করে। ২০০৭ এ এর নির্মান কাজ সম্পন্ন হয়। ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের উদ্বোধন করেন মন্ত্রী প্রফুল্ল মতিউর রহমান ৪ জুলাই ২০০৯ তারিখে। ২০০৯ সালে ৬০ জন স্টুডেন্ট নিয়ে EEE ডিপার্টমেন্ট দিয়ে এই কলেজের যাত্রা শুরু হয়।ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ বাংলাদেশে নতুন এবং আধুনিক প্রকৌশল কলেজের একটি।
স্নাতকোত্তর গবেষণা এবং আরও প্রকৌশল বিভাগ শীঘ্রই চালু করা হবে। আশা করা হচ্ছে যে, ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ শীঘ্রই পূর্ণাঙ্গ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নীত হবে এবং নামকরণ করা হবে: ময়মনসিংহ ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি (এমইউইটি)। এই কলেজে EEE চালু হয় ২০০৯, সিভিল চালু হয় ২০১৪ এবং সিএসই চালু হয় ২০১৭ সালে।
অবস্থান
ময়মনসিংহ শহর থেকে প্রায় ৭কিমি দূরে ময়মনসিংহ-টাঙ্গাইল মহাসড়কের পাশে রহমতপুর বাইপাস মোড় সংলগ্ন ক্যামপাসটি খাগডহর, ময়মনসিংহ সদর, ময়মনসিংহ এ অবস্থিত।
ক্যাম্পাস
৭ একরের উপর নির্মিত ক্যাম্পাসে ৩টি ডিপার্টমেন্ট ভবন, ২টি ছেলেদের হ্ ১টি মেয়েদের হল, ১টি লাইব্রেরি ভবন, ১ টি প্রশাসনিক ভবনসহ ১৩ টি ভবন রয়েছে। এছাড়া শহীদ মিনার,মসজিদ আছে। মুল ক্যম্পাসের বাহিরে টিচার্স কোয়ার্টার এ আছে ৩ টি ভবন ও ১ টি প্রিন্সিপ্যাল এর ডুপ্লেক্স বাড়ি। বর্তমান এ এখানে ৩টি ডিপার্টমেন্ট চালু আছে।
একাডেমিক
এখানের ভর্তি কার্যক্রম ও ভর্তি পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রযুক্তি ইউনিট নামে MEC, FEC এবং BEC কে সমন্বয় করেছে। এই তিন সরকারী কলেজের সাথে বেসরকারী নিটার, স্টেক ও হুমায়ুন কবির ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ “প্রযুক্তি ইউনিট” নামে মেডিকেল কলেজ গুলোর মতো ঢাবি অধিভুক্ত। শিক্ষা কার্যক্রম(পরীক্ষা,রেজিস্ট্রেশন,সিলেবাস প্রণয়ন) ঢাবি কতৃক করা হয়।
এর মানে কখনোই এমন না এটা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়,এর সাথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর সম্পর্ক শুধু মাত্র একাডেমিক কারিকুলাম আর সার্টিফিকেট পর্যন্ত। বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় সাধারণত বিশ্ববিদ্যালয় কে প্রায়োরিটি দিলেও উন্নত রাষ্ট্র গুলোর মতো স্নাতক(under graduate) লেভেলে শুধুমাত্র মেডিকেল কলেজ গুলার সিস্টেম চালু আছে, সেগুলা সব বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত হিসেবে শিক্ষা কার্যক্রম চালায়।
Alpha Science Lab কর্তৃক সিএসই ফেস্ট এ আয়োজিত Robo Race ও Robo Soccer
প্রত্যেকটি মেডিকেল কলেজ ই কোন না কোন বিশ্ববিদ্যালয় এর অধীনে রয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, ঢাকা মেডিকেলের কথা। এটি ঢাবি এর অধিভুক্ত একটি স্বতন্ত্র মেডিকেল কলেজ। এটি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নিয়ন্ত্রিত এবং সম্পূর্ন একাডেমিক কার্যক্রম(রেজিস্ট্রেশন,পরীক্ষা,সিলেবাস প্রণয়ন) এসব ঢাবি নিয়ন্ত্রণ করে। তাই বলে কি তারা কখনো বলে তারা ঢাবির স্টুডেন্ট? বলে না, তারা গর্বের সাথেই বলে তারা ঢামেকের স্টুডেন্ট। আর ঠিক এমনই বাংলাদেশের ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ গুলো।
উল্লেখ্য যে বাংলাদেশের ৩ টি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ ঢাবি অধিভুক্ত এবং ১ টি (সিলেট) শাবিপ্রবি অধিভুক্ত। এবার আসি সার্টিফিকেট এর বিষয়ে – অধিভূক্ত কোন কলেজের সার্টিফিকেট প্রদানের কোন রকম ক্ষমতা নেই। মেডিকেল কিংবা ইঞ্জিনিয়ারিং সকল কলেজের সার্টিফিকেটের সাথে বিশ্ববিদ্যালয় এর সার্টিফিকেটের পার্থক্য হলো – হলের জায়গায় কলেজের নাম থাকবে।
আবাসনঃ
মোট তিনটি আবাসিক হল আছে । পুরুষদের জন্য দুটি হল এবং মহিলাদের জন্য একটি হল। নাম ও আসন সংখ্যা নিচে দেয়া হল:
অমর একুশ হল ২০০
মুক্তিযোদ্ধা হল ২০০
মুক্তিযোদ্ধা তারামন বিবি হল ২০০
হল
কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার
কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার একাডেমিক ভবন এবং ছাত্র বাসস্থান থেকে হাঁটা দূরত্ব। একটি সুন্দর ভবনে গ্রন্থাগার অবস্থিত, যা এমইসি-এর শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের জন্য ভালো কিছু সুবিধা প্রদান করে যেমন- পাঠ্যবই সুবিধা প্রদান, বই ঋণদান, জার্নাল ইত্যাদি। একাডেমিক পাঠক্রমের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের বইগুলো আপডেট করা হয়। গ্রন্থাগারে অনলাইন সুবিধাও রয়েছে।
এই আধুনিক গ্রন্থাগারে বিপুল পরিমাণ বই পাওয়া যায়। ৫ তলাবিশিষ্ট লাইব্রেরী ভবনে রয়েছে ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সভূক্ত শত শত দেশী-বিদেশী বই সম্বলিত ১টি স্টাডি কক্ষ, ১টি সেমিনার কক্ষ। এছাড়াও লাইব্রেরী ভবনে রয়েছে সর্বক্ষণ অনলাইনে পড়াশুনা করার সুবিধা। এছাড়া প্রতিটি কক্ষে প্রায় ৮০ জন শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করতে পারে। শিক্ষার্থীরা এখান হতে তাদের প্রয়োজনে বই ধার নিতে পারে।
EEE Fest 2019 এ আয়োজিত ROBO Soccer
অডিটোরিয়াম কমপ্লেক্স এবং সেমিনার হল
কলেজের প্রায় ২০০ জন ধারণক্ষমতাসম্পন্ন সকল আধুনিক সুবিধা সম্বলিত একটি আধুনিক অডিটোরিয়াম কমপ্লেক্স রয়েছে যা সম্মেলন, সেমিনার এবং অন্যান্য সাংস্কৃতিক কর্মসূচী ধারণ করতে সক্ষম । এর পাশাপাশি ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি প্রদানের সীমিত ক্ষমতা নিয়ে সেমিনার ও সম্মেলন কক্ষ রয়েছে।
বিভাগ
ইলেক্ট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ (ইইই)- ৬০
সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ (সিই)-৬০
কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল অধিদপ্তর (সিএসই)-৬০
২০০৮-০৯ সেশনে, ইইই ডিপার্টমেন্টকে এমইসি’র প্রথম ব্যাচ হিসেবে চালু করা হয়েছিল। ২০১৪-১৫ সেশনে সিই বিভাগ চালু করা হয়েছিল এবং সর্বশেষ ২০১৭-১৮ সেশনে সিএসই বিভাগ চালু করা হয়।
বর্তমানে ৩টি বিভাগ পূর্ণ গতিতে চলছে। প্রায় ৬০০ জন শিক্ষার্থী এমইসিতে তিনটি বিভাগে পড়ছে।
ল্যাব ফ্যাসেলিটিস কেমন?
– ইঞ্জিনিয়ারিং ভার্সিটিতে ল্যাবে যা আছে আমাদের ৩ টি ডিপার্টমেন্ট এ ঠিক সেসব ই আছে , ইন ফ্যাক্ট আমাদের সিএসই ডিপার্টমেন্ট এ ৪৫০+ কম্পিউটার ই আছে। ইইই ডিপার্টমেন্ট এ আছে উইন্ডমিল যা আর কোন ভার্সিটিতে আছে কি না জানা নেই।
ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ল্যাবের যথেষ্ট যন্ত্রপাতি আছে যা আধুনিক, আপডেট এবং ভাল সজ্জিত। এখানে শিক্ষার্থীরা নিম্নোক্ত ল্যাবের সুবিধা পাচ্ছে: –
ইলেক্ট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ (ইইই)
ইলেকট্রনিক্স ল্যাব
বৈদ্যুতিক সার্কিট ল্যাব
বৈদ্যুতিক মেশিন ল্যাব
পাওয়ার সিস্টেম এবং উচ্চ ভোল্টেজ ল্যাব
ডিজিটাল সিংনাল প্রসেসিং ল্যাব
কাঠামোগত মেশিন ল্যাব
সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ (সিই)
Machine Shop
Welding Shop
Surveying Shop
Foundry Shop
Transportation Lab
Drawing Laboratory
Hydraulics Lab
Wood Shop
Environment Lab
Image Processing Lab
Geo- Technical Lab
কম্পিউটার এবং বিজ্ঞান প্রকৌশল বিভাগ (সিএসই)
নেটওয়ার্কিং ল্যাব
যোগাযোগ এবং মাইক্রোপ্রসেসর ল্যাব
কেন্দ্রীয় কম্পিউটার সেন্টার ল্যাব
কম্পিউটার ল্যাব
মাইক্রোপ্রসেসার ল্যাব
সফটওয়্যার ল্যাব
বৃত্তির সুযোগ
প্রতিটি সেমিস্টারের সরকার সিজিপিএ ভিত্তিতে (প্রতি ব্যাচ বা বিভাগে 50% ছাত্র) ছাত্রদের জন্য 1950 টাকা প্রদান করবে। মেয়েদের জন্য কোটাও পাওয়া যায়।
স্নাতক শেষ করার পর, বৃত্তি নিয়ে বিদেশে অধ্যয়ন করার সুযোগ আছে যা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় র rank দ্বারা গণনা করা হয়। একটি নতুন ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ হিসাবে, এমইসিয়ান ছাত্ররা টেক্সাসের ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কোরিয়া, ইউনিভার্সিটি এক্স-মার্সেই পূর্ণ বৃত্তির সাথে অধ্যয়ন করার সুযোগ পাচ্ছে।
EEE DAY-2K17 বুয়েটে পোস্টার প্রেজেন্টেশনে ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের টিম Alpha বুয়েটের টিম Renewable এর সাথে যৌথভাবে সেকেন্ড রানার্সাপ হয়েছে।
কৃতিত্বঃ
বিদেশে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররা বৃত্তি পেয়ে থাকে। ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের একটি গবেষণা সম্প্রদায় এবং একটি বিজ্ঞান ক্লাব রয়েছে যার নাম আ.এস.এল (আলফা বিজ্ঞান ল্যাব), একটি বিতর্ক ও সাংস্কৃতিক ক্লাব ওবায়োওভ। এটি বিভিন্ন জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পুরষ্কার আছে।
Digital Bangladesh day 2018:Robowars, Team Wall-E,1st runner up
Tachfest Bangladesh Zonal, Robowar, Team Wall-E, Runner Up
ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ বাংলাদেশের সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হতে যাচ্ছে। ইতোমধ্যেই এই ক্যাম্পাস থেকে আসা শিক্ষার্থীরা চাকরির বাজারে খুব ভাল কাজ করছে।
মইক হল অফ স্কলার্স :
ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ এর ইইই বিভাগ থেকে বেশ কয়েকটি ব্যাচ পাশ করে বের হয়েছে। ইতিমধ্যেই তারা বেশকিছু সাফল্য অর্জন করেছে। অনেক সিনিয়র দেশের বাহিরে ভালো ভার্সিটিতে স্কলারশিপ পেয়েছে, আরেক জন গত মাসে ৫+ ইন্টারন্যাশনাল ভার্সিটিতে স্কলারশিপ পেয়েছে আর শেষ পর্যন্ত নাসার এক প্রজেক্টে ৩ বছরের জন্য কাজ করার সুযোগ পেয়েছে।
আসলে ৯-১০ বছরে মনে হয় না এসব খারাপ অর্জন। আজকের রুয়েট-চুয়েট-কুয়েট-ডুয়েট সব ই কলেজ থেকে ভার্সিটি হয়েছে, ইন ফ্যাক্ট সেখানের প্রবীন প্রফেসর গুলাও একসময়কার ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের স্টুডেন্ট ছিলো। আমরা অনেক বাধা বিপত্তি পার করে এখন ঢাবি-বুয়েট-রুয়েট-চুয়েটের কম্পিটিশন গুলায় জয়েন করছি, সিনিয়র ভাইয়েরা পেপার সাবমিট করছে।
বেশ কয়েকজন সফল ভাইদের তালিকা পড়তে এই লিংক ভিজিট করুন।
ক্রীড়া এবং বিনোদন
কলেজটি ফুটবল, হকি, ক্রিকেট, ভলিবল, বাস্কেটবল, টেবিল টেনিস ইত্যাদি সুবিধা প্রদান করে। শিক্ষার্থীরাও টেনিস, ব্যাডমিন্টন এবং অন্যান্য গেম খেলে থাকে। ক্রীড়া এবং গেম প্রতিযোগিতাগুলি ক্যাম্পাস জীবনের বৈশিষ্ট্য। ছাত্ররা প্রতি বছর ক্রিকেট এবং ফুটবল টুর্নামেন্টের ব্যবস্থা করে, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, টেবিল টেনিস, দাবা ইত্যাদির মতো ইন্ডোর প্রতিযোগিতা্ও অনুষ্ঠিত হয়।
দেশের অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যখন তথাকথিত নোংরা ছাত্ররাজনীতির করাল গ্রাসে আক্রান্ত তখন ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ সেদিক থেকে পুরোপুরি মুক্ত । এ কলেজের শিক্ষার্থীরা এই কলুষিত ছাত্ররাজনীতির বিরূদ্ধে একত্রিত। এ কলেজ পুরোপুরি মাদক এবং ইভটিজিং মুক্ত । এখানে ইভটিজিং করলে কেউ ছাড় পাবে না , ইভটিজারের স্থান এই ক্যাম্পাসে হবে না ।
এই ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ সংক্রান্ত যেকোন তথ্য জানতে চাইলে যোগাযোগ করতে পারেন নিচের ঠিকানায় :